Sasraya News

Thursday, February 13, 2025

Saraswati Puja : সরস্বতী বনাম ভ্যালেন্তিনা | লিখেছেন : হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

Listen

প্রাচ্য প্রাশ্চাত্যের মিলন তো সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই। প্রেমের ক্ষেত্রে দেশ – কাল- বেড়ার গণ্ডীর তোয়াক্কা কে বা কবে করেছে এই মহাবিশ্বে! যাইহোক সেদিক থেকে বাঙালির সত্যিকারের ভ্যালেন্টাইন ডে হল সরস্বতী পুজোর দিন। লিখেছেন : হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় 

 

 

 

পুরাণ মতে বহুকাল আগে ব্রহ্মা যখন ব্রহ্মাণ্ড সম্পূর্ণ করলেন হঠাৎ দেখলেন এই সৃষ্টিতে কেন জানি না প্রাণের সঞ্চার ঘটছে না। সব কেমন স্থবির হয়ে আছে। এরপর হঠাৎ এক জ্যোতির প্রকাশ ঘটে। সেই জ্যোতি থেকে বেরিয়ে এলেন শ্বেত শুভ্র বসনা, হস্তে পুঁথি এবং বীণা সহ এক দেবী। তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হল এই জগতকে জ্ঞান এবং সুরের মূর্ছনায় ভরিয়ে তোলার। সেই তখন থেকে বাগদেবীর আরাধনা শুরু হয়ে গেল। হিন্দুদের চন্দ্র অনুসারে শুক্ল পক্ষের বসন্তের পঞ্চম দিনে এই দেবীর আবির্ভাব। শীতের শেষ এবং বসন্তের সূচনা এরমাঝে আছে মনের যে বিরাট পরিবর্তন তার সবটুকু ঘিরে রয়েছে প্রকৃতি। জীর্ণতা, রুক্ষ্মতা দূর করে নতুন প্রাণের সঞ্চার প্রকৃতির বুকে তার সঙ্গে মানুষের মনেও চলে এক অনাবিল আনন্দের স্রোতধারা। এইদিনে বিদ্যার্থীদের মধ্যে এক অদ্ভুত উন্মাদনা কাজ করে। যেন বসন্তের সবটুকু রং দিয়ে আঁকা হবে ভবিষ্যতের স্বপ্ন। ওইদিন বাঙালির ঘরে ঘরে সরস্বতীর আরাধনা চলে। হলুদ শাড়ি, পলাশ ফুল,আমের মঞ্জরী, যবের শিষ, সরের কাঠি এসবকিছুই আরাধনার সামগ্রী।

 

 

এসব কিছু তো হল পুজোর কথা আর যেকথা বারবার মনে হয়েছে তা হল ওইদিন আপামর বাঙালির ভ্যালেন্টাইন। ভ্যালেন্তা দেবী, খুব ভুল কথা নয় হঠাৎ করেই বাণিজ্যিক কারণে যেভাবে এই উৎসব বাঙালির ঘরে ঘরে সাড়া ফেলেছে তাতে আর দেবী না বলে উপায় কী! কিন্তু সেসব কথা তো প্রাশ্চাত্য সংস্কৃতির তার সঙ্গে বাঙালির আবার কিসের সংযোগ নিশ্চিত সেটাই ভাববেন সকলে। কিন্তু প্রাচ্য প্রাশ্চাত্যের মিলন তো সেই প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকেই। প্রেমের ক্ষেত্রে দেশ – কাল- বেড়ার গণ্ডীর তোয়াক্কা কে বা কবে করেছে এই মহাবিশ্বে! যাইহোক সেদিক থেকে বাঙালির সত্যিকারের ভ্যালেন্টাইন ডে হল সরস্বতী পুজোর দিন। ওইদিন চোখে চোখ পড়ে যাওয়া,হাতে হাত রেখে সারাজীবন পথ চলার শপথ নিয়েছেন কতজন মানব-মানবী। সাধারণভাবে এই সময় বঙ্গে আসে পলাশকাল। লালমাটির দেশগুলো যেন একটু বাড়তি লাবণ্য নিয়ে অপেক্ষায় থাকে পথিকের। এ প্রজন্মের মানুষের অবসর বড় কম।

 

 

কিন্তু আধুনিককালে পলাশের দিন উদযাপন করতে শহরের বাবুরা এইসব রাঢ় অঞ্চলে উপস্থিত হন দলে দলে। সেও এক বড় প্রাপ্তি। এসময়টা আদিবাসী গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে মাটির হাঁড়িতে উপচে ওঠে গরম ভাতের গন্ধ। এই সময়টা ধামসা মাদলের বোলে একটু বাড়তি আয় হয়। সেই কোন সকাল থেকে কামিন মেয়ে কাঞ্চনা বেরিয়েছে পলাশ বনে। পলাশের মালা বিক্রি করে চাল কিনবে আজ…! এমন এক বসন্তের পঞ্চম দিনে কামের দেবতা কামে উন্মত্ত করলেন দেবাদিদেব মহাদেবকে, পার্বতীর সঙ্গে মিলন ঘটাবেন বলে!  দেবগণের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে তৃতীয় নয়নের আগুনে ভস্মীভূত হলেন কামদেব। কামদেবের স্ত্রীর কাতর আবেদনে মহাদেব শাপমুক্ত করলেন। সেদিন থেকে বসন্ত এল পৃথিবীতে, ভালোবাসার জন্ম হল। ভালোবাসা সংক্রামক হোক এই আবেদন বড় সুন্দর। তাই বাঙালির প্রকৃত ভালোবাসার দিন হল সরস্বতী পুজো। এদিন বাসন্তী রঙের শাড়িতে কোন নারী যে পুরুষের মনে স্থান করে নেবে এমনটাই ভাবা হয়। যাইহোক ভ্যালেন্তি পুজো আর সরস্বতী পুজো যেন একে অপরের পরিপূরক।

 

 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কিছু গানের প্রেম আর পুজোর পর্যায়ক্রম যেমনভাবে তফাৎ করতে ধাঁধা লাগে প্রাণে তেমনই বাঙালির প্রেম – পুজো মিলেমিশে একাকার। আসল তো নিবেদন। নিবেদনের জন্য যে প্রেম বড় আবশ্যিক। তাই পুজোর মূল কথা হল প্রেম।সব ধর্মের মানুষের মধ্যে চির শ্বাশত হোক সেই বাণী– সা বিদ্যা যা বিমুক্তয়ে।🍁

ছবি : দিলীপ গুহ ও আন্তর্জালিক 

আরও পড়ুন : Sasraya News | Sunday’s Literature Special | 2 February 2025 | Issue 50 || সাশ্রয় নিউজ | রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | সংখ্যা ৫০

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment