



গদ্য 🦋
কালিদাস বলতেন, শুধু এক ব্যক্তিকে নয় প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের এক সুবর্ণ যুগকে বোঝায়। যে যুগের সংস্কৃতের মূর্ত প্রতীক মহাকবি কালিদাস। কিন্তু দুঃখের বিষয় দেশ, কাল ও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বিশেষ কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য আমরা পাই না। তাই পরবর্তী যুগের মানুষ তাঁকে নিয়ে কতগুলি আজগুবি কল্পনার জাল বুনেছেন। লিখেছেন : মিঠুন চক্রবর্তী
মহাকবি কালিদাস…
ব্যাস, বাল্মীকির পরেই ভারতবর্ষে যে কবির নাম পরম শ্রদ্ধায় উচ্চারিত হয়, যাঁর রচিত কাব্য ও নাটকে সংস্কৃত সাহিত্য বিশেষ মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত। তিনি ভারতের কবিকূলচূড়ামণি বাণীর পুত্র মহাকবি কালিদাস। ইংরেজি সাহিত্যের সঙ্গে যেমন শেক্সপিয়রের নাম জড়িয়ে আছে, বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে রবীন্দ্রনাথের নাম, তেমনি সংস্কৃত সাহিত্যে সঙ্গে কালিদাসের নাম চিরগ্রথিত। দেশ ও কালের সীমা ছাড়িয়ে তাঁর রচনা বিশ্ব সাহিত্যসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করেছে।
মহাকবি কালিদাসের জীবন পরিচয়
সংস্কৃত সাহিত্যের অন্যতম প্রতিভাধর শ্রেষ্ঠ কবি হলেন কালিদাস। কালিদাস বলতেন, শুধু এক ব্যক্তিকে নয় প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যের এক সুবর্ণ যুগকে বোঝায়। যে যুগের সংস্কৃতের মূর্ত প্রতীক মহাকবি কালিদাস। কিন্তু দুঃখের বিষয় দেশ, কাল ও ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে বিশেষ কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য আমরা পাই না। তাই পরবর্তী যুগের মানুষ তাঁকে নিয়ে কতগুলি আজগুবি কল্পনার জাল বুনেছেন। সৃষ্টি হয়েছে তাঁর সম্বন্ধে বিভিন্ন কিংবদন্তি। কিংবদন্তি অনুসারে মহাকবি কালিদাসের প্রথম জীবনে নিতান্ত মূর্খ ছিলেন। তার নিজের পত্নী বিদুষী বিদ্যাবতী তাঁর মুর্খতা নিয়ে হাসি তামাশা করতেন। স্ত্রী কর্তৃক অপমানিত হয়ে তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কথিত আছে, এমতাবস্থায় তিনি দস্যু রত্নাকর এর মতো কালী দেবীর মতান্তরে সরস্বতীর আশীর্বাদ পেয়েছিলেন। এতেই মূর্খ কালিদাস হয়ে উঠলেন মহাকবি কালিদাস। এখানে অবশ্যই উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, কালিদাসের ব্যক্তিগত জীবন ও আবির্ভাব কাল সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। কালিদাস সম্পর্কে অনেক কিংবদন্তি প্রচলিত। কেবল কিংবদন্তি নির্ভর করে কোনও মানুষের জীবনকাহিনী জানা সম্ভব নয়।
মূর্খ কালিদাসের মহাকবি হয়ে ওঠার কাহিনি
ছোটবেলায় মাতৃ ও পিতৃহারা হন কালিদাস। শিশু কালিদাসকে লালন-পালন করেন একজন রাখাল। সেই জনন্য কালিদাসের পড়াশুনা হয়নি। তিনি দেখতে ছিলেন রাজপুত্রের মতো। এক সুন্দরী রাজকন্যার সঙ্গে তার বিয়ে হয়। একটি কিংবদন্তী ঘটনা আছে, রাজকন্য রাজার খুবই অবাধ্য ছিলেন, তাই রাজা তাকে শায়েস্তা করার জন্য কালিদাসের সঙ্গে বিবাহ দিয়েছিলেন।
কালিদাস ছিলেন এক মূর্খ যুবক। তিনি এতই মূর্খ ছিলেন যে, কাঠ দরকার হলে কালিদাস গাছে উঠে যে ডালে বসে আছেন সেই ডালটিই কাটতে শুরু করলেন। তখন এক পথিক কালিদাসের এই বোকামি দেখে কীভাবে ডাল কাটতে হবে তা বলে দিলেন, কিন্তু কালিদাস এতই মূর্খ ছিলেন যে, তা বুঝতে পারলেন না। ফলে কালিদাস নিজে নিচে পড়ে আহত হন। এই বোকামি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
কালিদাস এজন্য স্ত্রীর কাছে প্রতিদিন বকা-ঝকা শুনতেন। স্ত্রীর কাছ থেকে অপমানে কালিদাস রাগে, ক্ষোভে, দুঃখে, অপমানে আত্মহত্যা করার জন্য নদীতে ঝাপ দিলেন। কিন্তু নদী থেকে তাঁকে উদ্ধার করলেন দেবী কালি, (মতান্তরে সরস্বতী) তখন তিনি হয়ে গেলেন দেবীর ‘কালি’র দাস। সে অনুসারেই তার নাম হল কালিদাস। দেবী কালি (মতান্তরে সরস্বতী) তাঁকে বুদ্ধির আশীর্বাদ দেন ফলে মূর্খ কালিদাস হয়ে উঠলেন মহাকবি কালিদাস। দস্যু রত্নাকর থেকে বাল্মীকি হয়ে ওঠার গল্পের মতো কালিদাস মূর্খ থেকে হয়ে উঠলেন মহাকবি। তার নামে আজও প্রচলিত আছে হাজার হাজার জটিল ধাঁধাঁ। তিনি হয়ে উঠলেনসংস্কৃত সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি ও নাট্যকার। (চলবে)
আরও পড়ুন : Life Style : প্রকৃত জীবন : উন্নত জীবনচর্চা
ছবি : আন্তর্জালিক
