



রীতা বিশ্বাস পান্ডে : সিমলা চুক্তি (Simla Agreement) বাতিল করলে পাকিস্তানের জন্য কাশ্মীর ইস্যুটি আন্তর্জাতিক স্তরে, বিশেষ করে জাতিসংঘে উত্থাপন করার বা চীনের মতো তৃতীয় পক্ষকে নিজেদের দিকে টানার সুযোগ তৈরি হবে। সিমলা চুক্তি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে কাশ্মীর সমস্যার সমাধানের একটি ভিত্তি তৈরি করেছিল। এই চুক্তি বাতিল হলে পাকিস্তান সেই দ্বিপাক্ষিক কাঠামোর বাইরে গিয়ে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপের আহ্বান জানাতে পারে, যা ভারতের জন্য একটি কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।
এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে যে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্ককে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে এবং সন্ত্রাসবাদের মতো ইস্যুতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে, ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে সিমলা চুক্তি বাতিলের কিছু সম্ভাব্য কৌশলগত সুবিধা থাকতে পারে।
দ্বিপাক্ষিক আলোচনার ব্যর্থতা প্রদর্শন করতে ভারত দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আন্তরিক নয় এবং সন্ত্রাসবাদকে মদত দিয়ে আলোচনা প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। সিমলা চুক্তি বাতিল করে ভারত সম্ভবত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এই বার্তা দিতে চায় যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পথ কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে পাকিস্তানের অসহযোগিতার কারণে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে কারণ পাকিস্তান যদি সিমলা চুক্তি বাতিলের পর কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে যায়, ভারত তখন পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ-সম্পৃক্ততাকে জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করার আহ্বান জানাতে পারবে। সিমলা চুক্তি ভারতকে একটি দ্বিপাক্ষিক কাঠামোর মধ্যে কিছুটা হলেও আবদ্ধ করেছিল। এই চুক্তি বাতিল হলে ভারত কাশ্মীর নিয়ে তার নিজস্ব নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আরও বেশি স্বাধীনতা পেতে পারে।
পাকিস্তান বর্তমানে গভীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ভারত সম্ভবত মনে করছে যে এই পরিস্থিতিতে সিমলা চুক্তি বাতিল করে পাকিস্তানের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করা গেলে অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল পাকিস্তান আন্তর্জাতিক স্তরে দর কষাকষির ক্ষমতা হারাতে পারে।
তবে, এই সুবিধাগুলো তখনই বাস্তবায়িত হতে পারে যদি ভারত একটি সুচিন্তিত ও দীর্ঘমেয়াদী কূটনৈতিক কৌশল নিয়ে অগ্রসর হয় এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তার পদক্ষেপের যৌক্তিকতা বোঝাতে সক্ষম হয়। অন্যথায়, সিমলা চুক্তি বাতিল ভারতের জন্য আন্তর্জাতিক স্তরে আরও বিচ্ছিন্নতা ডেকে আনতে পারে।
ব্যবহারিক সীমাবদ্ধতা ও সীমিত সুবিধা সিন্ধু জলচুক্তি বিশ্বের অন্যতম সফল জলবন্টন চুক্তি হিসেবে বিবেচিত হয়। এই চুক্তি বাতিল হলেও জলের স্বাভাবিক প্রবাহ পাকিস্তানের দিকেই থাকবে। ভারত চাইলেই রাতারাতি বিপুল পরিমাণ জল ধরে রাখার মতো অবকাঠামো তৈরি করতে পারবে না।
সিন্ধু জলচুক্তি বাতিলের সম্ভাব্য কারণ ও সীমিত সুবিধাগুলো আমি যে ভাবে দেখছি তা হল, পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি। ভারত সম্ভবত জলকে একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। বিশেষত যখন পাকিস্তানের দিক থেকে সন্ত্রাসবাদ এবং সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশের মতো কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়, তখন জলচুক্তি বাতিলের হুমকি একটি কৌশলগত বার্তা হতে পারে।
চুক্তি পুনর্বিবেচনার সুযোগ তৈরি: ভারত দীর্ঘদিন ধরে সিন্ধু জলচুক্তির কিছু ধারা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছে। চুক্তি বাতিল করার হুমকি সম্ভবত পাকিস্তানকে সেই ধারাগুলো পুনর্বিবেচনা করার জন্য আলোচনার টেবিলে বসাতে বাধ্য করতে পারে।
ভবিষ্যতের জল ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে জলের প্রাপ্যতা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। ভারত সম্ভবত দীর্ঘমেয়াদী জল ব্যবস্থাপনার কথা মাথায় রেখে চুক্তি বাতিলের একটি বার্তা দিতে চাইছে, যদিও এর তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন কঠিন।
তবে, সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল করার বেশ কিছু বড় ঝুঁকি রয়েছে যেমন আন্তর্জাতিক সমালোচনা: বিশ্বব্যাংক এই চুক্তির মধ্যস্থতাকারী ছিল এবং আন্তর্জাতিক স্তরে এর যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। চুক্তি বাতিল করলে ভারত আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে পড়তে পারে এবং এর ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
এরপর আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি: জলের অভাব পাকিস্তানে আরও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে।
তিন নম্বর, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও খারাপ: ব্রহ্মপুত্র নদের জলবন্টন নিয়ে চীনের সঙ্গে ভারতের কোনও আনুষ্ঠানিক চুক্তি নেই। সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল করলে ব্রহ্মপুত্র নিয়ে চীনের উপর চাপ সৃষ্টি করার ভারতের সুযোগ কমে যাবে।
সুতরাং, সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় এবং এর বাস্তবায়ন ভারতের জন্য খুব বেশি সুবিধা নাও আনতে পারে।
তাই আমার সীমিত বুদ্ধি যা বলে সেটা হচ্ছে ভারতের আকাশসীমা পাকিস্তানের জন্য বন্ধ করা একটি অপেক্ষাকৃত সহজ এবং কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে। এর বেশ কিছু সুস্পষ্ট সুবিধা রয়েছে যেমন
পাকিস্তানের উপর অর্থনৈতিক চাপ- পাকিস্তানের বিমান পরিবহন খাত ভারতীয় আকাশসীমা ব্যবহার করার জন্য ভারতকে অর্থ প্রদান করে। আকাশসীমা বন্ধ করলে পাকিস্তান এই সুবিধা হারাবে এবং তাদের বিমান সংস্থাগুলো দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল রুটে চলাচল করতে বাধ্য হবে, যা তাদের উপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে।
দ্বিতীয়ত, আকাশসীমা বন্ধ করলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে, যা কূটনৈতিক এবং বাণিজ্যিক উভয় ক্ষেত্রেই পাকিস্তানের জন্য অসুবিধা তৈরি করবে।
তৃতীয়ত, আকাশসীমা বন্ধ করলে ভারত তার আকাশসীমার নিরাপত্তা আরও ভালভাবে নিশ্চিত করতে পারবে এবং পাকিস্তানের দিক থেকে কোনও অপ্রত্যাশিত অনুপ্রবেশের ঝুঁকি কমাতে পারবে।
চতুর্থত, এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে যে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্ককে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে এবং সন্ত্রাসবাদের মতো ইস্যুতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে।
তবে, এর কিছু সীমিত অসুবিধা থাকতে পারে, যেমন অন্যান্য দেশের উপর প্রভাব- কিছু আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাকেও তাদের রুটে পরিবর্তন আনতে হতে পারে, যা সামান্য হলেও বিরক্তি সৃষ্টি করতে পারে।
পাল্টা পদক্ষেপের ঝুঁকি-পাকিস্তানও ভারতের জন্য তাদের আকাশসীমা বন্ধ করতে পারে, যদিও তাদের উপর এর প্রভাব বেশি হবে।
সব মিলিয়ে, ভারতের আকাশসীমা পাকিস্তানের জন্য বন্ধ করা একটি কার্যকর এবং কৌশলগত পদক্ষেপ হতে পারে যার মাধ্যমে ভারত পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।
পরিস্থিতির প্রয়োজনে আমাকে বিজেপির সঙ্গে চলতে হয় কারণ আর বিকল্প দেখিনা। বিজেপির হিন্দুত্ববাদী আদর্শের সঙ্গে আমি একমত নই, তবে তাদের অন্যান্য কিছু কর্মকাণ্ডে আমি সন্তুষ্ট। আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতকে তুলে ধরার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী মোদির প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমার রক্তে স্বাধীনতা সংগ্রামীর রক্ত বহমান, আমার বাবা একধারে যেমন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন অন্যদিকে যৌবনকালে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামী ও ছিলেন। দেশের প্রতি আমার ভালবাসা গভীর। আমি সর্বদা দেশের মঙ্গল কামনা করি। তাই পাকিস্তান আর ভারতের নির্ণয় আমাকে কিছুটা ভাবাচ্ছে। তাই আমার মতে
সিমলা চুক্তি বাতিল, সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল এবং আকাশসীমা বন্ধ করার মতো প্রতিটি পদক্ষেপেরই নিজস্ব ঝুঁকি, সুবিধা এবং সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কূটনৈতিক, ব্যবহারিক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া –এই তিনটি দিক বিবেচনা করে ভারতকে একটি সুচিন্তিত কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
সিমলা চুক্তি বাতিল একটি উচ্চ-ঝুঁকির পদক্ষেপ হতে পারে যা পাকিস্তানকে আন্তর্জাতিক স্তরে আরও বেশি সুযোগ করে দিতে পারে। তবে, যদি ভারত তার কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় সফল হয়, তবে এটি পাকিস্তানের উপর চাপ সৃষ্টি এবং নিজস্ব নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে সুবিধা এনে দিতে পারে।
সিন্ধু জলচুক্তি বাতিল করার ব্যবহারিক সীমাবদ্ধতা অনেক বেশি এবং এর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক হতে পারে। জলকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
অন্যদিকে, ভারতের আকাশসীমা পাকিস্তানের জন্য বন্ধ করা একটি অপেক্ষাকৃত কার্যকর এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে যা পাকিস্তানের উপর অর্থনৈতিক ও যোগাযোগগত চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং ভারতের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে পারে।
পরিশেষে, ভারত কোন পথে হাঁটবে তা নির্ভর করে তার দীর্ঘমেয়াদী কৌশল, আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক সমীকরণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়ার উপর। প্রতিটি পদক্ষেপের সম্ভাব্য পরিণতি গভীরভাবে বিশ্লেষণ করে ভারতকে অগ্রসর হতে হবে।
ছবি : সংগৃহীত
এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com
বি: দ্র: সমস্ত লেখা লেখকের নিজস্ব। দায় লেখকের নিজস্ব। কোনও বিতর্কিত বিষয় হলে সংবাদ সংস্থা কোনওভাবেই দায়ী থাকবে না এবং সমর্থন করে না। কোনও আইনি জটিলতায় সাশ্রয় নিউজ চ্যানেল থাকে না। লেখক লেখিকা প্রত্যেকেই লেখার প্রতি দ্বায়িত্ববান হয়ে উঠুন। লেখা নির্বাচনে (মনোনয়ন ও অমনোনয়ন) সম্পাদকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
