



জয়ী বিশ্বাস ★ সাশ্রয় নিউজ : চব্বিশ ঘন্টা আগেও যিনি ছিলেন পৃথিবীর মাটিতে, এখন তিনি মহাশূন্যে ভেসে বেড়াচ্ছেন। দীর্ঘ ৪১ বছর পর কোনও ভারতীয় নভোচারী ফের মহাকাশে পা রাখলেন। ভারতীয়দের জন্য এটি এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। সেটা যেমন গর্বের, তেমনই আবেগেরও। আর সেই আবেগের ছাপই যেন স্পষ্ট হয়ে উঠল নভোচারি শুভাংশু শুক্লার (Shubhanshu Shukla) ইনস্টাগ্রাম পোস্টে, তিনি মহাকাশ যাত্রার ঠিক আগে লিখেছিলেন তাঁর স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে।
অ্যক্সিয়ম স্পেস মিশনের (Axiom Space Mission 4) অধীনে ২৫ জুন ভোরে শুভাংশু ও তাঁর তিন সঙ্গী রওনা দেন মহাকাশের পথে। মিশনটির অংশ হিসেবে তাঁরা দুই সপ্তাহ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কাটাবেন। উৎক্ষেপণের আগে নিয়ম অনুযায়ী তাঁদের রাখা হয় আইসোলেশনে। এর মধ্যে দিয়েই যেতে হয় প্রতিটি নভোচারীকেই। কিন্তু সেই নিঃসঙ্গ প্রস্তুতির মুহূর্তে শুভাংশুর মন পড়ে ছিল তার পরিবার, বিশেষ করে স্ত্রীর দিকে। শুভাংশু শুক্লা তাঁর ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে লেখেন, “২৫ জুন ভোরে আমরা যখন পৃথিবী ত্যাগ করার পরিকল্পনা করছি, তখন আমি এই মিশনে যারা অংশগ্রহণ করেছেন তাদের সকলকে আমাদের পাশে থাকার জন্য এবং দেশের সকল মানুষকে তাদের আশীর্বাদ ও ভালবাসার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই।” এরপরেই তিনি নিজের ঘনিষ্ঠদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “এই যাত্রায় আমার ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করা পরিবার এবং বন্ধুদের প্রতি অনেক ধন্যবাদ। কখনও কখনও আপনার কাছের মানুষরা এমন ত্যাগ স্বীকার করেন যা আপনি পুরোপুরি বুঝতে পারেন না কিন্তু তারা আপনার প্রতি তাদের ভালোবাসা থেকে তা করেন।” এই ইনস্টাগ্রাম পোস্টের সবচেয়ে আবেগঘন অংশটি ছিল তাঁর স্ত্রীর উদ্দেশে লেখা লাইনটি, “তোমায় ছাড়া জগত্ শূন্য! কিচ্ছু দাগ কাটে না।” এই একটি লাইন যেন বোঝাতে সক্ষম, শুভাংশুর জীবনে তাঁর স্ত্রীর স্থান কতটা গভীর ও অপরিবর্তনীয়। প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, মহাকাশের অজানা রহস্যের মাঝেও এক অনাবিল মানবিক ছোঁয়া ছড়িয়ে দিলেন শুভাংশু।
অনেকেই মনে করছেন, শুভাংশুর এই বার্তাটি শুধু একজন স্বামী হিসেবে নয়, একজন নভোচারীর ব্যক্তিগত অস্তিত্বের প্রকাশ। চাঁদের পিঠে পা রাখার আগে যেমন নীল আর্মস্ট্রং (Neil Armstrong) তাঁর পরিবারের জন্য চিঠি লিখেছিলেন, তেমনই শুভাংশুর এই বার্তা ভবিষ্যতের মহাকাশচারীদের মানসিক প্রস্তুতির জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।মহাকাশে যাওয়ার আগে শুভাংশু যেভাবে তাঁর অনুভূতি ভাগ করে নিয়েছেন, তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। একাধিক নেটাগরিক মন্তব্য করেছেন, “এই মানুষটাই আমাদের দেশের প্রতিনিধি! কতটা সংবেদনশীল হলে এমন মহাকাশযাত্রার মুহূর্তেও স্ত্রীর কথা মনে পড়ে!” কেউ কেউ আবার লিখেছেন, “এই ভালবাসা আকাশ ছুঁয়েছে, এখন মহাশূন্যেও পৌঁছে গেল।” তাঁর এই পোস্টটি ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এক ভিন্নমাত্রা যোগ করল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। আগে মহাকাশচারীরা তাঁদের যাত্রা নিয়ে বিবৃতি দিতেন মূলত প্রযুক্তিগত বা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে। কিন্তু শুভাংশুর বার্তা প্রথমবারের মতো এক নতুন ধারা চালু করল। যেখানে বৈজ্ঞানিক মিশনের পাশাপাশি আবেগ, ভালবাসা, সম্পর্কের ঘনিষ্ঠ ছায়াও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
এই অভিযানে শুভাংশুর সঙ্গে রয়েছেন আমেরিকা ও ইতালির আরও তিন নভোচারী। নাসা (NASA) এবং অ্যাক্সিয়ম স্পেস (Axiom Space) যৌথভাবে এই মিশনের আয়োজন করেছে। তবে ভারতীয়দের নজর আপাতত শুধুই এক ব্যক্তির দিকে, শুভাংশু শুক্লা। কারণ, ১৯৮৪ সালে রাকেশ শর্মা (Rakesh Sharma)–এর পর তিনিই দ্বিতীয় ভারতীয় হিসেবে মহাকাশে পা রাখলেন। এই ঐতিহাসিক যাত্রা আরও একবার প্রমাণ করল, মহাকাশ জয় করতে হলেও, মানুষের হৃদয়ের গভীরতম বন্ধন ও সম্পর্কগুলি থেকেও শক্তি খুঁজে নিতে হয়। শুভাংশুর মতো একজন বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ যখন স্ত্রীর ভালবাসাকে “জগতের সব কিছুর থেকে বড়” বলে অভিহিত করেন, তখন তা শুধু এক প্রেমিকের স্বীকারোক্তি নয়, তা আধুনিক বিজ্ঞানের মানবিক মুখও। এই আবেগঘন সূচনা দিয়ে শুভাংশু শুক্লার মহাকাশযাত্রা কেবল এক বৈজ্ঞানিক অভিযানই নয়, একটি হৃদয়স্পর্শী মানবিক ইতিহাস হয়ে রইল।
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন : Indian Astronauts, Shubhanshu Shukla | SpaceX : ৪১ বছর পর ফের মহাকাশে ভারত, শুভাংশুদের নিয়ে উড়ল ‘ড্রাগন’
