সাশ্রয় নিউজ ডেস্ক ★ ওয়াশিংটন : বিশ্বজুড়ে আবারও পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা উসকে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। গত রবিবার এক মার্কিন টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প দাবি করেছেন, পাকিস্তান (Pakistan), চীন (China), রাশিয়া (Russia) এবং উত্তর কোরিয়া (North Korea) গোপনে পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালাচ্ছে। আর সেই কারণেই, ৩৩ বছর পর আবারও আমেরিকায় (United States) পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের এই মন্তব্যে যেমন তীব্র কূটনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে, তেমনই বিশ্ব নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ বেড়েছে।
ট্রাম্প স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “বাকি দেশগুলি পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করছে। আমরা একমাত্র দেশ যারা পরীক্ষা করছি না। আমরাও পিছিয়ে থাকতে চাই না।” তাঁর কথায়, “উত্তর কোরিয়া পরীক্ষা করছে, পাকিস্তান পরীক্ষা করছে, কিন্তু কেউ জানে না তারা কী করছে। তারা সব কিছু গোপনে করছে।” এই মন্তব্যের মধ্যেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের “পরমাণু ক্ষমতার পুনরুজ্জীবন”-এর ডাক দিয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্পের বক্তব্য শুধু একটি সামরিক ইঙ্গিত নয়, এটি একধরনের রাজনৈতিক বার্তা, যা সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলিকে। কারণ তাঁর অভিযোগের তালিকায় থাকা চার দেশই বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। ফলে ট্রাম্পের মন্তব্য কূটনৈতিক টানাপোড়েন আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক মহল।
চীনের (China) পক্ষ থেকে অবশ্য ট্রাম্পের অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে। বেইজিং জানিয়েছে, তারা একটি দায়িত্বশীল পরমাণু শক্তিধর দেশ এবং আত্মরক্ষার প্রয়োজন ছাড়া পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষা চালায় না। অন্যদিকে রাশিয়া (Russia) থেকে এ বিষয়ে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া আসেনি। তবে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের মন্তব্যে এক ধরনের “রাজনৈতিক নাটকীয়তা” রয়েছে, যা আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে। এরই মধ্যে ট্রাম্পের প্রশাসনের ভেতর থেকেও শোনা গেছে এক ভিন্ন সুর। মার্কিন এনার্জি সেক্রেটারি ক্রিস রাইট (Chris Wright) জানিয়েছেন, আপাতত আমেরিকার কোনও পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা নেই। তাঁর কথায়, “আমরা যে পরীক্ষার কথা বলছি, সেটি মূলত প্রথাগত। এখানে কোনও বিস্ফোরণ হবে না। এগুলোকে বলা হয় ‘অ-জরুরি’ পরীক্ষা।” অর্থাৎ, ট্রাম্পের নির্দেশ আসলেও তা আপাতত সিস্টেম চেক বা ল্যাবরেটরি পর্যায়ের পরীক্ষা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে। তবুও এই ঘোষণাকে ঘিরে আতঙ্ক থামছে না। ট্রাম্প প্রশাসনের একাংশ বলছে, এই পরীক্ষা দরকার আমেরিকার পরমাণু অস্ত্র ব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করতে। দীর্ঘদিন ব্যবহৃত অস্ত্রগুলির বিভিন্ন যান্ত্রিক অংশ সময়ের সঙ্গে ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে কিনা, সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হবে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এমন পদক্ষেপ কেবল প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলিকে উস্কে দেবে এবং নতুন এক অস্ত্র প্রতিযোগিতার সূচনা করতে পারে। সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প আরও দাবি করেন, গত বছর ভারত (India) ও পাকিস্তানের (Pakistan) মধ্যে যে পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তা তিনি নিজেই ঠেকিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমি যদি তখন পদক্ষেপ না নিতাম, লক্ষ লক্ষ মানুষ মারা যেত।” এই মন্তব্যকেও অনেকেই ট্রাম্পের স্বঘোষিত কূটনৈতিক সাফল্যের প্রচার বলে ব্যাখ্যা করছেন।
তবে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক পরমাণু মন্তব্য একদিকে যেমন বৈশ্বিক রাজনৈতিক চাপ বাড়াবে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার (Nuclear Non-Proliferation Treaty) কাঠামোকেও নাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ তাঁর ঘোষণায় ইঙ্গিত মিলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হয়ত নতুন করে সামরিক প্রস্তুতি জোরদার করছে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, “ট্রাম্পের বক্তব্য সরাসরি একধরনের হুঁশিয়ারি। এটি শুধু সামরিক ইস্যু নয়, বরং মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধেরও অংশ।” তারা মনে করছেন, এই ধরনের মন্তব্য মার্কিন নির্বাচনী রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে, যেখানে ‘শক্তিশালী আমেরিকা’ গড়ার প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের অন্যতম মূল স্লোগান। এদিকে, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিস্থিতি নতুন করে এক পরমাণু প্রতিযোগিতার ইঙ্গিত দেয়। বিশ্বজুড়ে শীতল যুদ্ধের (Cold War) সময়কার আতঙ্ক যেন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। প্রশ্ন উঠছে, কেন হঠাৎ এখন এই পরীক্ষা? এর পেছনে কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য, নাকি বাস্তব নিরাপত্তাজনিত প্রয়োজনে এমন সিদ্ধান্ত?যদিও আপাতত ট্রাম্পের প্রশাসন পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করছে, তবুও তাঁর বক্তব্য যে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে কম্পন তুলেছে, তা আর অস্বীকার করা যাচ্ছে না। বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে, এই ঘোষণার পর আমেরিকার পরমাণু নীতি কোন দিকে মোড় নেয়, এবং ট্রাম্পের “আমরাও পিছিয়ে থাকতে চাই না” মন্তব্য কতটা বাস্তব রূপ নেয়।
ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Gaza ceasefire warning, Donald Trump Hamas warning | ট্রাম্পের কড়া হুঁশিয়ারি: ‘শুধরে না গেলে হামাসকে সমূলে নির্মূল করা হবে’ শান্তিচুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত!




