



সম্পাদকীয়ের পরিবর্তে…
নবজাতকের চোখে চতুরতার দৃষ্টি
দেখে নিচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত মায়ার বন্ধন,
নতুন অভিযানের স্বপ্নপথ।
যুগ-যুগ ধরে যে সৃষ্টি,
সেই সৃষ্টির পথ একটাই- পৃথিবীর মায়াঘোর
নতুন শিশুটির জন্মের পর
বুঝিয়ে দিচ্ছে—
জীর্ণ-জঞ্জাল আর আগাছা স্তূপ
তোমাদের যাবার সময় এসেছে 🍁
🍁গদ্য
মেঘশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা-১
হিসেব মতো দ্বিতীয় দিন হলেও প্রথম দুপুর বলা চলে। ভীষণ গরম। যেমন সকলের বোধ হচ্ছে, তেমনই আমার। বিলবিলে ঘাম ফুটে উঠছে গলায়, নাকে। বহুদিন পর আপন করে নেওয়া সেই সুতির কালো ওড়না সমস্ত ঘাম শুষে নিয়ে যেন গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। উল্টে পথ চলতে চলতে মৃদু হাওয়ায় মনটা ভরে উঠছে। সকাল থেকে নানা ব্যাঙ্কে ঘুরে ঘুরে নানা কাজ। অসম্ভব কাজের চাপের মধ্যে ব্যাঙ্ক কর্মীদের তৎপরতা ও মিষ্টি ব্যবহার ভীষণ ভাল লাগল। এইবার আজকের মতো এই শেষ ব্যাঙ্কে ঢুকে কিছুটা চমকালাম। বেলুন নীল আর কমলা বেলুন দিয়ে সিলিঙটা সাজানো।
_________________________________________
আগে আমি খুব চুপচাপ ছিলাম বটে, কিন্তু সদ্য দেশের মাটিতে পা রেখে বড্ড কথা বলতে ইচ্ছে করছে সকলের সঙ্গে। মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেল,
“এত বেলুন কেন?”
________________________________________
লাইনে দাঁড়িয়ে দেখছিলাম খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে। আমার তেমন তাড়া নেই, অন্ততঃ বাকিদের দেখে তেমনই মনে হচ্ছে। লাইন ভেঙে এ ওর ঘাড়ের ওপর দিয়ে ঝুঁকে পড়ে শুধু নিজের কাজটুকু বুঝে নিতে চায়। বাকিদের সময়ের দাম কেউ কেনই বা দিতে যাবে! তবে মজার ঘটনাও চোখে পড়ল। এক ভদ্রলোক তাঁর শাশুড়ি মায়ের পাসবই এনে কিছু একটা করাতে চাইছেন। ব্যাঙ্ক কর্মী তাঁর নাম জিজ্ঞাসা করতে বলেন, “কেন চেনেন না? আমি তো প্রায়ই আসি!” আগেই বলেছি এঁরা খুবই ব্যস্ত থাকেন। ভদ্রলোকের কাউন্টারে তখন তিনিটে ফর্ম খোলা, ডেস্কটপেও কিছু একটা যেটা উল্টোদিক থেকে দেখা যাচ্ছে না। একটি মেয়ে পাশেই ব্যাঙ্কের APP খুলে পরের ধাপ জেনে নেওয়ার অপেক্ষায় আর কাউন্টারের কাচের খাটো দেওয়ালে উপছে পড়ছে লাইন কাটিয়ে কাজ সারা লোকের ভিড়! এই অবস্থায় ব্যাঙ্কের ভদ্রলোক ভস্মকারক দৃষ্টিতে গ্রাহকের দিকে চাইলেন। অথচ কী শান্ত গলায় বললেন, “মনে নেই, আবার বলুন!”
“কেন, পরেশ?”
“পরেশ পাল?”
“না না, পাল হবে কেন? দাস!”
এরপর নীরবে কাজ সারলেন। বিখ্যাত পরেশবাবু সরে যেতেই আমার পালা। আগে আমি খুব চুপচাপ ছিলাম বটে, কিন্তু সদ্য দেশের মাটিতে পা রেখে বড্ড কথা বলতে ইচ্ছে করছে সকলের সঙ্গে। মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেল,
“এত বেলুন কেন?”
আবার সেই প্রখর দৃষ্টি ও শান্ত কণ্ঠ,
“আমার জন্মদিন!”
বুঝলাম মন্তব্য তীর্যক। এদিকে আমার প্রায় পাঁচ বছরের নানা কাজ জমে আছে। একের পর এক হেঁকে গেলাম। একগাদা ফর্মও নিতে হল। ভদ্রলোক হঠাৎ বলে বসলেন,
“এত ফর্ম তুলে কী করবেন! একাউন্ট তো জয়েন্ট।” আগেই জানিয়েছি পতিদেবতার পদার্পণে কিঞ্চিৎ দেরি আছে। এদিকে সকাল থেকে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে গরমে আমার মাথায়ও কিঞ্চিৎ দুষ্টু বুদ্ধি ঘোরাফেরা করছে। সেই রকমই প্রখর দৃষ্টি হেনে শান্ত গলায় বললাম,
“লাঞ্চের পর বসে বসে ফর্ম ফিল-আপ করা আমার হবি!” 🍁
🌱কবিতা
পরাণ মাঝি
বিশ্বস্থ সংলাপে
কোথায় মানুষ। দেহরৈখিক মূর্চ্ছনায় বাজে মাদল
ঝিলিক আর ঝলকে ঝলসে যাচ্ছে মহড়া। বোধ ও বোধন এবং গণতন্ত্র বরাবর চলছে চাষবাস-
শূন্য
শূণ্য সব অগ্ররেখা। মৌন রাক্ষস। ভূবনডাঙা জুড়ে উড়ুক প্রাণতন্ত্র। বিশ্বস্থ সংলাপে অন্ধকার মুছুক –
অনন্ত সে আকাশের জন্য রইলো মেটে আ-লিঙ্গন।
রেহানা বীথি
ভাবলাম – নাড়া দিই
পোয়াতি আকাশ
আমার দু’হাতে মাথা রেখে দিব্যি ঘুমোচ্ছে
হাতে ঘুমন্ত আকাশ নিয়ে আমিও দিব্যি
ঘুরছি, ফিরছি, বসছি…
পরকীয়ার ফাটলে একটি পদ্ম গুঁজে
হাঁটতে হাঁটতে চলে যাচ্ছি
কোনো এক নিদাঘপীড়িত গাঁয়ে
পোয়াতি আকাশের তবু ঘুম ভাঙল না
পৃথুলা বিষাদে আমার হাত যখন অবশ প্রায়
ভাবলাম – নাড়া দিই
ভাঙলে ভাঙুক ঘুম
অন্তত একবার বৃষ্টি নামুক, ঝুম…
ফটিক চৌধুরী
বিনত
আমরা নিতে এসেছি
দিতে নয়,
তবুও যারা দেয়, তাদের
জন্য আনত হই সবাই।
নত হতে না শিখলে
কি দেব সমাজকে!
ফলভারে গাছের শাখা
নিজেই আনত।
মাহবুবা করিম
দুঃসময়ে
এ বড় উৎপাত আজকাল – যত্রতত্র নির্বিকার কেউ কেউ ফেলে যায়,
আঁচল টেনে ধরে ওরা – কোলে নেয় অনাথ দুঃখ।
অক্ষিকোটর মৃত কূয়ো তবু ছেলেমানুষি জলের
আবেদন তার, যেন শুয়ে – বসে চোখের ব্যালকনি
জুড়ে ক্যকটাস,
তবুওতো দুঃখ রেখে যাইনি কোথাও ;
আমাকে রেখে পালায়, যে ঈশ্বর!
সে যেন আত্মহত্যার দায়ে ক্ষমা ভিক্ষে চেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে হাশরের ময়দানে।
জয়ন্ত দত্ত
তবুও জীবিত
কেটে যায় সময়, নাকি বয়ে চলে?
কিছুই জানি না
আমি আঁকতে থাকি
আমাদের বেঁচে থাকা।
আরো কিছুক্ষণ
ভুলগুলো পাথরে পিষে
গোটা শরীর রঙ মাখে
আর
সময়ের পরিবর্তন অবিরাম খেলা করে
ঐ সংখ্যালঘু প্রত্যাশা কিংবা
অচেনা বিরতি।
তবুও
নরম হাতে দেহ বিছিয়ে
চিৎকার করে বলেছিলাম
আমি জীবিত!
শুক্লা গাঙ্গুলি
লেখা
একটি শব্দ অথবা প্রতিশব্দ খেলা
কলম চালাতে গিয়ে একটু থমকাই-
ভালো আছি কিম্বা ভালো থেকো
কথার পৃষ্ঠে কথা উপর্যুপরি উত্তর
প্রতি উত্তরের চক্রাকার
আসলেই কি কিছু লিখি?
আকাশ আজ অযথাই নীল
শরত জড়িয়ে কেমন যেন বর্ষার
তুল্য পরিমান ভেজা সকাল
ঝুরো গল্পের পশরা নিয়ে-
বৃষ্টি দাঁড়িয়ে আছে পথ জুড়ে-
যাই বোলে যে মেয়েটি বার বার ফিরে তাকায়
তার কি যাওয়া হয় কখনও…
তোফায়েল তফাজ্জল
ব্যবধান
ব্যাধির ধরায় টাল সামলাতে না পেরে
সম্মুখ সমরে হেরে বসে পড়ি আধা ভাঙা ঘাটে,
ঘরে গিয়ে কিছুক্ষণ শুয়ে থাকি খাটে
এই যা বিলম্ব – পারিনি ঘণ্টার সাথে,
এতেই প্রধান কর্তা দাঁত রাখে দাঁতে।
আনত বলেছি, স্যার, আমি এক কথার ফক্করে
পড়ে ধরা খেয়েছি একটা অন্ধ-অচেনা চক্করে
যার ধরুন ছিলো না সাধারণ জ্ঞান,
সইতে হচ্ছে আজ এক ট্রাক অপমান!
অন্যদিন, মায়ের আবদারে আটকা পড়ি
যা বলতেই ভেংচানো কথার তিতা বড়ি
গিলতে হয় শতো
হয়ে সেই বাধ্যগত ছেলেটার মতো।
অথচ হেলায়, কোনো হিসেব না কষে
বাজে কাজে, গল্পে, শুয়ে-বসে
সুমহান কর্তা থেকে পাচ্ছি অনুগ্রহ,
এর আগে আজীবন সুবিধা নিয়েছে পিতামহ,
কেউ তাঁর নির্দেশ ব্যাপারে
কখনো ছিলাম না একেবারে
সচেতন,
তাতেও ঘোষণা করেননি মহা-রণ,
বন্ধ করেননি অন্ন,
সেগুলোও যা জরুরি জীবনের জন্য।
আসলে তিনিই শুধু হাত খোলা, উঁচু থেকে উঁচু, সবকিছু,
বাকি সবই নিচু থেকে নিচু।
মমতা রায় চৌধুরী
আমি যতবার তোমার মুখ দেখেছি
আমি যতবার তোমার মুখ দেখেছি
ভোরের দোয়েল, শঙ্খচিল
ধান সিঁড়ি আর কলমির গন্ধে ভরা
বাংলার মুখ ভেসে উঠেছে।
আমি তন্ময় হয়ে দেখি সারাক্ষণ
শিশির ভেজা সকালে টিয়া পাখির ঠোঁট
সবুজ রাঙা ঘাসগুলোর হাতছানি।
সবুজ ঘাসের উপর বসে তার গন্ধ
নিতে নিতে আমি হারিয়ে যাই
তোমার মুখ দেখে।
আমি যতবার তোমার মুখ দেখেছি
বারবার আমায় হাতছানি দেয়
বাংলার আম, জাম, কাঁঠাল, হিজল
আর জীবনানন্দ দাশের
অপার ভালবাসা নদী মাঠ ঘাট
আর ভাঁট ফুলের দেশজ বুনো গন্ধ।
আমি যতবার তোমার মুখ দেখেছি
আমার সামনে রূপসার ঘোলা জলে
এসেছে বাংলার কোনও এক কিশোরের
ছিপ ফেলে মাছ ধরার অপরূপ দৃশ্য
মুথা ঘাস মাড়িয়ে রাখালের মাঠে যাওয়া।
আমি যতবার তোমার মুখ দেখেছি
আমার সামনে এসে ধরা দিয়েছে
বাংলার নারীর কেশবিন্যাস,
কোমল ঠান্ডা পরশ, রূপচাঁদা
মাছের এক অপরূপ ঘ্রাণ।
আমি যতবার তোমার মুখ দেখেছি
আমি বারবার বাংলার প্রেমে পড়েছি
প্রেমে পড়েছি আমার বাংলার জল
বায়ু, মাঠঘাট আর কৃষকের
মুখের হাসি সোনালী ধানের ইশারা।
আমি যতবার তোমায় দেখেছি
আমার সামনে ধরা দিয়েছে
বাংলার ছোট ছোট শিশুর
উঠোনে বসে শৈশবের খেলা।
সারাদিন এভাবেই কেটে যায়
শুধু তোমার মুখ ভেবে ভেবে
আর বাংলাকে ভালবেসে যাওয়া।
আমি তোমার ভালোবাসার মাঝেই
আমার বাংলাকে খুঁজে পাই।
এই বাংলাকে ভালোবেসে
আমি তোমার কাছে যেতে চাই।
গোলাম কবির
কবিতা লিখতে গিয়ে
কবিতা লিখতে গিয়ে মনেহয়
আমি কোনো কবিতাই লিখতে পারি না,
আমি শুধু আমার আনন্দ, বেদনার অনুভব ও অনুভূতির প্রকাশ
ঘটাই কবিতা লেখার ছলে!
তাই কবিতা লেখা আমার হয় না
বরং কবিতাই আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয়
কিছু কষ্ট, দুঃখ, বিরহ এবং
আনন্দ ও বেদনার শিলালিপি !
কবিতা লিখতে গিয়ে মনেহয়
আমি তো শুধু তোমাকে না পাবার কষ্টে আমার আর্তনাদের শব্দগুলো
গেঁথে রাখি সাদা কাগজের পাতায়,
তোমার জন্য আমার হৃদয়ের
গভীর গোপন কথাগুলো
লিখে ফেলি মনের ভুলে
কবিতা লিখতে গিয়ে,
তাই কবিতা লেখা আমার দ্বারা
কখনো সম্ভব হয়ে ওঠে নি !
কবিতা লিখতে গিয়ে আমার কখনো
কবিতা লেখা হয়ে ওঠে না,
যা হয় তা শুধু কোনো এক নির্জন
নদীর পাশে শুয়ে একলা পুড়তে থাকা
শবের শব্দহীন আর্তনাদের দৃশ্যকাব্য!
কবিতা লিখতে গিয়ে এক একদিন
মনেহয় – এটাকে কোনো কবিতা বলা?
ভুলে যাও তুমি।
বরং এ আমার হৃদয়ের গহীন ভিতরে
বয়ে চলা নদীর তীব্র ঢেউয়ের দোলায়
কচুরিপানার মতো ভেসে ভেসে
তোমার দিকে ধাবমান
কোনো একটা দিনের গল্পগাঁথা!
কবিতা লিখতে গিয়ে কখনো মনেহয়
ধুস্ শালা! এটা তো কোনো কবিতাই নয়
বরং এটা হতে পারে আমার
হৃদগহীনে যেদিন অবিরাম বৃষ্টি ঝরে,
সেই একটানা বর্ষণক্লান্ত দিনের
লাল, নীল কষ্টের প্যাপিরাসের পাতায়
লেখা বহু পুরাতন ডায়েরির
একটা পাতায় লেখা কথাগুলোই!
তাই আমার কোনোদিনই আর
কবিতা লেখা হয় না, হয়ে ওঠে না!
🍁ধারাবাহিক উপন্যাস /চার
অনঙ্গ বুঝেছেন তার এতকালের সাংসারিক ও দাম্পত্য অভিজ্ঞতায় যে সোমা বুঝেছে গত সন্ধ্যের ঘটনায়, উদ্গার করে দেওয়া মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা দুঃখ কষ্টের তীরগুলো এভাবে অনঙ্গর দিকে ছোঁড়া উচিৎ হয়নি, কারণ, অনঙ্গ ছিল সাংসারিক পরিস্থিতির শিকার। সোমা তার আচরণে, ব্যবহারে চলনে বলনে চেষ্টা করলেও একবারও মুখ ফুটে ভুল বা নতিস্বীকার করতে রাজী হয়নি। ধারাবাহিক উপন্যাসের আজ চতুর্থ পর্ব। লিখেছেন : সুজিত চট্টোপাধ্যায়
অনেকটা গল্পের মতো
গতকাল রাতে ঝড় বৃষ্টি, পাওয়ার কাট এবং সর্বোপরি সোমার সঙ্গে স্বল্প বাদানুবাদ সব মিলিয়ে আর লেখায় হাত দিতে পারেননি অনঙ্গ। জীবনের অনেক ঝড়-ঝাপটা সামলেও এখনও আবেগটাকে বাগ মানাতে পারেননি। তাই হয়তো অনঙ্গ তার নিজেরই মতো স্বতন্ত্র। ঝোড়ো হাওয়ায় কত কিছুই উড়িয়ে নিয়ে গেছে, কিন্তু সোমার সঙ্গে সাংসারিক খুব স্বল্প বাদানুবাদের কথাগুলো কিছুতেই মন থেকে উড়ে যায়নি। ঝড়ের সময় জানালা বন্ধ করাটা তার উচিৎ ছিল, একথা সর্বাংশে মানলেও পরের অংশটুকু কিছুতেই মানতে পারছিলেন না অনঙ্গ। বন্ধুদের সঙ্গে তুলনা, সংসার-জীবনে সোমার না পাবার এবং হারাবার সব কথা যেন মনের মধ্যে থেকে বের করতে পারছেন না। এটা অনঙ্গ ভুল বোঝেন কিনা জানেন না। কিন্তু তার মনে হয়, মেয়েরা তর্কে জেতার জন্য অনেকদূর পর্যন্ত নামতে পারে, মনের মধ্যে থাকা অনেক ভালবাসা সত্ত্বেও। শুধুই তর্কে জেতার জন্য। অনঙ্গ চেষ্টা করেছিলেন ব্যাপারটাকে হালকা করে দেবার জন্য। কিন্তু সোমা যেন কোথায় কোমর বেঁধে তৈরি হয়ে এসেছিল গতকাল। একটার পর একটা তীব্র বাক্যবাণে, বিগত আটাশ ত্রিশ বছর আগের ঘটনাবলী তুলে আনছিল আর অনঙ্গ ক্রমশঃ জোঁকের মুখে নুন পড়ার মতো, জোঁকের শরীর থেকে রক্ত নিঃসরণের মতো মিইয়ে যাচ্ছিলেন। কারণ, অনঙ্গ জানেন, সোমা যা বলছে তার কোনওটাই মিথ্যে বা মনগড়া নয়। রাতে খাবার টেবিলে যদিও সোমা চেষ্টা করেছে অনঙ্গর ক্ষততে মলম লাগাবার, কিন্তু তাতে অনঙ্গর ক্ষততে জ্বলন বেড়েছে বৈ কমেনি। আরও দশ বছর আগে হলে হয়ত বিছানায়, রাতের অন্ধকারে সেসব ধুয়ে-মুছে যেত, কিন্তু এখন আর সেই বয়সটাও নেই। তাই ঝড় বৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও বাইরের আবহাওয়ায় পরিবর্তন আসলেও ঘরের বাতাসে গুমোট ভাবটা কাটেনি। অনঙ্গর শোওয়া ভীষণ খারাপ, সারারাত বিছানার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত ঘুরে বেড়ায়, কিন্তু কাল বিছানার একপাশে সটান শুয়েছে, সোমার অভ্যাস অনঙ্গর বুকে একটা হাত রেখে শোওয়া, কিন্তু সেও শুয়েছে ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে। শুধু রাতভোর দু’টো মানব মানবীর দীর্ঘশ্বাসের শব্দ নৈঃশব্দ্যকে তাড়া করে বেড়িয়েছে যেমনভাবে টিকটিকি তার শিকারকে এ-দেওয়াল থেকে সে- দেওয়ালে তাড়া করে বেড়ায়। সকালে উঠে সোমা স্বাভাবিক আচরণ করেছে, গত সন্ধ্যার ঘটনাকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে, যেন বিষ ঢালা সাপের মতো নির্জীব। অনঙ্গ বুঝেছেন তার এতকালের সাংসারিক ও দাম্পত্য অভিজ্ঞতায় যে সোমা বুঝেছে গত সন্ধ্যের ঘটনায়, উদ্গার করে দেওয়া মনের মধ্যে জমিয়ে রাখা দুঃখ কষ্টের তীরগুলো এভাবে অনঙ্গর দিকে ছোঁড়া উচিৎ হয়নি, কারণ, অনঙ্গ ছিল সাংসারিক পরিস্থিতির শিকার। সোমা তার আচরণে, ব্যবহারে চলনে বলনে চেষ্টা করলেও একবারও মুখ ফুটে ভুল বা নতিস্বীকার করতে রাজী হয়নি।
লেখাটা লিখে ফেলতে হবে। স্বল্পসংখ্যক হোক, তবুও তার পাঠকেরা জানিয়েছে, তারা চতুর্থ পর্বের অপেক্ষায়। তাই অনঙ্গ আবার লেখার টেবিলে বসলেন। একেবারেই আনাড়ি (লেখক শব্দটা নিজের সম্মন্ধে লিখতে তার লজ্জা হয়, যদিও কোনো একটি সোশ্যাল মিডিয়া এখন তার নামের পাশে খুব ছোটো করে ‘Author ‘ শব্দটা ব্যবহার করে) তাই বুঝে উঠতে পারছিলেন না গল্পের খেইটা কোথা থেকে ধরবেন! কোথায় যেন শেষ করেছিলেন দ্বিতীয় পর্বে?
অমর্ত্য দত্ত ও তাঁর বাড়ি :
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাড়িটা তৈরি হয়ে গেল। পয়সা থাকলে কোনও কিছুই আটকায় না, এটা অনঙ্গ তার গোটা জীবন দিয়ে বুঝেছেন। তাই বাড়ীটাও আটকায়নি। এই বাড়ি তৈরির সময়ে আরও কাছাকাছি এসেছেন ছোটোকাকা অমর্ত্য দত্ত। কখন অনবধানে দুজনে দু’জনের অসমবয়সী বন্ধু হয়ে উঠেছেন, বুঝতেই পারেন নি অনঙ্গ। গল্পে গল্পে ছোটকাকা তাঁর পরিবার, পরিবারের উত্থান, কেচ্ছা কেলেঙ্কারি একটু একটু করে অনঙ্গর মনের মধ্যে লিখে দিয়েছেন। অনঙ্গ অনেক পরে বুঝেছেন… প্ল্যানচেটের যেমন মাধ্যম লাগে, নিজের মনের ভিতরে জমে থাকা কথাগুলো অনঙ্গকে বলে স্বস্তি পেয়েছেন অমর্ত্য। 🍁
অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক
এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com
