



কবি কবিরুল ইসলাম কঙ্ক সাহিত্যের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছেন দীর্ঘদিন। সাহিত্যের সমস্ত স্তরের তাঁর বিচরণ হলেও কবিতার কাছেই বারবার আশ্রয় নিয়েছেন। এই কবির জন্মস্থান মুর্শিদাবাদ জেলার বেলডাঙার দেবকুন্ডুতে। সাহিত্য ও শিক্ষকতা সমানভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। কবির প্রকাশিত বই : মোট ১৪ টি। উল্লেখযোগ্য বইগুলির মধ্যে : স্পর্ধিত উচ্চারণ, সূর্য ছুঁলে, সে, বাংলা শায়েরী, কবিতার অ্যালবামে পাঁচ, একা আছি নির্বাসনে, অন্য পড়া বিজ্ঞানের ছড়া, সন্দেহজনক কথাবার্তা, কলেজ জীবনের নোটস, আয় পাখি ধান খা, কথামঙ্গল, এক আকাশ ছড়া (সম্পাদিত) পাঠকদের ভেতরে সমাদৃত। পেয়েছেন
‘সাহিত্য স্বর্ণরত্ন’ সম্মাননা (ওয়ার্ল্ড ফোরাম অফ জার্নালিস্ট এন্ড রাইটার্স)। এছাড়াও ‘আব্দুল করিম স্মৃতি পুরস্কার’ (ইদানীং সাহিত্য পত্রিকা), ‘কবি সম্মাননা’ (কলকাতা ইউনাইটেড কালচারাল সোসাইটি), বঙ্গ শ্রেষ্ঠ সম্মান ইত্যাদি। ‘সারা বাংলা কবিতা প্রতিযোগিতা’-তে একাধিকবার ‘প্রথম’ ও ‘দ্বিতীয়’ স্থান অর্জন করেছেন। খুব যত্নের সঙ্গে সম্পাদনা করেন ‘প্রতিচ্ছবি’ নামে একটি সাহিত্য পত্রিকা। পাঠকদের জন্য সাশ্রয় নিউজ-এর আজকের পাতায় কবির একগুচ্ছ কবিতা।
কবিরুল ইসলাম কঙ্ক
হল্লা বোল
কাঁপছে শহর, কাঁপছে গ্রাম
ভূতের মুখে পুতের নাম।
সেসব গাঁয়ে ফুটছে ফুল
রং বাহারে মনের ভুল।
তল্পি তল্পা সবই থাক
যেমন পারো বাজাও ঢাক।
ঢাক বাবাজি দারুণ বাজে
বাজনা থাকে আপন কাজে।
কাজে খুবই গন্ডগোল
চলছে দেশে হল্লা বোল।
খাচ্ছে এবং মারছে ল্যাং
খেলছে তবু মচকা ঠ্যাং।
বস্তা বন্দি সস্তা বুলি
যেমন খুশি দিচ্ছে খুলি।
আমরা হবো ডিজিটাল
নাচছে হাজার পঙ্গপাল।
টাকার খেলা চলছে বেশ
চলছে নাটক, চলছে দেশ।
নতুন বছর মেলছে চোখ
সবার শুভ, মঙ্গল হোক।
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
আলুন বালুন চালুন কই
দিনরাত্তির ব্যাঙ্কে লাইন
টাকার জোগান পায়না থই।
মাছ ধরতে খোকা-ই যায়
বাকি কথা সবার জানা
লাভের গুড় ব্যাঙ-চিলে খায়।
হাতি নাচছে, নাচছে ঘোড়া
নতুন টাকা লটারি যেন
না-পাওয়ারা কপালপোড়া।
কাঠবেড়ালি পেয়ারা খাও
দুই-টি হাজার যত্নে রাখা
কষ্ট করে কেষ্ট নাও।
দিনে দিনে পকেট টান
তাঁতির বাড়ি আরামে ব্যাঙ
নো টেনশনে গাইছে গান।
টাকা চাই, টাকা কই
জনগণের হয়রানি, আর
নেপো-য় মারে টাটকা দই।
নোটন পায়রা ঝোটন জোট
কোন এটিএম খোলা আছে
ল্যাঙট মেরে লাগাও ছোট।
সোয়া-শো কোটি চল রে চল
চলছে দেশে টাকাতন্ত্র
মুখের সামনে খুড়োর কল।
হাট্টিমাটিম ডিম পাড়ে
উদো-বুধোরা ভ্যাবাচ্যাকা
কার বোঝা কার ঘাড়ে?
এক যে আছে মজার দেশ
সোজা কথা কেউ বোঝে না
উল্টো জিনিস বোঝেন বেশ।
খাওয়াদাওয়া
চুরি করে দই খান
গল্পের কেষ্টা,
যশোদারর মাথা ধরে
বোঝেন না কেসটা।
ভোজবাড়ি খাওয়াদাওয়া
জমে ভালো বেশটা,
দুই থেকে তিনদিন
থাকে তার রেশটা।
কফি টোস্ট ওমলেট
যদি হয় নাশতা,
তারপর পদ রেখো
চিনেবাদাম পেসতা।
খাওয়া যায় সবকিছু
যদি স্বাদ থাকে ভরা,
খাওয়াটা সহজ বটে
কঠিন হজম করা।
দাদা খান দিদি খান
খাওয়াদাওয়া শেষটা,
লাঞ্চ হোক কি ডিনার
খেতে ভালো দেশটা।
ব্যবধান তত্ত্ব
তোমাদেরকে দেখেই জানি
আসলে তোমরা আবর্জনা,
যতই পরো ময়ূরপুচ্ছ
আসলে তো কাকের ছানা।
তোমাদেরকে দেখেই বুঝি
আসলে তোমরা লিমেরিক,
যতই কোনো গল্প হও
আসলে তা সব স্বাভাবিক।
তোমাদেরকে দেখেই শিখি
মুখের কথা কাজে নয়,
পরের ঘাড়ে দুই-পা দিয়ে
কেমন করে বাঁচতে হয়।
তোমাদেরকে দেখেই বুঝি
আসলে তোমরা কত জলে,
হাঁসের মতো খাচ্ছো লুটে
হরির মাল ছলে বলে।
আসলে তোমরা তোমরাই
আমরা – আমি আমরা,
মাঝখানেতে বিস্তর ফাঁক
হোক না একই চামড়া।
দিব্যি আছি
দুন্দুভিরা বেজেই চলে
মনের মাঝে,
যখন তখন উঠছে জ্বলে
সকাল সাঁঝে।
এখন যদি মাঝ আকাশে
ভালোবাসা,
কোথায় তবে রাখবে বলো
মনের আশা।
এই পৃথিবী ভীষণ জটিল
গোলক ধাঁধাঁ,
সব হৃদয়ের মাঝে আছে
স্বার্থ বাঁধা।
কোথায় রাখবে পা, সবখানেই
আবর্জনা,
সিঁকের উপর তুলে রাখো
মনের ঘৃণা।
চলছে যেমন তেমন চলুক
এই পৃথিবী,
আমরা না হয় রয়েই যাবো
পরজীবী।
কাজ কী ভায়া উল্টো হেঁটে
কোমর কষে,
শাসন মেনে দিব্যি আছি
রসে বশে।
নেই নেই নেই
পাড়ায় ধুলো মাঠ নেই
বই খাতাতে ভর্তি ঝুলি
পড়ার মতো পাঠ নেই ।
মানুষ আছে জন নেই
স্বার্থ নিয়ে বেঁচে থাকা
মনের মতো মন নেই।
সবুজ পাতার বন নেই
কালো মেঘের আকাশ আছে
বৃষ্টি কথার পণ নেই।
ভাবার কোনো শেষ নেই
মাথায় যখন টাকার কথা
রূপকথাদের দেশ নেই।
পুকুর ভরা মাছ নেই
মাঠ ছেড়ে হাঁটছে চাষি
মায়ের স্নেহ কাছ নেই।
সোনার বরণ খেত নেই
চারদিকেতে দূষণ ভারি
আলাদিনের প্রেত নেই।
মিষ্টি সুরের গান নেই
চলছে জীবন সরলরেখায়
বাঁচার মতো প্রাণ নেই।
দৃশ্যপট
অস্তিত্বের চোঁয়া ঢেকুর
তেমন মুগুর যেমন কুকুর।
পিঠে খেলে পেটে সয়
বেল্লিপনা জগতময়।
ভোমরা খাচ্ছে ফুলের মধু
তুমি নন্দ, সবাই সাধু।
মানবিকতায় প্রবল ভাঙন
মূল্যবোধে বিষের গলন।
মানুষ আর নেইকো মানুষ
চুপসে ফেলো প্রেমের ফানুস।
গাও যতই জীবনের গান
চিতায় পুড়ে হবে শ্মশান।
যতই করো কিস্তিমাত
কবর সেই সাড়ে তিন হাত।
দৃশ্য বদলে নতুন শতক
তোমার এবার বুদ্ধি হোক।
বাস্তু-ঘুঘু
মন-চত্বরে ঘুঘুর চারণ
চিরস্থায়ী বাসা,
অনুভূমিক নেতিয়ে পড়ে
উলম্ব সব আশা।
কবে যে আর স্বাধীন হবো
মেলে পাখি ডানা,
চোখের কাজলরেখায়
নিত্য পান্তা আনা।
সেকাল থেকে একাল
ঘুঘুরা সব ডাকে,
মনের গোপন কোণে
ঘুঘুরা সব থাকে।
ছিন্নপত্রের অংশ
বৃত্তের চারধারে জমে উঠেছে অবৈধ স্তূপ
এবার চারপাশ ঘিরে জমে উঠবে উৎসব।
পাতার হাত ধরে কাঠকুড়ানি কবেই গেছে জঙ্গলে
মাটিতে সূর্য আলোর সাথে পাখির কলরব।
হিম শিশিরে অব্যক্ত চাঁদের জোছনা নিশ্চুপ
নিঃশব্দে ভেঙে যায় মাটি, ভাঙলা নদীর তীর।
দিনের আকাশে তারার দল নেই কে বলে
এই দেখো, পকেটে পড়ে খুচরো মনস্থির।
উজানগাঙে ভাসানযাত্রা আজ অসংখ্যবার
আমি ভাসি, তুমি ভাসো, হৃদয় ভাসে আকছার।
মেঘকল্প রূপকথা
হঠাৎ মেঘের উদ্ধত তামদারি ভেজায়
আঙিনা, জলসাঘর ও হদৃয়ের বাগান
সম্পৃক্ত দেউলেপনায় সুর-মরমের গান
রোজ হৃদয়ের বাদল কড়া নেড়ে যায়।
প্রায়শ মেঘ ছুঁয়ে থাকে আপন ঘরবাড়ি
তাতে মেশানো নিজস্ব খেয়ালিপনা
সুখের মাটিতে আঁকে প্রপাত আল্পনা
তারপর যাবতীয় অ-সুখের সাথে আড়ি।
মেঘবৃষ্টিতে বন্য হৃদয় শুধুই হারিয়ে যায়
মেঘপর্বে দূতকে নিয়ে উদাস কালিদাস
প্রেম ঝড় বইতে থাকে হন্যি বারোমাস
তুমি ডুবতে থাকো, আমিও ডুবি প্রায়।
🍁অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক
এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com
বি: দ্র: সমস্ত লেখা লেখকের নিজস্ব। দায় লেখকের নিজস্ব। কোনও বিতর্কিত বিষয় হলে সংবাদ সংস্থা কোনওভাবেই দায়ী থাকবে না এবং সমর্থন করে না। কোনও আইনি জটিলতায় সাশ্রয় নিউজ চ্যানেল থাকে না। লেখক লেখিকা প্রত্যেকেই লেখার প্রতি দায়িত্ববান হয়ে উঠুন। লেখা নির্বাচনে (মনোনয়ন ও অমনোনয়ন) সম্পাদকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
