



শ্রেয়সী মজুমদার ★ সাশ্রয় নিউজ : খাবারে ঘি মানেই যেন বাঙালির তৃপ্তি। গরম ভাতে এক চামচ গাওয়া ঘি পড়লে যেমন মন ভরে যায়, তেমনই ত্বকের যত্নেও ঘি হয়ে উঠছে এক নতুন সৌন্দর্য-রহস্য। রূপ বিশেষজ্ঞ ও ত্বকচিকিৎসকেরা বলছেন, ঘি কেবল খাবারে নয়, সরাসরি ত্বকে ব্যবহারেও এনে দিতে পারে উজ্জ্বলতা, কোমলতা আর তারুণ্যের ছোঁয়া। বিশেষত, রাতে শোয়ার আগে মুখে ঘি লাগানো এখন সৌন্দর্য সচেতনদের নতুন ট্রেন্ড।

প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে ঘি ত্বকে যে সব গুণের জোগান দেয়, তা বহু দামি কসমেটিক প্রোডাক্টও দিতে পারে না। ঘিয়ের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ (Vitamin A), ডি (Vitamin D) এবং ই (Vitamin E)। এরা সকলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা পরিবেশের দূষণ বা ধুলোর কণার সঙ্গে লড়ে ত্বককে সুরক্ষা দেয়। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা, বলিরেখা প্রতিরোধ, এবং নরম কোমল ভাব বজায় রাখা সবই করে এই তিন ভিটামিন। ত্বকের রোগবিশেষজ্ঞ ডা. শ্বেতা শর্মা (Dr. Shweta Sharma) জানাচ্ছেন, “নিয়মিত ঘি খাওয়া যেমন শরীরের ভিতর থেকে সৌন্দর্য বাড়ায়, তেমনই বাইরে থেকে লাগালেও ত্বকের স্বাভাবিক জেল্লা ফিরে আসে। তবে যাঁদের স্কিন অয়েলি বা অ্যাকনে প্রবণ, তাঁদের সাবধান হতে হবে।”

ঘি ব্যবহার করতে পারেন খুব সহজেই, বিশেষ করে রাতের ঘুমের আগে। ঘুমের সময় আমাদের শরীর নিজেকে মেরামত করে। ত্বকও ব্যতিক্রম নয়। রাতে ঘি লাগালে তার উপাদানগুলো গভীরে গিয়ে কাজ করতে পারে। ফলে সকালে উঠে ত্বক হয় আরও কোমল, মসৃণ আর উজ্জ্বল। তবে জেনে নিতে হবে ব্যবহার বিধি।

কীভাবে ব্যবহার করবেন ঘি?
ত্বকের রূপ বাড়াতে ঘি ব্যবহার করা যায় নানা পদ্ধতিতে। যাঁরা প্রাকৃতিক রূপচর্চায় বিশ্বাস করেন, তাঁদের জন্য ঘি এক দারুণ উপায়।
১) মধুর সঙ্গে ফেসপ্যাক: এক চামচ ঘি ও এক চামচ মধু মিশিয়ে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর কুসুম গরম জলে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত করলে ত্বকের কালচে দাগ হালকা হবে এবং উজ্জ্বলতা বাড়বে।
২) র্যাশ বা কালচে দাগে: কোনও অংশে চুলকানি বা র্যাশ হলে অল্প ঘি মাখিয়ে ছেড়ে দিন। এক সপ্তাহের মধ্যে ত্বকের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে। পায়ের গোড়ালি ফাটলেও ঘি অত্যন্ত উপকারী।
৩) নাইট ময়েশ্চারাইজার হিসেবে: শোয়ার আগে মুখ পরিষ্কার করে এক চিমটে ঘি নিয়ে মুখে মালিশ করে লাগান। বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের জন্য এটা ম্যাজিকের মতো কাজ করবে।
৪) ডেড স্কিন রিমুভার হিসেবে: ঘিয়ের সঙ্গে এক চামচ চিনি, ক’য়েক ফোঁটা লেবুর রস, সামান্য হলুদ ও এক চিমটে বেকিং সোডা মিশিয়ে ফেস স্ক্রাব বানান। সপ্তাহে দু’বার ব্যবহার করলে মৃত কোষ দূর হবে ও ত্বক চকচকে হবে।
Read : Parenting | ছেলের বড় হওয়া, পারফেকশনের খোঁজে আমি ব্যস্ত, আর ও হাঁটছিল নিজের পথেই : অনুকৃতি

ঘি শুধু মুখেই নয়, সারা শরীরের যত্নেও কাজে লাগে। বিশেষত বডি পলিশিংয়ের ক্ষেত্রে। বডি ক্লেনজ়িং, স্ক্রাবিং, প্যাক বা মাসাজ সবেতেই ঘিয়ের উপস্থিতি আপনাকে পার্লারের বিল ছাড়াই দেবে ঝলমলে ত্বক।
একটি ঘরোয়া বডি ক্লিনজিং পদ্ধতি
দেড় কাপ কাঁচা দুধ, দুই চামচ বেসন আর এক চামচ ঘি দিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। সারা শরীরে লাগিয়ে শুকিয়ে গেলে গরম জলে ভেজানো তোয়ালে দিয়ে ঘষে তুলুন। নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকে তাজা ভাব ও কোমলতা ফিরে আসবে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, যাঁদের ত্বক তৈলাক্ত, বা অ্যাকনে রয়েছে, তাঁদের জন্য ঘি-র ব্যবহার উল্টো সমস্যা ডেকে আনতে পারে। তাই ঘি মাখার আগে নিজের ত্বক চিনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। বিশিষ্ট রূপবিশেষজ্ঞ অনিতা গিরি (Anita Giri) জানাচ্ছেন, “আমার বহু ক্লায়েন্টকে আমি রাতে ঘি লাগাতে বলি, বিশেষত যারা শুষ্ক ত্বকে ভোগেন। তবে ওল্ড ফ্যাশনড মনে হলেও, ঘি এখনও ত্বকের জন্য এক অনবদ্য সমাধান।” সুতরাং, ব্যয়বহুল নাইট ক্রিম বা কেমিকালযুক্ত ফেসপ্যাকের বদলে একবার সাত দিন পরপর ঘি ব্যবহার করে দেখুন। রাতে শোবার আগে ঘি মাখুন মুখে, সকালে ঘুম ভাঙলে আয়নায় নিজের প্রতিচ্ছবিকে নতুনভাবে চিনে নিতে হবে আপনাকেই। সৌন্দর্য যেন ঘুমের মধ্যে থেকেই ফুটে উঠবে। আর তাই ত্বকের যত্নে রূপচর্চার এই প্রাচীন কিন্তু কার্যকর পদ্ধতির কাছে আজও হার মানে আধুনিক প্রসাধনীর চাকচিক্য।
ছবি : প্রতীকী
আরও পড়ুন : A Fashion Extravaganza Celebrating India’s Handloom Heritage and Craftsmanship
