Sasraya News

Ostrich | উটপাখির আশ্চর্য জগৎ সম্পর্কে জানেন, ডিমও পাড়ে, বাচ্চাও দেয়!

Listen

ধীরেন মাহান্তী ★ সাশ্রয় নিউজ : প্রকৃতির নানা অদ্ভুত আচরণ ও বৈশিষ্ট্য আমাদের বিস্মিত করে দেয় প্রতিনিয়ত। তার মধ্যেও অন্যতম এক বিস্ময় হল উটপাখি (Ostrich)। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও দ্রুততম পাখি হয়েও উড়তে পারে না এই প্রাণী। তবে শুধু আকৃতি বা গতি নয়, উটপাখির প্রজনন পদ্ধতিও বিজ্ঞানীদের অবাক করেছে বহুবার। কারণ, উটপাখি ডিম পাড়ে এ তো জানা কথা। কিন্তু তার পরেও যে উটপাখি বাচ্চা দেয়, এ তথ্য জানলে বিস্মিত হবেন অনেকেই।

ছবি: সংগৃহীত

সেটা কেমন! আসলে উটপাখি আসলে ডিম দিয়েই বাচ্চা দেয়, কিন্তু প্রক্রিয়াটা এতটাই অনন্য যে এই বিষয়ে নানা বিভ্রান্তি রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, এই প্রাণী ডিম ও সরাসরি বাচ্চা, দু’ধরনের প্রজনন পদ্ধতির মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি করে। তবে বাস্তবে বিষয়টি আরও বৈজ্ঞানিক। এবং সেই বিজ্ঞান বোঝার জন্য আমাদের একটু উটপাখির জীবনচক্রে ফিরে তাকাতে হবে।

উটপাখির বৈজ্ঞানিক নাম Struthio camelus। এই পাখি আফ্রিকার খোলা প্রান্তরে বাস করে। এদের উচ্চতা প্রায় ৯ ফুট পর্যন্ত হতে পারে এবং ওজন ১৫০ কেজির কাছাকাছি হয়। এদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, স্ত্রী ও পুরুষ উভয়েই ডিমের পরিচর্যায় অংশ নেয়। স্ত্রী উটপাখি (Female Ostrich) দিনের বেলায় ডিমে তা দেয়, আর পুরুষ উটপাখি (Male Ostrich) রাত্রে। এতে করে শিকারির চোখে পড়ার সম্ভাবনা কমে যায়, কারণ পুরুষ উটপাখির শরীর সহজেই অন্ধকারে মিশে যায়। উটপাখি সাধারণত একসঙ্গে ১৫ থেকে ২০টি ডিম পাড়ে। তবে অনেক সময় একাধিক স্ত্রী পাখি মিলে একটি ডিমের গর্ত ব্যবহার করে, ফলে সেখানে ডিমের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে ৫০ ছাড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হল, ডিমগুলো সব একসঙ্গে তা দেওয়া হয় না, এবং ডিম ছাড়াও স্ত্রী উটপাখি নিজস্ব শারীরিক তাপমাত্রা বজায় রেখে কখনও কখনও নির্ধারিত সময়ের পরও বাচ্চা উৎপাদন করতে পারে। এখানেই বিষয়টি জটিল হয়। অনেক সময় গবেষকরা লক্ষ্য করেন, কিছু ডিম থেকে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্রুত বাচ্চা বেরিয়ে আসে, আবার কিছু ডিমে অপেক্ষাকৃত বেশি সময় লাগে। এর ফলে একটি বিভ্রান্তি তৈরি হয় যে, উটপাখি ডিম পাড়ার বাইরেও বাচ্চা দিতে পারে কি না। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, উটপাখির জন্ম প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ডিমের মাধ্যমেই হয় ও কোনও স্তন্যপায়ী প্রাণীর মতো তারা সরাসরি বাচ্চা প্রসব করে না। আসলে অনেক ক্ষেত্রে উটপাখির ডিম মাটিতে অর্ধেক ঢেকে থাকে, বা খোলা জায়গায় পড়ে থাকে বলে স্থানীয় মানুষদের মধ্যে এই ধারণা জন্ম নেয় যে ডিম ছাড়াও উটপাখির শরীর থেকেই বাচ্চা বের হতে পারে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আফ্রিকার গ্রামীণ লোককথা ও নানা কিংবদন্তি। এইসব রূপকথায় বলা হয়, ‘উটপাখি এমন এক পাখি যে ডিমও দেয়, আবার বাচ্চাও।’ এই ধারণা পরে ছড়িয়ে পড়ে নানা দেশে, এবং আজও অনেক মানুষ তা সত্যি বলে মনে করেন।তবে আধুনিক বিজ্ঞানের নিরিখে, এই তথ্যকে মিথ বলা যায় না, বলা যায় বিভ্রান্তিকর। কারণ, উটপাখির বংশবৃদ্ধি পদ্ধতি বেশ জটিল ও সময়ভিত্তিক। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে সাধারণত ৪২ থেকে ৪৬ দিন সময় লাগে। এর মধ্যে নানা পরিবেশগত ও তাপমাত্রার পার্থক্য থাকলে, বাচ্চা সময়ের আগেই বা পরে বের হতে পারে। কখনও তা এতটাই দ্রুত ঘটে যে দেখলে মনে হয় বাচ্চাটি যেন কোনও রকম ডিম ছাড়াই চলে এসেছে। উটপাখির বাচ্চাগুলো আবার দারুণ চঞ্চল ও শক্তিশালী হয় জন্মের পরপরই। এক দিনের মাথায় তারা মায়ের সঙ্গে দৌড়াতে পারে। এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের গতি ঘণ্টায় ৫০ কিমি পর্যন্ত হতে পারে। এই অস্বাভাবিক দ্রুত শারীরিক বিকাশও সাধারণ মানুষকে ধাঁধায় ফেলে দেয়। একে একে তৈরি হয় নানান ভুল ব্যাখ্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, “উটপাখি নিয়ে এমন অনেক ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যা বাস্তবের সঙ্গে মেলে না। কিন্তু প্রতিটি প্রাণীর যেমন ভিন্নতা আছে, তেমনই উটপাখিরও রয়েছে নিজস্ব শারীরিক বৈশিষ্ট্য ও আচরণ।” প্রাণীবিজ্ঞানী ড. সুমন্ত পাল (Dr. Sumanta Pal) বলেন, “উটপাখির ডিম পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ডিম। একটি ডিমের ওজন হতে পারে প্রায় দেড় কেজি। তাই এই পাখিকে ঘিরে নানা রহস্য ও কিংবদন্তি গড়ে উঠেছে—তা অস্বাভাবিক নয়।” এমনকী কিছু আফ্রিকান বেশ কিছু উপজাতি এখনও মনে করে, উটপাখি ‘দেবতার পাখি’, যার শরীর থেকেই জীবন জন্ম নেয়। এই কল্পনা ও বাস্তবের মিশেলে আজও উটপাখিকে ঘিরে বহু গল্প বেঁচে আছে লোকজ সংস্কৃতিতে। যদিও বিজ্ঞানের নিরিখে এক কথায় বলা যায়, উটপাখি ডিমই দেয়, আর সেই ডিম থেকেই জন্ম নেয় উটপাখির ছানা। তথাপি, এই প্রকৃতির বৈচিত্র্য আর প্রাণিজগতের রহস্যময়তাই আমাদের মনকে প্রশ্ন করতে শেখায়, ‘সব জানাও কি জানা হয়?’ উটপাখির কাহিনি যেন সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার এক নিরন্তর যাত্রা।

ছবি : সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Konkona Sen Sharma, Irrfan Khan : মন্টি নামেই ফিরলেন ইরফান! ১৭ বছর পর কঙ্কনার টুইস্টে ‘মেট্রো’তে অনুরণিত হল পুরনো প্রেমের সুর

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read