



সম্পাদকীয়
সকলকে ফাগুন শুভেচ্ছা। বসন্তের পালাশ -শিমুলে মিশে যাক মনোময় আবীরের রঙ। গাছেদের ঝরে যাওয়া পাতায় জুড়ে থাকে বসন্তের ডাক। নিয়তির ভেসে যাওয়া প্রকৃতির সাজে সজ্জিত আম্রমুকুলের ঘ্রাণ। যেভাবে নৃত্য করে কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়ার গোপিনীর গান…
সকলকে সাশ্রয় নিউজ-এর পক্ষ থেকে বসন্ত শুভেচ্ছা। 🌻
🦋কবিতা
সৈকত হাবিব
তোমার কণ্ঠস্বর
এক মন্দ্রিত মেঘ নেমে এলো শহরের প্রান্ত থেকে, যখন উদ্ভাসিত তোমার কণ্ঠস্বর ভেসে এলো টেলিফোনে। এখন বর্ষা, আজও কালিদাসী মেঘ ভেসে আসে দূর উজ্জয়িনী থেকে-শোনায় অলকার দূরসঙ্গীত…
এই মেঘ, এই বিধবাশুভ্র মেঘ, আমার শূন্যতাকে নিয়ে যায় মহাশূন্যে। আর তোমার কণ্ঠ স্পর্শ করে সেই শূন্য-শরীরময় তবু শরীরহীন। টেলিফোন যেনো মেঘ, মেঘের সিঁড়ি হয়ে ঢুকে যায় আমার গভীরে আর শীত-উষ্ণ এক স্রোত বয়ে যায়
তবু, সেই মেঘ-টেলিফোন আমি ভালোবাসি; ভালোবাসি এই দূরতম উষ্ণতা
তোমার কণ্ঠস্বর যেন বৃষ্টি, আমাদের মেঘবিরহের গান।
বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায়
উচ্ছেদতন্ত্র
এমন উড়ন্ত দিনে নিজেকেই তুলে ফেলি শেকড়ের থেকে
পকেটে সূর্যের আভা নিভে গেছে উদ্বাস্তু বিকেলে
হাততালি দিয়ে উঠল পুরোনো চিঠির মোহ
বাক্সের প্রাচীরে সেই সোঁদাগন্ধ রঙিন কবিতা
সমুহ উত্তাপ নিয়ে একান্ত হাতের কাছে উল্লাস চেয়েছে
বাঁশি, তুমি কতটুকু সুর গুঁজে দাও
এই বৈভবের হারানো সন্ন্যাসে।
দীপান্বিতা রায় সরকার
ফসলের সুখ সংবাদ
সেখানে কি অনুকূল বাস?
সেচ আর যত্নে কে রাখে?
আদরের সে চাষবাস
আজকাল রাখা কার হাতে?
আজ এই বর্ষণ মাসে,
হাত সে কি ভরসার মতো?
দ্রুত লয়ে কেটে দেয় আল
যখন সে মেঘ হয় নত?
ফসলের উন্মনা ক্ষণ
দুধ ধান গর্ভিণী বুকে,
আগামীর আপ্লুত ডাক
পটু হাত ঝঞ্ঝাকে রুখে?
তবে আজ বোনা হোক গান,
ফসলের সুখ সংবাদে।
আমাদের প্রিয় চাষবাস
গচ্ছিত ভরসার হাতে।
মিতা নূর
ধূসর আবছা স্মৃতি বুকে
খুব কঠিন ভাবে জীবনের কিছু অভ্যাস,
আস্তে আস্তে ভুলেই যাচ্ছি!
ছোট বেলা থেকে শখ কিংবা অভ্যেস যাইহোক,
টাকা হাতে পেলেই কাজল টিপ, বই আর ফুল কিনতাম,
এই জিনিসগুলো খুব করে জীবনে দখল করে নিয়ে ছিল।
কিন্তু আজ, মানুষের মন পড়তে পড়তে বই পড়া ভুলে গেছি,
আজ আর অস্থির করে না মন,
প্রেম পাগল রবিঠাকুরের কিংবা তরুণী মনের পছন্দের হিমু,
হুমায়ুন আহমেদের গল্প কবিতার বই।
আর- ফুল,
সে-তো শখের বাহিরে চলে গেছে কখন জানি না।
জলাশয়ময় চোখে,
ধূসর আবছা স্মৃতি বুকের ভেতর প্রতিমুহূর্তেই খুব পোড়ায়।
চোখের কাজলের চেয়ে এখন ঢের ভালো লাগে আকাশের মেঘের কালো,
নীল আকাশ নেই আর, ঢেকে গেছে ব্যথায় কালো মেঘে।
মায়ের হাতের কালো রঙের টিপ শেষ চিহ্ন ছিল,
সে’টাও ধীরে ধীরে মুছে যাওয়ার পালা।
অভ্যাসে পরিনত ছিল আরো অনেক কিছুই;
মাঝখানে ট্রাফিকের মতো দাঁড়িয়ে কেউ,
জীবনের সবটা থামিয়ে দিয়ে চলে গেছে।
অভিজিৎ দত্ত
সমাজ, সংসারে নারী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন
‘নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার
কেহ নাহি দিবে অধিকার…’
অথচ নারী সব গুণের আধার
বিধাতা তাকে পাঠিয়েছে সংসারে
করে সবচেয়ে বড়ো উপহার
একথা কী স্মরণে থাকে সবার?
পূর্বে নারী ছিল সন্তান
উৎপাদনের যন্ত্র
পুরষরা তার থেকে যতখুশী
সন্তান উৎপাদন করতো।
পুত্রের জন্ম দিলে প্রশংসা
আর কন্যার জন্ম দিলেই তিরস্কার
এইভাবেই নারীদের সহ্য করতে হয়েছে
পুরুষদের লান্ছনা আর অত্যাচার।
আজকের আধুনিক যুগে
নারীরা পেয়েছে পড়া ও কাজের সুযোগ
নিজের প্রতিভা প্রকাশ করতে
সবসময়ই তারা তৎপর।
যে রাঁধে, সে চুল ও বাঁধে
কর্মরতা নারীরা শিলমোহর দিয়েছে এতে।
তবুও সংসারে যদি আনতে চাও শান্তি
নারী ও পুরুষ উভয়কেই
হতে হবে সমান গুণবতী।
সৌভিক সী
লোভে পাপ পাপে মৃত্যু
সুখের জন্য নেই কি কিছু
প্রেম করলি পদ্মাপাড়ে
সব সুখটা একাই নিতে
ছুটলি দুপুর চুপিসারে।
মনকে দিলি মন পুষলি
চরম বোকা হলি শেষে
কেউ বেঁচেছে বল কখনো
ভরা বানে নিজেই ভেসে।
আপন মন যখন তোর
বদ্ধ ঘরে একাই সাজে
দেখ না কেমন সুখের রাজা
অসুখ ঢাকতে আমায় খোঁজে।
সুফিয়া শিউলি
বাসন্তি বুনোপথে কাকে খোঁজে মন
ঝরাপাতা, আহা ঝরাপাতা…
শিশিরের কান্নাভেজা পাতা পথে
এলো দিন বসন্ত মৌসুমের…
ছায়া-ছায়া ছায়াঝোপে ঝুরঝুর বাতাসের খেলা!
ফুটেছে রঙন ফুল, সোনারং সোনালু, সোনাঝুরি…
ঘাড় তুলে ডাকে দূরে সবুজ কোকিল;
এমন মেদুরা দিনে বুনোপথে কাকে খোঁজে মন?
বৃষ্টিধোঁয়া বাতাসের শিসে নিশপিশ ফিসফিস সুরধ্বনি
পায়ে পায়ে বাজে বুনোপথ…
মউমউ আনকুরা কাঠের সুবাসে সে বুঝি হারায়!
কাকে খুঁজি? আহা কাকে খোঁজে মন…
মৌটুসি, বাবুই উড়ে যায়,
কনকচাঁপা ছুঁয়ে ছুঁয়ে খেলে প্রজাপতি
আলো করা এই মধুদিনে কোথায় হারালো সে?
হারালো কোথায়! এই মায়া-মধুবন পার হয়ে
শতপুষ্পা আগাছা মাড়িয়ে কোথা যাবো আমি…
কতদূরে, কোন সেই নীলাদীঘি পাড়ে?
তবুও মেঘ তুই ছায়া হয়ে শুয়ে থাকিস,
ধূসর কোকিল তবুও তুই একা একা ডাকিস!
শিবনাথ মণ্ডল
সুদখোর
রাম বাবু নাম তার
সুদখোর লোক
তুলসীর মালা গলায়
মিটমিট করে চোখ
মাঝে মাঝে বলে শুধু
হরি হরি বোল
আট হাত ধুতি পড়ে
কোঁচায় দেয় দোল।
চেহারাটা গাট্টাগোট্টা
মাথায় লম্বা টিকি
হিসাবটা বড্ড পাকা
ছাড়ে না এক সিকি।
সোনা রুপা দেখে নেয়
জিনিসটা খাঁটি
তারপর খুঁজতে থাকে
কোমরে চাবিকাঠি।
জিনিস নেই দেখে শুনে
টাকা দেয় গুনে
কি করে নিতে হয় সুদের টাকা
রাম বাবু জানে।।
হাসান হিমাদ্রি
সত্যের বনবাস…
কে কয়?
হবেই একদিন সত্যের জয়।
ও-বেটা কি দেখে না চেয়ে
তার নিজ ধমনীতে মিথ্যা বয়!
এই জগতে মিথ্যাই আসল,
সত্য সে-তো হিংসুক বড়ো
ওর নিজের গালেই টোল।।
জানান দিতে নিজেকে
হুঙ্কার ছেড়ে সত্য আসে
পরক্ষণেই তৃপ্তি ঢেকুর
মেলায় কর্পূর বাতাসে।
চেয়ে দেখো চারিধারে
আজ সভ্যতা জুড়ে কে কি করে
পুরো পৃথিবীর চালিকা শক্তির
মূল জ্বালানিই মিথ্যা রে।
যারাই মিথ্যা লালন করে
প্রকাশ্যেতে তারাই আবার
দিনরাত্রি নীতিবাক্য
ওয়াজেদ বসে ঝাড়ে,
ওরাই দেখে পূর্বাকাশে
পুর্ণিমা চাঁদে মুখখানি তার
কপট হাসি হাসে ।।
প্রগতির ছোঁয়া যতো’ই লাগুক
সন্নিকটে ক্রান্তিকাল,
সুপ্ত মনে বাসনা জাগে
সত্য এসেই দেবে সামাল।
ইথারে ইথারে ঘোষণা তাই
সত্যের মহাকাল,
আদতে আমরাই বোকার পাল
নিজের হাঁড়ি অন্যের চুলায়
রাঁধুনী রাঁধেন আলুর ডাল।।
দ্বারে দ্বারে খুঁজেও তারে
অনুসন্ধানে ক্লান্ত যখন
শঙ্কা জাগে মনে,
কি জানি কি হবে হালচাল?
শোনা গেলো সত্য স্বয়ং
স্বেচ্ছায় গেছে নির্বাসনে,
মিথ্যাই দেবে জগৎ সামাল।।
বিধানেন্দু পুরকাইত
রেজিনা ও একটি মুহূর্ত
রেজিনা তোমাকে দেখতে পেয়েছি আজ
একটু স্পর্শে ছুঁইতে চেয়েছ হাত
বুভুক্ষু চোখে কবিতায় কল্পনা
কখনও স্বপ্নে বিভাবরী সংলাপ।
আরমান বাসে পাশাপাশি তুমি আমি
ঠোঁট নেড়ে যেন চেয়েছিলে আরও কিছু
শরীরী সুবাস কিংবা স্তনের ডৌল
অথচ লজ্জা কিংবা দ্বিধায় নিচু।
পূজার অর্ঘ্য যেমন ডালায় রাখা
পরিপাটি তার পবিত্র নজরানা
সোহাগে মগ্ন প্রেমের বন্য রেখা
কখন নিজেকে – হারিয়েছ রেজিনা।
আবার আসবে কবিতায় মধুমতি
তীর ভেঙে ছোটে তীব্র স্রোতের জল
সেটা প্রেম নাকি নিছক কাব্য সুধা
একই পংক্তি পূর্বাশা অবিকল।
রেজিনা তোমাকে দেখতে পেয়েছি আজ
একটু স্পর্শে ছুঁইতে চেয়েছ হাত।
এইচ আলিম
আগুনের আয়নায় লিপিস্টিক
খাসকামরায় মৌমাছিদের রাণী সাজলে,
স্বপ্নবাজ সম্রাটও পরাজিত হয়,
নুয়ে যায় আঁচলে মুড়ে রাখা বকুলের মালা, সাজানো দেয়ালেও নোনা ধরে যায়,
পরে থাকে হিসাবী খাতার বেহিসাবী যোগফল, আগুনের ফুলকিতে অবিশ্বাস দেখেও,
যে যুবক নীলাত্রির চোখের জলে
ভালোবাসা ফোটাতে চায়,
কিম্বা গোলাপ হাতে প্রেমের যুদ্ধে নেমে যায়।
সেই তো কেবল ঘোড় সাওয়ারে
ফিরে আসা সাহসী প্রেমিক।
আমি তাকে হৃদয়ের যোদ্ধা বলি।
আর যে ফুলকি দেখেই যুদ্ধের ময়দানে
গোলাপের তরবারি রেখে নিরুদ্দেশ হয়েছে, মনমাড়িয়ে দিয়ে অজানার পথে চলে যায়,
আকাশ রেখে পথের ধুলায় ভাসে,
লিপস্টিকের আয়নায় প্রতিবার
ঠোঁট ঘষে ঘষে রঙ করে,
দুপুরের আলোয় শাড়ির ভাঁজ নষ্ট হয়ে যায়,
যে গোলাপ নেয়ার বদলে গোলাপী হয়ে যায়,
তার বিচার চাইতে আসিনি,
শুধু তার উত্তরাধিকার সুত্রে জবাব নিতে চাই, সেদিন আগুনের ফুলকিতে কি ছিলো?
আশ্রাফ বাবু
শব্দপথে প্লাবন
আলোছায়ার মায়া সব চোখ দেখে
মুখরিত হৃদপিণ্ডে স্বতন্ত্র ঘ্রাণ
নিশ্চিত স্বচ্ছ অজানা অংকিত।
আশ্রয় হারা শব্দের ফাঁসি হয়
জ্যোৎস্নারাতে শ্রাবণ মেঘে
মনঘরে হতবাক ভেজারাত।
ফুটপাতের খুচরো দোকানে ছুঁয়ে দিলে
অনুভূতি লাজুক চাহনি ফুড়ুৎ পরাণ
মুঠোভর্তি একগুচ্ছ যেন সূর্যকণা।
সুখ বহে পলাতক সময়ের আড়ালে
জীবন সুন্দর বিষদাঁত জমা রেখে
উচ্ছাসিত শাসন ভাষন ছলাকলা চেনা।
ঘ্রাণ জিইয়ে রাখি ছায়া ফেলে
মনে উচ্চারিত মায়া জলের মোহ
তবু লেখা হয় অজানা রহস্য।
পথের বিশ্বাস নিয়ে চোখের গভীরে
অংকিত আশ্রয় বিজয়ের বর্তমান
তোমার ছায়া আলোছায়ায় অজস্র।
অলঙ্করণ : প্রীতি দেব, সানি সরকার ও আন্তর্জালিক
ঘোষণা : আগামী রবিবার বসন্ত সংখ্যা প্রকাশ হবে। ওই সংখ্যার জন্য গদ্য, কবিতা, গল্প প্রভৃতি শীঘ্রই পাঠানোর জন্য আবেদন। 🦋
👉সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, পুস্তক আলোচনা।
🌎লেখা পাঠানোর ই-মেল : editor.sasrayanews@gmail.com
🌎পুস্তক আলোচনার জন্য সম্পাদকীয় দফতরে দু’কপি বই পাঠাতে পারেন।
