Sasraya News

Tungabhadra Dam | তুঙ্গভদ্রার অপরূপ প্রকৃতি, ইতিহাস আর শান্তির মিলনক্ষেত্র

Listen

সোনালী মিশ্র ★ সাশ্রয় নিউজ : ভারতের কর্ণাটক (Karnataka) রাজ্যের বেল্লারি (Bellary) জেলার হোসপেট (Hospet) শহরের কাছে, বিস্তীর্ণ প্রান্তরের বুকে দাঁড়িয়ে রয়েছে তুঙ্গভদ্রা বাঁধ (Tungabhadra Dam)। স্থানীয়রা একে বলেন পম্পা সাগর (Pampa Sagar)। শুধু জলাধার নয়, এ যেন প্রকৃতি, ইতিহাস আর স্থাপত্যের সম্মিলনস্থল। তুঙ্গভদ্রা নদী (Tungabhadra River) যা কৃষ্ণা নদীর (Krishna River) একটি উপনদী-এর ওপর নির্মিত এই বিশাল বাঁধ এখন কেবলমাত্র কৃষি বা জল সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হয় না। এটি এখন হয়ে উঠেছে পর্যটনের এক নতুন সম্ভাবনার নাম।

Read : Kandy Honemoon Travelog | মধুচন্দ্রিমায় ক্যান্ডি: প্রেম, প্রকৃতির আতিথেয়তায়

তুঙ্গভদ্রার বাঁধের বিস্তার চোখে দেখার মত। প্রায় ৫৯২ মিটার দীর্ঘ এই বাঁধটি নির্মিত হয়েছিল ১৯৫৩ সালে, ভারতের সদ্য স্বাধীন পর্বে, দেশের অন্যতম বৃহৎ বহুমুখী নদী প্রকল্প হিসেবে। বাঁধের মূল উদ্দেশ্য ছিল কৃষি সেচ, জল সরবরাহ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বাঁধের চারপাশের সৌন্দর্য ও পরিবেশ গড়ে তুলেছে এক মনোরম পর্যটন কেন্দ্র। এই বাঁধের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হল এর জলাধার। বর্ষাকালে পম্পা সাগর নামক এই বিশাল জলরাশি যেন এক দিগন্ত বিস্তৃত হ্রদের রূপ নেয়। শান্ত জলের বুকে সূর্যাস্তের সময় রঙের খেলা যেন মুগ্ধতা ছড়ায়। পর্যটকদের জন্য রয়েছে সুসজ্জিত বাগান, ওয়াচ টাওয়ার, নৌকা বিহারের সুযোগ ও নিরিবিলি বসার জায়গা। এখানে বসে প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো বা প্রকৃতির মাঝে কল্পনায় হারিয়ে যাওয়া, দুটোই সম্ভব। কিন্তু তুঙ্গভদ্রা বাঁধের সৌন্দর্যকে আলাদা করে তোলে তার অবস্থান। খুব কাছেই রয়েছে ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যস্থল হাম্পি (Hampi)। কপিলব্রহ্মা, বিজয় বিটাল মন্দির, বিরূপাক্ষ মন্দিরের মতো ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি তুঙ্গভদ্রার ধারে দাঁড়িয়ে যেন সময়ের সাক্ষী হয়ে আছে। ফলে তুঙ্গভদ্রা বাঁধ পরিদর্শনের সঙ্গে হাম্পি সফরটিও হয়ে ওঠে আরও অর্থবহ।

Cherthala Travelog : সবুজ জলরেখায় হারিয়ে যাওয়া, চের্থালা ভ্রমণ

হোসপেট শহর থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরে অবস্থিত এই বাঁধে যাওয়া বেশ সহজ। কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু (Bengaluru), হুবলি (Hubli) বা হোসপেট থেকে সড়ক ও রেলপথে সহজেই পৌঁছনো যায়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাঁধ খোলা থাকে, তবে সূর্যাস্তের আগে পৌঁছনোই শ্রেয়। কারণ জলরাশির ওপর শেষ বেলার সোনালি আলো এখানে এক অসাধারণ দৃশ্য সৃষ্টি করে। বাঁধের সুরক্ষা ব্যবস্থাও পর্যাপ্ত। আধুনিক নিরাপত্তা ওপর্যটকদের জন্য প্রয়োজনীয় শৌচাগার, পানীয়জল ও নিরাপদ গাইডেড সফরের ব্যবস্থা রয়েছে। শিশুদের জন্যও ছোটখাটো খেলার মাঠ, স্লাইডার ও ক্যামেরা ফ্রেন্ডলি ওয়াকওয়ে রয়েছে যা এই জায়গাটিকে পারিবারিক ভ্রমণের জন্য আদর্শ করে তোলে। যাঁরা প্রকৃতি ভালবাসেন, তাঁদের জন্য আছে স্থানীয় পাখি ও প্রজাপতির উপস্থিতি। সকালে হাঁটতে বের হলে কানে আসবে নানা রকম পাখির ডাক। আর বর্ষার মরশুমে কখনও ঘন মেঘে ঢেকে যাবে পুরো আকাশ, আবার হঠাৎ দেখা মিলবে রামধনুরও। কিন্তু বাঁধের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিকটি হল এখানকার পরিবেশ-সচেতনতা। স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশপ্রেমীরা মিলিয়ে এই বাঁধ ও তার চারপাশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। প্লাস্টিক নিষিদ্ধ, পর্যটকদের জন্য নির্দেশিকা, ও জল সংরক্ষণ নিয়ে সচেতনতা প্রচার চালানো হয় নিয়মিত।

তুঙ্গভদ্রা বাঁধের ভ্রমণ কেবলমাত্র চোখে দেখা নয়, এটি এক মন ও মননের সফর। এখানে এসে আপনি অনুভব করবেন সময় যেন একটু থমকে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতি তার অক্ষত রূপে আপনাকে ছুঁয়ে যাবে, আর ইতিহাস আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এক প্রাচীন যুগে। তুঙ্গভদ্রা বাঁধ শুধু এক বাঁধ নয় এটি একটি আত্ম-আবিষ্কারের জায়গা। শান্তির আশ্রয়, এক আত্মার বিশ্রাম। যাঁরা দক্ষিণ ভারতে ঘোরার পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের ভ্রমণ তালিকায় পম্পা সাগর যেন থাকেই। কারণ প্রকৃতি, ইতিহাস, স্থাপত্য আর হৃদয়ের মুগ্ধতা, সবকিছুর মিলন যেখানে ঘটে, তার নামই তো তুঙ্গভদ্রা বাঁধ।

ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Hampi Travelog | মাতাঙ্গ পাহাড়ের চূড়ায় নিঃশব্দ বিস্ময়, সূর্যাস্তের আলোয় হাম্পি

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment

Also Read