Sasraya News

Manali | মানালি: পাহাড়ি রূপকথার পাতায় ছুটি কাটানোর ঠিকানা

Listen

মিলি ঘোষ ★ সাশ্রয় নিউজ :  ভারতের হিমালয়ের কোলে এমন কিছু জায়গা আছে যেগুলো মনে হয় যেন কোনও চিত্রকল্প থেকে উঠে আসা। পাহাড়ে ঘেরা, ঝরনার গুঞ্জন, আকাশ ছোঁয়া দেবদারু আর পাইন গাছের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা রূপকথার কুটিরের মতো একটা জায়গা। মানালি (Manali)।

ছবি : সংগৃহীত

হিমাচল প্রদেশের (Himachal Pradesh) কুল্লু (Kullu) জেলার এই পাহাড়ি শহর দেশের অন্যতম জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট ডেস্টিনেশন। তার আশেপাশে ছড়িয়ে থাকা গ্রাম আর প্রকৃতির নিস্তব্ধতা গতানুগতিক জীবন থেকে এক অনন্য পরিবেশের খোঁজ দেয়।

 

শীতের মানালি। ছবি : সংগৃহীত

মানালির সৌন্দর্য কেবল পাহাড় আর নদীর জন্য নয়। তার নির্বিচার বৈচিত্র্যের জন্য। অ্যাডভেঞ্চার, ইতিহাস, ধর্মীয় মিথ, খাওয়া-দাওয়া আর ঘুরে বেড়ানোর অনন্য অভিজ্ঞতা একসঙ্গে পাওয়া যেতে পারে এখানে। ঠিক ধরেছেন, একটি কমপ্লিট প্যাকেজ।

ছবি : সংগৃহীত

সোলাং উপত্যকা: নিস্তব্ধতার আঁচলে রোমাঞ্চ
সোলাং ভ্যালি (Solang Valley) পৌঁছানোর রাস্তা যেন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলানো গল্পের মতন।

ছবি : সংগৃহীত

পাহাড়ি পথ ধরে চলতে চলতে চোখে পড়ে বরফে মোড়া চূড়া, আর গা-ছমছমে নিস্তব্ধতা। এখানে এসে কেউ যদি roadside শ্যাক থেকে চাইনিজ নুডলসের ধোঁয়া উঠা প্লেট আর সঙ্গে গরম চায়ের কাপ নিয়ে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে, তাহলে সময় যেন থেমে যায়।

ছবি : সংগৃহীত

এই জায়গায় অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের সুবিধাও রয়েছে। জরবিং (zorbing), প্যারাগ্লাইডিং, স্কিইং, এমনকী ইয়াক-স্কিইংয়ের মতো অদ্ভুত অভিজ্ঞতাও নেওয়া যায়।

ছবি : সংগৃহীত

পুরনো মানালি সময়ের গায়ে ঠেকানো একটা স্নিগ্ধ হাত

মানালির কোলাহল থেকে একটু দূরে, পুরনো মনালি (Old Manali) যেন এক অন্য পৃথিবী। বটবৃক্ষ, ইউক্যালিপ্টাস আর কুল্লু নদীর (Kullu River) ধারে থাকা ছোট্ট কুটিরগুলো আপনাকে ফিরে যেতে বাধ্য করে অনেক অনেক শান্তির দিকে।

ছবি : সংগৃহীত

এখানে ইউরোপীয় কফি শপ, রঙিন হস্তশিল্পের দোকান, আর গিটার বাজানো যুবকেরা যেন একটা নীরব গল্প বলে চলে। ‘ক্যাফে ১৯৪৭’ (Café 1947) এই জায়গার অন্যতম জনপ্রিয় স্পট—নদীর ধারে বসে গরম কফি আর পুরনো গান যেন শরীর-মনের চর্চা।

ছবি: সংগৃহীত

রোহতাং পাস: সাদা রাজত্বের এক বিস্ময়

প্রতি বছর ২৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ ঘুরতে যান রোহতাং পাসে (Rohtang Pass)। যদিও অক্টোবর থেকে মে পর্যন্ত এই পাস বন্ধ থাকে বরফে ঢাকা থাকার জন্য। কিন্তু যাঁরা মে বা জুন মাসে যান, তাঁদের জন্য অপেক্ষা করে অনন্য সৌন্দর্যের পরিপূর্ণতা।

ছবি : সংগৃহীত

এখানকার বরফে ঢাকা পাহাড়ের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যেন একটা মুভির দৃশ্যের অংশ।

ছবি : সংগৃহীত

নাগগর ক্যাসেল: ইতিহাস আর নান্দনিকতার যুগলবন্দি

নাগগর শহরে (Naggar Town) অবস্থিত নাগগর ক্যাসেল (Naggar Castle) কুল্লুর রাজা সিদ্ধ সিংহের (Raja Sidh Singh) বাসভবন। ইউরোপীয় আর হিমাচলি স্থাপত্যের মেলবন্ধনে তৈরি এই প্রাসাদে পাথরের কাঠামো, কাঠের কারুকাজ আর পুরনো ফায়ারপ্লেস আপনাকে পৌঁছে দেবে অন্য সময়ে।

ছবি : সংগৃহীত

মানু/মনু মন্দির: বিশ্বাস আর পরম্পরার আলয়ে
মনালির ধর্মীয় ইতিহাসে মানু/মনু মন্দির (Manu Temple) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রলয় থেকে বাঁচিয়ে সাত ঋষি ও বেদকে তিনি রক্ষা করেছিলেন। সেই মহর্ষি মানু/মনু এখানেই বসবাস শুরু করেন। তাঁর নামেই এই জায়গার নাম মানালি। ভক্তদের জন্য এ এক চেতনার জায়গা, যেখানে গেলে মনে হয় আত্মা যেন কিছুটা শান্ত হয়।

ছবি : সংগৃহীত

অ্যাডভেঞ্চারের আকর্ষণ: স্কি, ট্রেক আর র‍্যাফটিং
মানালি যেন অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের স্বর্গ। মানালি মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট (Mountaineering Institute) থেকে বিভিন্ন ট্রেকিং প্যাকেজ পাওয়া যায়।

ছবি : সংগৃহীত

এছাড়া রিভার বিয়াসে (River Beas) র‍্যাফটিং, কায়াকিং আর ক্যানোয়িং-এর মতো জলখেলাও হয়। বিশেষ করে মার্চ থেকে জুনের মধ্যে মনালিতে গেলে এইসব অ্যাডভেঞ্চার উপভোগ করার আদর্শ সময়।

ছবি : সংগৃহীত

রসনার স্বর্গ: কাফে ও খাবারের খোঁজে

মানালির খাবারদাবারের দুনিয়াও কিছু কম নয়। ‘কাসা বেলা ভিস্তা’ (Casa Bella Vista) নামের এক ক্যাফেতে আপনি পেয়ে যাবেন স্প্যানিশ আর ইটালিয়ান খাবার। হ্যান্ড-টসড পিজ্জা, পাতলা ক্রাস্টে বানানো, আর ওভেনের গন্ধ মিশে থাকা খাবারের প্রতিটি কামড় যেন আনন্দের উৎসস্থল। ডিলান’স টোস্টেড অ্যান্ড রোস্টেড (Dylan’s Toasted & Roasted) ক্যাফেটি একসময় ছিল ‘ডাবল ভিশন’। বব ডিলানের (Bob Dylan) দেওয়ালচিত্রের জন্য বিখ্যাত এই জায়গা এখন ডিলানপ্রেমীদের একটা তীর্থক্ষেত্র।

ছবি : সংগৃহীত

মনালিতে গিয়ে ‘জনসন’স বার অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট’ (Johnson’s Bar and Restaurant)-এ খাওয়া না হলে মানালির রসনার অভিজ্ঞতা অপূর্ণ থেকে যায়। এখানকার ওয়াইন, ককটেল আর পাস্তা, প্রতিটি মুহূর্তে ছুঁয়ে যায়।

ছবি : সংগৃহীত

কখন যাবেন?

মানালি সারা বছরই সুন্দর, কিন্তু সময় বেছে নিতে হবে আপনার উদ্দেশ্য অনুযায়ী।
ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি 👉🏻বরফে মোড়া মানালির আসল রূপ দেখার সময়। স্কিইং-এর জন্য আদর্শ।
মার্চ থেকে জুন 👉🏻বসন্ত ও গ্রীষ্মে পাহাড়ি সৌন্দর্য সম্পূর্ণ প্রস্ফুটিত হয়। অ্যাডভেঞ্চারের সেরা সময়।

ছবি : সংগৃহীত

সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি 👉🏻বর্ষার শেষে ঠাণ্ডা শুরু, ঝরনার জল টলটল করছে, আর পর্যটকের ভিড় কিছুটা কম।
জুলাই থেকে আগস্ট 👉🏻বর্ষার জন্য ল্যান্ডস্লাইডের সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু যারা ভিড় এড়িয়ে ছুটি কাটাতে চান তাঁদের জন্য ভাল সময়। হোটেলভাড়া তুলনায় কম।

ছবি : সংগৃহীত

কীভাবে যাবেন?

আকাশপথে: ভুনটার (Bhuntar) বিমানবন্দর, যা মানালি থেকে ৫০ কিমি দূরে। দিল্লি ও চণ্ডীগড় থেকে ফ্লাইট আছে। তবে আবহাওয়ার কারণে এই রুট অনিশ্চিত হতে পারে।

ছবি : সংগৃহীত

বাসে: দিল্লি থেকে ৫৫০ কিমি দূরে, AC ভলভো বাস সবচেয়ে আরামদায়ক। শিমলা, ধরমশালা, কুল্লু থেকেও বাস চলাচল করে।

নিজের গাড়িতে: ড্রাইভটি অসাধারণ! পাহাড়ি রাস্তা ধরে যাওয়ার সময় প্রতিটি বাঁকে থাকে নতুন চমক। তবে চালনায় দক্ষ না হলে ট্যাক্সি নেওয়াই ভাল।

ছবি : সংগৃহীত

এটা ভুলে গেলে কিন্তু সব ভুল হয়ে যাবে 

মানালি কেবল একটি ট্যুরিস্ট স্পট নয়। এটি একটি অনুভব। সেখানে গেলে যেন আধুনিক আর প্রাচীন একসঙ্গে হেঁটে চলে।

ছবি : সংগৃহীত

কফির কাপে ভিজে থাকা মন খারাপ, কিংবা পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে বুক ভরা বাতাস টেনে নেওয়া মানালি আপনাকে প্রতিটি মুহূর্তে নতুন করে বাঁচতে শেখায়।

ছবি : সংগৃহীত

একজন প্রেমিকের হাতে হাত রাখা হোক, কিংবা একা পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে নিজেকে খোঁজা, মানালির মত জায়গা আর নেই। যে-কোনও ছুটিতে যদি আত্মাকে শান্তি দিতে চান, তাহলে চোখ বন্ধ করে চলে যাওয়া যায় মানালি। পাহাড়ের কাছে, প্রকৃতির কোলে, জীবন যেন একটু সহজ হয়ে আসে।

সমস্ত ছবি : সংগৃহীত

আরও পড়ুন : Astrology : আপনিই কোটিপতি হতে যাচ্ছেন না তো? মিলিয়ে নিন…

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read