



পলাশ গোস্বামী ✪ সাশ্রয় নিউজ : যৌনতা জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যেমন খিদে, তৃষ্ণা বা ঘুম, ঠিক তেমনই যৌনতাও মানবজীবনের সহজাত প্রবৃত্তি। কারও কাছে এটি ভালবাসার প্রকাশ, কারও কাছে শারীরিক তৃপ্তি, আবার কারও কাছে সম্পর্কের গভীরতার নির্যাস। তবে বাস্তব বলছে, বয়স চল্লিশের কোঠায় পৌঁছতেই অনেকের মধ্যে যৌন আগ্রহ কমতে শুরু করে। যার পিছনে রয়েছে শারীরিক জটিলতা, হরমোনের পরিবর্তন এবং মানসিক চাপ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু সহজ টোটকা মেনে চললেই বয়সের ভারে যৌন জীবন হারাবে না তার উজ্জ্বলতা।প্রখ্যাত সেক্সোলজিস্ট ডা. রঞ্জন দত্ত (Dr. Ranjan Dutta) জানাচ্ছেন, ‘৪০ পেরোলে শরীরে নানা পরিবর্তন আসে। মহিলাদের ক্ষেত্রে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমতে থাকে, ফলে যোনি শুষ্কতা (Vaginal Dryness) তৈরি হয়। পুরুষদের ক্ষেত্রেও ইরেকটাইল ডিসফাংশন (Erectile Dysfunction) দেখা দিতে পারে। কিন্তু জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন করলেই যৌন জীবনের মান বহুগুণে উন্নত হতে পারে।’

বিশেষজ্ঞদের কথায়, প্রথমেই স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। সুস্থ যৌন জীবনের চাবিকাঠি সুস্থ শরীর। তাই প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা, জগিং, যোগাভ্যাস বা সাঁতারের পরামর্শ দিচ্ছেন ফিটনেস ট্রেনার রূপম ঘোষ (Rupam Ghosh)। তাঁর মতে, ‘রোজকার হালকা ব্যায়াম শুধু স্ট্যামিনা বা নমনীয়তাই বাড়ায় না, মানসিক চাপ কমিয়ে যৌনজীবনও উন্নত করে।’ এর পাশাপাশি নজর দিতে হবে খাদ্যতালিকাতেও। পুষ্টিবিদ মধুবনী সেনগুপ্ত (Madhubani Sengupta) বলেন, ‘সুষম খাবার শরীরের পাশাপাশি যৌন স্বাস্থ্যও ভাল রাখে। বেশি করে ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য, বাদাম ও কম ফ্যাটযুক্ত প্রোটিন রাখুন। ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত চিনি আর প্রক্রিয়াজাত খাবার যৌনক্ষমতা কমায়। পর্যাপ্ত জলও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ এবিষয়ে যৌনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, মানসিক চাপ যৌন জীবনের বড় শত্রু। ধ্যান, যোগাভ্যাস, অথবা প্রিয় মানুষের সঙ্গে কিছুটা নিরিবিলি সময় কাটালে মন শান্ত হয়। ডা. দত্ত জানাচ্ছেন, ‘দিনশেষে মানসিক চাপ কেবল যৌন ইচ্ছাকেই কমায় না, দাম্পত্য সম্পর্ককেও প্রভাবিত করে।’ একইসঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ডা. অঞ্জনা মুখার্জি (Anjana Mukherjee) জানাচ্ছেন, ‘৭-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম শরীর ও মনের জন্য অপরিহার্য। ঘুম ঠিক থাকলে হরমোন ব্যালান্সও ঠিক থাকে। ফলে যৌন আকাঙ্খা কমে না।’
যৌন জীবনে সমস্যা দেখা দিলে লজ্জা না পেয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। যেমন ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যাওয়ার কারণে মহিলাদের যোনি শুষ্কতা হলে চিকিৎসকের পরামর্শে লুব্রিক্যান্ট ব্যবহার করতে পারেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে লিঙ্গ শিথিলতা বা ইরেকটাইল ডিসফাংশন দেখা দিলে প্রয়োজনীয় ওষুধ, ব্যায়াম ও থেরাপি অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে। অবশেষে, যৌন জীবন কেবল শারীরিক বিষয় নয়, মানসিক বন্ধনেরও গুরুত্বপূর্ণ দিক। সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ তনুশ্রী সেন (Tanushree Sen) বলেন, ‘একসঙ্গে সিনেমা দেখা, বাইরে ডিনার করা, বা নিরিবিলি দু’জনে সময় কাটানো, এই ছোট ছোট মুহূর্তই সম্পর্ককে নতুন করে বাঁচিয়ে রাখে। সঙ্গীর সঙ্গে কথা বলুন, অনুভূতি ভাগ করুন। তাহলেই সম্পর্ক হবে আরও দৃঢ়, যৌন জীবনও হয়ে উঠবে উপভোগ্য।’
আরও পড়ুন : Sexuality : সাফল্যের পথে কামনার কাঁটা: যৌন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণই আসল শক্তি
ছবি: প্রতীকী
