Sasraya News

Saturday, February 15, 2025

Sasraya News Sunday Literature Special | 30 th June 2024, Issue 22 | সাশ্রয় নিউজ রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | ৩০ জুন, ২০২৪ | সংখ্যা ২২

Listen

সম্পাদকীয়ের পরিবর্তে… 

 

“চেয়ে চেয়ে দেখছ, অনেক একা লোক

প্রতিদিন আমার বাড়ির পাশে শোক

কারো কষ্ট ভাতের চালের বাড়ি তল

চাষ কই সব হা-হাকার, না জলের কল 

কান্না শুধু আধার ঘরের লম্ফ জ্বাল

কেরোসিন, ঔষধ কোথায়? এমন হাল

দৃশ্য দেখা কষ্ট চোখের পলক বোঝ

থেকে থেকে চোখের জলের বুকে খোঁজ

মহামারী, আঘাত বোঝায় আম্বুলেন্স

শ্বাসকষ্ট, কোথায় তোমার আত্ম স্নেস

এই সব শুধুই মনের মাঝে কণ্ঠ রোধ

বল তুমি ! এতও কিসের প্রতিশোধ!”…🍁

 

 

 

কবিতা 

 

 

 

 

অরুণ কুমার চক্রবর্তী

একটি মেয়েছেলের গল্প

 

 

[“পশে মুর্দন বানায়ে যায়ে মিলকে সাগর মেরে দিলকে
ল্যবেজা ওয়াক্ত পে উসসে মিলেঙ্গে খাগমে]

 

সেই মেয়ে জেনে গেছে, তার মাংস কতোটা ছড়ালে পেয়ে যাবে সিঁড়ি…

টেবিলে সাজায় কফি, ব্ল্যাক কফি, লেবুচা, ফ্রেঞ্চটোস্ট, মদ,
আরও কিছু সুখাদ্য (??) ছড়ায় যার নাম শরীর শরীর!!

জানা গেল, ইদানীং খ্যাত কোনোও গদ্যকার আর পদ্যকারের চুলে বিলি কেটেছে তার আঙুল,
কারুর ঠোঁটের থেকে আলতো তুলে নিয়েছে ষোলো ঘন্টা প্রেমের প্রস্থাব, এভাবেই সামনে টাঙিয়ে রেখে শামিয়ানা রক্তাক্ত কপাল, কবিতার পাতা,
সে নাকি প্রেমের কবিতা লিখে যায়…

অভিজ্ঞতা আমাকে বলেছে, হাত পাতলেই রোদ্দুর পড়ে না
অথচ আমি প্রসারিত করতলে আনত ধানের মাঠে সারারাত এক হত্যার থেকে আর এক হত্যার দিকে হেঁটে যাই রক্তপাতহীন
করতলে জমে ওঠে অবাধ্য অন্ধকার,
দীর্ঘ আয়ুরেখা ধরে কে হাঁটে
সেই মেয়ে, নাকি মেয়েছেলে…???

 

 

 

 

পরাণ মাঝি 

গোপন বৃষ্টি 

 

রঙ্গমঞ্চে জনরোষের গোপন বৃষ্টি।
কালো জমি সাদা হচ্ছে।
ফুটপাত জুড়ে ধুয়ে যাচ্ছে ধূলোর ঘরবাড়ি।
ক্ষোভের আঁধারে বদলে যাচ্ছে সংস্কৃতি।

এক পৃথিবী দূরে ভালোবাসার অসামান্য বিচার। মন্দের ভালো- ফাঁসি হচ্ছে এতদিনের জাগ্রত ঘুমের।

ভাণ্ডার ভেঙে আত্মহারা
চোর-পুলিশের চু কিৎ কিৎ খেলা। খেলাটাই হচ্ছে শুধু। মন মেলা কই?

জাগছে কারা?
এরা, ওরা- আমরা…
দৃষ্ট ও অদৃষ্ট; দুরূহ অনুভূতি।
ধর্মের ধোঁয়া উড়ছে বেসামাল। অনায়াস প্রেম প্রীতি। জটিল রসায়নের নাম রাজনীতি।

কেউ পাশ, কেউ ফেল
জমে উঠছে ধ্বজাধারীদের খেল। টাক মাথায় সজোরে পড়ছে বেল।

অচল সচল হলে; বদলের সূর্য ওঠে
শেষ কথা জনগণ দেরিতে হলেও বলে।

সবই সম্ভব যেখানে ; সেখানে অসম্ভব শব্দটি ব্রাত্য হয় না কেন?

বাতাসীরে শীতল সাদা রঙ নিয়ে আয়
স্ববিরোধের আত্মীয়তায়
তোকে আঁকি বাংলা কবিতায়…

 

 

 

 

তমা বর্মণ 

বেয়াদব

 

আমি আমার মতোন
আমি আমার মতোন
এবং আমি আমার মতো

যতবার বলি শির থেকে বেরিয়ে যায় একটি আগুন

বেয়াদব উল্কাপিণ্ডটি ঠুয়া লেগে বসে আকাশে

কারা যেন টেনে নিতে চায় অন্ধকারে
যত ততই কঠিন

এত ঘাড় টনটন বিচ্ছিরি
তবু চাঁদ চন্দ্রের কথা ছেড়ে শিখলে না বেয়াদব হতে!

আগুন পোড়াতে পোড়াতে প্রস্তরখণ্ড ছুঁড়ে নিজেকে নিজেই বলি

কারা যেন কালো কোকিল সেজে আসতে চায় সন্নিকটে পোষ মানাতে!

 

 

 

গল্প 

 

 

দাগ 

কুন্তল দাশগুপ্ত

 

জকের কাগজে বেরিয়েছে খবরটা।
বিনয় আশঙ্কা করেই ছিল যে, খবরটা চাপা থাকবে না। দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ল বিনয়ের, মুখ থমথমে হয়ে উঠল। এবার ম্যাও কে সামলাবে? পার্টি ক্ষমতায় থাকলে এসব সামলানো বিনয়ের বাঁয়া হাতকা খেল ছিল। এখন পার্টির হোলটাইমার বিনয়কে কে-ই বা পোঁছে?  নখদন্তহীন ব্যাঘ্রের দশা তার। অথচ আজ থেকে দশ বছর আগে বিনয় এক ডাকে ক’য়েক হাজার মানুষকে জড়ো করার ক্ষমতা ধরত। আর এখন… একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে বিনয়ের বুক চিরে।  গত ইলেকশনের আগের ইলেকশনে যখন পার্টির ভরাডুবি হল তখন অনেক রাঘব বোয়ালই দল পাল্টেছে।  বিনয়ের সামনে প্রলোভন রাখাও হয়েছিল; কিন্ত বিনয় সমস্ত প্রলোভন জয় করেছে। পার্টির ভাঙা তরী মেরামতের কাজে নিজেকে ডুবিয়ে দিয়েছে।  জনসংযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে অবিরত।  ঘড়ির দিকে চোখ পড়ল বিনয়ের। সাড়ে ন’টা। দশটা থেকে পার্টি অফিসে দশ নম্বর জোনাল কমিটির মিটিং। সময়ে পৌঁছতে হবে বিনয়কে। তাড়াতাড়ি রুটি তরকারি খাওয়ায় মন দিল সে।

 

______________________________________________

পার্টি অফিস থেকে ফিরছিল বিনয়। একটা ভয় খামচে আছে বুকের মধ্যে। আবীরা অনাক্রান্ত থাকবে তো?  যতবার আবীরার মার খাওয়া মুখটা মনে পড়ছে ততবার বুকটা মুচড়ে উঠছে। ডান চোখের উপর ঐ আঘাত।
আঃ! আঘাতটা যদি নিজের চোখের উপরে নিয়ে নিতে পারত বিনয়…

______________________________________________

 

 

টিফিনটা গুছিয়ে ব্যাগে ঢোকালো আবীরা। প্রায় দিনই গুছানো টিফিন পড়ে থাকে, তাই সে আজকাল টিফিন গুছিয়ে আগে ব্যাগে ঢোকায় তারপর চানে যায়। চান করে ঠাকুরকে জল-বাতাসা দিয়ে আগে বিনয়ের খাবারটা গুছিয়ে ঢাকা দিল তারপর নিজে খাবার বেড়ে নিল। ছুটির দিন ছাড়া একসঙ্গে খাওয়া হয় না। অনেক সময় তাও হয় না। বিনয় ফোন করে বলে তার ফিরতে দেরি হবে, আবীরা যেন খেয়ে নেয়। প্রথম প্রথম কথা শুনত না আবীরা। রোজই তো একা একা খায়, ছুটির দিনেও…। বিনয়ের কাছে বকুনি খেয়েছে খুব। ক্রমে বুঝেছে বিনয়ের কাছে এসব সেন্টিমেণ্টের দাম নেই। সে শুধু পার্টি বোঝে, বোঝে জনসংযোগ-  পাবলিক লাইফ। চাকরিটা না থাকলে আবীরা পাগল হয়ে যেত। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে সে, প্রেয়ারের আগে স্কুলে ঢুকতে হবে। এই সাত বছরের শিক্ষিকা জীবনে কোনও দিন প্রেয়ার মিস করেনি আবীরা।  কেবল কাল…। বেরোনোর আগে হালকা প্রসাধন সারতে আয়নার সামনে দাঁড়াল সে। ডানচোখটা ফুলে প্রায় ঢেকে দিয়েছে চোখ। গাঢ় আক্রোশ বর্ণ ফুটে উঠেছে। পরম মমতায় ক্ষতস্থানে আঙুল বোলায় আবীরা। কালসিটে দাগ পড়ে যাবে, থাকবেও বেশ কিছুদিন। ওতে কেয়ার করে না আবীরা। এ দাগ তো ওর অলঙ্কার। দরজায় চাবি দিয়ে রওনা দেয় আবীরা।

দ্রুত সাইকেল চালাচ্ছিল বিনয়। মনে তার ঝড় চলেছে। আবীরার জন্য দুশ্চিন্তা হচ্ছে খুব। দুবছর হল বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছে বিনয় একমাসের ব্যবধানে। আত্মীয় পরিজনও তেমন কেউ নেই। আবীরা ছাড়া আপনার বলতে আর কাউকেই মনে করতে পারে না বিনয়। বাবা পছন্দ করে ছেলের বউ এনেছিলেন। মানকুণ্ডুর মেয়ে। মা-বাবার একমাত্র সন্তান। বিয়ের সময় মাস্টার্স করছে আবীরা। কী দেখে যে একটা পার্টির হোলটাইমারের সঙ্গে বিয়ে দিলেন আবীরার বাবা তা ভেবে পায় না বিনয়। মাস্টার্স কমপ্লিট করা, এস. এস. সি দিয়ে টিচারি পাওয়া সবই বিয়ের পর করেছে আবীরা। পারেনি শুধু মা হতে। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে বিনয়, সকলেই প্রায় একই কথা বলেছেন- সন্তান ধারণের জন্য আবীরার স্ত্রী-অঙ্গ যথেষ্ট পরিণত নয়। মা হওয়া সম্ভব নয় তার। সত্যটা মেনে নিয়েছে বিনয়। ডাক্তার বলেছিলেন- আদরে সোহাগে ভরিয়ে রাখবেন স্ত্রীকে, নইলে মানসিক বৈকল্য আসতে পারে। ঐটাই ঠিক পারে না সে। তার ভালবাসার মধ্যে দেখনদারি নেই। কিন্তু প্রাণাধিক ভলবাসে সে আবীরাকে। আবীরা কি বোঝে না? আবীরার কিছু হলে মরেই যাবে বিনয়।
রতন সামনে থেকে হাত দেখিয়ে দাঁড় করাল বিনয়কে। চিন্তাসূত্র ছিঁড়ে গেল তার, দ্রুত ফিরে এল বর্তমানে। সাইকেলের হ্যাণ্ডেলটা বাগিয়ে ধরে দন্ত বিকশিত করে রতন বলে, কী রে, বৌদিতো একেবারে বিখ্যাত হয়ে গেল।
তাড়া আছে ভাই, মিটিং-এ যাচ্ছি… বিনয় এড়াতে চায় রতনকে।
আরে রাখ তোর মিটিং। তোর পার্টি তো শুধু সাইনবোর্ড। তার আবার মিটিং। চলে আয়, চলে আয় এদিকে, সিণ্ডিকেট কর, টুপাইস কামা। কদ্দিন আর বৌ-এর পয়সায় ব’সে খাবি?
অপমানটা ঢোক গিলে নিল বিনয়। প্যাডেলে চাপ দিল। নির্ধারিত সময়ের আগেই তাকে পার্টি অফিসে পৌঁছতে হবে।

গাটা শিরশির করে উঠল আবীরার। এই সেই জায়গা।  সাইকেলের গতি আপনা থেকে একটু শ্লথ হয়ে গেল।  মেয়েরা রোজকার মতই দল বেঁধে স্কুলে চলেছে। অনেকেই সাইকেলে। গতকালের কোনও ছায়া পড়েনি আজকের এই রোদ্দুর ধোয়া সোয়া দশটার উপরে। উল্টোদিক থেকে একটা বাইক আসছে। জোরে।  সাবধান হল আবীরা। নাঃ কোনও অঘটন ঘটল না।  বাইকটা নিজের মনেই চলে গেল। শ্বাস ফেলল আবীরা। সে কী ভয় পাচ্ছে? গতকাল রাত্রে বিনয়ের দুশ্চিন্তার মুখে সেই তো রবীন্দ্রনাথ আউড়েছে, “যার ভয়ে তুমি ভীত সে অন্যায় ভীরু তোমা চেয়ে / যখনি জাগিবে তুমি তখনি সে পলাইবে ধেয়ে। / যখনি দাঁড়াবে তুমি সম্মুখে তাহার তখনি সে / পথ কুক্কুরের মত সংকোচে সত্রাসে যাবে মিশে।” অন্তরের অন্তস্থল থেকে বিশ্বাস করে আবীরা কথাগুলো। যাই ঝড় আসুক শিড়দাঁড়া সোজা রাখবে সে। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে স্কুলে পৌঁছে গেল আবীরা। অ্যাটেনডেন্সে সই করে স্টাফরুমে ঢুকতেই নীলাশ্রী জড়িয়ে ধরে ব’লে ওঠে, ওরে আমাদের আমাজন তুই কী কাণ্ডটাই করলি রে। ভূগোল পড়ায় নীলাশ্রী। আমাজন মানে যে বীর রমনি তা ওর কাছ থেকেই একদিন জেনেছিল আবীরা, তাই অবাক হল না। কাল নীলাশ্রী আসেনি তাই তার কাছ থেকে আনুপূর্বিক সব জনতে চাইবে এই ভেবে সঙ্কুচিত হয়ে পড়ল সে।
-হ্যাঁ রে ক’জন ছিল?
-চার।
-অ্যাম্বাসাডার নিয়ে?
-হ্যাঁ।
-তুই একদম ঝাঁপিয়ে পড়লি? আর পড়বিই তো মেয়েরা তো তোর প্রাণ। আমি হলে তো কেঁদেই ফেলতাম। তা হ্যাঁ রে, কোন মেয়েটা রে? হ্যাঁ রে, হাত ধরে টেনে নাকি চ্যাংদোলা করে…
প্রেয়ারের বেল পড়ে যেতে বাঁচল আবীরা।

আজকাল আর মিটিংগুলোতে তেমন ভিড় হয় না।  নতুন ছেলে আসছেই না। যে আদর্শবাদ সামনে রেখে বিনয় পার্টি করতে এসেছিল তাকে আজ নবীন প্রজন্ম উপহাস করে। এর জন্য পার্টিরও দায় অস্বীকার করা যায় না।  দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার কুফল হিসেবে জনসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তার উপরে বেনোজল তো ছিলই, ছিল ক্ষমতার অপব্যবহার।  নতুন প্রজন্মকে আকর্ষণ করার জন্য তার প্রগতি পার্টি চেষ্টার কসুর করছে না। নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রতিযোগিতা সীমিত ক্ষমতার মধ্যে থেকেও করে চলেছে। আর রয়েছে স্ট্রিট-কর্ণার। যদিও আজকাল স্ট্রিট-কর্ণারের সামনে ভির করে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা শোনে না লোকে তবু শাসক বঙ্গলক্ষ্মী পার্টির অপশাসন, দুর্বৃত্তায়ন ও আর্থিক কেলেঙ্কারির কথা মাইক বাজিয়ে বলতে তারা কসুর করে না। যতই হোক মানুষ শুনছে তো, একদিন না একদিন মানুষ ঘুরে দাঁড়াবে।
আজকে মিটিং-এ সবথেকে বেশি আলোচনা হল সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা নিয়ে। ভারতরক্ষা পার্টির কর্মীরা সুকৌশলে সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে চলেছে। কিছুদিন আগে পূর্বপাড়ার পীরের দরগার সামনের ফাঁকা জমিটায় তারা কালীবেদী তৈরীর তোরজোর শুরু করে। এই নিয়ে মুসলমান পাড়ায় অসন্তোষ ধূমায়িত হয়েছে। ভারতরক্ষা পার্টির বক্তব্য হল, এ তো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিরই পদক্ষেপ। দরগা আর কালীবেদী পাশাপাশি থাকবে। বিষয়টা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকও হয়ে গেছে। ব্যাপারটা এখন জেলা পরিষদের হাতে। ভারতরক্ষা পার্টি জেলা পরিষদের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে চায় না। নানা ভাবে উসকানি দিয়ে পরিবেশ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে। চাহিদা একটা প্রত্যক্ষ সংঘর্ষ ঘটিয়ে পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো। ঐ খানেই আজ স্ট্রিট-কর্ণার করতে হবে বিনয়কে। পার্টির সিদ্ধান্ত। মানুষকে বোঝাতে হবে যাতে তারা ফাঁদে পা না দেয়।
পার্টি অফিস থেকে ফিরছিল বিনয়। একটা ভয় খামচে আছে বুকের মধ্যে। আবীরা অনাক্রান্ত থাকবে তো?  যতবার আবীরার মার খাওয়া মুখটা মনে পড়ছে ততবার বুকটা মুচড়ে উঠছে। ডান চোখের উপর ঐ আঘাত।
আঃ! আঘাতটা যদি নিজের চোখের উপরে নিয়ে নিতে পারত বিনয়…

থার্ড পিরিয়ডে এইট এ সেকশনের ক্লাস। ক্লাসে ঢুকেই অবাক হয়ে গেল আবীরা। টেবিল ভরে রয়েছে একরাশ ফুল। উচ্ছ্বাস, আনতি, কৃতজ্ঞতা সব সব যেন ঢেলে দিয়েছে মেয়েরা ঐ ফুলরাশির মধ্যে।
আমরা সবাই আপনাকে প্রণাম করব ম্যাম, বলে উঠল ফার্স্ট গার্ল সৃজিতা।
আবীরা বুঝল নিষেধ ক’রে লাভ নেই। ওদের বন্ধুকে বাঁচানোর কৃতজ্ঞতা ওরা এভাবেই দিতে চায়। সে সবার মাথা ছুঁয়ে আন্তরিক ভাবে উচ্চারণ করল, মানুষ হও।এই ছাত্রীরাই তার প্রাণ। এদের নিয়েই সে সন্তানহীনতার দুঃখ ভুলে থাকে।
আবীরার চোখ গোটা ক্লাসে খুঁজছিল চন্দনাকে। পেল না। চন্দনা যে আজ স্কুলে আসবে না সেটা ধারণার মধ্যেই ছিল। তবু যা ঝড় গেছে মেয়েটার উপর দিয়ে।  ভয়ে তো অজ্ঞানই হয়ে পড়েছিল। ট্রমা কাটিয়ে কবে স্বাভাবিক ভাবে স্কুলে আসতে পারে এখন সেটাই দেখার।
চন্দনা কেমন আছে? -চন্দনার অন্তরঙ্গ বন্ধু কোয়েলকে জিজ্ঞেস করে আবীরা।
জানি না ম্যাম। আজ সকাল থেকে অনেকবার ফোন করেছি, ওদের দু’টো নম্বরই সুইচড অফ -উত্তর দেয় কোয়েল।
দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়ে আবীরার। মনের ভাব চেপে রেখে পড়াতে শুরু করে সে। প্রণবেন্দু দাশগুপ্তর কবিতা, ‘ঘুরে দাঁড়াও’।
ফোর্থ পিরিয়ডটা অফ। স্টাফরুমে ফিরে আবীরা ভাবছিল নাইনের ক্লাস টেস্টের খাতা নিয়ে বসবে; ক্লার্ক নিতাইদা এসে খবর দিল যে বড়দি ডেকেছেন। অগত্যা বড়দির ঘরের দিকে রওনা দিল আবীরা।
বড়দির ঘরে একজন ভদ্রলোক রয়েছেন দেখে দরজার বাইরে থেমে গেল আবীরা। বড়দি দেখতে পেয়ে ডেকে নিলেন তাকে। বসতে বলে পরিচয় করিয়ে দিলেন ভদ্রলোকের সঙ্গে। চন্দনার বাবা। অত্যন্ত বিপর্যস্ত দেখাচ্ছে তাঁকে। হাত তুলে নমস্কার করলেন তিনি আবীরাকে।
কেমন আছে চন্দনা ? -প্রতিনমস্কার ক’রে জিজ্ঞেস করে আবীরা।
-ভালোই -। ভদ্রলোকের ইতস্তত ভাবটা চোখ এড়ায় না আবীরার। ভদ্রলোককে ইতস্তত করতে দেখে বড়দি বলে ওঠেন, উনি চন্দনার টি. সি. নিতে এসেছেন।
মানে !! – আর্ত শোনায় আবীরার গলা।
হ্যাঁ ম্যাডাম, কালকের ঘটনার পর চন্দনাকে আর এখানে রাখা নিরাপদ মনে করছি না। ওকে ওর মামাবাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। ওখানকার স্কুলেই ভর্তি করব… একসঙ্গে অনেকগুলো কথা বলে দম নিলেন ভদ্রলোক। কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাতজোড় ক’রে বলতে লাগলেন, আপনারা যেন কোনও পুলিশ কেস করবেন না এটা আপনাদের কাছে একান্ত অনুরোধ।
আপনি কি চান না দোষীরা শাস্তি পাক? -তীক্ষ্ণ গলায় বলে ওঠে আবীরা।
দেখুন ম্যাডাম, আপনার স্কুল আর আপনি মিডিয়ায় যথেষ্ট মাইলেজ পেয়েছেন, এবার আমার মেয়েটাকে ছেড়ে দিন- ভদ্রলোকের স্বরে বিষ।
মাইণ্ড ইয়োর ল্যংগুয়েজ মিস্টার পাল। আপনার কি মনে হয় মিডিয়ার কভারেজ পেতে এই মেয়েটি নিজের জীবন বিপন্ন ক’রে আপনার মেয়েকে বাঁচিয়েছে? ওর দিকে ভালো ক’রে তাকিয়ে দেখুন কতটা আঘাত ও পেয়েছে। ফুঁসে উঠলেন বড়দি।
-কে কীজন্য কী করেছে তা আমার দেখার দরকার নেই। আমি আমার মেয়েকে এই স্কুল থেকে ছাড়িয়ে নিতে চাই ব্যাস্‌। আপনি টি. সি দিয়ে আমায় কৃতার্থ করুন। উদ্ধত ভঙ্গিতে কথাগুলো বললেন চন্দনার বাবা।
লোকটার সান্নিধ্যে আর দাঁড়িয়ে থাকতে ঘৃণা বোধ করছিল আবীরা।
বড়দি আমার খাতা দেখা পড়ে আছে, আমি আসছি-  এই কথা বলে বড়দির ঘর থেকে বেরিয়ে আসে সে। মনটা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এই ভীরু মানুষগুলোর জন্যই আমাদের দেশে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। কিসের ভয়? লোকলজ্জার? কাগজে তো নাম-ধাম সবই বেরিয়েছে। জেনে তো সবাই গেছে। তাহলে? আবার আক্রান্ত হবার ভয়? সে ভয় তো যে কোনো সময় যে কোনো জায়গাতেই রয়েছে। প্রণবেন্দু দাশগুপ্তর কবিতার লাইন মনে এল – ‘সরতে সরতে তুমি একদিন বিন্দু হয়ে যাবে।’ ভারাক্রান্ত মনে স্টাফরুমে ফিরে খাতার বান্ডিল খুলে বসল আবীরা।

এতক্ষণ উৎকণ্ঠায় ঘরবার করছিল বিনয়, আবীরা ফিরতে নিশ্চিন্ত হল। বারান্দায় সাইকেল তুলে ঘরে আসে আবীরা। জলের বোতল এগিয়ে দেয় বিনয়। একনিশ্বাসে অনেকটা জল খায় আবীরা। বিনয় বলে,  ফ্লাস্কে চা ক’রে রেখেছি, খেও।

-বেরুচ্ছো নাকি? জিজ্ঞেস করে আবীরা।

-হ্যাঁ, পূর্ব পাড়ায় স্ট্রিট-কর্ণার আছে। বলে বিনয়। ইতস্তত ক’রে আবার বলে, কেউ পিছুটিছু নিয়েছিল নাকি মানে কোনও বাইক বা গাড়ি…

মুচকি হেসে নেতিবাচক মাথা নাড়ে আবীরা।

-ভিসনে কোনও প্রবলেম হচ্ছে না তো? উৎকণ্ঠিত বিনয়।

-না না ভিসনে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না, শুধু ব্যথা আর ভার হয়ে আছে। তুমি আর দেরী কোরো না বেরিয়ে পড়, আমি ঠিক আছি। বিনয়ের হাতটা মুঠোয় নিয়ে একটু চাপ দেয় আবীরা। বিনয় আবীরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে রওনা দেয় পূর্ব পাড়ার দিকে।

বেশ অনেকটা দূর থেকেই বিনয় শুনতে পাচ্ছিল গণসঙ্গীত বাজছে মাইকে। বিনয় পৌঁছতে গান বন্ধ হল। বেশ ভিড় হয়েছে। আজকাল এতটা জমায়েত হয় না।মনে মনে খুশি হল বিনয়। সামনে ভিড় থাকলে কথা আপনি আসে ভিতর থেকে। বক্তব্য রাখতে শুরু করে বিনয়। প্রথমে শাসক বঙ্গলক্ষ্মী পার্টির অপশাসন নিয়ে বলতে শুরু করে। নানান তথ্য দিয়ে সাজানো তার বক্তব্য। ধীরে ধীরে ভারতরক্ষা পার্টির সাম্প্রদায়িক উসকানির বিরুদ্ধে বলতে থাকে সে। সামনে থাকা জনতা নড়েচড়ে ওঠে । কে যেন চেঁচিয়ে ওঠে, শালা প্রগতির খোচর, সেকুর বাচ্চা শালা। একটা ইটের টুকরো এসে লাগে বিনয়ের মাথায়। যযন্ত্রণায় ককিয়ে ওঠে বিনয়। লণ্ডভণ্ড শুরু হয়। প্রগতি পার্টির ছেলেরা সংখ্যায় কম। তারা চেষ্টা করতে থাকে বিনয়কে বাঁচিয়ে বার ক’রে আনার। টানা হেঁচড়ার মধ্যে বিনয়ের ডান চোখের উপর এসে পড়ে একটা প্রচণ্ড ঘুসি। লুটিয়ে পড়ে সে। বিনয়কে চ্যাংদোলা ক’রে তার দলের ছেলেরা একটা সেলুনের মধ্যে নিয়ে গিয়ে শাটার টেনে দেয়। বিনয়কে শুইয়ে দেয় বেঞ্চে। মুখে চোখে জল দিতে থাকে। বাইরে থেকে শাটারের উপর দমাদ্দম লাথি পড়ছে। সেলুনের মালিক ছেলেটি থানায় ফোন করে, বলে- ভয় নেই ভিতর থেকে চাবি দিয়ে দিয়েছি, শাটার ভাঙতে পারবে না।
একটু পরে উঠে বসে বিনয়। মাথার ইট লাগা জায়গাটা ফুলে ঢিপি হয়েছে। বিনয় টলতে টলতে ওঠে। আয়নার সামনে যায়। দেখতে থাকে নিজের মার খাওয়া মুখ। ডান চোখটা ফুলে ঢেকে গিয়েছে চোখ। ঘোর আক্রোশ বর্ণ ফুটে উঠেছে। কালশিটে পড়বে অনিবার্য।

ভারী একটা তৃপ্তি বোধ করে বিনয়।🍁

 

 

কবিতা 

 

 

 

 

শিশির আজম 

আমার ঘর

 

এই আমার ঘর
মা বলেন
এঘর বেদনাময়
সূর্য এসে প্রতিদিন তা দেয়

বৃষ্টি আসে
আমি কাঁদি বৃষ্টিকণাদের সাথে
ভষ্মীভূত শিশুরা
আগুনের আকাশ
বৃষ্টি বলে
আয় আমরা রাস্তায় ঘুমায়

অন্ধকার ভাষায়
শিশির
শেষ রাতের জীবাণু

এই মুহূর্তে
আমি কারো অনুগ্রহ চাইনে
আমার দোষ
আমার মা
সারা ঘর বন্যা

 

 

 

 

শম্পা ঘোষ 

ফিরে আসা

 

 

সীমানার বাইরে আর এক সীমানা

জীর্ণ পাতার মুখ্য স্পর্শ করে না তাতে,

মনে রয়ে যায় শুধু অমোঘ আয়ু রেখা.

সমবয়সী দিন যাপনের

মেগা আয়োজনে ব্যস্ত এপিটাফ,

হৃদয় প্রস্ফুটিত হয়েছে এইমাত্র

ইঙ্গিতবাহী যন্ত্রণায় ভেসে যায়

চারপাশে র কায়িক ছায়ারা,

টুপটাপ বৃষ্টি অখণ্ড দ্রাঘিমা ছুয়ে থাকে

কোথাও কোন নড়চড় নেই,

সৃষ্টি ছাড়া মানুষের বেশে ফিরে আসি

রক্তমাংসের সজ্জায় জ্ঞাত পরিসর

সন্ধ্যার কুহকে জাগে ধুপবাটির গন্ধ।

 

 

 

 

সুপ্রিয় চক্রবর্তী 

রাজসূয়

 

 

হে বীর, শঙ্খ-ডঙ্কা-সৈন্য আজ প্রস্তুত
বীর্য-শিখায়, যুদ্ধে পালন করো রাজধর্ম.

সখা, বেদনা-শঙ্কা বিস্ফোরিত শরীর
আশঙ্কা অজানা প্রজা ধর্মে মোর ব্যভিচার।

বীর, সবই যেন রাজধর্মের নিয়ম,
অন্ধকারে শত্রুদমন পাপ।

সখা, রক্তাক্ত রাজপথ, জনরোষ, বিক্ষিপ্ত কোলাহল,

এসব কাপুরুষের ইঙ্গিত।

রাজা তুমি, রাজযোটকে তোমার জন্ম,
খুন তোমার ধর্ম, নিপীড়িত প্রজা তোমার ইজারা,

আর তুমি ভীত সামান্য রক্তাক্ত রাজপথে?

রাজকঙ্কট পরিধানে বুঝেছিলাম, রক্ত আমার স্বাদ, যুদ্ধ আমার ধর্ম, শান্তি আমার নিদ্রা, আর মৃত্যু আমার পরাজয়।
ভীত আমি আজ, দেব্য পরিবারে জন্ম আমার,

আর আমার প্রজারা রত অন্য হিংসাত্মক স্লাঘাতে।
আল্লা, আমার পাপের শাস্তিস্বরূপ ছড়িয়ে দিলো অজস্র কালো মুক্ত, যারা আজ জ্বলজ্বল করছে আমার রাজ্যে হীরে হয়ে,

কোনো কালো মুক্তকে আমি আমার রাজমুকুটে স্থান দেবো না.

আত্মস্লাঘায় নিমজ্জিত হৃদয় আর কাপুরুষের নির্বাক কথোপকথনে রাজধর্ম আপনি ভুলতে বসেছেন। যুদ্ধ আসন্ন, প্রতিবেশী রাজ্য প্রস্তুত আপনার রাজ্য দখলের উদ্দেশ্যে। বিশ্রাম নিন, সূর্য গগনে, আপনার প্রজারা মেতে উঠবে ধ্বংসলীলায়.

হে রাম, কি অভিপ্রায়ে যুদ্ধ করবো বলতে পারো সখা?

অন্দরের কোলাহল, প্রজারা যুদ্ধে রত ধর্মরক্ষার হেতু, নরবলি আজ তুচ্ছ আমার রাজ্যে, কোন প্রজাদের নিয়ে আমি রত হবো যুদ্ধে?

হিন্দু, মুসলমান, শিখ, জৈন্, খ্রিস্টান…?

আজ আপনার মন বিচলিত কোনো অজ্ঞাত কারনে।

বিশ্রাম আর নিদ্রা প্রয়োজন শত্রু নিধনে। (মন্ত্রীর প্রস্থান)

( শঙ্খ-ডঙ্কা-সৈন্য আজ প্রস্তুত। কিন্ত পরাগম রাজা নিহত মন্ত্রীর হাতে, কারন, রাজা নিজধর্ম বিসর্জন দিয়েছেন, রাম এবং আল্লার নাম বলে)

 

 

 

 

মিতা নূর 

যদি কখনও

 

যদি কখনও আমি, কাঠফাটা গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুর হই,
তবে তুমি এক পসলা বৃষ্টি হয়ে এসো প্রিয়।
তোমার শীতলতা দিয়ে,
রুক্ষ আমিটাকে প্রাণোচ্ছল করে দিও!

খুব বেশি কিছু চাই না আমার,
যদি কখনও খুব কান্না পায় আমার,
তুমি এক টুকরো আকাশ হইয়ো প্রিয়!
জানো আকাশের দিকে তাকালেই,
আমার মন ভালো হয়ে যায়।
খুব ইচ্ছে হয় আকাশ নীলের মায়ায় ডুবে যেতে,
ক্ষত-বিক্ষত মন থাকে যদিও।

যদি কখনও বিষন্নতায় ডুবে যেতে দেখো আমায়,
মেঘ ঝরে যাওয়া অবসরের বিকেলে,
আমার জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে এসো প্রিয়,
তোমার কথাদের মাঝেই হারিয়ে যাবে আমার সমস্ত বিষন্নতা।

যদি কখনও এলোমেলো হয়ে যাওয়া আমিটাকে দেখো,
তবে আমাকে খানিকটা সঙ্গ দিও তুমি।
যদি দেখো বুকের আহাজারি,
দিও তোমার কাঁধে মাথা রাখার নির্ভরতাটুকু।
তুমি জড়িয়ে নিলেই বিধ্বস্ত আমিটা হয়ে যাবো পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী নারী।

 

 

 

 

ভোলা দেবনাথ 

অসুস্থ

 

 

অসুস্থ বেশ আরাম দিচ্ছে আমায়
বিছানার বকাঝকায় দেহখানি কাঁপায়
চোখ মেলাতে চায় না যে আর
কণ্ঠ রোধে মুখ, নিস্তেজা হাতপায়ে এক সুর
উষ্ণতায় অস্বাভাবিক ফারেনহাইট
আবুল-তাবুল স্বপ্ন বুনে অচেনা এক ফাইট
স্বর্গ অনুভবে সেতু নির্মাণে ব্যস্ত অসুস্থ
ভোর-নিশিরাত প্রাণ পাখিটা নিয়ত ব্যস্ত

ভাষার মেলায় প্রাণের একুশ টানে
রোদ-ধুলির মর্ত্যরাজ্যে ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা প্রাণে
ফোঁটায় ফোঁটায় বৃষ্টি মাথায় ভেজায়
মুগ্ধ গানে অবগাহন, শোকের ছায়ায়
ভাষা আমার শোকের একুশ, সুখের অঙ্গণে
অসুস্থ হায় রচে গীত, ভাবায় ক্ষণে ক্ষণে।

 

 

 

 

কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়

সুধা

 

 

আত্মপর থেকে তবে
ঐতিহাসিক যাত্রা শুরু হোক;
ওলোট-পালোট বিপর্যস্ত প্রাণের কাছে
বেঁচে থাকার জিয়নকাঠি
পৌঁছে দেয়ার গুরুদায়িত্ব নিয়ে অতঃপর

ভালো থাকার যা কিছু পাসওয়ার্ড
দু’হাতে গ্রহণ করে
তুমি হেঁটে যাও
লোকালয় জুড়ে অনেকখানি

অস্তিত্বের প্রাণ পেতে
মৃত্যু থেকে জীবনের দিকে

অমৃতময় সুধার স্বাদ পেতে চিরকাল…

 

 

 

 

আকলিমা আঁখি

বোন 

 

 

বোন, তুমি কিন্তু প্রজাপ্রতি
শুঁয়োপোকা জীবনের ভীতি
রঙিন মখমলি ডানার
ঝাপটায় দাও উড়বার।
তোমার ঘ্রাণশক্তি প্রবল
সুস্বাদু আত্নার অবিকল
চেখে নাও ঠিক ঠিক
জিভের স্বাদই জনান্তিক।
হৃদয়ে দু’টি নদীর ধারা
নিরপেক্ষতায় ফেলে সাড়া
চকচকে চোখ মনখোলা
স্বপ্নের স্বপ্ন দোলা।
আঙুল যেন বীণার তার
ঠোঁটেই বসন্ত গোলাপের
পায়ের ছোঁয়ায় ধন্য পথ
চেরি বক্ষের সুবাসে মাত।
বিনুনিতে বেঁধে দৃঢ় আলো
আঁধার মিনারে সূর্য জ্বালো
হাসি যেন রোদের ঝিলিক
গড়ে বন্ধন কত আত্নিক।

 

 

 

 

রেহানা বীথি

স্কিৎজোফ্রেনিয়া

 

 

চোখের সামনেই
গুঁড়ো হয়ে যাচ্ছে রঙিন অন্তর্বাস
তোমার কানে বাজছে ফিসফাস,  শিহরণ
দেয়াল বেয়ে বেড়ানো লতানো গাছে পার্পল কালারের ফুল
তুমি ভাবছো, ওরা কি বকুল?
নাকি বিষাক্ত বিছের হুল?

ফুলের ভেতর সুগন্ধ, দুর্গন্ধ…
ভায়োলিনে জড়ানো রুদ্রাক্ষের মালা
ঊরুতে ছোট ছোট টোল
শীৎকার,  অবৈধ কোল

তোমার বুক জ্বলছে, কাঁপছো থরোথর
শহরে কারফিউ
তবু জনারণ্যে তোমার প্রেমিকা তুলছে
উদ্দাম এক শরীরী ঝড়…

ঘুমোচ্ছে তোমার প্রেমিকা
তোমার জলপরি
স্বপ্নে কিংবা তন্দ্রাতে ওর
কে আসে?
কার বলিষ্ঠ বাহু ওকে আঁকড়ে ধরে
নিয়ে যাচ্ছে আনন্দপুর
জলের অতলে?

ঠকছো তুমি একটু করে রোজ
জলপরি তো তোমারই আছে
তবুও কেন ঘুমের ডানায় লিখে দিচ্ছো
ঈর্ষাকাতর ভোমরাগুলোর স্বেচ্ছাসেবী শোক?

 

 

 

মমতা রায় চৌধুরী

চিরন্তন

 

 

জীবনে যখন গ্লানি আসে, সংকট প্রতি মুহূর্তে
তবুও আমি সারাক্ষণ অন্তহীন প্রেমের
যাত্রী, প্রতি প্রহরে মায়াজাল বুনি।
আমার চেনা গ্রামটির ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে কঙ্কালসার মায়ের হাতের সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বলে তুলসী মঞ্চে, কেটে যায নৈরাশ্য,
বিষন্নতাকে গ্রাস করে এক স্নিগ্ধ সন্ধ্যা।
শাঁখের আওয়াজ মন আকুলি-বিকুলি
চিরন্তন সেই অনুভবে।

আমার শৈশবের দিনগুলি
আজও বেঁচে আছে শিশুর
খেলায়, ঠাকুরমা-দাদুর গল্পের মোড়কে।
বৃষ্টিগুলোকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখার
এক অপার অনাবিল আনন্দে।
ধুলো মলিন শিশুর গায়ের গন্ধ
দুঃখের মাঝেও সুখ এসে হাতছানি দেয় ,
নিয়ে যায় সেই চিরন্তন আনন্দে।

কোনো মহামারী, দুঃসহ যন্ত্রণা
কেড়ে নিতে পারে না,
সেই চিরন্তন অনুভবের সুখ।
কুয়াশা ঘেরা অন্ধকারকে উপেক্ষা
করে নতুন ভোরের সূর্যোদয়।
আজও বেঁচে থাকার গ্রামীণ
মানুষের অপার সারল্য ভরা
ভালবাসার হাতছানি।

 

গদ্য 

 

ভারতবর্ষ ও লোকনৃত্য

দীপ্তি চক্রবর্তী

 

 

হুত্ববাদী সমাজ এদেশের প্রাকৃতিক বৈচিত্র মিলিয়ে পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম সংস্করণ এই ভারতবর্ষ। একই জাতির সাংস্কৃতিক পরম্পরাকে ভিত্তিকরে জনগোষ্ঠী গড়ে উঠতে পারে। বৈচিত্রের অন্যতম উৎস হল ভাষা।অসমিয়া ভাষার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা সমবেত লোক নৃত্য বিহু। বিহু অসমের জাতীয় উৎসব।ভারতের ভৌগলিক পরিবেশ তার ঐক্য সংহতির মানদণ্ড। হিমালয়ের কোলে বিভিন্ন অঞ্চল ভারতবাসীর তীর্থক্ষেত্র। তারই মধ্যে পঞ্চ নদের দেশ পাঞ্জাব।পাঞ্জাবি নৃত্য শৈলী খুব উচ্চ লয় থেকে মৃদু ও মন্থর গতির সব ধরনের হয়। ভাংরা এই রাজ্যের লোকনৃত্য।

 

_____________________________________________

রাজস্থানের মারওয়ার অঞ্চলেও এই নৃত্য প্ৰদৰ্শন করা হয়। দাণ্ডিয়া রাস নাচে পুরুষ ও মহিলারা হাতে সরু ও হালকা লাঠি নিয়ে বৃত্তাকারে নৃত্য প্ৰদৰ্শন করে থাকে।

_____________________________________________

 

ভারতবর্ষের ঐক্য বৃটিশ শাসনেরই ঐক্য সঞ্চারী প্রভাবের ফল। স্বাধীনতা অর্জনের পর তার প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হয়েছে। হিমালয় পর্বতমালার থেকে উৎসারিত নদী ভারতবাসীর কাছে ঐক্য সঞ্চারীলয়  ভূমিকা পালন করে।

ডাণ্ডিয়া রাস, ডাণ্ডিয়া রাস হল ভারতের গুজরাত রাজ্যে উদ্ভূত ও নবরাত্ৰি উৎসবে প্ৰদৰ্শনকৃত জনপ্ৰিয় একপ্রকার সামাজিক তথা ধৰ্মীয় লোকনৃত্য। রাজস্থানের মারওয়ার অঞ্চলেও এই নৃত্য প্ৰদৰ্শন করা হয়। ডাণ্ডিয়া রাস নাচে পুরুষ ও মহিলারা হাতে সরু ও হালকা লাঠি নিয়ে বৃত্তাকারে নৃত্য প্ৰদৰ্শন করে থাকে।

ঘুমর ভিল উপজাতির একটি ঐতিহ্যবাহী লোকনৃত্য যেটি সরস্বতী দেবীকে পূজা করার জন্য পরিবেশিত হয়েছিল এবং ভারতের রাজস্থান রাজ্যে এই নাচ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এবং সাধারণত মহিলারা তাদের সমাবেশে এই অনুষ্ঠান করে। ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি অনুসারে, নববধূকে তার নতুন বৈবাহিক বাড়িতে স্বাগত জানানো হলে সে ঘুমর নৃত্য পরিবেশন করবে বলে আশা করা হয়।

প্রচুর বৈপরীত্য সত্ত্বেও এক অদৃশ্য সেতুর বন্ধনে বাঁধা এই ভারতবর্ষ। মূলগত ঐক্যবোধের সূত্রেই এক বিরাট সমাজের চেহারায় দণ্ডায়মান। আসমুদ্র হিমাচল একটি দেশের কল্পনা একমাত্র ভারতীয়রাই করতে পারে।লাবনি (মারাঠি: लावणी, ইংরেজি: Lavani) হল,  ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশে প্রচলিত একপ্রকার জনপ্ৰিয় লোকসঙ্গীত ও নৃত্যের ধারা। 🍁

 

 

ধারাবাহিক উপন্যাস / পর্ব ৫ 

 

পাখি বড় হলে মায়ের ডানার আড়াল থেকে বেরিয়ে উড়তে শিখবে সেটাই স্বাভাবিক। অনিন্দ্য দত্ত অর্থ উপার্জনের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দু’টি একটি বদ অভ্যাস আয়ত্ত করে ফেলেছিলেন। একটি সুরাপান এবং অন্যটি ঘোড়া। গরীবের ঘোড়া রোগ মানানসই না হলেও অনিন্দ্য দত্তের মতো প্রথিতযশা ব্যারিষ্টারের ক্ষেত্রে বিলক্ষণ মানানসই শুধু নয়…। সুজিত চট্টোপাধ্যায় -এর লেখা ধারাবাহিক উপন্যাস ‘অনেকটা গল্পের মতো’ -এর আজ পঞ্চম পর্ব। 

 

 

 

 

অনেকটা গল্পের মতো 

সুজিত চট্টোপাধ্যায়

 

একটা দু কামরার বাড়ী তৈরী করতে যতোটা সময় লাগে, অবিশ্বাস্যভাবে তার চেয়েও অনেক কম সময়ে তৈরী হয়ে গেল অমর্ত্য দত্তের বাড়ি অনঙ্গ প্রথমে বুঝতে পারছিলেন না, যে বাড়ীটা প্রায় বিশ বছর ধরে পড়েছিল অজগর বিজবন হয়ে, সেই বাড়ি তৈরিতে এতো তাড়া কিসের! ক্রমশঃ জেনেছেন তার ইতিবৃত্ত।
প্রভাবতী দেবীর তিন পুত্রসন্তানের মধ্যে বড়ো অনিন্দ্য দত্ত যিনি হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করেন এবং ওকালতি ব্যবসায় তাঁর পসার নেহাৎ কম নয় বললে কিছু ভুল বলা হবে বরং দু’টি জুনিয়র পুষেও যথেষ্ট স্বচ্ছল, আলিপুরে একটি প্রাসাদোপম বাড়ি এবং দু’টি গাড়ি পোষেন। কিন্তু প্রতিদিন নিয়ম করে তাঁদের বালিগঞ্জ প্লেসের বাড়িতে কোর্ট ফেরৎ দেখা করে যান প্রভাবতী দেবীর সঙ্গে। শুধু তাই নয়, বাড়ীর জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে তাঁর যা কর্তব্য কর্ম সেটা সম্পূর্ণ বজায় রাখেন। এ বিষয়ে প্রভাবতী দেবীর কোনো অভিযোগ নেই। পাখি বড় হলে মায়ের ডানার আড়াল থেকে বেরিয়ে উড়তে শিখবে সেটাই স্বাভাবিক। অনিন্দ্য দত্ত অর্থ উপার্জনের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দু’টি একটি বদ অভ্যাস আয়ত্ত করে ফেলেছিলেন। একটি সুরাপান এবং অন্যটি ঘোড়া। গরীবের ঘোড়া রোগ মানানসই না হলেও অনিন্দ্য দত্তের মতো প্রথিতযশা ব্যারিষ্টারের ক্ষেত্রে বিলক্ষণ মানানসই শুধু নয়, রেসের মাঠে মিঃ ডাট একজন পরিচিত নাম। কিন্তু অতিমাত্রায় ধার্মিক, রসকলি আঁকা প্রভাবতী দেবী তাঁর অধিষ্ঠিত গোপালের বাড়িতে সেই অনাচার মানতে রাজি ছিলেন না। যার ফলস্বরূপ অনিন্দ্য দত্তকে উঠে যেতে হয়েছিল বালিগঞ্জ প্লেস ছেড়ে আলিপুরে। কিন্তু সম্পর্কের শিকড়ে কখনো টান পড়েনি। দুঃখ যে প্রভাবতী দেবী বা অনিন্দ্য দত্ত কেউই কিছু কম পেয়েছিলেন এমন নয়, কিন্তু সংসারের বাঁধন বজায় রাখতে এই ব্যবস্থাকেই “সুখের চেয়ে স্বস্তি ভালো ” এমনটাই ধরে নিয়ে দিন অতিবাহিত হচ্ছিল। বংশের প্রথম নাতি যাকে কোলে পিঠে বড়ো করেছেন, তাকে হঠাৎ করে কাছে না পাবার কষ্টকেও তিনি বুঝতে দেননি। বরং আরো বেশি করে গোপালের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। মানুষের মনের হদিস জানতে পারা কি এতই সহজ! অনিন্দ্য দত্ত নিজে প্রতিদিন নিয়ম করে মায়ের সাথে দেখা করতে আসলেও প্রভাবতী দেবীর প্রিয় নাতিটিকে কিন্তু কোনো ছুটির দিনেও গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে আসতেন না। হয়ত সেটাই ছিল তাঁর প্রভাবতী দেবীকে দেওয়া শাস্তিস্বরূপ। প্রথমদিকে প্রভাবতী দেবী অনুযোগ করলেও “ওর ট্যুইশন ক্লাস বা সাঁতারের ক্লাস অথবা আবৃত্তির ক্লাস “এসব বলেই এড়িয়ে যেতেন। পরে কখনও কখনও এমনটাও বলেছেন…”কেন আমি আসছি, এতেও হচ্ছে না “? প্রভাবতী দেবী অনেক পরে বুঝেছেন তাঁর বড়ো ছেলের এটাই তাঁর প্রতি প্রতিবাদের ভাষা। দোলে, বিজয়ায় কিংবা কোনও পালেপার্বনে নাতিমশাই এসেছে কিন্তু ততোদিনে প্রভাবতী দেবীর সেই আকুলতা কেটে গিয়েছে। কোথায় একটা দুরত্ব নাতি ও ঠাম্মার মধ্যে দেওয়াল তুলেছে। আগের মতো দু’জনেই অনর্গল কথায় নিজেদের মাতিয়ে রাখতে পারেননি। খেই হারিয়েছে, কথা হারিয়েছে, একটা সময় নাতিমশাই ” আসছি ঠাম্মা ” বলে ঘর থেকে চলে গ্যাছে। বলা যায় পালিয়ে বেঁচেছে। যে নাতির জন্য গোপালের নাড়ু মোয়া রাখা দায় ছিলো, সেই নাড়ু মোয়ার দিক থেকে মুখ ফিরিয়েছে।

সময় তার নিজের গতিতে চলে। ছোট ছেলে তখন শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের হোস্টেলে। মেজ ছেলে অমৃত দত্ত কাঠের ব্যবসা করেন। সেও খুব ছোটখাটো ব্যবসা নয়। সারা ভারতের জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে গাছের ঠিকা নিয়ে ব্যবসাটাকে বেশ বড়ো জায়গায় নিয়ে গ্যাছেন। সৎ বা অসৎ পথে যেভাবেই হোক, ভারতবর্ষের বিভিন্ন জঙ্গল থেকে ট্রাক বোঝাই হয়ে বড় বড় লগ এসে পৌঁছেছে কলকাতায়। শোনা যায়, বনবিভাগের কোনো এক সৎ অফিসারের কু-নজরে পড়ে কয়েক রাত্রি হাজতবাসও করতে হয়েছিল অমৃত দত্তকে। তবে সেসব কথার যথার্থ প্রমাণ তেমন কিছু জানা নেই। ভারতবর্ষের মাটিতে সততার সঙ্গে অসাধুতার লড়াইয়ে সবসময় সততার হার হয়েছে এমনটাই দেখা যায়। তাই অমৃত দত্তকে জেলের কুঠুরিতে বিশেষ সময় কাটাতে হয়নি। তাই এমতাবস্থায় প্রভাবতী দেবী স্থির করলেন মেজ ছেলের বিবাহ দেবেন। ছেলেকে বাঁধতে হবে। সেইমতো পাত্রী সন্ধান শুরু হল। তখন তো এমন ডট কমের যুগ নয়। ঘটককে বলে বিভিন্ন জায়গায় লোক লাগিয়ে পাত্রী দেখা শুরু হল। অমৃত দত্ত বিবাহে বিশেষ রাজী ছিলেন না, কারণ, মাসের মধ্যে পাঁচটা দিন তিনি কলকাতায় থাকতে পারেন না, স্ত্রীর প্রতি অবিচার হবে, এত সব বলেও মাতৃআজ্ঞা পালনে নিমরাজী হয়েই অবশেষে মত দিলেন। শ্যামবাজারের একটি একান্নবর্তী পরিবারের মেয়েকে পছন্দ হল প্রভাবতী দেবীর। প্রভাবতী দেবীর মনে কোথাও একটা উষ্মা জমা হয়েছিল অনিন্দ্য দত্তর স্ত্রীকে নিয়ে। যদিও কোনওদিন প্রকাশ করেননি। কিন্তু অনিন্দ্যর বাড়ি ছাড়ার পিছনে কোথায় যেন তার স্ত্রী’র প্রচ্ছন্ন ছায়া দেখতে পেয়েছিলেন। বাবার একমাত্র মেয়ে, তায় স্কুল শিক্ষিকা, কোথায় যেন দাম্ভিকতার আভাস পেতেন প্রভাবতী দেবী জমে থাকা জলের ওপর সরের মতো। তাই দেখেশুনে স্বল্প শিক্ষার একান্নবর্তী পরিবারের মেয়েকেই বধূ নির্বাচন করেছিলেন। মাতৃভক্ত অমৃত দত্ত মায়ের ওপর সবকিছুই ছেড়ে দিয়েছিলেন। এমন কি কনে দেখতেও যাননি! পাত্রীর বাড়ি থেকে এমন রূপবান ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পাত্র সম্মন্ধে এমনই সম্মোহিত হয়ে পড়েছিল যে খোঁজ খবর নেবার বিশেষ প্রয়োজন বোধ করেনি। অতএব, এক বৈশাখী সন্ধ্যায় চার হাত এক হয়ে গেল। নব বধূ হয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে চলে এলেন প্রতিমা। রূপে প্রতিমার মতো তেমন চমক না থাকলেও শাশুড়ির সঙ্গে ব্যবহারে ক’য়েকদিনের মধ্যেই তিনি “সংসারের লক্ষ্মী ” পদবীটি আদায় করে ফেললেন। অমৃত দত্ত দার পরিগ্রহ করে নিজে যতোটা না খুশি হয়েছিলেন, তার চেয়ে অনেক বেশি খুশি হয়েছিলেন মায়ের আনন্দে। তাঁর ব্যবসায় আরো বেশি মনোযোগ দিতে শুরু করলেন অমৃত দত্ত।
কিন্তু অলক্ষ্যে অন্য কোথাও পাশার দান খেলেছিলেন বিধাতা পুরুষ।🍁

 

 

অলঙ্করণ : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক 

 

 

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment