



দিলীপ গুহ ★ নতুন দিল্লি : ‘আমি বাঙালি’ কথাটার গভীরতা যেমন অপরিসীম ঠিক তেমনই গর্বে এবং গৌরবে “বাঙালিয়ানা” শব্দটিও সমগ্র বাঙালির প্ৰতিচ্ছবি হিসাবেই তুলে ধরে, একথা সর্বজনবিদিত। তবুও আমাদের ভাবতে খারাপ লাগে, বিশ্বায়নের যুগে, আধুনিকতার মোড়কে, পছন্দসই দিন যাপনে, দ্রুত পালটে যাচ্ছে বাঙালির জাতির আচরণ, ঐক্যের সুরেলা-সুর। কবিগুরুর কথায়, “বাঙালী বাংলা দেশে জন্মেছে বলেই, যে বাঙালি তা নয়। বাংলা ভাষার ভিতর দিয়ে মানুষের চিত্তলোকে যাতায়াতের বিশেষ অধিকার পেয়েছে বলেই সে বাঙালি।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রবাসী বাঙালিদের মননে, আমাদের ঐতিহ্যবাহী বাঙালিয়ানাকে, আরও একবার জাগ্রত করে তুলল একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, ‘পূর্ব দিগন্ত ফাউন্ডেশন’ (PDF)। এই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সম্প্রতি ‘বাঙালিয়ানা UNCUT ‘শীর্ষক একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করে। গতবছর এই সংস্থাটি, নারীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে, “The Woman – “আমি নারী” শীর্ষক একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র উৎসবের মাধ্যমে এই বিশেষ উৎসবের যাত্রা শুরু হয়। এবং অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে উৎসবটি।
চলতি মাসের ৮ তারিখ চিত্তরঞ্জন পার্কের বিপিনচন্দ্র পাল অডিটোরিয়ামে আয়োজক সংস্থার চলচ্চিত্র উৎসবের দ্বিতীয় মরশুম হয়ে গেল। বিশেষ বাছাই পর্বের মাধ্যমে দশটি ভিন্ন স্বাদের উল্লেখযোগ্য শর্ট ফিল্ম প্রদর্শিত হয় উৎসবটিতে। ওই উৎসবের বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে, বাংলা ও বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির নানা গল্পে ও আড্ডায়, মাতিয়ে তুলতে উপস্থিত উৎসাহী দর্শকদের মাঝে, তারকা খচিত সমাবেশ ঘটে। প্রেক্ষাগৃহ আলোকিত করে উপস্থিত ছিলেন প্রসিদ্ধ বাক্যবাগীশ চন্দ্রিল ভট্টাচার্য্য, সুজন নীল মুখার্জী, অভিনেত্রী শোলাঙ্কি রায়, অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত, পরিচালক রেশমী মিত্র, প্রদীপ্ত ভট্টাচার্য্য প্রমুখ।
প্রত্যেকটি চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পর, বাংলা সিনেমার খুঁটিনাটি, তার ভবিষ্যৎ এবং ছবিকে কেন্দ্র করে, নানা অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ মুখোমুখি আলোচনা পর্বে, আমন্ত্রিত অতিথি নক্ষত্রদের সঙ্গে সিনেমা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় মঞ্চ ভাগ করে রাজধানী শহরের গুণী ব্যক্তিত্বগণও। ‘আনকাট বাঙালিয়ানা’ আলোচনায় অভিনেত্রী শোলাঙ্কি রায় বলেন, ‘বাঙালিয়ানাটা আমরা রেনেসাঁসের পিরিয়ডের মধ্য দিয়ে গিয়েছি। আমাদের মন মানসিকতা চিন্তা-ভাবনা অনেকটা আলাদা! আমার কাছে বাঙালিয়ানার আজকে সেই জায়গাটা কোথাও না কোথাও একটা ঘোলাটে হয়ে যাচ্ছে! বাঙালিরা যেভাবে অন্য রাজ্যের ভাষা সংস্কৃতিকে অ্যাকসেপ্ট (গ্রহণ) করেছে এবং যেভাবে সেটা সেলিব্রেট করেছে সেটা খুবই আনন্দের। কিন্তু সেটার মধ্যে কোনও সমস্যা নেই, মূল সমস্যা হচ্ছে এই দুঃখ কষ্টের মধ্যে নিজেকে কোথায় যেন হারিয়ে ফেলা। আমরা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর, মাতঙ্গিনী হাজরা, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখ মহাপুরুষদের জন্মভূমিতে জন্মেছি, যেখানে এই মানুষরা আমাদের পূর্বপুরুষ, সেখানে আমরা বাঙালিরা নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলাটা খুবই লজ্জার।’
আয়োজক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও তাঁদের আয়োজন সম্পর্কে পূর্ব দিগন্ত ফাউন্ডেশনের সম্পাদক শুভাশিস গুপ্ত জানান, ‘সমাজের দুর্বল শ্রেণীর মানুষদের কথা ভেবে, পূর্ব দিগন্ত ফাউন্ডেশনের বিশেষ উদ্যোগে, বস্তি এলাকায় অভাবী বাচ্চাদের কথা ভেবে একটা স্থায়ী শিক্ষাদান কেন্দ্র এবং ওখানকার অসহায় মহিলাদের জন্য একটা দক্ষতা এবং স্বনির্ভরতা কেন্দ্র “পূর্বোদয়” চালু করার পাশাপাশি, রাজধানী দিল্লীতে সুস্থ সাংস্কৃতিক আবহমান ধারাকে সযত্নে রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে, মরচে পড়া ‘বাঙালিয়ানা’পুনরায় জাগ্রত করতে পূর্ব দিগন্ত ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) এই চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন। বিশেষ বাছাই পর্বের মাধ্যমে দশটি ভিন্ন স্বাদের উল্লেখযোগ্য স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এই বিশেষ আয়োজনের অংশ নেন রাজধানী দিল্লী ও সন্নিহিত অঞ্চলের অসংখ্য সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষজন। এই আনন্দঘন অংশগ্রহণই উদ্যোক্তা হিসাবে প্রাপ্তি চরম সুখের।’
ছবি : প্রতিবেদক
