



৮ মার্চ। আন্তর্জাতিক নারী দিবস। বিশেষ এই দিনে অব্যক্ত কথায় শব্দ চাদর বুনলেন : দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়
প্রমা
জীবনের জন্য সংগ্রাম নারী পুরুষ উভয়ই থাকে। তবে নারীরা পুরুষের উপর আর্থিকভাবে দীর্ঘদিন নির্ভরশীল। তাছাড়া পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা ক্ষমতার সীমারেখা লঙ্ঘন করে কতটুকু কাজ করে থাকেন, সেই কথা এবং সংসারে পুরুষের অধীনে বসবাস করে একটা নারী ঠিক কি কি কাজে উত্তীর্ণ হয়ে চলেছেন আদি থেকে আজ পর্যন্ত তার একটা ধারাবাহিক বিবরণ দেওয়ার চেষ্টা করছি এই লেখায়।
লতিকা দেবী তার ছোট নাতনিকে গল্প শোনান মহীয়সী নারী ঘোষাল তিনি ঋকবেদের দু’টি শ্লোক রচয়িতা তৎকালীন সমাজে নারী শব্দের অর্থ ছিল নেতা অর্থাৎ নারীদের স্থান ছিল অনেক উঁচুতে ঘসার শরীরে কুষ্ঠ থাকার জন্য তার বিবাহ হচ্ছিল না। এ সময় তাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয় পরে অশ্বিনী কুমার স্বর্গের চিকিৎসক তার কুষ্ঠ ভালো করে দিলে তিনি বরপান সংসারী হন। এই চিকিৎসকের কাছে পৌঁছনোর বৃত্তান্ত ভক্তি শ্রদ্ধা এবং তার শিক্ষা জ্ঞান চৈতন্য শুধুমাত্র অনুভব করা যায় বর্ণনা করা যায় না। এমনই আরও বিদুষী নারীর কথা আমরা শুনেছি যেমন গার্গী, খানা লীলাবতী প্রমূখ।
______________________________________________
আমার তো আবার মার খাবার ভয় হচ্ছিল কিন্তু আমার আর কিছু মনে নেই। আবার যখন জ্ঞান ফিরল মা দাদা সবাই মাথার কাছে বসে ঘনঘনো তেঁতো ওষুধ দিতে লাগল মুখে ঠেলে। সঙ্গে একটা মিছরির ডেলা, একটু জিভ দিয়ে চাটলেও উঠে বসে সেটা খাবার ক্ষমতা ছিল না।
______________________________________________
ছোট্ট নাতনী প্রমা দিদাকে প্রশ্ন করে তুমিও কি অনেক লেখাপড়া শিখেছ?
লতিকা দেবী উত্তরে বলেন-
ছোটবেলায় গ্রামের পাঠশালায় যেতুম সুর করে পড়তুম, “সিঁড়ি ভাঙা দ”- “শিমুলে প ” নামতা, শটকা কড়া গন্ডা। কিন্তু গুরু মশাই আমাকে দিয়ে পা টেপাতেন, বলতেন লেখাপড়া শেখার সঙ্গে গুরু মশাই সাইকেল সঙ্গে সেবা যত্ন করতে হয়। আমিও বোকার মতন তার হাত পা টিপে দিতাম, পড়াশোনা না করে ।
এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর আমি যখন অন্যদের থেকে অনেক পিছিয়ে পড়ছিলাম, তখন অন্য ছাত্রছাত্রীরা আমার মাকে রিপোর্ট করল। লতিকা পড়া পারে না তাই গুরু মশাই তাকে দিয়ে রোজ পা টেপায়। অন্য ছাত্রছাত্রীদের মা কুৎসিত ইঙ্গিত করে আমার মাকে আমাকে ও গুরু মশাই কে নিয়ে কথা বলতে আরম্ভ করলে, আমার মাও খুব পেটাতে শুরু করল গামড়া (নারকেল পাতার লম্বা বৃন্ত) দিয়ে ব্যাপক মারধোর করল। মার খেয়ে একসময় মার হাত থেকে পালিয়ে বাঁচি লুকিয়ে পড়ি ঘরের তক্তপোশে তক্তপোশের তলায়।
ওখানে কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে গেছিলাম জানি না। যখন জ্ঞান ফিরল, শুনলাম, মা বলছে কোথায় কোথায় না খুঁজেছি, উনি কি না ঘরের মধ্যেই-!
আমার তো আবার মার খাবার ভয় হচ্ছিল কিন্তু আমার আর কিছু মনে নেই। আবার যখন জ্ঞান ফিরল মা দাদা সবাই মাথার কাছে বসে ঘনঘনো তেঁতো ওষুধ দিতে লাগল মুখে ঠেলে। সঙ্গে একটা মিছরির ডেলা, একটু জিভ দিয়ে চাটলেও উঠে বসে সেটা খাবার ক্ষমতা ছিল না। দীর্ঘদিন বিছানায় রইলাম!
ঠিক কি হয়েছিল জানিনা- কবিরাজ আজ তো দেখতে, মা ঠাকুরের নাম জপ করত, কান্নাকাটি করত আর বলত মেয়েকে আমার বাঁচিয়ে দিলে “বুক চিরে রক্ত দেব “।
ঠিক কতদিন পরে জানি না একদিন দাঁড় করাতেই পড়ে গেলাম। আবার নতুন ওষুধ চালু হল। প্রথমে দেওয়াল ধরে ধরে হাঁটতে লাগলাম, তারপর যখন হাত ছাড়লাম, তখনই মা পুজো দিতে ছুটল। বুক চিরে রক্ত দিয়ে ” -সেই যে আমাকে বাঁচিয়ে দিল আর কোনওদিন কোনও অসুখ আমার করেনি, তবে এত যন্ত্রণা, দুঃখ পেলাম যে যমই আমাকে নিতে ভুলে গেল।
প্রমা বোকার মতন চেয়ে থাকে
কিছু পরে প্রশ্ন করে, আর লেখাপড়া?
লতিকা দেবী বলে।
ধুর –
আর লেখাপড়া –
কিছুদিনের মধ্যেই বাবা মারা গেল। তারপর মেজদার কালা জ্বর হল, মেজ দাও মারা গেল।
মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়ল।
মা কিছু খেতে পারত না। গলায় ক্যান্সার কিনা –
আমরা তিন ভাইবোন বড় ভাই ছোট ভাই আর আমি মা সবাই মিলে কলকাতায় জাঠতুতো দাদার বাড়িতে গিয়ে উঠলাম। মাত্র ক’য়েক মাসের মধ্যেই মা মারা গেল।
বড় ভাই ফটোগ্রাফিতে কাজে ঢুকল। বড় কম মাইনে!
ছোট দাদা আর আমি বড়লোক জাঠতুতো দাদার বাড়িতে আশ্রয় পেলেও, আদর ভুলে গেলাম। চুপ করে বসে দেখো ওনার মেয়েরা ডিম সেদ্ধ আলু সেদ্ধ ভাত খাবে, ভালো ফল মিষ্টি খাবে বড় মাছটি খাবে, পড়ালেখা করবে, দামি ফাইন কাপড়ের জামা কাপড় পরবে। আর আমি মোটা ছোট কাপড় পড়ব, সবার খাবার শেষে যা বাঁচবে তাই দিয়ে চাট্টি ভাত খাব। কিন্তু আমাদের তাই বা কে দেবে!
এ এক ভীষণ সংগ্রাম।
জ্যাঠতুতো দাদার মেয়েরা পড়াশোনা করলে সেগুলোই আমরা মনে মনে অভ্যাস করার চেষ্টা করতাম কিন্তু আমাদের লেখাপড়ার কোনও চেষ্টা কেউ আর করল না। যদিও ছোট দাদা ফাস্ট ক্লাস অব্দি পড়াশোনা করেছিল। ও সময়টা বলতে ভুলেই গেছি তখন ১৯৩৫ সালের কথা। অনতিকাল পরেই তোর দাদা মশাই আমাকে দেখতে গেল, পছন্দ করলো –
কিন্তু মেজ বৌদি বলল, অত বড় সংসার, চারটি ননদ –
যদিও তারা বিবাহিত, আর ক’য়েক জায়গায় দেখাশোনা করে ভেবে দেখব। আর ছোট দাদাকে বলল, যা শক্তি এখনও ওরা ফিরে যায়নি, রাস্তাতেই আছে গিয়ে বল, মেজ বৌদি বলেছে আমরা ছোট ছোট ভাই তেমন কিছু রোজগার করি না। আমরা কিছু দিতে পারব না তাহলেই এই বিয়ে ভেঙে যাবে। পাত্রপক্ষের কিছু দাবি থাকবে না এমন হতে পারে না। মেজ বৌদির কথা মত ছোট দাদা দৌড়ে গিয়ে মোড়ের মাথায় তোর দাদা মশাই কে ধরে ফেলল।
মেজ বৌদির শেখানো মতন বলল, “আমরা এখনও ছোট কাজ করি না, ফলে আমরা কিছুই দিতে পারব না বিয়েতে “-
তোর দাদা মশাই বললে, যাঃ তোদের আর কিছুই দিতে হবে না! এমন উদার মানুষ কোথায় পাওয়া যাবে। বাপের বাড়ির সংগ্রাম আমার সেই সঙ্গে শেষ হল। (ক্রমশঃ) 🍁
ছবি : আন্তর্জালিক
🪔সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ, গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা, বইয়ের আলোচনা, উপন্যাস, ভ্রমণ কাহিনী। ই-মেল : editor.sasrayanews@gmail.com

1 thought on “International Women’s Day : নারী দিবসে বিশেষ গদ্য ‘প্রমা’ লিখেছেন দর্পণা গঙ্গোপাধ্যায়”
I was recommended this blog through my cousin. I’m
not positive whether this ppublish is written by mens of him as
no onne else understand such precise about my trouble.
You’re amazing! Thanks! http://Boyarka-Inform.com/