Sasraya News

Human Sperm | নিউটনের তৃতীয় সূত্রকে ‘অমান্য’ করছে মানব শুক্রাণু! কিয়োটো ইউনিভার্সিটির গবেষণায় তোলপাড় বিশ্ব

Listen

 

আলোক নাথ ★ সাশ্রয় নিউজ : আমরা সকলেই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি, ‘প্রতিটি ক্রিয়ার বিপরীতে সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া।’ নিউটনের এই তৃতীয় সূত্র শুধু স্কুলের পদার্থবিদ্যা নয়, রকেট সায়েন্সেরও মূল ভিত। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেল, মানব শুক্রাণু (Human Sperm) নাকি এই সূত্র মানে না। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও জাপানের কিয়োটো ইউনিভার্সিটি (Kyoto University)-র গবেষকেরা এই অদ্ভুত তথ্য সামনে এনেছেন।তাদের মতে, সাধারণভাবে ভাবা হয়, শুক্রাণুর লেজ যখন ঘন তরলের ওপর চাপ দেয়, তখন সেই তরলও সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া জানায়। ফলে শুক্রাণুর গতি কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ঠিক উলটো ছবি। কোনওরকম প্রতিরোধ না পেয়েই শুক্রাণু তরলের মধ্যে সাঁতরে চলতে পারে। যেন নিউটনের তৃতীয় সূত্রকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এগিয়ে চলেছে তারা। কিন্তু, কেন এমন হচ্ছে? গবেষণার প্রধান বিজ্ঞানী, কিয়োটো ইউনিভার্সিটির ইয়াসুশি তেরাদা (Yasushi Terada) জানিয়েছেন, ‘শুক্রাণুর লেজ এমনভাবে নড়াচড়া করে যে, তারা একধরনের ঢেউ তৈরি করে। এই ঢেউ তাদের গতিকে কমায় না, বাড়িয়ে দেয়। ফলে নিউটনের তৃতীয় সূত্র এখানে পুরোপুরি প্রযোজ্য হচ্ছে না।’ এই অদ্ভুত আচরণের জন্য বিজ্ঞানীরা একটি নতুন টার্ম ব্যবহার করেছেন, টার্মটি হল, ‘Odd Elasticity’। এর অর্থ, এমন এক ধরনের স্থিতিস্থাপকতা, যা নিউটনের সূত্র মেনে চলে না। এই ক্ষেত্রে, শুক্রাণুর লেজের দুলুনি তরলে এমন কম্পন তৈরি করে যা শক্তি অপচয় না করেই তাদের গতি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

এখানে প্রশ্ন আসতেই পারে, তবে কি নিউটনের (Newton) সূত্র ভুল? এই প্রশ্নে বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, সূত্র ভুল নয়। কিন্তু নিউটনের তৃতীয় সূত্র প্রযোজ্য বড় আকারের, ভারসাম্যপূর্ণ ও ক্লাসিক্যাল ফিজিক্সের ক্ষেত্রে। কোষীয় স্তরে বা আণবিক স্তরে, বিশেষ করে যেখানে নন-ইকুইলিব্রিয়াম সিস্টেম থাকে, সেখানে এই নিয়ম পুরোপুরি খাটে না। ইয়াসুশি তেরাদা (Yasushi Terada) বলেন, ‘এটি নিউটনের ভুল নয়। কিন্তু এটি আমাদের শেখায়, ক্ষুদ্র স্কেলে বাস্তবতা আলাদা। কোষ বা আণবিক স্তরে পদার্থের আচরণ ভিন্ন হয়। তাই নিউটনের সূত্রকে এখানে প্রয়োগ করতে গেলে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দরকার।’ এই নতুন আবিষ্কার শুধু তাত্ত্বিক নয়। কিয়োটো ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা জানিয়েছেন, এই পর্যবেক্ষণ ভবিষ্যতের বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং (Bio-engineering), কৃত্রিম প্রজনন (Artificial Reproduction) এবং মাইক্রো রোবটিক্সের (Micro Robotics) ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটাতে পারে। কারণ, যেখানে মাইক্রো রোবট বা কোষকে তরলের মধ্যে চালানো চ্যালেঞ্জের, সেখানে শুক্রাণুর মতো non-reciprocal interaction-এর ধারণা কাজে লাগানো যেতে পারে। ইয়াসুশি তেরাদা (Yasushi Terada) বলেন, ‘আমরা যদি শুক্রাণুর এই বিশেষ গতিকে নকল করতে পারি, তবে তরলে চলাফেরার নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করা সম্ভব।’
এ প্রসঙ্গে গবেষকরা মনে করছেন, নিউটনকে (Newton) বাতিল করা হচ্ছে না। তবে কোষের জগতে তার সূত্র নতুনভাবে ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে। মানবদেহের ভেতরে লুকনো এমন বিস্ময় আমাদের বারবার মনে করিয়ে দেয়, বিজ্ঞানের পথে কত অজানা প্রশ্ন এখনও উত্তরবিহীন রয়ে গিয়েছে। আর এই উত্তর খুঁজতে গিয়েই মানুষ পৌঁছে যাবে জ্ঞানের সেই সীমায়, যেখানে বিজ্ঞান, দর্শন আধ্যাত্মিকতা একসঙ্গে হাত মেলায়।

আরও পড়ুন: Sperm race : স্পার্মের দৌড়! লস অ্যাঞ্জেলেসে নজিরবিহীন প্রতিযোগিতার ঘোষণা, পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব সচেতনায় অভিনব আয়োজন

ছবি: প্রতীকী ও সংগৃহীত 

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read