Sasraya News

Wednesday, March 12, 2025

Sasraya News Sunday’s Literature Special | 1st September 2024, Issue 31 : সাশ্রয় নিউজ রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, সংখ্যা ৩১

Listen

সম্পাদকীয়

 

তর্কিতে প্রবেশ করবে। জানতেও পারবে না মন।  আমি সর্বদায় একক। একক ভিন্নঅর্থ হতে পারবো না। যদি একটি উদাহরণ দেখতে চাই তাহলে সবচেয়ে ভালো ভাবে বুঝতে পারবো পিপাসা দ্বারা। জল। এই জল এমন এক পদার্থ তার শক্তির গুরুত্ব আলোচনা করেছে পদার্থ বিজ্ঞানীরা। জলের মূলত চার ধর্মের কথা উল্লেখ করেছেন। এই ধর্ম যদি আমাদের একক শরীরে ঘটে, তা মন দ্বারাই সম্ভব। আধ্যাতিক চেতনা সম্পন্ন মানুষদের লক্ষ করলেই আপনি বুঝতে পারবেন। আসল ঘটনা হলো আজকের এই সব ফোর্স। যদি ধরা হয় পুলিশ, সি বি আই, এন আই এ বা আর্মি বি এস এফ। এই সমস্ত শক্তিগুলি একটি নির্দিষ্ট ভূমিকার জন্য প্রযোজ্য।

 

 

 

সবুজ সংকেত। মানুষ এগিয়েছে। উত্তর ক্রমশ প্রকাশ্য। আতঙ্ক নিজে এসেই ধরা দেয়। ভয় এমন এক শক্তি যা ভরহীন যাদুত্তত্বের উপর কাজ করে। এই তত্ত্ব সত্ত্বর ক্লাইমেক্স ঘটিয়ে থাকে মন শক্তি দ্বারা প্রাণ শক্তিতে। আমাদের ছোট বয়সে বাবা কাকা মামা পিসি মাসি দাদা দিদি ইত্যাদি চোখ রাঙালেই বা ছড়ির আঘাতের থেকে বাঁচতে একটি বিশেষ ভয় কাজ করত। ওই বয়সের অনেক অভিজ্ঞতয়ায় এর অজস্র উদাহরণ হয়ে থাকে।

 

 

 

 

আজকের সময় রাজ্য দেশ বিদেশ সবটাই অশান্ত। বলতে পারি সমস্ত দেশগুলি মিলে বিশেষ সম্মিলিত জাতীপুঞ্জের ভেতরে একটি আতঙ্কিত বিষয়। আজকের পরিস্থিতি। ফলে কোন কিছুরই সুরাহা মেলে না। এর কারণগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ কারণই হলো ক্ষমতা। আর ক্ষমতা লোভের উদ্দেশ্যে যত ঘৃণ্যতম থেকে ঘৃণ্যতম কাজ করতেও দিধাবোধ হয় না। কারণ অর্থ মানুষের বিবেককে অন্ধ করে দিয়েছে। ক্ষমতা পিপাসিত মানুষগুলির একটি নেশা বা ঘোর কাজ করে। যে নেশা আফিম বা যেকোন নেশা জাতীয় দ্রব্যের চেয়েও ভয়ঙ্কর। এখানে নিজের বা পরের বিষয় লক্ষ করতে পারবেন না। যার পরনায় আপনি, আমি বা সেই ক্ষমতাশালী ব্যক্তি প্রত্যেকের চরিত্রগত ব্যবহার একটি অন্য রকম পর্যায়ে ব্যক্ষা করা হয়ে থাকে। আজ আমাদের রাজ্যের কথা উল্লেখ করলেই বিষয়টি বুঝতে পারি। এই ভাবে যে অভয়ার মৃত্যুযোগ একটি চরমতম উদাহরণ হয়ে যেতে পারে বা রাশিয়া ইউক্রেন এর বিষয় বা ইজরাইল অথবা বাংলাদেশ ইত্যাদি এর চরমতম উদাহরণ।

 

 

 

 

বিশেষ ভাবেই উল্লেখ, এর নীতিগত পার্থক্য। প্রতিটি মানুষ তাঁর ক্ষমতা দ্বারা নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান কার্যৎ তিনি একজন একক ব্যক্তি। ক্ষমতা বল মানুষকে বিশ্বাস ও সম্মানের থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। আজকের সমাজে রাজ্য বা প্রতিটি দেশের নির্দিষ্ট  শক্তিশালী গোষ্ঠীর সম্পন্ন লেখক শ্রেণী নিশ্চুপ হয়ে ওঠে। তাদের কলম ভোঁতা হয়ে যায়। তারা এই সময় ঘুরতে বা আনন্দ করতে সাইড হয়ে যান। এমন উদাহরণে প্রতিটি মানুষের ভিড়ে আটকে যায় আশার আলো। খুব কষ্টের এই বিষয় বলেই আজকের দিন। চোখের জল বা লক্ষ লক্ষ মানুষের আন্দোলন এমনকি নারী শক্তির জাগরণ এতটাই শক্তিশালী হয় যা আমরা প্রত্যক্ষ। ১৪ আগষ্ট তা লক্ষ করেছি। যদিও বলতে পারি এখানেই মন ও মানের যুক্ত সম্মন্বয়ে প্রাণের সত্যিকারের লড়াইয়ের প্রতিবাদ।🍁

 

 

 

🦋কবিতা 

 

 

 

ইভা আলমাস

ফণীমনসার উল্লাস

 

প্রান্তরে বুনেছি বীজ অগণন
কিশলয় অপেক্ষায় শুধু দু’নয়ন
অনূঢ়া যুবতী নব যৌবনা বন
সবুজের হাতছানি-মুখরিত মন
দিন যায় মাস যায় বছরের শেষে
চাটাগুলো পরিহাস করে হেসে হেসে!

দৃষ্টির সীমানাতে নীল আসমান
ভ্রম হয় নীল নয় সবুজের বান
আলোকিত মুখরিত দিনের অবসান
হৃদ্যিক উষ্ণতা অনুভবে ম্লান
চোখ ফেটে মনি দুটো বিস্ফোরিত
সবুজ আর নীল নয় সব ধূসরিত!

উদ্বেল ফেনা তুলে হিসহিসে ফনী
তৃষ্ণায় ক্লান্তিতে বীজ ফের বুনি
কোনভাবে জাগে যদি সবুজের প্রাণ
বৃক্ষ শিশুরা যদি করে কলতান!
বুঝে নেবো সমীরণ দিবে হাতছানি
চারা গাছগুলো হবে সবুজ রমণী।

দৈবাৎ ঘুম ভেঙে দেখি চারিপাশ
কালো ধোঁয়া নিকষিত অবনী আকাশ
বুঝে গেছি অবশেষে হৃদ যাহা চায়
যাওয়া হবে নাকো কভূ সবুজের গাঁয়
সবুজের খুনী সব চারিদিকে ঘোরে
আমার শখের চাওয়া হাঁসফাঁস করে…

 

 

 

 

 

প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়

প্ররোচনা

 

রোদের ভিয়েন আমেজ নিয়ে
সংখ্যালঘু বেলাগুলো চলে যায়
সন্ধ্যা কিনারে…

হলুদ মাঠের আলপথ ধরে শীত আসে

ধানকাটার গানে পিঠেলী আবেগ

নবান্নের আয়োজন
খামার প্রস্তুত

গাঁধাফুলের গন্ধে মিষ্টি ইশারা
ছুঁয়েছে স্বরলিপি

কুয়াশা ডিঙিয়ে এখন ভাবি-
বনভোজনের প্রাক্কালে

বান্ধবীর রুমালে কতোটা নীল ছিল!

 

 

 

 

 

 

কাজল মৈত্র

বৃষ্টি চিহ্ন

 

প্রতিশ্রুতি মতো আকাশ আর পৃথিবীর মাঝে
বৃষ্টি খুঁজে ফিরি একপেশে
মাটির শুষ্কতায় অসহায় হয় ধান গাছ
খুঁজে ফেরে জল তেষ্টায় তছনছ
কেমনে মিশে যায় মৃত্যুমুখী সম্পর্ক
সূর্যের ঢেউ যেন বিষাদেরই ঐক্য
আয় বৃষ্টি আয় বাচুক মোদের জীবন
শস্যখেত রাঙা হোক ফুটুক যৌবন
বৃষ্টি চিহ্নে মুছে যাক অভিশাপ
মাটির গর্ভে বিলীন হোক সব তাপ
জলের স্পর্শে ফুটে উঠুক নতুন প্রাণ
পুকুরে ভেকের দল করুক শুভ অনুষ্ঠান
বৃষ্টির অভাবে কত বিনিদ্র হয় রাত
বৃষ্টির আগমনে শক্ত হয় পৃথিবীর হাত।

 

 

গল্প

 

🦋গল্প

 

নলাইনে পাত্রী দেখা পর্ব সারার পর হুট করে একদিন সামনা সামনি মেয়ে দেখা। ক’য়েকদিনের ফোনালাপ ও অবশেষে বেদত্রয়ের নির্মেদ আচারে, মধুপর্কের মিছরি গল্পে ‘তুহু মম প্রাণ হে’। গল্প জতুর্থ কলম ও রুইতন রেজোন্যান্স’। লিখেছেন : শাশ্বত বোস

 

 

 

 

জতুর্থ কলম ও রুইতন রেজোন্যান্স

 

 

র্ষা কিংবা বসন্তের ঘন থকথকে হয়ে আসা একটা বিকেলবেলা। নদীর পাড়ের নগরবর্ত্তীকায় সূর্য্যের শেষ চিহ্নটা বিলুপ্ত হয়ে যাবে, এমন আত্মঘন মুহূর্তের একটা সীমাহীন দখল কাজ করছে যেন সর্বস্বান্ত সভ্যতার ক্যানভাসে। নদীতে হয়ত এক্ষুনি জোয়ার আসবে, জল বাড়ছে একটু একটু করে। নদীর পাড়ের শেষ প্রান্তে ঝুলে থাকা গাছটার শিকড় ভাবী ভাঙনের মুখে অল্প খুঁড়িয়ে হাঁটা জমিটার শেষটুকুকে আষ্টে পৃষ্টে পেঁচিয়ে ধরতে চেয়ে বুনেছে দোষ আর আক্ষেপের স্পেক্ট্রামি কক্ষপথ। তার ছলাৎ ছলাৎ ভাবসম্প্রসারণে ভেসে উঠছেন শ্রাবস্তীর বনলতা। এত অনুকূল পরিবেশেও গাছটির গায়ে একটাও পাতা নেই। তার বিবস্ত্র বিবরে দময়ন্তী নোটিফিকেশনের স্মৃতি উস্কে দিয়ে বেরনো সাতপুরোনো ডালপালা বেয়ে, বুঝি নেমে আসবে মৃত্যুর হীমশীতলতা। পিছন দিক থেকে উঠে আসা আলগা একটা হাওয়ায় গা ভাসিয়ে একজন বৃদ্ধ, শূন্যচোখে তাকিয়ে আছেন তাঁর অস্বাভাবিক ফ্যাটফ্যাটে রঙের শরীর থেকে সব কলকব্জা বেরিয়ে যাওয়া, দ্রাঘিমার ঐশ্বরিক চরিত্র অববাহিকায়। সেই বৃদ্ধ হয়ত বিগত ৭৫ বছর ধরে প্রেমের কবিতা লিখে আসছেন সমানে। নদীর জলে পা ডুবিয়ে বসে একটি ছেলে আর একটি মেয়ে। হয়ত ছেলেটি নদীর উৎস আর মেয়েটি মোহনা। ছেলেটির আলজিভ থেকে বেরিয়ে নদীটা একটা আঁকা বাঁকা স্বার্থপর সরীসৃপ গতিতে ভেসে গিয়ে ব্রাত্যজনের বিলুপ্তির কড়চা লিখছে মেয়েটির পেলভিস বরাবর। গাছটার হাড় গিলগিলে শরীরটা জুড়ে দিনে দিনে যেন ফুটে উঠছে বিষণ্ণ দেশকালের মানচিত্র আর তাতে বিন্দুর মত ভেসে রয়েছে একটি পাখির বাসা। ‘হয়ত পাখিটাকে বুকে করে একদিন উড়ে যাবে গাছটা’, এমনটা মনে হয় এইরকমের আবছা আলো আঁধারিতে। গাছটাই হয়ত জগৎ সংসারের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ, একদিন সে বনবীথিকা হবে। ছেলেটি দিগন্তের নির্জনতার পেটের ভেতর খুঁজে চলেছে বিলম্বিত বিষক্রিয়ার সীমাহীন অসভ্যতা। ঈষৎ পৃথুলা মেয়েটি ছেলেটির সঞ্চারী দু’চোখে সমানে খুঁজে চলেছে, দশমীর ভেজা গায়ে ঈশ্বরী মূকাভিনয়। ছেলেটি এবং মেয়েটি এই ক্ষণে একে অন্যতে মগ্ন, সমাধিস্থ। মেয়েটি তার গোল গোল হাতগুলি বাড়িয়ে দেয় ছেলেটির দিকে,

মেয়েটি: ‘তোমার ঠোঁটে আমার ঘ্রাণ, যেন অপরাহ্নে নবান্নের অঘ্রাণ

তোমার কানে আলতো চুমু, যেন প্রদাহের আতিশয্যে

অভিসারী তল মাপে নীরব অক্ষর।’

ছেলেটি হাতের মুঠো থেকে বার করে একটি সাদা খাম বাড়িয়ে দেয় মেয়েটির দিকে। A4 সাইজের খাম একটা।

ছেলেটি: ‘ফর ইউ! যেমনটা চেয়েছিলে রঙীন পাতায় রঙীন কালির দাগ, দু’টোই আদ্যোপান্ত ভিন্ন সত্তা, কিন্তু বিকেলের উদ্বৃত্ত ছায়ায় মিলে মিশে একাকার।’

এই দৃশ্যটি সত্যি হয়ে যেত হয়ত সহজ জীবন্ত ধূলিকণার রোমকূপে আগডুম বাগডুমের জাগতিক সঞ্চারের মধ্য দিয়ে। কিন্তু সিচুয়েশনটা এন্টাগোনিস্ট হয়ে ওঠে সমান্তরাল সময়ে লীন দু’টি নিসর্গ চিত্রে। নদীর মানচিত্র জুড়ে একটা অনিবার্য্য নৌকার প্রবেশ ও সেই সঙ্গে এই এলেবেলে কনভার্সেশনের মধ্যে প্রতিসরণের খেলা দেখায় খোলা আকাশের প্রিজম তর্জনীর গায়ে ধাক্কা খাওয়া, সূর্য্যের সদ্যঃপাতী তপশ্চর্য্যার প্রতিক্রিয়াশীল নিদর্শন স্বরূপ ঠিকরে আসা ‘শেষের দিকের আলো’। এই চিত্রটা হয়ত গোঙানির ধোঁয়ায় ঝাপসা হয়ে যাবে আর কিছুক্ষণের ভেতরে। নাগালের মধ্য থেকে স্থান-কাল-পাত্রের নৈসর্গিক রূপান্তরের মাঝে, শুক্লপক্ষের ঈশ্বরী জোয়ারের দিকে ভেসে যায় একদল সিঁদুরে মেঘ পাপিয়ার দল।

সুলগ্নাকে কৌশিক দেখে শুনেই বিয়ে করেছিল। মানুষের জীবনে একটা সময় আসে, যখন প্রেম করার আগ্রহ বা ধৈর্য্য কোনওটাই তার আর থাকে না। বিশ্বাসটা টোল খায়, এদিকে মন থিতু হতে চায়। ঠিক তখন প্রেমের ব্যাপারে আশাবাদী থাকাটা নিতান্ত বিপরীতগামীতার পর্যায়ে পরে। বত্রিশের কোঠায় দাঁড়িয়ে খানিকটা এমনতর ভাবনা চিন্তা থেকেই ম্যাট্রিমোনি সাইট, পত্রপত্রিকার পাত্র-পাত্রীর অ্যাড-এ চোখ রাখা। অনলাইনে পাত্রী দেখা পর্ব সারার পর হুট করে একদিন সামনা সামনি মেয়ে দেখা। ক’য়েকদিনের ফোনালাপ ও অবশেষে বেদত্রয়ের নির্মেদ আচারে, মধুপর্কের মিছরি গল্পে ‘তুহু মম প্রাণ হে’। বিয়েতে দানসামগ্রী বেশ ভালই পেয়েছিল কৌশিক। বাবা মায়ের একমাত্র ইঞ্জিনিয়ার ছেলে, খুঁতখুঁতে সৌখিন। ঘরদোর ভরিয়ে নিজের পছন্দের আসবাব করিয়েছিল ও। এটা অহং নাকি আত্মসচেতনতা জানি না। কিন্তু শিক্ষা, কোয়ালিফিকেশন, এল.পি.এ রুপী মানি মেকিং অ্যাবিলিটি এগুলো ক্রমশঃ কৌশিককে ঢেকে ফেলছিল। সেই কৌশিক যে একদিন মনে প্রাণে বিশ্বাস করত, মেয়ের বাড়ি থেকে কিছু নেওয়াটা অন্যায়, ওর বাবা নেননি। 🍁

 

 

🦋কবিতা 

 

 

 

 

ঋতম পাল

দশপ্রহরণধারিনী

 

ঢাকের তালে কোমর দোলে,
মা আসবে বলে।
নীল আকাশে মেঘেরা খেলে,
আগমনীর সুরে, তালে।

মাঠে, মাঠে কাশের দোলায়,
গাছে, গাছে শিউলির মেলায়;
ঘরের মেয়ে উমা আসে পাঁচটি দিনের তরে,
অসহায়ের সহায় হও মা;
আলো করে থাকো তুমি প্রতিটা ঘরে ঘরে।

নানা রূপে এসো তুমি, তুমি যে সিংহবাহিনী,
দশটি হাতে দূর করো মা সকল অন্ধকার;
তুমি যে দশপ্রহরণধারিনী।

 

 

 

 

গোলাম কবির

অসম্পুর্ণতা

 

একদিন একটা পুরাতন বটগাছকে জিজ্ঞাসা
করলাম, তোমার বয়স কত হলো?
সে বলে নদীকে জিজ্ঞাসা করে এসো
তো প্রতিদিন তার ঢেউ এর সংখ্যা কত?
তারপর আমি বলবো।

এরপর আমি হাঁটতে হাঁটতে সন্ধ্যা
নেমে এলো পথের মাঝে,
রাস্তা অন্ধকার প্রায়, হঠাৎ একটা
জোনাকিপোকা আমাকে পথ দেখিয়ে
নেবে বলে সঙ্গে সঙ্গে চলতে লাগলো।
কুশল বিনিময়ের একপর্যায়ে তাকে শুধালাম,তোমার আলো কত ওয়াটের?
বললো সে হেসে সামনে পড়ে যাওয়া
একটা বেলী ফুলের গাছকে দেখিয়ে,
আগে তাকে জিজ্ঞাসা করে এসো,
প্রতিদিন সে কয় আউন্স সুগন্ধ ছড়ায়
পৃথিবীতে? এরপর যেতে যেতে
যেতে যেতে ঘুম নেমে এলো চোখে।

 

 

 

 

 

পিন্টু কর্মকার

ঈশ্বর সব জানে

 

যারা একজনকে ক্ষমতার তেল দিয়ে-
আরেকজনের দিকে ছোড়ে অনুরণিত হিংসার আগুন,
তারা শব্দের কৌশলে ঢাকতে চায় আত্ম-ত্রুটি,
অমানুষও তো মানুষ হয়ে যায় সমর্থনে;
কিন্ত ঈশ্বর সব জানে…

 

 

 

 

ফটিক চৌধুরী 

হাত

 

হাতছানি তো চিরকালই থাকে
নিজেকে যতরকম সর্বনাশের
দিকে নিয়ে যাবার।

সর্বনাশ নয়,
আমি পৌষমাসেই রেখেছি হাত
আর হাতকে রেখেছি সংযত।

 

 

 

🦋ধারাবাহিক উপন্যাস /১৪

 

 

দু’টি কাপে চা ঢালেন অমৃত। নিজেরটা চিনি ছাড়া আর প্রতিমার কাপে নিজের চায়ের চিনিটাও। প্রতিমা খুব মিষ্টি চা খেতো একসময়। অমৃত বলতেন, চা করেছো না গরম শরবত? সুজিত চট্টোপাধ্যায় -এর ধারাবাহিক উপন্যাস ‘অনেকটা গল্পের মতো’। আজ পর্ব ১৪।

 

 

অনেকটা গল্পের মতো

সুজিত চট্টোপাধ্যায়

 

 

 

“তোমার পথের থেকে অনেক দুরে
গেছে বেঁকে, গেছে বেঁকে,
আমার এই পথ”…

 

বাইরে তাণ্ডব গরম পড়েছে। মাটি থেকে গরম উঠছে। বাড়ীর বাইরের হাতায় বসার মতো অবস্থা নয়। কিন্ত… ঘরের ভেতর! রাতে কোনওভাবে রাতটা কাটিয়ে দেন অমৃত দত্ত। কিন্তু দিনের বেলায় প্রতিমার সামনে বসে থাকায় কোথায় একটা দ্বিধা, ঠিক বুঝতে পারেন না অমৃত। কিন্তু এভাবে কি আর পালিয়ে বাঁচা যায়? বাইরে খুব প্রয়োজন ছাড়া বেরোন না। আর বেরোবেন কিসের ভিত্তিতে! এখানে না আছে তার সমবয়সী বন্ধু বা সঙ্গী। চিরকাল কলকাতায় কাটিয়ে এসেছেন। শেষবয়সে কে তাকে সঙ্গ দেবার জন্য বসে থাকবে? তাকে চেনেই বা কজন! যাঁরা চেনে, তারাও অমৃত দত্তকে নয়, প্রীতমের বাবা হিসেবেই চিনেছেন। তাঁদের চোখে তার জন্য কোনো বন্ধুত্বের হাত বাড়ানোর ইঙ্গিত দেখতে পান নি, বরং সে চোখে কোথায় যেন অবজ্ঞা, হেলাফেলা দেখেছেন। প্রথমদিকে যখন বেরোতে চেষ্টা করেছেন, নতুন জায়গার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করছেন, তখনই আঘাত এসেছে। একেবারেই সরাসরি। মানুষ মানুষকে অবজ্ঞা, অপমান করার জন্য বিশেষ কিছুভাবে না, যেমনভাবে তারাও ভাবেননি। প্রথমদিকেই বাজারের থলি হাতে রাস্তায় বেড়িয়েছেন, কেউ হয়তো চিনেও দাঁড় করিয়েছে, ‘চিনতে পারলাম না! মানে এ পাড়ায় কি নতুন এসেছেন? কোন্ বাড়ি? আসলে পাড়ায় এখন এত নতুন মানুষজন আসছে, চিনে রাখাই দায়’ বলে থেমেছেন উত্তর পাবার আশায়। অমৃত উত্তর দিতে গেছেন, ‘না না, ঠিক নতুন নয়। আমি আসলে বাইরে থাকতাম, আমার ছেলেকে আপনারা বিলক্ষণ চেনেন, প্রীতমকে চেনেন তো! আমি প্রীতমের বাবা’। সঙ্গে সঙ্গে অমৃত লক্ষ্য করেছেন তাঁদের মুখে ক্রূরতার ছায়া। কেউ মুখ ফুটে বাক্যবাণ শানিয়েছেন, ‘ও আচ্ছা! আপনিই সেই…! তা হঠাৎ এতদিন পর?’ যেন ভাবখানা এমন যে তিনি প্রীতমের নয়, তাঁদেরই কারুর বাড়ি গিয়ে উঠেছেন। কেউবা তাকে অপমান করার জন্যই সব জেনে বুঝে তাকে উদ্দেশ্য করে ছুঁড়ে দিয়েছেন বাক্য শলাকা, ‘আরে! এই লোকটাই প্রীতমের সেই বাপটা না! এই বয়সে কি মনে করে রে! পুরোনো বৌ ছেলের ওপর প্রেম উথলে উঠলো নাকি?’ অমৃত শুনেছেন। কান পেতে শুনেছেন, এক একবার ভেবেছেন প্রতিবাদ করবেন…”তোদের বাপের কি রে? আমি দেখিনি আমার ছেলে বউকে, কিন্তু এমন তো নয়, তোরা দেখে রেখেছিলি? হ্যাঁ, ওদের যদি বুক দিয়ে আগলে রেখে থাকে তাহলে আমার পরিবারের দু’টো একটা মানুষ আর পাশের সেনবাড়ির দাদাবৌদিরা। তাহলে তোদের এতো গাত্রদাহ কেন?’
কিন্তু কিছু বলেন না। অনেক পোড়খাওয়া মানুষ অমৃত এটা শিখেছেন, ‘সব কথা সব জায়গায় বলতে নেই।’ একটু ঘুরে দাঁড়িয়ে শুনেছেন, তারপর আবার নিজের গন্তব্যে হাঁটা দিয়েছেন। মনকে প্রবোধ দিয়েছেন দু’ইভাবে, এক. মিথ্যেও তো তেমন কিছু বলছে না। আর দুই. জমানা খাড়াব হ্যায়।

অমৃত যখন প্রথম চলে আসবার কথা ভাবছেন ঊর্মির শ্রাদ্ধ শান্তি হয়ে যাবার পর, প্রীতমকে ওদের দামী খাট, ড্রেসিং টেবিল, আসবাব নিয়ে আসার কথা বলেছেন, তখনই প্রতিমা আপত্তি জানিয়েছিলেন, ‘পিতু ওনাকে বলে দে, আমরা ওখানে যেমনভাবে আছি, তেমনভাবে থাকবার কথা ভাবতে পারলেই যেন যাবার কথা ভাবেন। দামী খাট বিছানা, ড্রেসিং টেবিলের তো আমাদের আর দরকার নেই’। সে কথায় এতটাই দৃঢ়তা ছিল যে, অমৃত চুপ করে গেছিলেন। কিন্তু প্রীতমের লোভী বউ বলেছিল, ‘কেন মা! এত ভাল ভাল জিনিসগুলো কোথায় ফেলে যাবে?’
প্রতিমা ছেলের বিয়ে দিয়েছিলেন নিজেরই আত্মীয় কন্যার সঙ্গে। কিন্তু ক্রমে বুঝেছিলেন তিনি বাড়িতে ঠিক ‘ছেলের বৌ’ আনেননি, একটি বিষবৃক্ষ রোপণ করেছেন। অনেক অশান্তি করেছে এই বৌ, অনেক খারাপ কিছু, যা একসময়ের দত্ত পরিবার স্বপ্নেও ভাবতে পারত না। কিন্তু নিজের খুঁটি শক্ত নয় বলেই অনেক কিছুই মেনে নিয়েছেন, মানতে বাধ্য হয়েছেন এতদিন। এখন তবুও মন্দের ভাল সতীনের সংসার নয়। তাঁর ফেলে যাওয়া বাতিল উচ্ছিষ্টের মধ্যে সেরাটিকেই নিয়ে যেতে চেয়েছেন, যদি নিয়ে যেতেই হয়। মৃদু প্রতিবাদ করে বলেছেন, ‘যা যা নিয়ে যাবে ভাবছ, সেসব তোমার ঘরেই জায়গা করে নিতে হবে, এটা মাথায় রেখে নিয়ে যেও। আমার ঘরে এসবের জায়গা হবে না।’ দীর্ঘকাল পর যেন প্রতিমার মধ্যে নিভে যাওয়া আগুনে কোথাও বাতাস লেগেছে।
‘উনি অসুস্থ এবং একা মানুষ, উনি যা করতে পেরেছেন, সেটা তো আমি করতে পারি না, তাই ওনাকে ওবাড়িতে নিয়ে যাওয়াতে আমি কিছু বলছি না।’ প্রতিমার মধ্যেও কাজ করেছে দু’টি চিন্তা, বাৎসল্য রস প্রীতমের প্রতি, প্রীতমের কিছু আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেওয়া এবং দ্বিতীয় ঘরে একজন বর্ষীয়ান পুরুষ মানুষ এনে বিগড়ে যাওয়া বৌয়ের লাগাম টানা।
কিছু পুরনো জিনিস ফেলে, কিছু বেচে দিয়ে একমাত্র দামী ও পুরনো মানুষটাকে নিয়ে এসে জায়গা দিয়েছেন। ঘরের দুদিকে দুটো সিঙ্গল খাটের ব্যবস্থা করেছেন। ঘরের মধ্যে একটা পর্দা টাঙিয়ে নিজেকে আরও আলাদা করে নিয়েছেন প্রতিমা। অমৃত শুধু মেনে নিয়েছেন, মানিয়ে নিয়েছেন। কারণ, একাকীত্বে তার বড় ভয়। এই বয়সে একা হয়ে পড়বেন, এটাও যে উনি আগে ভাবেননি। কারণ, ঊর্মি তার চেয়ে বয়সে প্রায় বারো বছরের ছোট ছিলেন। যদিও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলে এবং বউয়ের সঙ্গে কালেভদ্রে যোগাযোগ রেখে গেছিলেন জোয়ারের জলে ভেসে আসা কচুরিপানার মতোই। তাই-ই হয়ত আজ হালিশহরের বাড়িতে পাকাপাকিভাবে চলে আসার সুযোগ পেয়েছেন।

বাইরের বারান্দা থেকে ঘরের দিকে উঠে আসেন অমৃত। ঘরে প্রতিমাকে দেখতে পান না। একটু চায়ের অভাব বোধ করেন। কোনও কিছুই চেয়ে নিতে প্রতিমার কাছে তার বড় দ্বিধা হয়। যদিও এ সংসারের সত্তর শতাংশ খরচ হয় তার টাকা থেকেই। তবুও কেমন নিজেকে ‘নিজভূমে পরবাসী’ বলে ভ্রম হয়। আজ অমৃত টের পান, পৃথিবীকে তুমি যা দেবে, পৃথিবী তোমায় সেটাই ফেরৎ দেবে, প্রয়োজনে সুদে মূলে। ইলেকট্রিক কেটলে চায়ের জল বসান অমৃত তার জন্য নির্ধারিত ঘরের অংশে পেতে রাখা টেবিলে। সেখানেই তার খাওয়া দাওয়া এবং এই চায়ের মতো টুকিটাকি। অনেকদিন পর আবার প্রতিমার গলায় শুনতে পান গান, যা হয়ত তিনিই স্তব্ধ করে দিয়েছিলেন। বাথরুম থেকে সুরেলা গলায় প্রতিমা গাইছেন, ‘তোমার পথের থেকে অনেক দুরে
গেছে বেঁকে, গেছে বেঁকে,
আমার এই পথ’…
অমৃত অবাক হয়ে যান, শুনতে থাকেন কি নির্ভুল স্বর প্রক্ষেপণে, নির্ভুল সুরে আপনমনে গেয়ে চলেছেন প্রতিমা প্রায় আত্মস্থ হয়েই।

নিজেকে আবারও বড় অপরাধী মনে হয় অমৃতর।
বড় তাড়াতাড়ি জল ফুটে যায় এই ইলেকট্রিক কেটলিতে। চা পাতা ভিজিয়ে দিয়ে আজ নিজের কাপ রাখতে রাখতেই ভাবেন প্রতিমাকেও আজ তার তৈরি করা চা খাওয়াবেন। রান্নাবান্না তিনি অনেকের চেয়েও অনেক ভাল জানেন। তাকে জানতে হয়েছে, কারণ, ঊর্মির বিভিন্ন শিফটের ডিউটি তাকে দিয়ে সবকিছু শিখিয়ে নিয়েছে। এজমালি রান্নাঘরে প্রতিমার জন্য কাপ আনতে গিয়ে প্রতিমার মুখোমুখি পড়ে যান। প্রতিমাও প্রায় থতমত খাবার পর নিজেকে সামলে নিয়ে বলেন, ‘কি হোলো? রান্নাঘরে আবার কি দরকার পড়ল? অমৃত প্রতিমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলেন, ‘ঐ তোমার চায়ের কাপ…।’
অনেকদিন পর এভাবে প্রতিমাকে দেখলেন অমৃত। সেমুখে এখন অজস্র ভাঙচুর। নিঃশব্দে একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এসে বোধহয় প্রতিমাকেও ছুঁয়ে যায়। প্রতিমা কোনও কথা না বলে চায়ের কাপটা এগিয়ে দেন।
অমৃত চায়ের কাপ নিয়ে বেরিয়ে আসতে আসতেই ভাবতে থাকেন, সম্পর্কের শৈত্যও যদি এমনভাবে ইলেকট্রিক কেটলের জলের মতোই উষ্ণতা পেতে পারত!
দু’টি কাপে চা ঢালেন অমৃত। নিজেরটা চিনি ছাড়া আর প্রতিমার কাপে নিজের চায়ের চিনিটাও। প্রতিমা খুব মিষ্টি চা খেত একসময়। অমৃত বলতেন, ‘চা করেছ না গরম শরবত?’
সেসবও এখন অব্যবহৃত ঘরে মাকড়সার ঝুল পড়া অতীত। চায়ের কাপে চিনি গুলে প্রতিমার চা হাতে নিয়ে পর্দা সরাতেই দেখেন, প্রতিমা দাঁড়িয়ে আছে পর্দার ওপারেই। হয়ত পর্দা তোলার অপেক্ষাতেই। (ক্রমশঃ)

 

কভার : প্রীতি দেব। অঙ্কন : প্রীতি দেব, দেবব্রত সরকার ও আন্তর্জালিক 

 

 

 

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment