Sasraya News

Wednesday, April 23, 2025

Poet Asim Das : কবি অসীম দাস এর কবিতাগুচ্ছ

Listen

বি অসীম দাস -এর জন্ম মুর্শিদাবাদের সের গ্রামে। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে রসায়নে স্নাতক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম টেক করে চাকরি জীবনে প্রবেশ। দশ বছর বয়সে মায়ের হাত ধরে ভ্রমণকাহিনী লিখে সাহিত্য চর্চার সূত্রপাত হয়। পরবর্তীতে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও সংকলনে প্রকাশ ধারা অব্যাহত। কবি সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং -এ‌‌ নিয়মিত কাব্যচর্চায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বহু সাহিত্য অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি এবং বিচারকের ভূমিকায় ক্রমাগত সম্মানিত হয়েছেন। সংবাদপত্র ও সাহিত্য পত্রিকার পরিবার থেকে বিশেষ সম্মাননা পেয়েছেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ, “পদ্য পদ হাঁটে”, “নির্বাচিত একশত‌”, “নীল অরণ্যে হরিনাভী”, “হৃদয়ের তরবারী, মৃত্যু দাঁড়ালে”, “মধ্যবিত্ত মশারি এবং কৃপণ মেঘ “, ” এক গাছ টুকটুকে সুর্য সকাল “‌। কলকাতা নিউটাউনের বাসিন্দা কবি অসীম দাস কবিতার পাশাপাশি ভালবাসেন থিয়েটার।

 

 

 

 

অসীম দাস

আকরিক খনিজ ইচ্ছায়

 

 

ঢুলু ঢুলু সূর্যের ছায়ার সমুদ্র থেকে
উঠে এসো নিদ্রিত কালঘুমে হে প্রমিথিউস।
নির্মিত অন্ধকারে বড় কষ্টে আছে
পৃথিবীর বিশুদ্ধ কর্ণিয়া।

আলোর স্বপ্ন জ্বেলে দীর্ঘ করো
মুখরিত রাত্রির আয়ু।
যত বেশি, বেশি রাতে আলোর তীব্রতা
তত বেশি হরপ্পার সূচক সভ্যতা।

অতঃপর আলো ঢালো আকরিক খনিজ ইচ্ছায়,
ক্ষয়ে যাওয়া হিমবাহ বিষাদের মূলে,
পাতালের নিভু নিভু জলতল তলে,
বেপাত্তা হয়ে যাওয়া লাখো লাখো
কর্মচ্যুত নারীদের নাড়ি ধুকপুকে,
আত্মঘাতী যুদ্ধের খবর ফুরিয়ে ফেলা
ভুলোমন জনতার শোকে,
সবশেষে অভিজাত উদাসীন বিবেকের কূলে।

 

 

যেমন খুশি তেমন সাজো

 

অশ্লীল অনিয়মের অন্ধকারে থাকতে থাকতে
গা- সওয়া হয়ে যাচ্ছে চোখ।
যে চোখ একদিন আগুনের আলপনা
এঁকেছিলো সভ্যতার আঙিনায়,
সে এখন আগুন নেভার অপেক্ষায়,
কেননা এ আগুনে কোনও আলো নেই।

সততার মৃত্যু মিছিল লিখলে
মিছিল শব্দের অপমান করা হয়।
কি লিখি কি লিখি ভাবতেই
আসল আলোর মশাল জ্বলে ওঠে
বিনিদ্র পৃথিবীর আহ্নিক কর্নিয়া কূলে।

প্রকৃতির সৃষ্টিকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে যারা
তারাই একে অপরের মুখোশ বদলে নিচ্ছে।
মুড়ি মুড়কির মতো মুখোশ ব্যবহারে
বিশুদ্ধ বহুরূপীগণ বেদম লজ্জা পাচ্ছেন।

যেমন খুশি তেমন সাজো’র
স্কুল দিন আর নেই।

 

 

 

অসফল ফসলের আলে

 

নিরাপদ দূরত্বের দাঁড়ে ক্রমাগত
নিরপেক্ষ হাওয়ার বাতাস লাগালে
শ্মশান আগুনও হিমাঙ্ক বরফ হয়ে যাবে,
শেষ মৃত্তিকার মূলে চির ওমের শান্তি হারাবে।
তার আগে আগে ভাগে
সর্বজনীন বিপদের আঁচে পোড়া অভ্যেস করো।

লকলকে লালা লোভ ঘিরে ফেলছে
পৃথিবীর আহ্নিক আয়ুর পরিধি।
দৈর্ঘ্যে কমে আসছে অপুষ্ট শৈশবের ছিলা।
সংবাদের পা আটকে যাচ্ছে
মৃত সৈনিকের নিঃসঙ্গ চৌকাঠে,
নীলবর্ণ কৃষকের অসফল ফসলের আলে,
বধূ আর বাঙ্কারের অসমাপ্ত বাঁচার বিতানে।
ইত্যাকার সংকটের কূলে, কাল নয়
বসন্ত বীজেদের বৃন্ত বাঁচাতে আজই
পড়ো পড়ো পড়শির পার্শ্বে দাঁড়াও।

ক্রুশ কাঁটায় পুড়তে পুড়তে যীশু স্বয়ং
আজও ছিনিয়ে নেওয়া চাবুকের খোঁজ করে চলেছেন।

 

 

 

 

অন্তত একটি মনোযোগী মন

 

অপেক্ষায় ধৈর্য্য হারালে আশার আশ্রয় হারাবে।
আশা মুখ ঘুরিয়ে নিলে
সাত মন তেলেও স্বপ্ন নাচবে না।
যতই চেষ্টার দাঁড়ে ঘামের বন্যা বইয়ে দাও,
ধৈর্য্যের মুঠি আলগা হলেই
সেই বেড়াল ইঁদুরের গপ্পো শোনাবে
ক্ষমাহীন সময়ের জ্বর।

বাদুড়ের কালো ছায়ায় ঝুলছে জীবনের নির্জন আয়ু।

অন্তত একটি মনোযোগী মনের ভরসা চুম্বনে
সরগরম হতে পারে বিস্বাদ শ্রমের শূন্যতা।
অন্তত একটি শাপলা সকালের টইটম্বুর ভোরে
নেমে আসতে পারে বিশুদ্ধ পথিক বাসনা।
অন্তত একটি স্নেহান্ধ ক্ষমার চোখে
হাজারো খুঁতের ক্ষতে রিমঝিম রূপালী প্রলেপ।

 

 

শেষ সূর্যে অ্যামিবার সংগ্রাম

 

বিশিষ্ট সবুজের মৌলিক মুখ দেখবো বলে
‘মৌসুমী মাচান থেকে একটি করে’ অপুষ্ট মেঘ
পেড়ে এনে ধূসরকে দৈনিক দানাপানি দিই।

আপাত অপটু স্টেশনের কুয়াশার ত্বকে
জমে যাওয়া যাপনের আংশিক অনুবাদ
লিখি রাখি জায়মান জাতক লিপিতে।
জং ধরা অতৃপ্তির গা থেকে খসে পড়ে
ভিড়ে ঠাসা একাকিত্বের দু’ চারটে গুমোট সময়।

অনন্তর
সজীব সতর্ক করে গর্ভবতী শস্যের শিশির উত্তাপ।
পৃথিবীর শেষ সূর্য নিভু নিভু হলে
আবারও অ্যামিবার সংগ্রামে যেন পরাঙ্মুখ না হই
-এই হোক সংকট শ্যাওলা দামে
সভ্যতার আদিম বুদবুদ।

 

 

 

চোখের পাতায় নীলাম্বরী

 

বাতাস কখন ঝড় হলো আর
বরফ জ্বলে আগুন,
খুঁজতে খুঁজতে কুড়িয়ে পেলাম
এক কুঁড়িতে ফাগুন।

ফাগুন মানেই পলাশ হু হু
শকুন্তলার জ্বর,
প্রেমের কামে কাটছো কৃপণ
কাঁপছি অতঃপর।

এতোই কৃপণ? আর কোনও নাম
বসছে না দাঁড় কাছে,
এমন করে ঝোলাও কেন
অপাপবিদ্ধ গাছে!

গাছের পাতায় চোখের পাতার
প্রথম শিশিরপাত,
কষ্ট পেলে নীলাম্বরী?
এই নেভালাম রাত!

 

অলঙ্করণ : প্রীতি দেব ও দেবব্রত সরকার 

 

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment