Sasraya News

Wednesday, March 12, 2025

Sasraya News | Sunday’s Literature Special, Issue 26, 28 July 2024 | সাশ্রয় নিউজ। রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | ২৮ জুলাই ২০২৪ | সংখ্যা ২৬

Listen

সম্পাদকীয় 

 

কিছু কথা। কিছু স্বপ্ন। কিছু বিশ্বাস। কিছু সম্পর্ক এমন হয় যা মনের অন্তর আত্মায় তৃপ্তির যোগান দেয়। ফলে লক্ষ্য স্থির রেখেই মন এমন কিছু বিষয়কে রক্ষা করবার দায়িত্ব ভার গ্রহণ করে থাকে।
আপনার বা আমার যার-ই হোক মন কিন্তু সহজ, সরল ও জটিল সমীকরণগুলি সমাধান করে থাকে।
কথার মাধ্যমে ভালবাসা-প্রেম পূর্ণতা লাভ করে। সেখানে কিছু স্বপ্ন থাকে। চলার পথে তারা দুইজনে আঁকে। কিন্তু বিশ্বাস যখন নড়ে ওঠে তখন সম্পর্ক চিড় ধরে যায় এবং ধীরে ধীরে মনের ভালবাসা একদিকে ভর করে। আর কাঁচের মত ভেঙে পড়ে। সাহিত্য, ধর্মগ্রন্থ এগুলো যাতে কোনও সম্পর্ক ভেঙে না যায় তারই সমস্ত কিছুর বিবরণ দিয়ে থাকে।
বরফ গলে যেতে পারে। তাই বলে কি সে জল হবে না! জল বাষ্প হতে পারে তাই বলে কি বরফ হবে না! জল গোলাকার বিত্তে চাপ সৃষ্টি করে না তেমন। তাই বলে কি বর্গক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করবে না! সম্পর্ক ঠিক এমনই। শুধু বুঝতে হবে আসল ও নকল। মন বিচার করতে যায় না। মন বিশ্বাস করতে যায়। মন জলের মত। যে পাত্রে রাখবেন সেই পাত্রের মতোই আকার ধারণ করবে। কিন্তু পাত্র ফুটো হলে চুয়ে পরে যাবে। তাহলে পরিষ্কার যে মন চঞ্চল কিন্তু স্থির। যদি ধরা যায় যে, মনের কঠিন, তরল, বাষ্পীয় ও মিশ্রণ ধর্ম রয়েছে, তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যে পার্থক্য গত দিক আছে। কারণ বলতে পারি ঈর্ষা ও প্রেম।

এমনই জটিলতম বিষয় হল কবিতা। কবিতার জটিল ও সহজ সমীকরণ নিয়ে আলোচনা অনেকেই করেছেন সবটাই নিজের মতো। আসলে আগুন নিয়ে খেলার মতো বিষয় হল কবিতা। যা বোঝা এবং বুঝে ওঠার মানুষের উপস্থিতির হার খুব কম। কবিতা অনেকটা ঠিক নতুন প্রেমে পড়ার মতো আবার পুরনো প্রেমের মতো। উল্টোদিকে বলা যায়, ডিভোর্সের মতো বা সংসার করবার মত। সব কিছুই রয়েছে আবার কিছুই নেই। প্রেম থেকে প্রকৃতি সবই আছে।

ধরে নেওয়া যাক একটি ছেলে বা মেয়ে যে বার বার পাল্টে পাল্টে প্রেমে পড়তে চায়। আসলেই সে গোপন লোভে পড়তে চায়। এখানেই ক্লাইমেক্স। আপনার প্রতি তার প্রেম আছে কি নেই তার কঠিন ও সহজ পরিস্থিতে আপনার খোঁজ রাখা প্রেমের সব চেয়ে বড়ো উপাদান। প্রকৃত ভালবাসার মানুষটাকে চিনে নেবার একটি নিবিড় সংযোগ স্থল। এখানেই ভরহীন ভাবে যাদুতত্ত্ব কাজ করে।

 

 

 

 

 

বিশেষ ভাবে বলা যেতেই পারে, কিছু দুর্বল শক্তি এবং কিছু সবল শক্তি যখন একে অপরের সম্পর্কে প্রকাশ পায় এবং ঘণীভূত হয় ফলে কাছে গিয়েও ভেঙে যায় এটার যোগ বিষয় হল অহংকার।

আজ যা বললাম এগুলো সবই সম্পর্কের কথা। তবে প্রেম পৃথিবীর শুধু নয় মহাজাগতিক বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের ও শ্রেষ্ঠ সম্পদ। যা এলে খুব যত্নে আগলে রাখতে হয়। যেভাবে প্রদীপ শিখা প্রচণ্ড ঝড়-হাওয়ায় আমরা দুই হাত দিয়ে আটকে রাখতে চায়। 🦋

 

 

কবিতা 🦋

 

 

 

 

অমিত কাশ্যপ 

বাজার শিল্প

 

 

বাজারে গিয়ে নির্মলা ম‍্যাডামকে মনে পড়ল
ফাস্ট প‍্যাসেঞ্জারে সকালকে ডেকে যারা নিয়ে আসে
তারা শহরের ফুটপাতে সবজির ঝাঁকা নামিয়ে
গায়ে জবজবে শ্রমের ঘাম মোছে গামছায়
নির্মলা ম‍্যামকে চেনে, বিড়ি খায়, সিগারেটের দাম বাড়া
সোনার দাম কমা, কি হবে জেনে

চায়ে একটা বিস্কুট ভিজিয়ে পাঁচ টাকা দেয়
বাজারে এসব চলে, ব‍্যবসাদার নীতাদিদি থেকে
পাড়ার রামু ফুচকাওয়ালা, কেমন নিদ আসে
গামছার বিছানা, বুকের ওপর জ‍্যোৎস্নার চাদর
শান্তি, নির্মলা ম‍্যাম মাথায় কলপ করতে পারেন

 

 

 

 

 

 

সঞ্জয় আচার্য

পলাশ জ্বরের ঘোর

 

 

মাঝখানে ওই যে পুরনো বাড়িটি জেগে আছে
সেখানে অনেক কথা বায়বীয়।
কোনও নৃতাত্ত্বিক খুঁজে পাবে না সেসব কোনওদিনও বা।
অনেক অনেক মেদুর বন থেকে আজ, এসো
আমরা পেড়ে আনি অজস্র রাঙা অনুভূতি।

দূরে ফেরিওয়ালা হাঁকতে হাঁকতে চলে যায়,
তিন ভূবনের পাড়ায় তার বাস
পরনে উদাসী ফুলের অচেনা সুবাস।
“ভাঙা চোরা বিক্রি করবে গো… ও… ও… ও”
বাড়ির দেয়াল, ভাঙা কুলুঙ্গি কান পাতে
ঝড় জল উপেক্ষা ক’রে এ হেন দূরের আহ্বানে।

সে বাড়িটি ফেলে এসেছি আমি উঁকিঝুঁকি আলোর কিনারে,
যেমন করে ফেলে আসে মানুষ ট্রেন জানলার দু’পাশ
যেমন করে উপশম ফেলে আসে পুরনো ব্যথা।
আজ এই পলাশ জ্বরের মুহূর্তে, এসো, তাদের কুড়িয়ে নিই
আমাদের যৌথ উঠোন থেকে।

 

 

 

 

 

দেবাশিস সাহা

বসন্তসখা

 

 

গাছে গাছে বিবাহসঙ্গীত
হৃদয়ের ছন্দপতন
বসন্তসেনাদের উল্লাসে
দীর্ঘ পথ রঙ্গীলা

কচি মুখে রংলীলা
এসে গেছে বসন্তসখা
আমার সমস্ত প্রাক্তন পুড়ে
আজ কোকিল হয়ে গেছে

ও কোকিলা তোর সুরে
রাধে নাচে
কোন মহল্লায়

সখার স্পর্শ পেয়ে
জল মেখেছে রঙ
বাতাসের চোখে-মুখে
পাখিদের প্রসববেদনা

ভালোবাসার মানুষের
শেষ নিঃশ্বাস
বসন্ত হয়ে এসে গেছে

গাছে গাছে বিয়ের গীত
আকাশে বাতাসে
মেঘেদের লম্বা ছুটি

চাঁদের নরম স্তন
তোমার বুকে বসিয়ে
নিজেকে বসন্তসখা ভাবি
নদী হয়ে যায় রজঃস্বলা

 

বসন্তের কথা

 

তোমার সিঁথি জুড়ে পলাশ
ডুবুরি খুঁজে পায়নি
কোনো রং

বাতাসে অনেক সুগন্ধিত মুখ
ভেজা কোকিল
একমনে ডেকে যায়
তোমার ডাক নাম ধরে

ছায়া রেখে হেঁটে যায় শীত
ঝরা পাতায়
বসন্তের পায়ের ছাপ

গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে
রেখে যাও সুগন্ধি নিঃশ্বাস
সেই পথে আসে বসন্তসখা।

 

 

 

 

গল্প🦋

 

স্ব-নিযুক্ত দলের একদল মহিলা আমার টেবিলের সামনে। ওদের মধ্যে থেকে এক আদিবাসী নারী একবারে আমার মুখোমুখি। অনেকক্ষণ আমাকে দেখে হঠাৎ চিৎকার করা গর্জে উঠল। ‘এই টো সেই মরদ, যে বিয়ের রাতে আমাকে ফেলে পালিয়ে গেছিল চোরের মত। বিয়ের আয়োজন প্রস্তুত। তবু আমাদের বিয়ে হয়নি। সেই থেকে আজও আমি অরক্ষণীয়া অবিবাহিতা। তারপর কী হল? একটি ভিন্ন স্বাদের গল্প লিখেছেন : কুণাল কান্তি দে

 

 

নাগিণী কন্যা

কুণাল কান্তি দে

 

 

 

মালদহ থেকে উত্তরবঙ্গ পরিবহনের বাসে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক ধরে রায়গঞ্জ অভিমুখে চলেছি। আশ্বিন মাসের সংক্রান্তি। বাতাসে হিমেল হাওয়া। রাস্তার দু-ধারে সবুজের সমারোহ। গাজল পেরতেই হঠাৎ বিকল হ’ল বাসের চাকা। মধ্যাহ্ন পেরিয়ে বিকেল বেলা আহোড়া ব্রীজের এক ধারে বাস দাঁড়িয়ে পড়ল। ড্রাইভার অচল বাসকে সচল করতে তৎপর। জানালা দিয়ে দেখলাম, ব্রীজের নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে টলটলে নদী। বাস থেকে নেমে সঙ্গে কিট ব্যাগ নিয়ে খালি জলের বোতল হাতে খাড়া রাস্তা ভেদ করে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এক ফালি সরু রাস্তা দিয়ে নীচে নামছি। দূরে মাথার উপর বাসকে তখনও দেখতে পাচ্ছি।

হঠাৎ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলাম ঝোপ জঙ্গলের নিচে অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখে। মাথায় এক ঢাল চুল, বয়স ২০/২২ বছরের যুবতী। একা নদীর ধারে, টান টান চেহারা। পাথর কেটে কে যেন ভরা যৌবন ঢেলে দিয়েছে কালো রঙের প্রলেপ দিয়ে। দুধের বাটি হাতে প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা এক কাল নাগিণীকে দুধ খাওয়াতে দেখলাম। নিজার কানে শুনলাম, সাপটাকে বলছে, ‘যা চলে যা নিজের ডেরায়। মনের মানুষকে পেয়ে গেছি’, সে দৃশ্য দেখে আমি স্তম্ভিত। পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম।

সংকীর্ণ রাস্তা দিয়ে নীচে নামতে পারলাম না। রাস্তা আগলে থাকা নারী উপরে উঠতে উঠতে আমার কাছে এসে হাজির। ‘যা দেখলি কাউকে বলবি না। গত ৪/৫ বছর ধরে সাধনার ফল পেলাম। ঈশ্বর তোকে আমার কাছে পাঠিয়েছে। আমার আরাধনা আজ শেষ হ’ল। নাগিণী কন্যা আমি। আমার চোখের তারায়, নিঃশ্বাসে বিষ। ঐ যে দেখছিস নদী, এর নাম বেহুলা নদী। ভেলাতে করে লখীন্দরকে ভাসিয়ে নিয়ে বেহুলা এই ময়না গ্রামে থেমেছিল। সেই থেকে আশ্বিন মাসের সংক্রান্তি তিথিতে ঘটা করে মা মনসার পূজো হয়। আজ সেই তিথি। তুই চ’ল আমার গ্রামে আহোড়ায়। আমার হাত ধরে হিড়হিড় করে টানতে টানতে কথাগুলো বলতে থাকল অনর্গল। আমি বোবা হয়ে যাচ্ছি। ঘাড় উঁচু করে দেখলাম, বিকল বাস সচল হয়ে দূরন্ত গতিতে ছুটে চলে গেল আমাকে ফেলে। আমি চরম হতাশার পাঁকে ডুবতে থাকলাম। গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। আমি বোবা হয়ে গেলাম। পা কাঁপছে। ওর দেহের অদ্ভুত এক গন্ধে আমি বিহ্বল হয়ে যাচ্ছি। আমার শরীরে কিসের যেন ঘোর। অদ্ভুত এক শিহরণ। রক্তের মধ্যে কিসের যেন আর্তনাদ। ও বক্তা আমি নীরব শ্রোতা। ‘আমার মা, ঠাকুমা যা করেছে আমিও আজ রাতে তাই করব। ব্রত উদ্যাপন করব’। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হবে। মা মনসাকে দুধ খাওয়ানোর সময় প্রথম যে পুরুষ আমার সামনে দেখা দেবে তাকেই স্বামী রূপে বরণ করব। আমাদের বংশে এই প্রথা চলে আসছে। আমার বাপ, ঠাকুর্দা এইভাবে বিয়ে করে সারাজীবনের মতো আমাদের বাড়িতে থেকে গেছে। একইভাবে তোকেও আমার স্বামী হয়ে আমার সঙ্গে সারাজীবন থাকতে হবে।

টানতে টানতে আমাকে টিনের বাড়ির মধ্যে এনে হাজির। আমার বংশ মর্যাদা, সভ্যতা, শিক্ষা, আভিজাত্য ধুয়ে মুছে স্তব্ধ হয়ে আসছে। আমি নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছি। অসহায় বন্দীর মতো পা পা করে এগিয়ে গেলাম বাড়ির ভিতরে। মাটির বাড়ি। হ্যারিকেনের আলোয় উঠোনের মাঝে আমাকে টুলে বসিয়ে রেখে চারিদিকে পাহারাদার দেওয়া হ’ল। স্বস্তির নিঃশ্বাসে সকলের মধ্যে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি আমাকে নিয়ে আলোচনা চলছে। বিয়ের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে।

আমার বংশ মর্যাদা, শিক্ষাগত যোগ্যতা নিভে যাচ্ছে। আমি উপলদ্ধি করতে পারছি। আমার নতুন জীবন শুরু ভেবে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।

রাত ক্রমশঃ গভীর হচ্ছে। বয়স্করা কেমন যেন ঝিমিয়ে পড়ে উঠোনের একপাশে মাদুরে কেউ কেউ ঘুমিয়ে পড়েছে। কেউ বা ঢুলছে। বাড়ির মেয়েরা আধো অন্ধকারে ইতস্তত যাচ্ছে, আসছে। আমি যেন পাথর। অথচ এখনো পালানোর পথ খুঁজছি। সদর দরজার দিকে লক্ষ রেখে আমি অপেক্ষা করছি কখন সেই মুহূর্ত আসবে আমি এখান থেকে পালিয়ে গিয়ে উদাও হব। ভাবছি, হঠাৎ আমার কাছে থাকা হ্যারিকেনের আলো কমতে কমতে নিভে গেল। আকাশের তারার আলোয় আমি দেখতে পেলাম সদর দরজা খোলা। পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম এবং সদর দরজা ভেদ করে উর্দ্ধশ্বাসে ছুট। ছুটতে ছুটতে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে হাজির হলাম জাতীয় সড়কের বড় রাস্তায়। হাঁফাচ্ছি, হঠাৎ দেখলাম উল্টোদিক থেকে তীব্র আলো জ্বেলে উল্কার মতো ছুটে আসছে, সম্ভবত লরি। দু-হাত তুলে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়ালাম। গাড়ি থামল প্রাণ বাঁচানোর বিকুলিতে ড্রাইভারকে খুলে বললাম সব। দয়াপরবশ হয়ে তুলে নিল আমাকে গাড়িতে। গাড়ি ছুটছে মালদহ অভিমুখে। রাত প্রায় শেষ। এতক্ষণে মনে হল প্রাণে বেঁচেছি। নতুন জীবন ফিরে পেলাম।

ঘটনার এখানেই যবনিকা হলে হয়ত অন্যরকম হত। কিন্তু আমার জীবনে অন্য এক ঘটনা ঘটবে এমন প্রত্যাশা ছিল না। কেটে গেছে ক’য়েক বছর। গ্রামীণ ব্যাঙ্কের চাকরী নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে এই ময়না গ্রামের শাখায় যোগদান করেছি। ক’য়েকদিন পর বসে আছি নিজের চেয়ারে। সকাল হতেই অগণিত ভীড়। এরমধ্যে স্ব-নিযুক্ত দলের একদল মহিলা আমার টেবিলের সামনে। ওদের মধ্যে থেকে এক আদিবাসী নারী একবারে আমার মুখোমুখি। অনেকক্ষণ আমাকে দেখে হঠাৎ চিৎকার করা গর্জে উঠল। ‘এই টো সেই মরদ, যে বিয়ের রাতে আমাকে ফেলে পালিয়ে গেছিল চোরের মত। বিয়ের আয়োজন প্রস্তুত। তবু আমাদের বিয়ে হয়নি। সেই থেকে আজও আমি অরক্ষণীয়া অবিবাহিতা। আমাদের সমাজে ব্রাত্য আমি। তোর অন্যায় পাপাচারের জন্য আজও আমি কষ্ট পাচ্ছি। তোকে আজ আমি ছাড়নি না। বর্বর কাপুরুষ বলে গালাগালি দিতে লাগল। ‘আমি ঠিক চিনেছি। এই তো কপালে কাটা দাগ।’

ইতিমধ্যেই ভীড় জমেছে আমার চারিদিকে। সঙ্গে অনেক সহকর্মী। আমি কিংকর্তব্য বিমূঢ় হয়ে উঠে দাঁড়ালাম চেয়ার ছেড়ে। 🍁

 

 

কবিতা 🦋

 

 

 

 

তমা বর্মণ

জাগিয়ে যাবো যামিনী 

 

 

প্রতিরাতেই মৃত্যু ফোঁপায়
কায়মনোবাক্যে বলে আমার শেষ কবে

এই পৃথিবীর কাছে সুস্থ চাঁদ হামাগুড়ি দিয়ে এলে
জীবন পান সুধা আমি তুমি কি জয় করতে পারব না এই দুঃখকে?

রাতকে ভয় পাবো না দু:খ ভয় পাবো না
নিদ্রাহীন পাখির যৌবন ডানায় দূরপাল্লা
তেমন দিন অবশ্যই আসবে ঝমঝম করে
এটুকু বিশ্বাস

জীবনের জন্য একটা যুদ্ধ সকলের

কেউ না আসুক
তাকে বাঁচাতে পারি না আরেকবার চোখ বুজে মরে যেতে?
ঢাল হতে?

রাতের ঘাসে নক্ষত্ররা অবকাশে গভীর চুমু খাক
জড়ামড়ি ঘুম জড়িয়ে খানিক ঘুম যাক

নিদ্রার পর জেগে হবে সতেজ

 

 

 

 

 

বিজয় ঘোষ

ডুব সাঁতার

 

 

ছেলেবেলার কথা মনে পড়লে কিছু কিছু স্মৃতি ভেসে ওঠে।

যেমন ডুব সাঁতার!
ডুব সাঁতার মানেই পুকুরের পাড়ে বসে থাকা ছোট ছোট ভাইবোনদের ভয় পাইয়ে দেওয়া।
ভান করা, যেন দাদা ডুবে গেছে।
তারপর ভয়মিশ্রিত কান্নার মধ্যেই ভুস করে ভেসে ওঠা ‘এই তো আমি ‘

আহা সেই বরাভয়ের ছোটবেলা আর ফিরে আসে না।

ফিরে ফিরে আসে অনেক ভয়-মৃত্যু-ধর্ষণ
ছোটবেলার সেই ভুস করে ভেসে ওঠার
‘এই তো আমি’ আর ফিরে আসে না…

 

 

 

 

 

পার্বতী রায়

মাটি নিভে এলে

 

জমে থাকা অভিমান থেকে
তুলে রেখেছি ধুলো

যন্ত্রণারাও ক্ষয়ে যায় কখনও কখনও
মাটি নিভে এলে

ঘন করে মেঘ করলে
অনেক কথাই কবিতা হয়ে যায়

 

 

 

 

 

 

কাসেম আলী রানা

ডাহুক ছানার খেলা

 

 

বৃষ্টির জলে নৌকা ভাসে
পালে লাগে দোলা,
নদীর পাড়ে বাঁশি বাজায়
লম্বা চুলের পোলা।

ওগো পোলা কোথায় থাকো
কোন ভিটাতে ঘর,
বাঁশির সুরে নদীর পাড়ে
জাগছে নতুন চর।

তোমার বাড়ি যাবে কুটুম
খোকা তাহার নাম,
সঙ্গে যাবে শঙ্খ মাঝি
সাথে চিঠির খাম।

নতুন চরে ফুল-পাখিদের
চলছে মিলনমেলা,
জোয়ার জলে কাশের বনে
ডাহুক ছানার খেলা।

 

 

 

 

 

রূপক চট্টোপাধ্যায়

ধ্বনি উৎসে বৃষ্টি নুপুর

 

 

মায়ামুখ ফুটেছে মেঘের আড়ালে।
সবে মাত্র এক পশলায় সাজানো
দহন কাল। তাও
কোন দেহাতী গাঁয়ের
জলবিম্বে দেখা যায় কৃষ্ণকালো ছায়া।

কোন গেঁয়ো মেয়ে এসরাজে তুলে নিল
‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবস’!
ভিজো যাওয়া অবেলায় ভেসে যাক
মতান্তরের চাঁদ মালা। ছাপোষা
জন্মবৃন্ত ছিঁড়ে
মোহনায় ভেসে ওঠে পাগলের ঘোলাটে উল্লাস!

পুরাতন পাঠাশালা থেকে উড়ো আসে
অতীতের কাক। ঠোঁট তার হাটু জলে
মাছ ধারার কিশোর কাহিনী।

চশমা বাগিয়ে নিয়ে ভীড় বাস ঠেলে
অফিস ফেরত ব্যস্ত
যে পুরুষ এই মাত্র ভিজলো অঝোরে,

তার জন্য কোনো দিন ঝিরিঝিরি
ছিলো, বেত্রবতীর খেয়া পারাবারে।

তার জন্য কোনো দিন ঝমঝম ছিলো
চিলেকোঠায়, মেঘের আড়ালে আবডালে!

তার জন্য মেয়েটি রেখে গেছে
কেতকীর তলে ধ্বনি উৎসে রাতভর বৃষ্টি নুপুর!

 

 

 

🦋দু’টি গল্প 

 

 

সরোজ আগের মতোই অগোছালো তবে একটু শৈল্পিক হয়েছে। হয়ত রুবিকে খুশি করতে। রুবি এসবের ধারেকাছেই গেল না। স্কুল ফিরতি এলোপাথাড়ি শাওনি বৃষ্টিতে ভিজে এসেছে ও।
হাতে দু’টো কদম ফুল।বুনোগন্ধে ম ম করছে ঘর।… দু’টি ভিন্ন স্বাদের গল্প লিখলেন : ছন্দা দাম

 

 

 

 

 

অনুভবের গুলাল

 

 

সীমান্ত গুলালকে দুই বাহুর বাঁধনে নিবিড় বেঁধে নিল। দু’টো আগুন ঠোঁট ওর ঠোঁটে নামিয়ে আনতে আনতেই গুলাল লাজুক হেসে সরিয়ে নিল মুখ,
তুমি যে কি! ও ঘরে কত লোক, কেউ দেখলে?
সীমান্ত ওর চিবুকটা ধরে বলল, তাতে কি, আমার জনকে আমি ভালবাসব তাতে কার কি! তুমি রোজ ফাঁকি দাও আমাকে। আজ চলবে না।
আঁধারে দু’টো ছায়া এক হয়ে গেল।

এতটা ভালবেসো না আমায়, যদি হারিয়ে যাই কি করবে, বলো? আর যদি কাছে না আসি?
কাঁধে একটা ঝটকা মেরে কেউ যেন জাগিয়ে দিল।
শুনছেন গুলাল শুনছেন, শুনতে পাচ্ছেন?
চোখ খুলে তাকাল। হসপিটালের রুমে শুয়ে!
আমি কোথায়? কি করে এলাম?
আপনি বাসে ছিলেন, বাসটা পুল ভেঙে নদীতে পড়ল,
অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আপনার বেশি কিছু হয়নি, মাথায় আঘাত লেগেছিল, এখন একদম ঠিক।

গুলালের মনে হচ্ছিল সীমান্তের বুকে শুয়ে আছে। এখনও ওর সুগন্ধি অনুভবে দ্রবীভুত।
সীমান্ত তুমি কোথায়? অভিমান করো না প্লিইজ।আজ তোমার জন্যেই ফিরে এলাম সীমান্ত।

কেউ একজন দরজায় ফুলের তোড়া নিয়ে।🍁

 

 

 

 

 

পুনরাগমন

 

আজ দু’বছর, ওরা আবার এক ঘরে। কোর্টের আদেশ একমাস একসঙ্গে থাকার পরও চাইলে ডিভোর্স হয়ে যাবে। রুবি ছোট্ট ব্যাগে ক’য়েকটি কাপড় আর ডায়রী নিয়ে এসেছিল সরোজের ঘরে। না কোনও মোহ নেই আর।

সরোজ আগের মতোই অগোছালো তবে একটু শৈল্পিক হয়েছে। হয়ত রুবিকে খুশি করতে। রুবি এসবের ধারেকাছেই গেল না। স্কুল ফিরতি এলোপাথাড়ি শাওনি বৃষ্টিতে ভিজে এসেছে ও।
হাতে দু’টো কদম ফুল। বুনোগন্ধে ম ম করছে ঘর।

গা’টা ওর কেঁপে উঠছে। তবে কি জ্বর এল! কোনও মতে কাপড়চোপড় বদলে শুয়ে পড়ল কম্বল মুড়ি দিয়ে।
প্রায় বারোদিন পর তাকাল রুবি।
কি হয়েছিল আমার?
উঠতে গিয়ে পারল না। সরোজ ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল।সঙ্কোচে সরে গেল রুবি।
সরোজ দু’টো হাতে নিবিড় করে জড়ালো ওকে।
আর দূরে সরে যেও না রুবি। এতদিন নিজেকে কষ্ট দিয়েছ, সঙ্গে আমাকেও। জ্বরের ঘোরে তোমার সব অভিমান প্রকাশ পেয়েছে। আমি জানতামই না। রুবির কান্না গড়িয়ে পড়ছে। খোলা জানালায় শাওনী পুর্ণিমার চাঁদ ওদের দিকে চেয়ে হাসছে যেন!🍁

 

 

 

🦋কবিতা 

 

 

 

 

 

অরুণ দেব

কবিতার শরীর ছুঁয়ে

 

এই উত্তাপ সেই বোঝে যে এখানে বাঁচে
কথাগুলো তার দৃষ্টিতীঘ্ন করে অধরে আনে প্রফুল্লতা
সে আমারও তাকে ছুঁয়ে আমি প্রবল জলোচ্ছাসে বাঁচি
হিমালয় না হোক ছোটনাগপুরের মালভূমি
অনায়াসে পেরিয়ে যাই।

এই সব জেনেছি কবির কবি বিশ্বকবির আদর অনুভবে
যে মানুষ পাশে থাকে শব্দের মতো, কথা হতে চেয়ে
তার চেয়ে ভাল কবি কে আর হবে?
শরীর ছুঁয়ে দেখো দেহের উত্তাপ নাও মানুষ
বিশ্বাস করো, বিশ্বাস করি একা তুমি একখানা শব্দ
হতে পারো
কবিতা হতে পারো না;

আমি তোমাকে গড়তে গিয়ে জীবনানন্দের দেশ
নদী প্রকৃতির দুর্বোধ্য কথনে অনুভূতি চাই না
আমার আজকের মানুষ চাই
আমার আজকের কবিতা চাই
সরল দুটি চারটি মন পাশে থাক, অঢেল প্রাণ
ঢেলে দিতে
স্ববিরোধী কবিরা সবাই, শব্দ কথা আর অনুপ্রাসে
ভরে ভরে একটি লেখা জন্ম নেয়।

জন্ম নেয় শরীর থেকে আর এক জীবন
তাকে আদর করে মুখের লালা দিয়ে ভালবেসেছে
জন্মদাতা, ধন্য দাত্রী, সুখের গন্ধে উথলা পৃথিবী
আমি ঠিক তেমন করেই তোমাকে ভালবাসি কবিতা,
তুমি আমার গঠন মনন আমার অনুভব
আমার মজ্জাগত সব দোষ নিয়ে জন্মাবে ;

এই আমি চাই,
কোন নীরেট মূর্খের সাদা পাতা, কিংবা কাগুজে বই নয়
আমার কাছে থাক কথা বলা মানুষ কবিতা
কবিতার পাতা পত পত করে উড়ুক
আমার স্নায়ু অন্তর্জালে বিশ্ব মানুষ সংবেদিত হোক।

কবিতা কার?
আমার পাশে থাকা বাউল যে আর গাইতে পারে না তার,
আমার রাতের ভগ্ন জীর্ণ শরীরের সজাগ বন্ধুর ,
আমার দূর দূরান্তের গ্রামের কৃষক, মজুর, কেজো মানুষের,

এই দেশের অকৃপণ দান হাতে দাঁড়ানো মানুষ
সংগীতের পোশাকি নাম ভুলে যারা শুধুই গান গায়
পাখিদের দুর্বোধ্য কুজন যেমন ভরে হৃদয়

আমার কবিতা হোক তেমন সাধারণ।

 

 

 

 

 

 

সুশীল হাটুই

ইভটিজিংয়ের কফিব্রেক

 

সকাল থেকে
ছাত্রী-নিবাসের সামনে অজস্র
ইডিয়ট জড়ো হয়।
ওরা জিবের অ্যাসিডে কচি পেয়ারার
গা পুড়িয়ে দ্যায়।
যুবতি আপেল বুড়ো কমলালেবু
কেউ বাদ যায় না।
পথচারীরা বিরক্ত হয়, ওদের টাইট দেবার
ছক কষে।
এই বাঁদরামি শুধু ১৫ মিনিটের জন্য বন্ধ হয়,
যখন পুলিশের গাড়ি আসে।
এই সময়টাকে বলা যেতে পারে,
ইভটিজিংয়ের কফিব্রেক।
তারপর সেই ট্রাডিশন সমানে চলেছে…

 

 

 

 

 

দেবাশিস ঘোষ

মিহি রোদ ও জলের গতি বিষয়ে

 

 

মিহি রোদ উদযাপন আমাদের একান্ত সম্পদ
অথচ বাঁধানো ছবির অন্যপিঠে
জলের মতো চলাচল করে স্বর্গ ও নরক
কারণ সূর্য আর যাবতীয় গ্রহ বা নক্ষত্র
স্থির নয় কেউ

বিস্ময়ের অন্য নাম জীবনের ঝিঁকিয়ে ওঠা রূপ
তুমি ঠিক ততটাই তুমি যতটা চলতে পারে জল

মিহি রোদ, কমলা রঙের কিছু মুহূর্ত
এবং টুংটাং হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ
কতদূর চলে যেতে পারে! কতদূর!
পুরোনো চিঠির ঝাঁপি, হলদেটে খবর কাগজ
এদের বুকের ভিতর শব্দ বাজে তিরতির
একসময় রোদ্দুর ম্লান হয়ে আসে
চোখ আর চেনেনা আলোর ফোঁয়ারা

চলে যায় জল, উন্মোচনে
মিহি রোদ ফ্যাকাশে এখন
হুহু হাওয়া ছুটে আসে
ধুলোবালি ধুলোবালি, ছোপ ধরা অ্যলবাম
উজ্জ্বলতা শেষ হওয়া নিভন্ত অক্ষর
মাথার ওপর রোজ সূর্য ঘুরে যায়

 

 

 

 

 

 

যতন কুমার দেবনাথ 

হাল আমল 

 

পেটে কামড়। জলপট্টি মাথায়
জেলে জীবন আর জল-জীবন একই কথা

ভালবাসায় বাঁধা ঘরে আলো নেই
জানালা খুললেই সারি সারি অন্ধকার

পাশ কেটে এড়িয়ে চলা ভূতুড়ে মানুষ হাড়িয়া খায়

হাল আমল। হাতঘড়ির হাতে নেই সময়ের নিয়ন্ত্রণ
বোধবুদ্ধি কফিন বন্দী। পেরেকে মাথা ঠুকছে মহাকাল।

 

 

 

 

 

 

বর্ণশ্রী বকসী 

বৃষ্টি

 

রুক্ষ মাটির বুক ভিজিয়ে বৃষ্টিপতনের শব্দ
মেঘমল্লার রাগে ভেসে যায় গান মেঘ মিনারে
রোমান্টিক কল্পনার ডালা উপচে নামে সৃজন
অলক্ষ্যে কে ডম্বরু বাজিয়ে সঙ্গত করে-
দূরে দেখা যায় বিরহী নারীর দল তাকিয়ে আছে
উদাসীন চোখে আকাশ দেখতে দেখতে প্রিয় মুখ
আঁকে, গোধূলি পেরিয়ে ধীরে অন্ধকার ঘনবদ্ধ-
শ্যামলী মেয়ে বুকে পোষে আস্ত গোখরো।

অজান্তে কখন যেন ফিসফিসানি সুর ঝংকৃত
বেপরোয়া মেঘ সেই প্রেমিকের মত যার চলনে
বিদ্যুতের বিচ্ছুরণ!

সতৃষ্ণ বুকের পাঁজরে বৃষ্টিকে ডেকে পাঠায়
নতুন প্রণয়ী, অকস্মাৎ বুকের আকাশে মুক্তি
অশ্রু ও বারিষ পতনের শব্দে তিন তাল ছন্দিত।

 

 

 

 

 

 

নবীনকিশোর রায়

উত্তর নেই

 

রুক্ষ চুল উড়িয়ে-
বুকের বোতাম খুলে,
সামনের দিকে যখন যেতে চাই,
দুপুরের সূর্য বিরুদ্ধাচরণ করে!
দমকা হাওয়া এসে বলে থাম,
ফিরে যাও, আর এগিও না!

এই যে বাধা, পথের সন্ধানে
বেরিয়ে পড়া পৃথিবীর পথে পথে, উদাস ফেরা কর্মহীনতা, সাকার হওয়ার প্রয়োজন
বহুদূরে থেমে থাকে…

অনিশ্চিত গন্তব্যের সরণিতে
পড়ে থাকে শূন্য ঘর,
নিত্য অনটন দারিদ্রক্লিষ্ট
দিনযাপন!

ভিতর থেকে চাপা গলায়
উদোম পুরুষ বেরিয়ে এসে ফিসফিস করে বলে,
এর উত্তর জানতে চেয়ো না…

 

 

 

 

লীনা নাথ

মোহনা

 

জীবন আর সময়ের মোহনায়
খড়কুটো আঁকড়ে রাখে ভরাকোটাল
ভাসমান জ্বলঘূর্ণি পাক খায়
রক্তাক্ত হয় বহমান শাসপ্রশ্বাস।
গুটি পায়ে হেটে আসে সে
উঁকি দেয় জানালায়,
বিলম্বিত লয়ে রাতের বালিশে
মাথা রাখে আকাশপ্রদীপের আলো।
বুকে কাপন ধরায় নদী পারে
জমতে থাকা বালিয়াড়ি জুড়ে
কেন এতো বিহ্বলতা ওড়ে!
তোমার ঠোঁটের কম্পনে সিম্ফোনি
পাইন বনে হেটে যাওয়া পাগলা স্মৃতি
খুঁজেছি কত ঝর্ণার স্রোতে
তোমার আঙুলের সিগারেট
ঠোঁটে চেপে ধরা আবিলতা!
চুম্বনের চিত্রকল্প গোলাপের রঙে
ভেসে যাওয়া কত দুপুর বিকেল,
বলেছিলে দেখা হবে স্বপ্ন মোহনায়
নিয়ে যাবে প্রেমের জোয়ারে
নির্জন সেই পাইনবনের শয্যায়,
ঘুন ধরা আঁচলে ঘাস গজেছে দেখ
কোথায় কোথায় তোমার পদচিহ্ন?
শেষ রাতের তারা নেমে আসে
চোখের গভীরে স্বপ্ন উপত্যকায়।

 

 

 

 

 

 

সুশীতল দত্ত

অপেক্ষমান

 

নৈকট্যে একটু উষ্ণবোধ,
চোখাচোখি।
অপেক্ষমান পর্বে জমে ওঠে-
পাহাড়-কথা…
ছড়িয়ে পড়ে গোলাপ সৌরভ,
সেই সৌরভ হাওয়ায় খুলে যায়
মনের ইচ্ছেগুলো।
দখিনা বাতাস এসে বলে, একটু অপেক্ষা কোরো,
আসছি।

 

 

 

 

 

রোকসানা রহমান

প্রাচীন পৃথিবীর উপর দাঁড়িয়ে

 

 

কাল সারারাত অস্থির ছিলাম যদি সে আসে
কোজাগরী রাতের উষ্ণ বাতাসের আঙরাখা কৃষ্ণ পোশাকে নক্ষত্র গুচ্ছমালা নিয়ে
এসেছিল চন্দ্রভুক হাত বাড়িয়ে বলল- চল যাই অন্য কোনখানে।

সে কি এসেছিল ছায়া পথে, সেই ছায়া খুজঁতে- খুজঁতে দেখি অমানিশা মাঠে
সৌন্দর্যের রাক্ষস, রক্তাত্ত কামনার চোখে
আগুনের লেলিহান শিখা।

ওকে তো খুঁজিনি, কল্পনার মৌনতার সোনালি স্বপ্ন সাজানো নিকেতনে
হতাশ্বাসে দীর্ঘকাল কেটে গেল তৃষিত আত্মা।

তবু আমি নিয়তির মুখোমুখি শান্ত- অবাধ্য
এ হৃদয় কাকে খুঁজে…!
বিস্তৃত অন্ধকারে স্পর্শহীন স্পর্শের আলোয় প্রাচীন পৃথিবীর উপর দাঁড়িয়ে কিংবা বসন্ত বাতাসের মাতাল হাওয়ায় কী আজও ভেসে বেড়ায় মেঘে- মেঘে ছায়াবৃত রাজহংস।

 

 

 

 

 

ফটিক চৌধুরী

মন

 

আকাশের পুঞ্জমেঘ কোথায় যায় উড়ে!
কখনও শারদীয় রোদ্দুর উঁকি মারে
কখনও এক পশলা বৃষ্টিও।

মনেও চলে মেঘ, রোদ্দুর ও বৃষ্টির খেলা।

 

 

 

মোঃ রুহুল আমীন

দাড়াঁও

 

 

দাঁড়াও।
একটু থামো।
কার দিকে বন্দুক তাক করে আছ?
যাকে গুলি করতে যাচ্ছ সে ছেলেটা তোমার নয়তো?
তোমার কি মনে হয় না তোমারও একটি ছেলে পড়তে পারে?
অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সেও তো
শরিক হতে পারে, তাই বন্দুকের টিগার
টানার আগে একটিবার ভাল করে ভেবে নাও।

শোন
একটু ভাবো।
যাকে গুলি করবে হয়তো সে তোমার
ছেলে নয়। কিন্তু, তোমার ছেলের মতোই তো!
যাকে গুলির টার্গেট করে বন্দুকের নল ধরে আছ
তার পরিচয় জানো কি?
হতে পারে সে তোমার ভাইয়ের ছেলে, না হয় কোন প্রতিবেশির, নয়তো কোন বন্ধুর বুকের মানিক!
তাই গুলি করার আগে আরও একবার দেখে নাও!

থেমে যাও।
গুলি চালিও না।
কার ছেলেকে হত্যা করবে তুমি?
যার ছেলেকে মারবে সেও কিন্তু এই দেশেরই নাগরিক।
তোমার হাতের বন্দুক কিনতে যে টাকা লাগে
মাস শেষে যে বেতনটা তুমি গুনে নাও
তার একটা অংশের যোগান দেয় সে,
অতএব ছেলেটার বুকে গুলি করার আগে
আরও একবার ভেবে নাও!

খামোশ-!
অস্ত্রটা নামাও।
ভেবে দেখ ওকে গুলি না করলে
তোমার চাকরি যাবে না, কোন ক্ষতিও হবে না!
কিন্তু ওর বাবা মায়ের কলিজা ফেটে যাবে।
কি অপরাধ ওর, কেন মারবে তুমি ওকে?
অধিকার আদায়ের জন্যেই তো সে আজ রাজপথে।
একটু গভীরভাবে ভেবে দেখো, ও যেটা চাইছে সেটা তোমারও দরকার, তাই তোমাকে বলছি গুলি করো না!

বসো।
চিন্তা করো,
বিবেকের কাছে প্রশ্ন করো, যার কলিজার টুকরাকে
তুমি গুলি করে ঝাঁঝরা করবে তার কি হবে?
মনে রেখো, ওই বন্দুক তোমার হাতে চিরকাল থাকবে না।
মৃত্যুর কথা মনে করো, শেষ বিচারের কথা স্মরণ করো,
সেদিন কেউ তোমাকে মিথ্যা সাক্ষী দিয়ে বাঁচাবে না।
ভেবে দেখো,
কি জবাব দেবে মালিকের কাছে?
এবার সিদ্ধান্ত নাও টিগার টানবে?
না থামবে!

 

 

 

 

 

 

ছবি ধর

আবেশিত হৃদয়

 

 

রিনিক ঝিনিক পায়ে নাচে শ্যামলী বরষা,
মনের গাঙে বর্ষা নামে আষাঢ়ে মেঘ ভরসা।

নদীর স্রোতে জোয়ার জলে মাঝি ভাসায় খেয়া,
শাল তমাল পিয়াল শাখায় অবিরত বাজে দেয়া।

আবেশিত মন মৌসুমী বায়ুর সিক্ত শিহরণ,
আলো আঁধারির লুকোচুরি খেলা ক্ষণে ক্ষণ।

উতল হাওয়া বয়ে আনে মৌসুমী বায়ুর প্রবাহ,
কদম্ব কেতকী বাসর সাজায় সোনা দাদুরির বিবাহ।

শালুক মেলেছে বেগুনি রঙের রেশমি আঁচল খানি,
ভরো ভরো নীল জলে রাজহংসী করে কানাকানি।

দিঘি বিল ঢলো ঢলো পদ্ম পাতায় জলপিপি,
মন কেমনের ঘনঘটায় কাটে বর্ষা দিনলিপি।

 

 

 

 

 

 

রুমানা আকতার

শেষের অংশ

 

রাতের নিকষ কালো অন্ধকারে,
জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে
সমস্ত কিছু…!
হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে।
আমার আবেগ,
কতো স্বপ্ন,কতো অনুভূতি
কতো স্মৃতি, বিষন্নতা মায়া মমতা,
হারিয়ে ফেলেছি পথ…!

ভুলে গেছি তোমার হাসি,
তোমার চোখের ভাষা,
তোমার পছন্দের রং,
তোমার চুলের সুবাস,
শুধু মনে পড়ে-
“তুমি আমায় ভালোবেসে অনিক বলতে..
আর বলতে তুমি এতো বোকা কেন…?”

আমি ভুলে গেছি সেই খামের চিঠিতে,
কি লেখা ছিল…!
শুধু মনে আছে,
শেষ লাইনে গোটা গোটা অক্ষরের বাক্যটুকু
“অনিক আমায় ক্ষমা করো…”

আমি সব ভুলেছি
শুধু থেকে গেছে-
“তোমার চলে যাবার শেষ সময়ের স্মৃতি…!”
শুধুই স্মৃতিটুকু,
আর কিছু না,
আর কিচ্ছু না..!

 

 

 

 

 

🦋ধারাবাহিক উপন্যাস/৯

 

এক ছুটে জেঠিমার কোলে গিয়ে আশ্রয় নেয়। প্রতিমার ঈর্ষা করার মতো চুলগুলোতে বিলি কাটতে কাটতে বলতে থাকেন, ‘পতু মা আমার! আজ যা হয়েছে, তা শুধু তুই আর আমিই জানলাম। আর কেউ-ই জানবে না। কিন্তু তুই কথা দে, ও ছেলেকে তুই ভুলে যাবি!…. সুজিত চট্টোপাধ্যায় -এর ধারাবাহিক উপন্যাস ‘অনেকটা গল্পের মতো’ -এর আজ নবম পর্ব।

 

 

অনেকটা গল্পের মতো

সুজিত চট্টোপাধ্যায়

 

 

 

“তোমরা যা বলো, তাই বলো… আমার যায় বেলা, বহে যায় বেলা… বিনা কারণে…”

দিনের এই সময়টা প্রতিমার নিজের, একেবারেই নিজস্ব। বৈকালিক প্রসাধন সেরে ছাদে উঠে আসেন প্রতিমা। উদ্দেশ্যহীনভাবে দেখে যান চলমান জীবন। রিক্সাওয়ালার সঙ্গে সওয়ারীর ঝগড়া। হেঁকে যাওয়া মটকা কুলপি মাটির হাঁড়িতে লাল কাপড় জড়ানো। জুঁই আর বেলফুলের মালা হাতে হেঁকে যাওয়া সুর, ‘মালা নেবে গো ও ও… ‘। শাশুড়ী মায়ের কাছে প্রীতমকে রেখে নিশ্চিন্ত হয়ে খেলায় মাতেন প্রতিমা। জমানো স্মৃতির ঝুলি থেকে বের করে আনেন তার জীবনের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য স্মৃতিগুলোকে। বর্তমানের সঙ্গে তুল্যমূল্য বিচারে ফেলে মেপে নিতে চান তার অতীত ও বর্তমানের মধ্যে কে বেশি সুখী? প্রভাবতী দেবীর গোপালকে স্নান করানোর মতো করে স্নান করান, গাত্র মার্জনা করার পর বাসী কাপড় ছাড়িয়ে তাঁদের নতুন কাপড়ে সজ্জিত করেন। তারপর ভোগ দেন, ভোগারতি শেষে শয়ান দেন। এভাবেই বালীগঞ্জ প্লেসের বাড়ির ছাদে সন্ধে নামে। পাখিরা আশপাশের গাছে তাদের বাসায় ফিরে আসতে থাকে। কিচিরমিচির আওয়াজে মুখর হয় বালিগঞ্জ প্লেসের সন্ধ্যা। প্রভাবতী দেবী আর একটু পরই হাঁক পাড়বেন, ‘অ বৌমা! এইবার নাইমা আহো। সাইঝবেলা, ছুটো বাচ্চার মা, হাওয়া বাতাস লাগব”। প্রতিমা ‘হ্যাঁ, যাই মা’ বলে আবারও কিছুক্ষণ ছাদের কার্নিশে ভর দিয়ে হারিয়ে যান তার শোভাবাজারের বাড়ির পাড়ায়, সেই সময়ে। এমন ডাক তো তার মা জ্যেঠিমাও দিতেন, এমনই সন্ধ্যে নামো নামো সময়ে। কিন্তু সে ডাকের অন্য অর্থ ছিল। প্রতিমার সেই সময়ে ছোটকাকার বন্ধু সুপ্রতিমকে ভাল লেগে যায় এবং সে ভালবাসা ক্রমশঃ দুর্বার ও দুঃসাহসী হয়ে উঠতে থাকে। উত্তর কলকাতার ঐ দেয়াল ঘেঁষা বাড়িগুলোতে সুবিধা ছিল এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে চলে আসার। শুধু প্রয়োজন হত একটু সাহসের। আর ভালবাসায় যে মানুষ দুঃসাহসী হয় এ আর নতুন কথা কি? সুপ্রতিমের সাহসের যে কোনো কমতি ছিলম, কোথাওই এমন কথা কেউই বলতে পারে না। কোনও একদিন বাড়ির কোনও এক অনুষ্ঠানের সুযোগে প্রতিমাকে সুপ্রতিম ছাদে আসতে বলে অন্যদিনের মতোই। কোনওদিন প্রতিমা ইশারায় বুঝিয়ে দেন বাড়ির অসুবিধার কথা। কিন্তু সেদিন প্রতিমা এড়াতে পারেননি। তারপর ‘অগ্নিতে ঘৃতাহুতি’-র মতোই দু’টো মানব মানবী যৌবনের অমোঘ আকর্ষণকে উপেক্ষা করতে না পারায় কাছাকাছি আসা এবং সেই মুহূর্তেই জ্যেঠিমার বড়ি বা আচার তোলার জন্য ছাদে আসা এবং দু’জনকে ঝুঁঝক আঁধারে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলা… মোটাসোটা নাদুসনুদুস চেহারার আদুরে জ্যেঠিমার গলায় শোনা গিয়েছিল.এক বজ্রকঠিন স্বর।, ‘সুপু ঠাকুরপো বাড়ি যাও। যে পথে এসেছ, সে পথেই ফিরে যেও’। প্রতিমার দিকে আগুন ঝরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেছিলেন, ‘পতু! নীচে আয়। আমার ঘরে আসবি।’ সে নির্দেশ অমান্য করার সাধ্য না প্রতিমার, না সুপ্রতিমের কারুরই ছিল না।
সুপ্রতীম নেমে গিয়েছিল। তারও আগে ছাদ থেকে নেমে গিয়েছিলেন জ্যেঠিমা তারাসুন্দরী দেবী। কারণ তিনিও জানতেন, তাঁর আদেশ অমান্য করার সাধ্য ওদের কারুরই হবে না।
প্রতিমার পা দু’টোতে কেউ যেন একমনি পাথর বেঁধে দিয়েছিল। কিন্তু প্রতিমাও জানতেন, ঐ শেষ কথাটি শোনার পর তাঁকে যেতেই হবে জ্যেঠিমার ঘরে। কপাল ঠুকে ধীরে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নেমে জেঠিমার ঘরের দরজায় মৃদু কড়া নাড়া দিয়েছিলেন প্রতিমা। দরজা ভেজানোই ছিল তার অপেক্ষায়। ঘর থেকেই কাপড় কুঁচোতে কুঁচোতে সাড়া দিয়েছিলেন তারাসুন্দরী দেবী,
‘খোলা আছে, ভেতরে আয়। আচার খাবি?’
প্রতিমা বুঝতে পারছিলেন না। একটু আগের ছাদে দেখা জেঠিমার হঠাৎ এ কি রূপ! আচার খাওয়া বা না খাওয়া কোনটা ঠিক হবে! ঝড়টা ঠিক কোন পথে আসছে? সেটাই বুঝতে পারছিলেন না প্রতিমা! তাই মেঝের দিকে মুখ করে পায়ের বুড়ো আঙুল দিয়ে মেঝে ঘষে যাচ্ছিলেন। জ্যেঠিমা আবার জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘কি রে বললি না তো! আচার খাবি? টক খেতে ইচ্ছে করছে?’

একটু একটু করে জেঠিমার কথা বোধে আসছিল। প্রতিমার এবং যত আসছিল, ততোই লজ্জায় মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছিলেন প্রতিমা । তারা সুন্দরী হাতের কাজটুকু সেরে নিয়ে পানের বাটা নিয়ে খাটে বসেন। পান সেজে, মুখে দিয়ে হেঁয়ালী ছেড়ে সরাসরি প্রসঙ্গে ঢুকেছিলেন তারাসুন্দরী। ‘হ্যাঁ রে পতু! তোর বাবা জ্যাঠা তোর কোন পাকা ধানে মই দিল রে, যে তুই তাঁদের মানসম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিস? কী রে বল! উত্তর দে। চুপ করে বটগাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকিস না। কতদিন ধরে এইসব কু-কীর্তি চালিয়ে যাচ্ছিস? দ্যাখ পতু! তুই না বললেও আমরা কিছু ঘোড়ার ঘাস খাই না, যে জানতে পারব না বা জানি নি। শুধু তোর মুখে শুনতে চাই।
আর তুই এ কোন পচা শামুকে পা কাটছিস? ও ছেলের কোনও চালচুলো জ্ঞান আছে? পড়াশুনায় ভাল ছিল কিন্তু সেটার তো ধারপাশ মারায় না। কী? না দেশোদ্ধার করবেন উনি। বাড়িতে এখন তখন পুলিশ আসে। আজ বাড়িতে তো কাল খোঁয়াড়ে। ছিঃ! এই ছেলেতে শেষে মন মজালি?’ হঠাৎই কাছে ডাকেন প্রতিমাকে। জেঠিমা তাকে অন্যদের চেয়ে একটু বেশুই ভালবাসেন।’ বললাম তো কাছে আসতে। কতা কানে যাচ্ছে না, নাকি পেরেমপিরীত করে লায়েক হয়েছ?’
এতক্ষণের চোখে ধরে রাখা জলের বাঁধ ভেঙে বন্যা নামে প্রতিমার চোখে। এক ছুটে জেঠিমার কোলে গিয়ে আশ্রয় নেয়। প্রতিমার ঈর্ষা করার মতো চুলগুলোতে বিলি কাটতে কাটতে বলতে থাকেন, ‘পতু মা আমার! আজ যা হয়েছে, তা শুধু তুই আর আমিই জানলাম। আর কেউ-ই জানবে না। কিন্তু তুই কথা দে, ও ছেলেকে তুই ভুলে যাবি!
প্রতিমা কথা দিয়েছিলেন জেঠিমাকে। হয়ত তারপর থেকে সুপ্রতীমের ছায়া পর্যন্ত মাড়াননি, কিন্তু সত্যিই কি ভুলতে পেরেছিলেন? নিচ থেকে শাশুড়ী প্রভাবতী দেবীর গলা শুনতে পান আচমকাই, ‘অ বৌমা! তুমি তো এমন বেয়াড়া ছিলা না! দিনদিন তোমার এ কোন অশৈলী কাম? কখন থিকা নীচে নামতে কইসি, অহনও নামলা না!’ লজ্জিত হন প্রতিমা। ভুলেই গেছিলেন তিনি বালিগঞ্জ প্লেসের শ্বশুর বাড়িতে আছেন, শোভাবাজারের বাড়িতে নয়। উচ্চকিত কণ্ঠে সাড়া দেন, ‘এই যাই মা’। (ক্রমশঃ)🍁

 

 

 

 

অলঙ্করণ : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক 

 

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

 

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment