Sasraya News

Saturday, February 8, 2025

Sasraya News | Sunday Literature Special | 14 July 2024 | Issue 24 | সাশ্রয় নিউজ | রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | ১৪ জুলাই ২০২৪ | সংখ্যা ২৪

Listen

সম্পাদকীয় 

 

 

 

ময়ের জন্য অপেক্ষা করছিল আজ পত্রিকা রবিবারের স্পেশাল। টেকনিক্যাল ইস্যু কারণ। আসলে আমিও অন্য ভাবে আছি। সানিও ছিল অপেক্ষায় আর অপেক্ষায় ছিল সাশ্রয় নিউজের সকল কর্মীবৃন্দ তাছাড়া অপেক্ষায় ছিল বন্ধু সাহিত্য সাথী ও আমাদের সংবাদ পাঠকেরা। আজকের এই রবিবার স্পেশাল প্রায় ৫০০০ এরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যায় শব্দে শব্দে, ঘন্টায় ঘন্টায়, ভালবাসার বন্ধনে। আপনারা আছেন বলেই আমাদের মত পত্রপত্রিকা সুন্দর ভাবে প্রকাশ পায়। আগামীতেও পাবে। কৃতজ্ঞ সকলের প্রতি। ভালবাসা।
আজ সকলকে জানাই রথযাত্রার আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালবাসা ও অভিনন্দন। সকলেই ভাল থাকুন সুস্থ্য থাকুন। 🍁

 

 

 

🦋কবিতা 

 

 

 

 

 

রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন 

কবির বাক্স

 

 

একটা টিনের বাক্স
একটা ছাতা
সাধারণ এক লোক ঢুকলো
রাজধানীর গহ্বরে
কেউ তেমন তাকালো না
এমন আর কি-
কতজনই তো আসে
এদিক সেদিক তাকানো দেখে
সার্জেন্ট জিজ্ঞেস করলো
এই যে কোথায় যাবেন
জিন্দাবাজার
হা হা মুর্দা বাজার নয় কোনো
গ্রামের সহজ মানুষ দেখলে
কেতাদুরস্ত শহুরে শয়তানরা যা করে
ঐ বাক্সে কি
তেমন কিছু না জামা কাপড়
খোলো দেখি
এতোক্ষণে কিছু উৎসাহী ভিড়
গোল হয়ে উঠছে লোকটিকে কেন্দ্র করে
তারা ঘুরছে যেভাবে পৃথিবী ঘোরে সূর্যের চারপাশে
সে বাক্সটা খুলতে শুরু করলো
আর তার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা কলস্বরা নদী
জ্যান্ত কয়েকটা জিয়ল মাছ
একঝাঁক সবুজ টিয়ে উড়ে গেলো
এক গোছা সোনালি ধান, দুর্বা ঘাস,একটা লুঙ্গি যার দৈর্ঘ্য প্রস্হ
অনিঃশেষ, আস্ত একটা গোবর লেপা উঠোন,পুঁইয়ের মাচান,আলাউদিনের আশ্চর্য প্রদীপের আদলে একটা কাসার থালা আরো কত কি
দর্শকদের শরীর থেকে শরীরে
উচ্ছাস বিহঙ্গ
চোখ থেকে চোখে ঢেলে দেয়া উল্লাস
শিরদাঁড়ায় শীতলক্ষ্যা
সার্জেন্ট আর জনতার জিজ্ঞাসার শেষ নেই
তুমি জাদুকর নাকি জিন
তুমি কি মানুষ না ভীনগ্রহবাসী
তুমি কি নূহের বংশধর
লোকটি নিজেও জানে না তার
মস্তিষ্কের প্রেক্ষাগৃহে এই চলচ্চিত্রের উৎস
জানে না কি করে তার পিতা পিতামহের এই তোরঙে এতো বিগ্রহ
সে ভাবলো দৈবক্রমে এসব স্রষ্টার উপহার
আবার জনতা জানতে চাইলো
তুমি কে
লোকটি ভাবলো সে বেকার তার সংগ্রহে কিছু পদাবলী যা সে
লুকিয়ে রচনা করে
জীবন ও জীবীকার জন্য মাইল মাইল পথ পার হয়ে এসেছে
মায়ের অশ্রুভেজা ভোর ছিঁড়ে
সে নাস্তা করে এসেছে সূর্যের সঙ্গে
তার কি পরিচয় সে দেবে
তবে সে কবিতা লেখে এই জনতার কাছে তার কি মূল্য
তবু সাহস করে
পৌরানিক পৃষ্ঠা থেকে উঠে আসা
সত্যদ্রষ্টা সে বললো আমি
কবি
ক্রমশঃ পাতলা হতে থাকলো ভিড়
এক অবর্ননীয় লজ্জায় অবনত হয়ে থাকলো সে
যতক্ষণ না এক দয়িতা প্রশ্ন করলো
তোমার আসল নাম কি
লোকটি নিরুত্তর
এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা পথচারীরা যেতে যেতে
বললো – কবি কবি
তার নাম কবি

 

 

 

 

রেহানা বীথি 

তেত্রিশ কোটি প্রহরের পরে

 

 

এ শহরের প্রেমিকারা ঘুমিয়ে গেছে হয়তো

মৃত্যুর ছিদ্র গলে যখন তারাদের ঝিনুক নৃত্যরত
আমাদের চোখে তখন পাখির জন্ম হয়
ওরা মা পাখির ঠোঁট থেকে জীবন নিঙড়ে
বেড়ে ওঠে দ্রুত
তারপর ওড়ে
উড়তে উড়তে
কবরস্থানের ফটকে নিজেদের নাম লিখে
ফিরে আসে চোখে

যে শহরের প্রেমিকারা ঘুমিয়ে গেছে
সে শহরের যুবক পথ লণ্ঠনের ধীমে আলোয়
বসে থাকে পাহারায়
বসে বসে গুনতে থাকে-
একলা প্রহর, দোকলা প্রহর…
তেত্রিশ কোটি প্রহর গুনে ওঠার আগেই
নিভে যায় লণ্ঠনের ধীমে আলো
চিমনির কালি তবু্ও লেপ্টে থাকে পথের চোখে
ও-মনে করে,  দিন ফোটেনি
এখন কেবল মধ্যরাত
অথচ কেটে গেছে কত শত রাত…

প্রেমিকাদের অঙ্গজুড়ে তারপর রেশমী বসন ঢেউ খেলানো হাসির ফোয়ারা ঠোঁটজুড়ে
পথের চোখে লেপ্টে থাকা কালি নিয়ে
ওরা দীঘল করে নিজেদের চোখ
আমাদের চোখের পাখিরা
বেরিয়ে আসে চোখ থেকে
ওদের সঙ্গে উড়ে গিয়ে
কবরস্থানের ফটকে নিজেদের নাম লিখি আমরাও
তারপর আমরাও
মৃত্যুর ছিদ্র গলে ঢুকে পড়ি
এক অবাক-উদ্যানে
দেখতে থাকি নৃত্যরত তারাদের ঝিনুক
দেখতে দেখতে একসময় ভুলে যাই
নামাঙ্কিত ফটকের কথা…

 

 

 

 

 

 

কুশল মৈত্র 

বাবা

 

 

বেলা গড়িয়ে যায়
পড়ে থাকে পিছুটান
সংশ্লেষিত আলো
তাও পাতা ঝরে যায়।
রং-এর বল্কল আলো-অন্ধকার খেলা
শৈশবে বাবাকে আঁকড়ে পথ চলা
আজ বুকের শিকড় আর ডালপালায়
হারানোর শোকমালা গভীর নির্মাণ—
চারপাশ গুমরে ওঠে শব্দমায়ার শূন্যতা
অন্ধকারে পড়ে থাকে মায়ার জন্মকথা।

 

 

 

 

 

দীপান্বিতা রায় সরকার 

পাহাড়িয়া বাড়ি

 

 

একদিন যাবো তোর বাড়ি,
অমন পাহাড়ের সারি, দিয়ে পাড়ি
তিরতির ঝোরার কাছে।

এই বৈভব, সৌরভ ঝড় সংকেত
এত গান, মুগ্ধতা ভরে অনায়াসে
আর কার বুকে আছে?

তোর বাড়ি মানে রডোড্রনড্রোন,
নরম আলোয় ভেজা বাতাসিয়া সুর।
বুকে রাখা ব্যথাদের নিরালা দুপুর।

মুখরিত বিকিরণ গানে
পাইনের একা এক ধুপ ছায়া ঢালে,
কুয়াশার মৌনতা পাথরেরা জানে।

তোর বাড়ি মানে, আজানা প্রহর।
সদর ফলকে লেখা স্বপ্নীল নাম।
দু’জনের হাতে লেখা আলো ফরমান।

কবে যাবো! কবে যাবো তোর বাড়ি
অনেক পাহাড়ের সারি, সব আড়ি
ফিরবো শুধু তোর কাছে।

এই নির্জন, এত দরবেশ ক্ষণ
এত নির্মম, ভরা সন্তাপ মন
আর কার বুকে আছে?

 

 

 

 

গেছোদের ঘর বাড়িগুলো

 

 

সিরসিরে হাওয়াদের দলে,
ফুরফুরে পাখিদের বুলি।
বসে যাবে খাস সে তালুকেই
গেছোদের যত ঘরবাড়ি।

কাদের যে আত্মীয় চেনা,
আমাদের নয় অন্তত।
দিনমান দক্ষিণী হাওয়া
আগে থেকেই বন্ধুর মতো।

আমার তো কোনও গাছ নেই,
সদ্ভাব যেটুকু আড়ালে।
এই তাপে ছায়াহীন হওয়া,
খটখটে প্রান্তর জানে।

যে ভুল হয়েছে অনায়াসে,
সে ক্ষতি পোষাবেই তারা।
আগামী বসন্তের দিনে
ফুলে ফুলে ঢেকে যাবে পাড়া।

সে ফুলে চিনে যাবে সব
একটি গাছ হোক না আমারও।
ফিরো ঘর বন্ধুর মতো চিনে,
একটি বন্ধু হতে তুমিও তো পারো।

 

 

 

🦋গল্প 

 

 

 

হিয়ার মাঝে

অন্তরা সরকার

 

 

 

 

পাঁচ বছর পরে অর্ণব ট্রেনিং সেরে দেশে ফিরে জয়েন করেছে এক স্বনামধন্য কর্পোরেট সেক্টরে। জীবনের বিভিন্ন চড়াই উৎরাই কাটিয়ে আগামী বৈশাখে দশ বছরের সম্পর্কটা এবার গাঁটছড়ায় বাঁধা পড়বে। দীর্ঘদিন পরে তিথি ও অর্ণব মুখোমুখি মিলেনিয়াম পার্কে। সময়ের আগেই পৌঁছে গেছে তিথি। পড়াশোনা শেষ করে কম্পিটিটিভ এক্সামের প্রস্তুতি নিচ্ছে। চাকরি করতেই হবে। অর্ণবের সঙ্গে দেখা করার জন্য আলাদা করে কিছু সাজগোজ করতে হবে বলে সে মনে করে না। রূপ ঈশ্বর প্রদত্ত কিন্তু মানুষ মহান হয় কর্মে। ঈশ্বর যে রূপ দিয়েছেন তার উপর যদি বাড়তি আর্টিফিশিয়াল মেকাপ চাপানো হয় তবে চেহারায় লাবণ্য হারিয়ে যায়, এটা তিথি বিশ্বাস করে। তাই কপালে ছোট্ট একটা টিপ, পরনে গোলাপি তসর শাড়ি, চুলে একটা আলগোছে খোঁপা বেঁধে নিয়েছে।

 

______________________________________________

ওর ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ সবই চেঞ্জ হয়েছে। এই গঙ্গার পাড়ে বসে কত সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছে কলেজ জীবন থেকে। ন্যাচারাল বিউটিকে অর্ণব বরাবরই প্রায়োরিটি দিত

______________________________________________

 

মিনিট দশেক দাঁড়ানোর পর পিছন থেকে পরিচিত স্বর কাঁধে হাত রেখে বলল, “এবার বল, কোথায় যাবি?” তিথি অপলকে দেখল এতগুলো বছর ব্যবধানে অর্ণবের কোন চেঞ্জ নেই। শুধু চশমার ফ্রেমটা বদলেছে। এখনও ঠোঁটের কোণে সেই দুষ্টু মিষ্টি হাসিটা লেগে গেছে। তিথি বলল, “কোথায় আর যাব? এখানেই তো আমাদের সম্পর্কের শুরু।” তিথির কথা শেষ না হতেই অর্ণব বলল, “একদম না, পাশেই আমার অফিস, লোকে দেখলেই ট্রোল করবে, তাছাড়া এখানে বসলেই ডাস্ট এলার্জি হবে। এখন অনেক বড় অফিসার হয়ে গেছি বুঝলি! যেখানে সেখানে বসতে পারব না। আমি তাজবেঙ্গল এ সিট বুক করেছি। লাঞ্চ সেরে তোকে ড্রপ করে আবার অফিস ব্যাক করতে হবে।“ কথাগুলো আকাশের দিকে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলে এবার চোখ রাখলে তিথির দিকে। “বাহ্ বেশ সুন্দর শাড়ি পড়তে শিখে গেছিস! কিন্তু সেই ট্রিপিকাল স্কুল গার্ল। আমার অফিসে সুন্দরী রমণীরা পরিপাটি করে নিজেকে সাজিয়ে তোলে। আর তুই সেই একই রকম থেকে গেলি।” তিথির মনের মধ্যে তোলপাড় করছে দুই কাল। অতীতের স্মৃতিরা আনন্দের গল্প শোনাচ্ছে আর বর্তমান কী সাংঘাতিক ভয়াবহ। অর্ণবের কথায় মনে হচ্ছে মাটির শিকড় ছেড়ে আকাশে হাত বাড়াচ্ছে। ওর ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ সবই চেঞ্জ হয়েছে। এই গঙ্গার পাড়ে বসে কত সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছে কলেজ জীবন থেকে। ন্যাচারাল বিউটিকে অর্ণব বরাবরই প্রায়োরিটি দিত। আসলে সময়ের সাথে সাথে সবাই পরিবর্তন হয়, অর্ণব ও ব্যতিক্রম নয়। তবে যে অর্ণবকে তিথি মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসত, সেই অর্ণবকে ফিরে পাবে কি করে? না, না অর্ণবের ভাললাগার সঙ্গে নিজের ভাললাগার অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে বা কম্প্রোমাইজ করতে পারবে না। কারণ এই আ্যডজাস্টমেন্টের চক্করে কম্প্রোমাইজ করতে করতে একদিন ভালবাসা ফুরিয়ে যাবে শেষে থেকে যাবে শুধুই কর্তব্য।অর্ণব বলল, “কিরে চুপ করে থাকবি? কিছু বল?” তিথি বলল, “তুই একটা যন্ত্রে পরিণত হয়েছিস। আমি একটা উবের ডাকছি, বাড়ি ফিরে যাচ্ছি, তুই অফিসে চলে যা।“ হঠাৎ ঘনিয়ে আসা জলীয়বাষ্প তিথির মনে হু হু করে ঢুকে পড়ল, একটু পরেই অঝোরে বৃষ্টি নামবে দু’চোখে। তিথির এই রিঅ্যাকশনটা অর্ণবের খুব চেনা। অর্ণব পকেট থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলল, “আজ মনে হয়েছিল বহুদিন পরে ট্রামলাইনের উপর একসাথে হাঁটব। খোলা আকাশের নিচে মাটির ভাঁড়ে চা খাব, গোধূলির অস্তমিত আভায় গঙ্গা পাড়ে সময় কাটাব, গঙ্গার বুকে কাঠের পালতোলা নৌকায় ঘুরে বেড়াব। সাথে থাকবে আমার তিথির প্রিয় ডার্ক চকলেট।” বুক পকেট থেকে চকলেট বার করে তিথির হাতে দিয়ে বলল, ”হ্যাপি বার্থডে, পাগলি। তুই ভাবছিস আমি ভুলে গিয়েছি? আরও একটি গিফ্ট আছে, বাড়ি ফিরে দেখতে পাবি। আজ ছুটি নিয়েছি, কারণ ইউ আর মাই ইউনিভার্স”! কেমন ঘোল খাওয়ালাম! অর্ণব হো হো করে হাসতে লাগল। ঘন কুয়াশা সরে গিয়ে চতুর্দিক তখন আলোয় ভরে উঠেছে। দিয়ার মনে ঘনিয়ে আসা অভিমানী মেঘ এক নিমেষে সরে গেল। হাসতে হাসতে তিথি বলল, ”তুই ও একই থেকে গেলি। সেই বোকা বানানোর চেষ্টা, খুব মজা হয় বল?” 🍁

 

 

 

🦋কবিতা 

 

 

 

 

মিঠুন চক্রবর্তী 

উত্তাপ

 

জল থেকে উষ্ণতা উবে গেলে হিমশীত
পড়ে থাকে বরফের চাঁই
সম্পর্ক থেকে যেন না হারায় উত্তাপ,
সব শীতে পাশে থাকা তোমাকেই চাই…

পশম আদর ঠোঁটে বলো, ‘ভালবাসি’
কথার কুরুশে রোজ বুনে দিও পলাশ রোদ্দুর
কয়লা খাদানের মতো ধস নামা বুকে
হঠাৎ হেমন্ত রাতে জ্বেলে দিও স্বচ্ছ কোহিনূর

 

 

 

 

সম্পর্ক, রাস্তা এবং সময়

 

পৃথিবীর প্রতিটি রাস্তাই ব্যবহারকেন্দ্রিক
চলাচল হারিয়ে গেলে মুছে যায়
কিছু অপেক্ষার পরে
তাই যাবার আগে বলে যেও, ‘আসছি…’
এবং ফিরে এসো,
ফিরে এসো আগামী ভরা বর্ষার আগে

ফিরে আসতে কখনো বড়ো দেরি হয়ে গেলে
যে মাঠে ফলতো সোনা সেই মাঠই রুক্ষ হয়ে ওঠে

 

 

 

 

একটি মধ্যরাতের কবিতা

 

যদি বৃষ্টি আসে এই মধ্যরাতে আকাশ ভেঙে,
ভেসে যায় নীল কার্পেটে মোড়া ঘুমন্ত শহর
যদি ঝিল্লির ডাক বেজে ওঠে তার ছেঁড়া সেতারের বুকে

আমি কী আগুন জ্বালাব ফের দুই পাহাড়ের মধ্য উপত্যকায়!

এই রং চটা শহর, মরচে পরা জানালা
প্রত্যাশিত কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় রিংটোন একটানা বাজে…
অচেনা ছাদের নীচে ঘুমিয়েছে চেনা মানুষের ডাকনাম
অবয়ব থেকে হামাগুড়ি দিয়ে নেমে আসে কুয়াশা কেবল

কী শেখাল?
বিশ্বাস ভাঙা কাচের ধারালো টুকরো বুকের গভীর নরমে

উত্তর নেই
সাপের ফণার মতো অজস্র জিজ্ঞাসাসূচক হাওয়া
সারারাত হিসহিস করে শুধু ছুটে আসে রক্তাক্ত বারান্দায়

 

 

 

 

 

 

মমতা রায় চৌধুরী 

রঙিন অপেক্ষা 

 

 

যেদিন তুমি এসেছিলে
সেদিনও শ্রাবণ মেঘের ঘনঘটা
প্রথম কদম ফুলের ছোঁয়া
নিয়ে আমায় রাঙালে
এক অজানায় ভেসেছিলাম…
কি অদ্ভুত মায়ায় পূর্ণিমার চাঁদ যেন
নেমে এসেছিল আমার এই ঘরে।
বর্ষার রাত্রি মায়াবী পূর্ণিমায়
বসন্তের কৃষ্ণচূড়ার লাল ফাগুন
আমার সারা শরীরে, তখন…
একরাশ স্নিগ্ধতা কোনও এক আনন্দ সাগরের
ঢেউ ভিজিয়ে দিয়েছিল শরীর…

আজও ভুলিনি, সেই সব
এখনও মনে মনে আঁক কাটি দেওয়ালে, রঙের ভিড়ে।
আর যখনই ভাবতে যাই কোথায় যেন মিলিয়ে যাও
ধূসর রং গ্রাস করে আমি অনন্তকাল ধরে শুধু এই দিনটিকেই আঁকড়ে-ধরে, জেনো, শুকতারা হয়ে ভোরের আকাশে ফুটব, অপেক্ষায়…

 

 

 

 

 

গোলাম কবির

কবি মানেই

 

কবি মানেই একজন একলা মানুষ,
কবি মানেই বিচ্ছিন্ন পৃথিবীর সবকিছু হতে!
কবি মানেই নিজের রাজ্যে
নিজেই রাজা, নিজেই প্রজা!

কবি মানেই ভিতরে ভিতরে
ক্ষয়ে যাওয়া নদীর দীর্ঘশ্বাস,
কবি মানেই ভিতরে একবুক শূন্যতার
খেলাঘরে একলা খেলোয়াড়!

কবি মানেই সংসারে থেকেও
বিশ্বসংসারে মৌন পাহাড়ের মতো
একলা দাঁড়িয়ে থাকা,
কবি মানেই জগতের সকল কিছুর
জন্যই অসীম মায়ার শরীর!

কবি মানেই অসংখ্য একাকী নিবিড় রাতে
দুঃখ পীড়িত পাখিদের মতো অসহায়
ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে
রাত ভোর করে ফেলা,
কবি মানেই আকাশছোঁয়া ভালোবাসা
হৃদয়ে ধারণ করা!

কবি মানেই পাথরের বুকেও ফুল
ফোটানোর মতো অসম্ভবকে সম্ভব
করা একজন যাদুকরের মতো,
কবি মানেই আগামী পৃথিবীর
সুন্দর দিনগুলোর স্বপ্নদ্রষ্টা!

 

 

 

 

 

 

কাসেম আলী রানা

লৌহার কার্তিক

 

তোমার উর্বর মাটিতে আমার হৃদয় রোপন করে এসেছি,
ফুলে-ফলে একদিন সে তোমাকে অনাবিল প্রেম দিবে!

তুমি টাইটানিকের মতো;
বরফ প্রেমে ডুবে আছো অনন্তকাল,
কোটবাড়িয়া পুরাকীর্তি মতো হৃদয় জমিনে স্মৃতি খুঁড়ে খুঁড়ে তোমাকে আমি ব্যাকুল হয়ে ডাকি- দুরন্ত পঁচিশে ফিরে এসো। ডুবন্ত নাবিকের মতো সলিল সমাধিতে আর কতকাল ঘুমাবে?
আমার হাতছানি কি তুমি দেখতে পাও না, ডালিম কুমার?
আমি চোখের জলে বেহুলার ভেলাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাই- অনন্ত, অসীমে!

আমার হৃদয়ে আজ বসন্তকাল! আমি বসন্ত ফুলের সুভাসে তোমার জন্য মৌমাছি সেজে তেপান্তরে ঘর বেঁধেছি!
তোমার মনভূমি এতই উর্বর যে,আমার হৃদয়টাকে
কষ্টময় সুখের মুখরিত রাত্রি বানিয়েছে।
অন্ধকারে নিরবতার প্রান্তিক জীবন দিয়েছে।
আমি আজ তোমার দেশের অতিথি, আমার দেশের অবহেলিত মনচোর।

মিনতি করে বলি, ওগো অতীত আমার,
আমার দান করা হৃদয়টাকে লালন- পালন করো, একটু হলেও করুণা করে তোমার চোখের রেটিনার পর্দাতে থাকতে দিও।
ভালো থেকো আমার ভালোবাসা, ভালো থেকো আমার অতীত, ভালো থেকো আমার চোখের জলে চাষ করা কলমি ফুলেরা!
ভালো থেকো আমার আজন্ম যৌবনের সারথি-
“লৌহার কার্তিক”!

 

 

 

🦋ধারাবাহিক উপন্যাস / পর্ব : ৭ 

 

 

‘লিখতে তোমায় হবেই… হবে… ছাড়বো না।’
ভাবতেই নিজের মনেই হা হা করে হেসে উঠলেন। সোমা চা দিতে এসে এমন অদ্ভুতভাবে তাকে হাসতে দেখে নিজেও হেসে উঠে টেবিলের ওপর চা রেখে গেয়ে উঠলেন… সুজিত চট্টোপাধ্যায় -এর ধারাবাহিক উপন্যাস ‘অনেকটা গল্পের মতো’। আজ সপ্তম পর্ব। 

 

 

 

 

অনেকটা গল্পের মতো

 

 

“তুই হেসে উঠলেই জাকির হোসেন
তবলা বাজানো ছেড়ে পায়রা পোষেন “…।

রে বাবা! কি কঠিন একটা কাজে হাত দিয়ে ফেলেছেন অনঙ্গ, যদি আগে বুঝতেন! অবশ্য সেটাই তো লাখ কথার এক কথা। কেইবা কবে কোনও কাজ ফলপ্রসূ হবার আগে বুঝেছে? তাহলে তো কতো লোক কত কিছুই করত না। প্রথম তিন চারটে পর্ব কোনও রকমে নামিয়ে দিতে পারলেও ক্রমশঃ কঠিন হয়ে যাচ্ছে এই ধারাবাহিক লেখা তার কাছেই। খুব ঘনিষ্ঠ মহলে সে কথা বললেও, তারা এখন কিছুতেই ছাড়বার পাত্র নয়। অনঙ্গ এমনটাও বলেছেন, “এই লেখা ভাই আমার কর্ম নয়, এ প্রায় বাঘের পিঠে চড়ে বসা”। কিন্তু কে শোনে কার কথা? এই সংসারে দু’ধরনের মানুষ আছেন। এক, যাঁরা চাবুকের সামনে দাঁড় করিয়ে কাজ তুলে নেন, আর অন্য প্রকারের মানুষেরা ভালবেসে কাজ আদায় করে নেন। অনঙ্গর জন্য একটা ভাল যে, ভালবাসা দিয়ে তার কাছে তাঁদের প্রাপ্য পাওনাটুকু বুঝে নিচ্ছেন তার পাঠকেরা।

মাঝে অনেকদিন ধারাবাহিকে হাত দেননি অনঙ্গ। কথাটা মনে হতেই আপন মনে হেসে ফেললেন। তার শৈশব ও কৈশোরে তিনি অঙ্কে ভীষণ ভয় পেতেন এবং ফলস্বরূপ, অন্য সব বিষয় পড়া ভাল হলেও অঙ্ক নিয়ে বসতে চাইতেন না। এবং খুব সাধারণ মেধার না হওয়া স্বত্ত্বেও, অন্য সব বিষয়ে ভাল নম্বর পাওয়া স্বত্ত্বেও অঙ্কের কারণে স্কুল থেকে “গার্জিয়ান কল” হত। যার ফলস্বরূপ, আজও অনঙ্গ অসফল মানুষের তকমা লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
তবে ঐ ছেলেবেলায় যেমনটি ভাবতেন অঙ্ক পরীক্ষার দিন স্কুলের বেঞ্চে বসে, “একসময় পরীক্ষা শেষের ঘন্টা পড়বেই।” আজও তেমনই ভাবেন, … জীবন ছেড়ে চলে যাবার ঘন্টা ঠিক একসময় বাজবেই। ছেলেবেলায় অঙ্কে কোনও রকমে পাশ মার্কটুকু পাবার মতো উত্তর করেই বাইরে বেরিয়ে স্কুলের পুকুরে টালিভাঙা দিয়ে ব্যাঙবাজি করতেন, শ্রেণীকক্ষের জানালা দিয়ে রাস্তায় চলমান মানুষের স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দিতেন, এখনও সেই অভ্যাসের বিশেষ বদল ঘটেনি। এই ক’দিনে তিনি একটা আঞ্চলিক ভাষায় কবিতা লিখেছেন, দোল উৎসব সম্পর্কিত রবিঠাকুরের গানের ‘কোট’ করে পোস্ট করেছেন, কিন্তু ধারাবাহিকে আঙুল ছোঁয়াননি। আরও মজার কথা, সেই সব পোস্টে তিনি অনেক বেশি রিঅ্যাকশন পেয়েছেন, মন্তব্য পেয়েছেন, কিন্তু তার এত খেটে রাত জেগে লেখায় খুব কম সংখ্যক মানুষকেই সঙ্গে পেয়েছেন।

অনঙ্গর এক বন্ধু তার নিজের লেখায় কোনও একজনের প্রশংসায় মুগ্ধ হয়ে এমনটাই লিখেছিল, ‘মানুষ এখন তো প্রশংসা করতেও মানসিকভাবে কষ্ট পায়। বোধহয় বুকে অম্বলের যন্ত্রণা অনুভব করে। তোমার মন্তব্য আমায় আপ্লুত করলো।’ এমনটাই কিছু। এবং আরও মজা হল, সেই বন্ধু নিজেও কি?…তবে কথাটা একেবারে একশো শতাংশ সঠিক।
সেই কারণেই কি অনঙ্গ এই ধারাবাহিক লেখায় তেমন উৎসাহ পাচ্ছেন না? কিন্তু তার কমিটেড পাঠকেরা তো তার লেখা পছন্দ করেন। তাঁদের কারুর কারুর মন্তব্যে ব্যাজস্তুতির আভাস থাকলে সেটাও বোঝেন অনঙ্গ। অতএব, … ক্যাবলাকান্ত!
‘লিখতে তোমায় হবেই… হবে… ছাড়বো না।’
ভাবতেই নিজের মনেই হা হা করে হেসে উঠলেন।
সোমা চা দিতে এসে এমন অদ্ভুতভাবে তাকে হাসতে দেখে নিজেও হেসে উঠে টেবিলের ওপর চা রেখে গেয়ে উঠলেন…
“তুই হেসে উঠলেই জাকির হোসেন, তবলা বাজানো ছেড়ে পায়রা পোষেন “।
গান গাইতে গাইতেই অনঙ্গর গায়ে লুটিয়ে পড়লেন।
অনঙ্গর মনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে যায় সোমা আনন্দে থাকলে। জীবনের সব সমস্য যেন অর্ধেক হয়ে যায়। একজন ‘প্রচুর পড়াশোনা করা’ বিদূষী মহিলা, জীবনটাকে একেবারেই সাধারণের পর্যায়ে নামিয়ে নিয়ে এসে শুধু অনঙ্গকে ভালবেসে এই সংসারের গভীর গহ্বরে নিজেকে নামিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তার প্রতিদানে সংসারের থেকে শুধুমাত্র অপমান ছাড়া বোধহয় কিছুই পায়নি। অনঙ্গও কি যোগ্য সম্মান, যোগ্য মর্যাদা দিতে পেরেছেন সবসময়? অনঙ্গ আবার একলহমায় ফিরে যান তার অতীতে। যখন চাকরীসূত্রে উনি কোচবিহারে। মাসে একবার অফিসের সেলস মিটিংয়ে এসে দু-চারদিন থেকে যেতেন। তেমনই হঠাৎ একবার অসময়ে কোনও কারণে মাসের মাঝামাঝি এসে দেখেছিলেন, সোমা বাড়িতে নেই। পরে সমস্যার গভীরে গিয়ে জানতে পেরেছিলেন, এই ব্যবস্থা প্রায় মাস তিনেকের ওপর চলছে। তখনই জানতে পেরেছিলেন, তার মা এবং দিদির মানসিক অত্যাচারে এ বাড়িতে থাকা তার পক্ষে দূর্বিষহ হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এই ক’য়েকমাসে একবার, একদিনের জন্যও অনঙ্গর কাছে সেসব বিষয়ে কিছুই জানায়নি সোমা। বাপের বাড়িতে ‘অনঙ্গ ছাড়া ও বাড়িতে একা থাকতে তার ভালো লাগে না এমনই কিছু বুঝিয়ে, সেখানে থেকে গিয়েছিলেন। তার পারিবারিক শিক্ষায়, কৃষ্টিতে বেঁধেছে শাশুড়ী ও ননদ সম্মন্ধে অনঙ্গকে নালিশ করায়। নিজেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন তাঁদের থেকে। কারন, ও বাড়িতে থাকতে গেলে শাশুড়ী ননদের জায়গায় নেমে কোমর বেঁধে ঝগড়া করতে হয়, যা সোমার শিক্ষা সোমাকে বাধা দিয়েছে। অন্যদিকে সোমা জানতেন, বাড়ির বাইরে কাজকর্মে থাকা অনঙ্গকে এসব জানালে, সে কিছুই করতে পারবে না, কাজের ক্ষতি হবে উপরন্তু মনোকষ্টে ভুগবে।
সোমার মনের ঔদার্যকে কী সত্যিই পেরেছিলেন সম পরিমাণ মূল্য ফিরিয়ে দিতে?
একদিকে অনঙ্গর নিজের পরিবার অন্যদিকে সোমা দুই দিকের টানাপোড়েনে এক প্রবল ভাঙচুর। সম্ভব ছিলো না পরিবারকে বিপাকে ফেলে অন্য কোথাও গিয়ে সংসার পাতার। নিতান্ত অনিচ্ছাসত্ত্বেও, যা কোনওদিন স্বপ্নেও ভাবেননি অনঙ্গ ‘একই বাড়িতে ভিন্ন হাঁড়ি’ সেই ব্যবস্থাই কায়েম করেছিলেন। (ক্রমশঃ)🍁

 

 

অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক 

 

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

 

 

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment