বসুধা চৌধুরী, সাশ্রয় নিউজ ডেস্ক ★ মুম্বাই : তারকা জীবনের আলো-আঁধারিতে কখনও কখনও ব্যক্তিগত সম্পর্কই হয়ে ওঠে সবচেয়ে বড় আলোচনার বিষয়। সোনাক্ষী সিন্হা (Sonakshi Sinha) ও জ়াহির ইকবাল (Zaheer Iqbal) -এর বিয়ে সেই আলোচনাকে আরও উস্কে দিয়েছে। একদিকে আন্তঃধর্মীয় সম্পর্কের কারণে তীব্র সমালোচনা, অন্যদিকে এক নববধূর সুখী জীবনের হাসিমুখ, দুই বিপরীত মুখোশই এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় সমান জনপ্রিয়। ২০২৪ সালের ২৩ জুন, নিভৃতেই বিয়ে সেরেছিলেন বলিউড অভিনেত্রী সোনাক্ষী সিন্হা ও অভিনেতা-প্রযোজক জ়াহির ইকবাল। কোনও ধর্মীয় আচার নয়, শুধুই আইনি বিয়ে, এরপর ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে ছোট্ট প্রীতিভোজ। বলিউডের বিখ্যাত ‘সিন্হা’ পরিবারের মেয়ে বিয়ের খবর প্রকাশ্যে আসতেই শুরু হয়েছিল বিতর্ক, ট্রোল, এমনকী ঘৃণার মন্তব্যও। কিন্তু এসবের মাঝেও সোনাক্ষী আজও আগের মতোই অকপট, খোলামেলা এবং সুখী।

বিয়ের পর থেকেই তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে নানা গুজব ছড়ালেও, বাস্তবে একেবারে অন্য ছবি দেখা যাচ্ছে। জ়াহিরের পরিবারে যে কতটা আপন হয়ে উঠেছেন সোনাক্ষী, তা বোঝা যায় অভিনেত্রীর সাম্প্রতিক মন্তব্যেই। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, “বিয়ের পর মনে হয়েছে, আরও আগেই বিয়েটা করে নেওয়া উচিত ছিল। আমার শ্বশুরবাড়িতে আমি এতটা ভালবাসা পাব, ভাবতেই পারিনি।” তাঁর স্বামী জ়াহির নাকি বিয়ের আগে আলাদা থাকার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সোনাক্ষী দৃঢ়ভাবে তা প্রত্যাখ্যান করেন। নায়িকার ভাষায়, “জ়াহির বলেছিল, আমরা আলাদা থাকব। আমি বলেছিলাম, না, আমি তোমার বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকব। একসঙ্গে থাকা মানেই তো পরিবার।”
অভিনেত্রীর এই মানসিকতা এখন বহু মানুষের প্রশংসার কারণ হয়ে উঠেছে। আজকের দিনে যেখানে অনেকেই পারিবারিক বন্ধনের চেয়ে ব্যক্তিগত পরিসরকে বেশি গুরুত্ব দেন, সেখানে সোনাক্ষী যেন এক ব্যতিক্রমী উদাহরণ।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, সোনাক্ষী ও তাঁর শাশুড়ির সম্পর্ক। অভিনেত্রীর কথায়, “আমার মা (প্রাক্তন মন্ত্রী ও অভিনেতা শত্রুঘ্ন সিন্হা-এর স্ত্রী) দারুণ রান্না করেন। কিন্তু আমি রান্নার কিছুই জানি না। সেটা নিয়ে মা সবসময় চিন্তায় থাকতেন। বিয়ের পর আমার শাশুড়িকে বলেছিলাম এই কথাটা। উনি হেসে বললেন, ‘আমিও রান্না জানি না, শুধু খেতে জানি। তুমি ঠিক পরিবারে এসে পড়েছ।’ এই এক কথাতেই প্রকাশ পায় পরিবারের উষ্ণতা, মায়া, আর গ্রহণযোগ্যতার বার্তা। আর সেই গ্রহণযোগ্যতাই এখন অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।

উল্লেখ্য, বিয়ের পর থেকে সোনাক্ষী ও জাহির দু’জনেই নিয়মিত সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অপরের সঙ্গে সময় কাটানোর ছবি, ভিডিও শেয়ার করেন। কখনও একসঙ্গে ডিনার ডেট, কখনও পারিবারিক উৎসব, তাঁদের হাসিমুখই যেন সবচেয়ে বড় উত্তর, যারা এই সম্পর্ক নিয়ে কটূ মন্তব্য করেছিলেন তাঁদের প্রতি।অভিনেত্রী জানিয়েছেন, “মানুষ আজও বিশ্বাস করে, দুই ধর্ম মানেই দূরত্ব। কিন্তু আমরা প্রমাণ করতে চাই, ভালবাসা মানে বোঝাপড়া, সম্মান আর একে অপরের পরিবারকে নিজের মতো গ্রহণ করা।” বিয়ের পর সোনাক্ষী ও জ়াহিরকে একাধিক ইভেন্টে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে বোঝাপড়ার রসায়ন স্পষ্ট। শুধু তাই নয়, জ়াহিরের বাবা-মাও প্রকাশ্যে জানিয়েছেন, সোনাক্ষী তাঁদের পরিবারের ‘মেয়ে’র মতোই।
বলিউডে যেখানে ভিন্নধর্মী বিয়ের সমীকরণ বহু সময় বিতর্কের জন্ম দেয়, সেখানে এই জুটি এক নতুন বার্তা দিয়েছেন, ভালবাসা কখনও ধর্ম দেখে না। প্রসঙ্গত, একজন অভিনেত্রী হিসেবে সোনাক্ষীর পেশাগত সাফল্য বরাবরই আলোচনায়। কিন্তু এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু তাঁর সহজ, পারিবারিক জীবনদর্শন। তাঁর মতো একজন বলিউড তারকার মুখে শোনা এই কথাগুলো যেন আজকের সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সহাবস্থানের প্রতীক হয়ে উঠেছে। এদিকে, জ়াহিরও স্ত্রীর প্রতি প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। এক সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “সোনাক্ষী শুধু একজন চমৎকার অভিনেত্রী নন, একজন দারুণ মানুষও। ওর উপস্থিতিতে আমাদের বাড়িটা আরও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে।”

একসময় যারা তাঁদের বিয়ে নিয়ে ব্যঙ্গ করেছিল, এখন তারাই বলছে, “এই যুগল প্রমাণ করেছে, ভালোবাসা মানে শুধু দুটি মানুষ নয়, দুটি পরিবারকেও এক করে দেওয়া।” সোনাক্ষী ও জ়াহিরের সম্পর্ক তাই আজ শুধু একটি বলিউড লাভ স্টোরিই নয়, এক নতুন সামাজিক বার্তা ; যেখানে ধর্ম নয়, মানবধর্মই আসল পরিচয়।
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Pratika Rawal ICC, Pratika Rawal no medal | ৩০৮ রান করেও মেডেলহীন! প্রতীকা রাওয়ালকে ঘিরে প্রশ্নে সরগরম ক্রিকেট দুনিয়া




