Sasraya News

Wednesday, April 23, 2025

Sasraya News, Literature Special, Spring Issue।। March 24, 2024।। সাশ্রয় নিউজ, রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল।। বসন্ত ২০২৪।। মার্চ ২৪, ২০২৪

Listen

সম্পাদকীয়

 

র্বভারতীয় হোলিকা উৎসব থেকে দোল উৎসবের সূচনা নয় বরং এক অন্য ও অনন্য সৃষ্টি বাংলার দোল উৎসব।

বাঙালিদের আজ রং খেলা। ঋতুরাজ বসন্তের জাগরণে দোল উৎসব আবার ১৯০৭ এর পর নতুন রূপে নাম হল বসন্ত উৎসব। দোল আর হোলি এটা আসলে কি কারণে এসেছে এটা আমরা মনে হয় বেশির ভাগ মানুষ জানি না। হোলি মানেই সর্বভারতীয় রঙ খেলা। কোথাও একদিন আগে বা একদিন পরে। সবকিছু-ই যখন এক, তখন একদিন আগে বা একদিন পরে কেন? প্রশ্নটা বেশ স্বাভাবিক। বাঙালির দোল পূর্ণিমা উদযাপন কেন সর্বভারতীয় হোলি হয়ে উঠল না? এর কারণ কি বা কেন? এই নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছেই। আমি কোনও বিতর্কে যাচ্ছি না। সোজাভাবেই বলি, প্রকৃতিগতভাবে হোলি বা দোল দু’টিই এক। তবে ইতিহাসগতভাবে এর সাবেকিয়ানা একটু আলাদাভাবেই দেখা হয়। এর উৎস কোথা থেকে বা কীভাবে হয়েছে? এই প্রশ্ন থেকেই গেছে। বলতে গেলে বলতেই হয়, হোলি ভারতীয় সভ্যতার প্রাচীন উৎসব। আর দোলযাত্রা এটা এসেছে অনেক পরে।

 

______________________________________________

শ্রীচৈতন্যদেবের পরবর্তী সময় কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান কবিতা গল্প উপন্যাস নাটক বাংলার বাঙালি সমাজের প্রতীক ও গৌরব ময় দিন হয়ে ওঠে। কবি গুরু কি করলেন শান্তিনিকেতনে। দোল পূর্ণিমার ধর্মীয় দিককে সম্পূর্ন বাদ দিয়ে সাংস্কৃতিক দিকটিকে ফুটিয়ে তুলে এক নতুন উৎসবের আয়োজন করলেন।

______________________________________________

সম্রাট হর্ষবর্ধন-এর সময় কালে এই হোলি উৎসব ছিল। কারণ তাঁর লেখা “রত্নাবলী”-তে এই উৎসবের কথা উল্লেখ রয়েছে। আবার আল-বিরুনি-এর গ্রন্থকথা থেকে জানা যায়, সেই সময় কোনও কোনও অঞ্চলে মুসলিমরাও একত্রিত হয়ে হোলি উৎসব পালন করতেন। কিন্তু একটা বিষয় ছিল, তখন কিন্তু হোলি উৎসব বলা হত না। বলা হত, ‘হোলিকা’ উৎসব।
হোলি উৎসবের উৎসগত উপাদান আমার মতে তিনটি।
এক, বলতে পারি স্কন্দপুরাণের পৌরাণিক কাহিনী, দুই শিব পুরাণের মা কালীর আবির্ভাব পর্ব এবং তিন হল,  রাধাকৃষ্ণের প্রেমকাহিনী। স্কন্দপুরাণের পাতায় উল্লেখ আছে যে, হিরণ্যকশিপুরের সন্তান প্রহ্লাদ বিষ্ণু ভক্ত ছিলেন। আর হিরণ্যকশিপুর বিষ্ণুকে সহ্য করতে পারতেন না। তখন হিরণ্যকশিপুর তাঁর পুত্র প্রহ্লাদকে নানা ছলে-বলে মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন। একদিন হিরণ্যকশিপুরের বোন হোলিকাকে বললে, হোলিকা বলে, এটা নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ কি দাদা আমি তো আছি। বলে রাখা ভালো, হোলিকা আগুনে পুড়ে না যাওয়ার বর পেয়েছিলেন অগ্নি দেবতার কাছ থেকে। কিন্তু ঈশ্বরের খেলা। হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে জ্বলন্ত আগুনের উপর গিয়ে বসলেন আর তাতে আগুনের হলকায় দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন। অন্যদিকে, প্রহ্লাদের কিছুই হল না। এই মৃত্যুর কারণে সমাজে অশুভশক্তির বিনাস হল দেখে এক আনন্দের উৎসব পালন করা হল। যে উৎসবের নাম হল, “হোলিকা উৎসব।” এই দিনই ন্যাড়া পুড়িয়ে বা কাঠে আগুন জ্বেলে এই প্রার্থনা করা হয় যে, সমাজে কোনও অশুভশক্তি এলে তার বিনাস হোক এবং শুভ শক্তির জয় হোক। প্রাচীনকালের ঐ সময় থেকে এই রীতি ভারত জুড়ে পালিত হয়ে আসছে।

দ্বিতীয়, আরও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা, যে সময় মা পার্বতী অপরাশক্তি রূপ নিতে গিয়ে তার মন ও মানসিকতার প্রয়োজন অভাব হচ্ছিল। তখন শিব দেখলেন যে এই সময় মা কালীর রূপ নিয়ে সমাজ রক্ষা করতে আসছেন। এই সব কথা কেবলমাত্র শিব জানতেন। নারায়ণকে মা লক্ষ্মী জানতে চাইলে তার উত্তর বা বিবরণ দিতে পারেননি। শুধু বলেছিলেন,  অবশ্য কিছু একটা হতে চলেছে তার আঁচ পেয়েছিলেন মাত্র। এদিকে সন্তান গণেশের প্রতি তার মায়ের করুণা কম দেখছেন শ্রীগণেশ। কার্তিকের প্রতিও কেমন স্নেহের অভাব মাঝে মধ্যেই লক্ষ্য করছেন শ্রীগণেশ। পিতা শিবের কাছে জানতে চান, এর কারণ কি? তখন শিব বলেন, তোমর মা মহামায়ার রূপ নেবেন। স্বয়ং মা কালী। যা এক ভয়ানক রূপ সকলের চোখ আটকে যাবে। শ্রীগণেশ এই কথা শুনে বলতে চাইলেন যে মাকে শান্ত করতে কি করা যায়! পিতামাতার কথা ভেবে সেখানে এক মহা উৎসবের আয়োজন করেন ফাল্গুনীর পূর্ণিমা তিথিতে। সমস্ত দেবদেবীদের কৈলাশে আমন্ত্রণ করে ডাকা হয়।
ওখানে শিব পার্বতীর কথা মত কাঠ সাজিয়ে অঙ্গারের আয়োজন করা হয়। এই আগুন ধরাতে গিয়ে কৌতূহল বশত জানতে চান শ্রী গণেশ, এটা কেন জ্বালাতে হয় পিতাশ্রী। তখন বিষ্ণু ভক্ত প্রহ্লাদের হোলিকা বদের গল্পটি শোনান স্বয়ং শিব। উল্টো দিকে মা পার্বতীকে আনন্দ দানের জন্য এই উৎসবের আয়োজন করা হয় অজান্তেই বলে উল্লেখ।
তৎকালীন সময়ে হোলিকার বধ হয়ে গিয়েছিল। তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, এরপর অসুর বংশ নাশ করতেই মা অপরা শক্তি মহাকালির আবির্ভাব ঘটে।
তৃতীয়ত, আবার অন্যদিকে মা যশোদাকে নন্দলালা (কৃষ্ণ) প্রশ্ন করলেন, মা আমার গায়ের রঙ কালো রাধার গায়ের রঙ গৌরবর্ণ কেন? মা যশোদা চিন্তায় পড়লে তখন বললেন যে, তুমি একদিন ওকে গিয়ে রঙ মাখিয়ে দাও তাহলে ওর গায়ের রঙ তোমারর মতো হয়ে যাবে। ফাল্গুনী তিথিতে মনে দুষ্টুবুদ্ধি মাথায় নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ রাধিকাকে এবং অন্য সব গোপিনীদের রঙ মাখিয়ে দিলেন এবং এই দিনটি সকলের কাছে প্রেমের এক অনন্য সাধন দিন হয়ে উঠল।
কিন্তু অজান্তেই এই দু’টোই ঘটনা ঘটে যায় ঐ একই দিন।

বলতেই পারি, দোলযাত্রা বা আজকের এই দোল উৎসব উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা একটি সুন্দর নান্দনিক হৃদয়ছোঁয়া মন্তব্যে আলোকিত হতে চলেছে। মজার বিষয় হল, যে বাঙালির দোল উৎসবের দু’টি উৎস। এক, রাধাকৃষ্ণের প্রেমের বৈষ্ণবীয় উপাখ্যান। দুই, শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাব।
বৈষ্ণব মতে, ফাল্গুনীর পূর্ণিমা তিথিতে বৃন্দাবনের কুঞ্জ বনে রাধাকৃষ্ণ দোলায় চড়ে তারা প্রেমের রঙে রঞ্জিত হয়ে ওঠেন। একই সঙ্গে গোপিনীরাও এই খেলায় মত্ত হয়ে যান। বৈষ্ণবীয় তথ্য অনুযায়ী বলা হয় যে, পূর্ণিমা তিথিতে এই দোলায় চড়ে তারা একে অপরকে রঙ মাখিয়ে ছিলেন আর এখান থেকে দোল কথার উদ্ভব। সেই থেকেই এই দোল পূর্ণমা তিথি বৈষ্ণবরা পালন করে আসছেন।
দ্বিতীয়টি বলতে হয়, এক সময় বাঙালি সমাজে খুব বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছিল। তখন ফাল্গুনের পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাব ঘটে বৈষ্ণবীয় সমাজে। সে সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল বাঙালি ঐতিহ্য। বড় হয়ে চৈতন্যদেব তখন তিনি কৃষ্ণ প্রেমে সকল বাঙালি সমাজে এক ঝড় তুলেছিলেন। সমাজকে তিনি কৃষ্ণ প্রেমে মত্ত হয়ে রক্ষা করেছিলেন। এবং পরবর্তীতে সমাজে প্রভু শ্রী চৈতন্যদেবের জন্মদিন উপলক্ষ্যে এবং শ্রীরাধাকৃষ্ণের প্রেমের ঐক্যবন্ধনে শুরু হয় দোল উৎসব।
আবার এই দোল উৎসবের নাম হয়ে ওঠে বসন্ত উৎসব। তারও বড় কারণ রয়েছে।
শ্রীচৈতন্যদেবের পরবর্তী সময় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক বাংলার বাঙালি সমাজের প্রতীক ও গৌরবময় দিন হয়ে ওঠে। কবিগুরু কি করলেন শান্তিনিকেতনে! দোল পূর্ণিমার ধর্মীয় দিককে সম্পূর্ণ বাদ দিয়ে সাংস্কৃতিক দিকটিকে ফুটিয়ে তুলে এক নতুন উৎসবের আয়োজন করলেন। ঋতুরাজ বসন্তকে স্বাগত জানিয়ে তৎকালীন ছাত্রছাত্রীও কবিতা গান- মূলত বলতেই হয় সাংস্কৃতিক জগৎকে সঙ্গে নিয়ে উৎসব বা অনুষ্ঠানের সূচনা করলেন যার নাম হয়ে উঠল বসন্ত উৎসব।

বলতে পারি আজ যে আমাদের দোল উৎসবের উৎসগত উপাদান যার সঙ্গে হোলি উৎসবের মিল নেই। শুধু মিল “রং” “আবির”-এর।🦋

 

 

 

 

🍁ফিরে পড়া 

 

বাংলা কবিতা সবসময়েই নিজের পথেই প্রবহমান। তবে একটি সময় এসে কবিরা আরও বেশি জনমুখী, আরও বেশি করে নতুন নতুন করে নিজস্ব পথ খুঁজে নিয়েছেন। এবং বলা অত্যুক্তি হবে না, পূর্বজদের কবিতার ধারা সসম্মানে ভেঙে বেরিয়ে গিয়ে বিশ্বপাঠকের কাছে বাংলা কবিতার প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সাশ্রয় নিউজ-এর বসন্ত সংখ্যায় এমনি ক’য়েকজন কালজয়ী কবির কবিতা সংকলিত হল। ওঁদের অনেকেই এই মুহূর্তে আমাদের ভেতরে সশরীরে নেই। তবে সৃজনে আছেন। থাকবেন। রইল এমনি কিছু কবিতা। 🦋

 

 

 

 

সুভাষ মুখোপাধ্যায় 

ফুল ফুটুক না ফুটুক

 

ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।

শান-বাঁধানো ফুটপাথে
পাথরে পা ডুবিয়ে এক কাঠখোট্টা গাছ
কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে
হাসছে।

ফুল ফুটুক না ফুটুক
আজ বসন্ত।

আলোর চোখে কালো ঠুলি পরিয়ে
তারপর খুলে –
মৃত্যুর কোলে মানুষকে শুইয়ে দিয়ে
তারপর তুলে –
যে দিনগুলো রাস্তা দিয়ে চলে গেছে
যেন না ফেরে।

গায়ে হলুদ দেওয়া বিকেলে
একটা দুটো পয়সা পেলে
যে হরবোলা ছেলেটা
কোকিল ডাকতে ডাকতে যেত
– তাকে ডেকে নিয়ে গেছে দিনগুলো।

লাল কালিতে ছাপা হলদে চিঠির মত
আকাশটাকে মাথায় নিয়ে
এ-গলির এক কালোকুচ্ছিত আইবুড়ো মেয়ে
রেলিঙে বুক চেপে ধ’রে
এই সব সাত-পাঁচ ভাবছিল –

ঠিক সেই সময়
চোখের মাথা খেয়ে গায়ে উড়ে এসে বসল
আ মরণ! পোড়ারমুখ লক্ষ্মীছাড়া প্রজাপতি!

তারপর দাড়ম করে দরজা বন্ধ হবার শব্দ।
অন্ধকারে মুখ চাপা দিয়ে
দড়িপাকানো সেই গাছ
তখন ও হাসছে।

 

 

 

শঙ্খ ঘোষ

চুপ করো, শব্দহীন হও

 

এত বেশি কথা বলো কেন? চুপ করো
শব্দহীন হও
শষ্পমূলে ঘিরে রাখো আদরের সম্পূর্ণ মর্মর

লেখো আয়ু লেখো আয়ু

ভেঙে পড়ে ঝাউ, বালির উত্থান, ওড়ে ঝড়
তোমার চোখের নিচে আমার চোখের চরাচর
ওঠে জেগে

স্রোতের ভিতরে ঘূর্ণি, ঘূর্ণির ভিতরে স্তব্ধ
আয়ু
লেখো আয়ু লেখো আয়ু
চুপ করো, শব্দহীন হও

 

 

 

শক্তি চট্টোপাধ্যায়

পাবো প্রেম কান পেতে রেখে

 

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান
বড় দীর্ঘতম বৃক্ষে ব’সে আছো, দেবতা আমার।
শিকড়ে, বিহ্বল প্রান্তে, কান পেতে আছি নিশিদিন
সম্ভ্রমের মূল কোথা এ-মাটির নিথর বিস্তারে ;
সেইখানে শুয়ে আছি মনে পড়ে, তার মনে পড়ে?

যেখানে শুইয়ে গেলে ধীরে-ধীরে কত দূরে আজ!
স্মারক বাগানখনি গাছ হ’য়ে আমার ভিতরে
শুধু স্বপ্ন দীর্ঘকায়, তার ফুল-পাতা-ফল-শাখা
তোমাদের খোঁড়া-বাসা শূন্য ক’রে পলাতক হলো!

আপনারে খুঁজি আর খুঁজি তারে সঞ্চারে আমার
পুরানো স্পর্শের মগ্ন কোথা আছো? বুঝি ভুলে গেলে।
নীলিমা ঔদাস্যে মনে পড়ে নাকো গোষ্ঠের সংকেত ;
দেবতা সুদূর বৃক্ষে, পাবো প্রেম কান পেতে রেখে।

 

 

পূর্ণেন্দু পত্রী

কোনো কোনো যুবক যুবতী

 

একালের কোনো কোনো যুবক বা যুবতীর মুখে
সেকালের মোমমাখা ঝাড়লন্ঠন স্তম্ভ ও গম্বুজ দেখা যায়।
দেখে হিংসা জাগে।

মানুষ এখন যেন কোনো এক বড় উনোনের
ভাত-ডাল-তরকারির তলপেটে ডাইনীর চুলের
আগুনকে অহরহ জ্বালিয়ে রাখার
চেলা কাঠ, কাঠ-কয়লা-ঘুটে।
মানুষ এখন তার আগেকার মানুষ-জন্মের
কবচ, কুণ্ডল, হার, শিরস্ত্রাণ, বর্ম ও মুকুট
বৃষের মতন কাঁধ, সিংহ-কটি, অশ্বের কদম
পিঠে তৃণ, চোখে অহংকার
সব ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে একটা গগলস্ পেয়ে খুশি।
প্লাসটিকের মানিব্যাগ, নাইলনের জামা পেয়ে খুশি।
বোবা টেলিফোন পুষে তরতাজা বিল পেয়ে খুশি।
চারকোণা সংসারের চতুর্দিকে গ্রীল এটেঁ খুশি।
বনহংসী উড়ে যায়, সে বাতাসে কাশের কথুক
এয়ারকুলারে সেই বাতাসের বাসী গন্ধ পেয়ে বড় খুশি।

একালের কোনো কোনো যুবক বা যুবতীকে দেখে
অতীতের রাজশ্রীর, হর্ষবর্ষনের মতো লাগে।
দেখে হিংসা জাগে।

 

 

 

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

অনেক বসন্ত খেলা

 

অনেক বসন্ত খেলা হল তবু বাকি রয়ে গেল
একটি চুম্বন
নদীর কিনারে একা বসে আছি বিকেলের শেষে
না, না, ঠিক নয়, আমি বহুদিন সেরকম
নদীকে দেখিনি
কবিতার ঝোঁকে লিখে ফেলা, যেন একটি প্রিয় ছবি
না ঘটলেও লেখা যায় না? ছবিটাও শিল্প-সত্যি নয়?
সে কথা এখন থাক, জানি কোনো নিরিবিলি নদী
আমাকে প্রতীক্ষা করে আছে।
যেমন কুসুম রাজ্যে সেবারের দুর্দান্ত ভ্রমণ
না, একটাও গাছ, ভাঙিনি, এমনকী কোনো স্তনে
ছোঁয়াইনি দাঁত
তবুও সুগন্ধ শয্যা চক্ষু থেকে ঘুম কেড়ে নিল
নীরা, মনে পড়ে সেই স্বর্ণসন্ধ্যা? এখনো তোমার সঙ্গে
একটি ঘুম বাকি রয়ে গেছে!

 

 

 

নির্মলেন্দু গুণ

বসন্ত বন্দনা

 

হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে,
হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে
বনের কুসুমগুলি ঘিরে । আকাশে মেলিয়া আঁখি
তবুও ফুটেছে জবা,–দূরন্ত শিমুল গাছে গাছে,
তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক।

এলিয়ে পড়েছে হাওয়া, ত্বকে কী চঞ্চল শিহরণ,
মন যেন দুপুরের ঘূর্ণি-পাওয়া পাতা, ভালোবেসে
অনন্ত সঙ্গীত স্রোতে পাক খেয়ে মৃত্তিকার বুকে
নিমজ্জিত হতে চায়। হায় কী আনন্দ জাগানিয়া।

এমন আগ্রাসী ঋতু থেকে যতোই ফেরাই চোখ,
যতোই এড়াতে চাই তাকে দেখি সে অনতিক্রম্য।
বসন্ত কবির মতো রচে তার রম্য কাব্য খানি
নবীন পল্ববে, ফুলে ফুলে। বুঝি আমাকেও শেষে
গিলেছে এ খল-নারী আপাদমস্তক ভালোবেসে।

আমি তাই লঘুচালে বন্দিলাম স্বরুপ তাহার,
সহজ অক্ষরবৃত্তে বাঙলার বসন্ত বাহার।

 

 

 

 

হেলাল হাফিজ

হৃদয়ের ঋণ

আমার জীবন ভালোবাসাহীন গেলে
কলঙ্ক হবে কলঙ্ক হবে তোর,
খুব সামান্য হৃদয়ের ঋণ পেলে
বেদনাকে নিয়ে সচ্ছলতার ঘর
বাঁধবো নিমেষে। শর্তবিহীন হাত
গচ্ছিত রেখে লাজুক দু’হাতে আমি
কাটাবো উজাড় যুগলবন্দী হাত
অযুত স্বপ্নে। শুনেছি জীবন দামী,
একবার আসে, তাকে ভালোবেসে যদি
অমার্জনীয় অপরাধ হয় হোক,
ইতিহাস দেবে অমরতা নিরবধি
আয় মেয়ে গড়ি চারু আনন্দলোক।
দেখবো দেখাবো পরস্পরকে খুলে
যতো সুখ আর দুঃখের সব দাগ,
আয় না পাষাণী একবার পথ ভুলে
পরীক্ষা হোক কার কতো অনুরাগ।

 

 

 

 

 

 

🍁গল্প

 

 

অনুভব

সীমা বন্দ্যোপাধ্যায়

 

 

কে তো ফাগুন মাস, দারুণ এ সময়!” বসন্ত উৎসব। সাজসজ্জা চলছে যাদবপুর ইউনিভার্সিটির ইংলিশ ডিপার্টমেন্টে। সিনিয়র দাদা দিদিরা খুব ব্যস্ত। চারিদিকে সাজো সাজো রব। কলেজের নিয়ম অনুযায়ী পোস্টগ্র্যাজুয়েট -এর নবাগত ছাত্র-ছাত্রীদেরও আজ স্বাগত জানাতে হবে।

পেতলের বড় বড় ফুলদানীতে রজনীগন্ধার ফুলের তোড়া দিয়ে সুন্দর স্টেজ সাজানো হয়েছে। টেবিলের ওপর রাখা হয়েছে নানা রঙের আবীর। নতুনেরা ছাড়া দিদিরা সবাই চওড়া লাল পাড় দেওয়া হলুদ শাড়ি পড়েছে। আর দাদারা পরেছে সাদা চুড়িদার ও পাঞ্জাবী।

যথা সময়ে ইংলিশ ডিপার্টমেন্টের প্রধান অনুষ্ঠান শুরু করলেন। নাচ, গান, আবৃত্তি পাঠ হল। সকলের পরিচয় পর্ব ও চন্দন পরানোর পালা এক-এক করে হচ্ছে। নবাগতরা সকলেই চুপ। একে-একে পরিচিত হচ্ছে সবাই…

সোনালীর পরিচয়-সোনালী রায় বাড়ি শান্তিনিকেতনের রতনপল্লীতে। বি.এ বিশ্বভারতী থেকে। সোনালী এম. এ প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে। শান্তিনিকেতনের মেয়ে, তাই নজর কেড়ে নিল সবার। চতুর্থ বর্ষের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দুই বন্ধু নন্দন ও প্রীতম। হরিহর আত্মা। দু’জনেই ঠিক করল, যেভাবেই হোক ভাব জমাতেই হবে সোনালীর সঙ্গে। কারণটা অবশ্য দু’টো। এক-অপরূপা, দুই- শান্তিনিকেতনের মেয়ে, একটা আলাদা চটক আছে। কাকতালীয় ভাবে এক বইয়ের দোকানে নন্দন ও প্রীতমের সঙ্গে হঠাৎ সোনালীর দেখা হয়ে গেল। নন্দন ও প্রীতম উপযাচক হয়ে সোনালীর সঙ্গে আলাপ জমাল। পরিচয় হল-নন্দনের বাড়ি লেক গার্ডেন্স, একমাত্র ছেলে। বাবা ডাক্তার ও মা প্রফেসর। প্রীতমের বাড়ি ঢাকুরিয়া। প্রীতমের একটি বোন আছে। বাবা-মা দু’জনেই স্কুল টিচার। বোন ইঞ্জিনীয়ারিং কলেজে ভর্তি হয়েছে।

 

______________________________________________

দীর্ঘ কুড়ি বছর পর প্রীতম দেশে ফিরে এসেছে, একদিন ফোন করে মেসেজ দিয়েছিল সোনালীকে, কিন্তু কিছুতেই ফোন ধরতে ইচ্ছা হয়নি। মনে মনে বলেছিল, যারই ফোন হোক, বেজে চলুক… যদি প্রীতমের ফোন হয়- কী করবে এখন সোনালী? প্রশ্রয় দেবে নিজের মনকে?

______________________________________________

 

নন্দন, প্রীতম ও সোনালী-ওদের ভাব ক্রমে গভীর থেকে গভীরতম হতে লাগল। সবই অবশ্য অলক্ষ্যে। প্রকৃতির নিয়মমত নন্দন ও প্রীতম দুজনেই সোনালীকে ভালবাসতে শুরু করেছে। একদিন কথা প্রসঙ্গে সোনালী বলে, “ছেলেরা হবে শান্ত, ধীর, স্থির ও বুদ্ধিমান। কিন্তু উদ্ধত নয়।” ভাব যেমন জমেছে, মেঘ তার চেয়েও বেশি জমতে শুরু করেছে।

প্রীতম পুরুষ হিসেবে যথেষ্ট আকর্ষক ও চটকদার। লম্বা ছিপছিপে অ্যাথলেটের মত চেহারা অবশ্য মাঝারি। পুরুষের রংয়ের দিকটার চেয়ে ছাপিয়ে পরে পুরুষালি চেহারা-সেখানে নন্দনের একেবারে ঘাটতি নেই। বরং বেশিই। চওড়া কপাল, পুরু ঠোঁট, ছোট ছোট চোখ দু’টি যেন কথা বলে। সব মিলিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত চেহারা। মনে হয়েছিল শিশুর মত নিষ্পাপ নিখাদ। তার আত্মত্যাগ অনেক বেশি। প্রয়োজনে সোনালীর জন্য জীবন ও দিয়ে দিতে পারে। মনের এই ভাবতরঙ্গ সোনালীকে সাহায্য করেছিল নন্দনকে বেছে নিতে। সুন্দরী, বুদ্ধিমতী সুরুচিসম্পন্না সোনালী সহজেই সম্মতি পেল নন্দনের বাড়ি থেকে। নন্দনও সম্মতি পেল সোনালির বাড়ি থেকে। প্রীতম ও নন্দনের পড়া শেষ। প্রীতম ভূপালে চলে গেল চাকরি নিয়ে আর নন্দন কলকাতার নামী কোম্পানিতে যোগ দিল। দেখতে দেখতে একদিন নন্দন ও সোনালীর বিয়ের কার্ড ভূপালে প্রীতমের কাছে গিয়ে পৌঁছাল। বিষণ্ণতার মাঝখানেও প্রীতম ওদের শুভেচ্ছা জানাতে ভুল করল না। ধরে নিল-জীবন একটা পিং-পং বল। নন্দন ও সোনালীর বাড়িতে সানাইয়ের সুর বাজল। সে সুর প্রীতমের বুকেও বেজেছিল। বিয়ে, হানিমুন সবই যেন বাঁধ-ভাঙা নদীর জোয়ারের মত দ্রুত হতে থাকল। উচ্ছ্বাস ও আনন্দে উভয়েই আপ্লুত।কিন্তু বিধাতা? তিনি তো অলক্ষ্যে ছক কষে যাচ্ছেন। বিয়ের ছবছর পর এক ভয়ানক গাড়ি দুর্ঘটনায় নন্দনকে এস.এস.কে.এম হসপিটালে ভর্তি হতে হল। সেমিনার থেকে বাড়ি ফিরছিল সে একাই। মাথায় প্রচণ্ড চোট। ধীরে ধীরে স্মৃতি শক্তি হারিয়ে গেল।

নার্ভগুলো শুকিয়ে মৃত্যুর দিকে ঢলে পড়ল। তখন সোনালীর কোলে ছোট্ট লাটাই-ওরফে আনন্দ। মাথায় বাজ পড়ল সোনালীর। কি করে লাটাইকে বড় করবে? কোম্পানি থেকে সোনালী’র জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে। গতানুগতিক জীবন কোনও রকমে চলে যাচ্ছিল সোনালীর। এদিকে প্রীতম মোটা অঙ্কের চাকরি নিয়ে আমেরিকায় চলে যাচ্ছে, খবর দিয়েছে সোনালীকে। বিদেশে যাবার আগে সোনালীর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে হল। তাই কলকাতায় এল প্রীতম। প্রীতমের সঙ্গে যোগাযোগের ইচ্ছে সোনালীর অন্তরকে স্পর্শ করেছিল। কিন্তু কোথায় যেন অঙ্কের হিসেব ভুল ছিল। সোনালীর সঙ্গে দেখা করতে এসে নীরব দর্শকের মত কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইল প্রীতম। নীরবতা ভেঙ্গে সামান্য দু’চার কথা বলে চলে যেতে যখন উদ্যত প্রীতম-তখন একরাশ মিশ্র অনুভূতি বিবশ করে ফেলেছিল সোনালীকে। তখনকার মত বিচারবুদ্ধি লোপ পেয়েছিল তার। ছুটে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল প্রীতমের এগিয়ে যাওয়া পথের সামনে।

নন্দন চলে গেছে। নিজের মা বাবা গত হয়েছেন। নন্দনের মা বাবাও নেই। ছেলের আকস্মিক মৃত্যু ওনারা সহ্য করতে পারেন নি। একটা অবলম্বন কি পেতে চেয়েছিল সোনালী? একাকিত্ব, ভয়, ক্ষোভ, অভিমান ও হতাশা কুরে কুরে খাচ্ছিল সোনালীকে। “জীবন যুদ্ধে আমি বড় একা, প্রীতম। শুধু এক অনুভবে আজ আমি তোমাকে চাই। তার উপরে ছেলে লাটাইকে বড় করে তোলার গুরু দায়িত্ব মাথার উপরে। সন্তান মানুষ করা একা মায়েদের কাছে একটা কঠিন পরীক্ষা। এবার তোমার কাছে হয়েছি নিঃশেষে নতজানু প্রীতম। তাই দু’ই হাত জোড় করে তোমাকে বলতে বাধ্য হচ্ছি আজকের রাতটা প্লিজ আমাদের সাথে কাটাও। হয়ত আর কোনও দিন দেখা হবে না। বাইরের কালবৈশাখী ঝড়ের দাপটে না বেড়ুনোই ভালো। দেখো, পুরনো গল্প করতে করতে ভোর হয়ে যাবে।” প্রীতম উপেক্ষা করতে পারেনি সোনালীর আবেদন। বাধ্য করেছিল সেই রাতটা তার সঙ্গে থাকতে। কাকভোরে সোনালী ঘুম ভেঙে দেখে একই কম্বলের নিচে ঢাকা ওদের দুজনের শরীর। চেতন ফিরে পেয়েছিল সোনালী জেগে। যা ঘটে গেছে তার জন্য কোনও লজ্জা? না, সামান্য অনুশোচনা হয়েছিল বৈকি। নন্দনের জায়গা প্রীতমকে দিলে কি আজ এই জায়গায় দাঁড়াতে হত তাকে? হ্যাঁ, সোনালীর ভয় হচ্ছিল অবস্থার চাপে পড়ে প্রীতমকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার ভয়। প্রীতম যদি কোনওদিন আঙুল তোলে সোনালীর দিকে-‘সুযোগ-সন্ধানী’ বলে? তাই, মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দিয়েছিল সোনালী, “আজ অবস্থার বিপাকে পড়ে একটা মস্ত ভুল হয়ে গেছে প্রীতম। কোনওদিন তোমার জীবনে কাঁটা হয়ে দাঁড়াব না আমি, কথা দিলাম। তুমি আর কোনওদিন আমার কাছে ফিরে এসো না। এই আমার একান্ত প্রার্থনা। পারো তো আমাকে ক্ষমা কোরো।” প্রীতম আমেরিকা চলে যাওয়ার দীর্ঘদিন পর, অনেকগুলো রাত ওই বিশেষ রাতটা নিয়ে কাটিয়েছে সোনালী। বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছে, সে রাতে তার অসংলগ্ন আচরণের। “নন্দন মারা যাওয়ার দীর্ঘ ছ’বছর পর এরকম একটা ঘটনা ঘটানোর জন্য কেন এতটা সক্রিয় হয়ে উঠেছিলাম? নন্দন চিরদিনের জন্য চলে গেছে। প্রীতম ও দূরে চলে যাচ্ছে, তাই? হঠাৎ সব কিছু হারিয়ে যাওয়ার ভয় কি গ্রাস করেছিল আমাকে? তাহলে আমি কি স্বার্থপর না অধঃপতনের স্পর্ধায়, গ্লানিতে সরাসরি চূড়ান্ত নরকে নেমে গেছিলাম?”

লাটাই সাউথপয়েন্ট থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে উত্তর বাংলা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। সেখানে পড়াকালীন তার সহপাঠিনী তিতিরের সঙ্গে পরিচয় হয়। তিতির উত্তর বাংলার মেয়ে। ওদের বন্ধুত্ব কেবল গভীর হতে লাগল। দীর্ঘ কুড়ি বছর পর প্রীতম দেশে ফিরে এসেছে, একদিন ফোন করে মেসেজ দিয়েছিল সোনালীকে, কিন্তু কিছুতেই ফোন ধরতে ইচ্ছা হয়নি। মনে মনে বলেছিল, যারই ফোন হোক, বেজে চলুক… যদি প্রীতমের ফোন হয়- কী করবে এখন সোনালী? প্রশ্রয় দেবে নিজের মনকে? গত কুড়ি বছরে ওদের সম্পর্ক শীতল থেকে হিমাঙ্কে পৌঁচেছে। সেই শীতলতা ভাঙার প্রথম সঙ্কেত এসেছে সোনালীর কাছ থেকে।

আজকেও হঠাৎই টেলিফোনটা নীরবতা ভেঙে বেজে উঠল। নিশ্চয়ই প্রীতমের ফোন? ফোন রিসিভ না করে বাথরুমের বেসিনে এসে আয়নার সামনে দাঁড়াল সোনালী। আবার … আবার ফোন বেজে উঠল। এইবার সোনালী এগিয়ে এসে রিসিভার তুলে আস্তে ‘হ্যালো’ বলতেই ওপাশ থেকে ভেসে এল তার একমাত্র পুত্র লাটাইয়ের কন্ঠস্বর। খুশিতে আপ্লুত সোনালী। লাটাই জানাল, “আগামী ১২ জুলাই আমি আসছি, মামণি। সঙ্গে সারপ্রাইজ।” যথা সময়ে লাটাই তিতিরকে নিয়ে সোনালীর সামনে উপস্থিত। সারপ্রাইজের অর্থ বুঝতে বাকি রইল না সোনালীর। ওদের দুজনকে জড়িয়ে ধরে যেই মুহূর্তে আশীর্বাদ করতে উদ্যত, সেই মূহুর্তে দরজার কাছ থেকে কে যেন বলে উঠল, “আমিও তোমাদের দুজনকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করছি। সুখী হও। আর লাটাই দেখো, জীবন যেন ভোকাট্টা না হয়।” চেনা স্বরে চমকে উঠেছিল সোনালী। ফিরে তাকাতে সোনালীর চোখ প্রীতমের চোখে। চোখ আর কতটুকু দেখে। দেখে তো মন। কিছু প্রশ্ন করার আগেই প্রীতম বলল, “ সোনালী, আজ তো তুমি একা নও, আজ তুমি পরিপূর্ণা।”এই কথা শেষ না হতেই তিন জোড়া চোখ প্রীতমের দিকে। প্রীতম ধীর পদক্ষেপে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। প্রীতমের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে সোনালী অনুভব করল, সত্যি প্রীতম আজ বড় একা-একেবারে একা। ও কেন বিয়ে করল না ? তাহলে কি নন্দনের মৃত্যু সংবাদ শোনার পর… তাকে মনে মনে পাবার আশা নিয়ে তার কাছে এসেছিল কলকাতায়? 🦋

 

 

🍁কবিতা 

 

 

 

রোকসানা রহমান

আমাদের কোনো বসন্ত নেই

 

আজ বসন্ত জোয়ারে হলুদ আর,লাল, আবিরের,
প্রজাপতির মিছিল শহরময়।

আর ঐ ফুটপাতের মেয়েটি মাকে বললো,
ওরা একটি ফুলও দিলো না মা!
মাথায় হাত রেখে মা বলে,ঐ দিকে তাকিও না।
এই যে দেখছো আকাশ,সেই ছাদের নিচে
ধুলোমাটির আবর্জনা আমরা
আমাদের,আকাশের,রং নেই, স্বপ্ন নেই, ওদের সাথে
আকাশ আর মাটির, মতো
দূরত্ব।
ঐ যে চাঁদ ওটাও ফ্যাকাশে, আত্মারও আলো নেই।
এই শহরের ঝলমলে রাতও অন্ধকার।

ঐ- দেখছো ভদ্রলোক…!
যারা আমাদের ঘৃণা করে
ওরাই রাতের আঁধারে নারী খেকো হায় না।
কখন যে, তোকে, আমাকে
ছিঁড়ে খাবে
তাও জানি না।
আমাদের সম্বল শুধু নিঃশ্বাস।
তাই আমাদের জীবনে কোন,বসন্ত
কোনদিন আসবে না।

 

 

 

সঞ্জয় আচার্য 

আবার বসন্ত এলে

 

পরিপাটি উঠোনে চৈত্রের আঁধার নেমে এলে
তোমাকে দেখা যায় প্রবাসীর মতো ক্ষীণ
মাঝামাঝি দূরপথে কিছুটা মলিন।
অতল এক পুকুরে স্ববাসী যাতনা কিছু
নিজেকে দিয়েছিল ফেলে
স্নিগ্ধতা ভুলে আবার উঠে আসে তারা
সপসপে গায়ে পরিযায়ী ডানা মেলে।

আমি চেয়েছি, তাকে দিগন্তের নীল শাড়ি দিই হাতে
এই ঘনঘোর নদীবাহিত লেখা সেই রাতে, মনে নেই,
রেখেছিলাম কোন চঞ্চল খাতে।

আবার বসন্ত এলে দেয়ালে দেয়ালে এঁকে দেব শরীর
স্থানুর ঠোঁটের কাছে কিছুটা মুহূর্ত
পিপাসার্ত মেঘ রয়ে যাবে স্থির

শুধু বলা হয়নি যে কথাগুলি তারা জলজ বংশের জল হয়ে
মাঝে মাঝে ভিজিয়ে দিক চোখ
এ কোন ধারাবাহিক শোক নয় বুকের তলায় দুঃখ পুড়ে পুড়ে
এ আমার গোপন ইশারা হোক।

 

 

 

দেবাশিস সাহা 

বসন্তসখা

গাছে গাছে বিবাহসংগীত
হৃদয়ের ছন্দপতন
বসন্তসেনাদের উল্লাসে
দীর্ঘ পথ রঙ্গিলা

কচি মুখে রংলীলা
এসে গেছে বসন্তসখা
আমার সমস্ত প্রাক্তন পুড়ে
আজ কোকিল হয়ে গেছে

ও কোকিলা তোর সুরে
রাধে নাচে
কোন মহল্লায়

সখার স্পর্শ পেয়ে
জল মেখেছে রঙ
বাতাসের চোখে -মুখে
পাখিদের প্রসববেদনা

ভালোবাসার মানুষের
শেষ নিঃশ্বাস
বসন্ত হয়ে এসে গেছে

গাছে গাছে বিয়ের গীত
আকাশে বাতাসে
মেঘেদের লম্বা ছুটি

চাঁদের নরম স্তন
তোমার বুকে বসিয়ে
নিজেকে বসন্তসখা ভাবি
নদী হয়ে যায় রজঃস্বলা

 

বসন্তের কথা

তোমার সিথিঁ জুড়ে পলাশ
ডুবুরি খুঁজে পায়নি
কোনো রং

বাতাসে অনেক সুগন্ধিত মুখ
ভেজা কোকিল
একমনে ডেকে যায়
তোমার ডাক নাম ধরে

ছায়া রেখে হেঁটে যায় শীত
ঝরা পাতায়
বসন্তের পায়ের ছাপ

গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে
রেখে যাও সুগন্ধি নিঃশ্বাস
সেই পথে আসে বসন্তসখা।

 

 

 

 

প্রদীপ সেন

তবুও আঁকড়ে ধরার চেষ্টা

 

এ এক নাছোড়বান্দা কসরত
থাকবে না কিছুই শেষমেষ
তবুও আঁকড়ে ধরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা
সেই তো শিথিল হয়ে যাবে মুঠো, বাহুবন্ধন, গাঁটছড়া
শাশ্বত এ সত্য জানি না যে এমনটাও নয়।
কিন্তু যুধিষ্ঠিরীয় উপলব্ধি বড্ড ক্ষণস্থায়ী,
উদ্বায়ী বোধোদয় আসক্তির কাছে পরাজিত
কত আপনজনকেই দেখেছি চলে যেতে
ধরে রাখার ধরে থাকার সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে।
তবুও চেতনা কুম্ভকর্ণীয় নিদ্রায়
অস্থায়িত্বের রাজত্বে স্থায়িত্বের শিলান্যাস!
যত ভাবি শাশ্বত প্রবাহের প্রতিকূলে সাঁতার কাটা বৃথা
তবুও যুক্তির শাদ্বল মেড়ে অনিত্যকে জাপটে ধরে
মূর্খামি করেই চলেছি…

 

বিশ্বজিৎ মণ্ডল 

অবিরল বসন্তের কবিতা

প্রতিটা বসন্তের পর একটি করে ঝরে পড়ে, বিষন্ন ফুল
রাস্তায় ছড়িয়ে পড়া শরীর কণা থেকে নেমে আসে
ঝুরো ঝুরো আর্তনাদ
সম্পর্ক গুলো নষ্ট হতে হতে মুছে যায় অলিন্দের চিহ্ন
কৈশোরে যার জন্য এঁকে দিতাম, কেয়া পাতায় আঁকা
নৌকার বিকেল

আজ বিরল বসন্তের এই বিকেলে দেখি___
তাকে লেখা আমার কবিতা থেকে উড়ে যাচ্ছে
তাচ্ছিল্যের প্রজাপতি

অপেক্ষা আরো দীর্ঘ হোক
আমাদের আরো কিছুটা বয়স বেড়ে গেলে
প্রিয় ফুলগুলো হাতে তুলে দিয়ে বলব, অভিনব আশঙ্কায়
পোস্ট করতে না পারা চিঠি গুলোর কথা…

 

 

জারা সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়

বাজিগর

 

ফাগ প্রস্তুতিতে খরচ করবে বলে যে সন্ধ্যা জড়ো করছো, সে জানে আজ বসন্ত
মাতন – ছন্দে উড়ে আসা সংকল্পে
চৌকাঠ পেরোনোর আহ্বান

ফেরীওয়ালা নয় এসো প্রেমিক হয়ে
আবির মাখিয়ে ঢেকে দিও খুঁত ক্ষত যত

এ বসন্তে বন্দুক থেকে ঝরে পড়ুক ফুল
এ বসন্তে কবিতা সেজে উঠুক আত্মাভিমানে
এই দাম্পত্যে সব রঙ হোক বসন্তের

অকাল বাদলে সব অন্ধকার ধুয়ে
নগ্ন ক্যানভাসে উন্মোচিত করো কায়া সাধন সঙ্গীত ও মুদ্রা।।

 

 

কৌশিক চক্রবর্ত্তী

বিস্তার

 

আজ ঘর পরিস্কার করতে নামলাম
অনেকদিন অব্যবহৃত ঘরে নিরেট শ্যাওলা
উদ্ধার করলাম শতাব্দী প্রাচীন পোশাক
দেয়ালে জমে থাকা আঁটপুরু রোদ্দুর

চেয়ে আছি গনগনে আঁচে
ফিরে যেতে পারে নামহীন ফিনিক্সের দল
জানলার প্রান্তিক কোণে ঝুলে আছে বিপথ শামুক…

এসবের মাঝে ঝাঁটা ভেঙে গেলে
সাহসী হতে হয় হঠাৎ-
বিচ্ছিন্ন কিছু গোধূলির পিছনে
বেছে নিতে হয় নির্লিপ্ত সংসার-

এতদিন যেভাবে জেগেছি প্রশ্রয়ের রাত
আজ প্রলম্বিত দেহে ফার্ন ফাঙ্গাসের সহাবস্থান
ডেকে নাও ধুলোপথ
আমার বিস্তারে শখের গৃহকোণ…

 

 

🍁গদ্য 

 

 

পুষ্পবৃক্ষতল

রেহানা বীথি 

 

শীত কাটিয়ে ওঠা জনপদে হঠাৎ-ই বৃষ্টি নামল। হঠাৎই! তারপর দেখলাম – কী ভীষণ শুদ্ধ চারপাশ! এর কিছুদিন আগেই বৃক্ষরা ঝরিয়ে ফেলেছে তাদের সমস্ত পাতা। পথে হাঁটব কি, পা ডুবে যেত। শুকনো পাতাদের বাজনায় মনে হতো – এ তো বাজনা নয়, এ-যে বসন্তের রটনা!

বসন্ত। ঋতুরাজ বসন্ত। সমস্ত পুরনো ঝরে গিয়ে নতুন করে কচি সবুজের উঁকি, যেন সদ্য কৈশোর পেরনো বালিকার জীবনে প্রথম প্রেম। আর সেদিনের বৃষ্টির পর এই প্রেম যেন সুগন্ধ হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে। জঙ্গল থেকে এনে যে ভাঁটফুলের গাছ লাগিয়েছিলাম, ধীর মৃদু গন্ধ বইছে সেই ফুল থেকেও।

এই গন্ধটুকুর লোভেই কি গাছটি তুলে এনেছিলাম? নাকি ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে? ফুল এবং সুগন্ধ  কোনওটাকে তো আলাদা করে ভাবিনি কখনও! আলাদা করে ভাবিনি বসন্ত এবং ফুল, শীতের জুবুথুবু প্রকৃতির এই দৃশ্যমান বদলও। তাছাড়া আমার ভাবনায় প্রকৃতির কী-ই বা এসে যায়! প্রকৃতির নিয়মে প্রকৃতি বদলায়। প্রকৃতির নিয়মেই প্রেম আসে, ঝরে, আসন পেতে দেয় পুষ্পবৃক্ষতলে। আমরা মাখতে থাকি। মাখতে মাখতে হারিয়ে যাই কোনও এক শূন্য মাঠে। যে মাঠে লাল ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি শিমুল গাছ।
কী ভীষণ লাল! কী টকটকে শোভা!
এ-শোভা দেখেছিলাম সন্ধ্যা রাণীর সিঁথিতে। ও-গাইত-

“আহা আজি এ-বসন্তে 
এতো ফুল ফোটে 
এতো বাঁশি বাজে… ” 

কোনও এক বসন্তদিনে ওর কাছে পত্র এসেছিল। শিমুলের লাল একটি পাপড়ি আর কাগজে হৃদয়বেদন। সেই পত্র পেয়ে সন্ধ্যা রাণী গাইল-

“কী জানি কিসের লাগি 
প্রাণ করে হায় হায় “

লুকিয়ে ফিরতি পত্র লেখা, পত্রে পত্রে প্রণয়, অতঃপর রাঙা সিঁথি। এসবের মাঝে ছিল ঝরাপাতার বাজনা,  মানে বসন্তের রটনা।

আবার এমনই এক বসন্তদিনে সিতারার বর দ্বিতীয় বউ নিয়ে উঠোনের পলাশ গাছ, লেবু গাছ পেরিয়ে ঘরের দাওয়ায় হাজির। কিন্তু সিতারা যেন জানত-ই। সতীনের সঙ্গে স্বামী ভাগ করার জন্যে যেন ও-তৈরিই ছিল। আসলে কী তা-ই?
ভেতরে ভেতরে সিতারা তো ঝরে গিয়েছিল, ক্ষয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওর অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা ছিল না নিশ্চিত। নইলে ঝরে ঝরে, ক্ষয়ে ক্ষয়ে উঠোনের পলাশ তলে দাঁড়িয়ে নিশিরাতে বসন্ত কুড়াবে কেন? কেউ কেউ কুড়ায়। প্রেম পেলেও কুড়ায়, না পেলেও কুড়ায়। কুড়ায় বলেই বসন্ত আসে। ছিটে ছিটে আসে বসন্তের লাল, নীল, বেগুনি, হলুদ…। রঙের আদলে ছিটে আসে বসন্তের বিলাপ। আমরা গাইতে থাকি- 

“আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে
বসন্তের এই মাতাল সমীরণে…”

 

 

 

🍁কবিতা

 

 

সৌগত রাণা কবিয়াল 

সাধের সাত রঙ… 

 

আড়ালে নিজের আদ্যোপান্ত ঘাটতে গিয়ে দেখি…
আমার মন-জানালায়…
কতো সব অপরুপ রুপ-মেধুরের প্রজাপতি…!

প্রজাপতিগুলো কাছে আসে…
হৃদয়ের কার্ণিশে বসে রঙ্গের পাখা মেলে…
আমি অবাক চোখ মেলে তাকিয়ে থাকি…!

বাতাসে সাদাকালো মেঘগুলো তাদের গন্ধ পাঠায়…
মাটি ছোঁয়া সেই গন্ধে আমার বৃষ্টি-বিলাস পায়…
ঘরকুনোতে স্যাঁতসেঁতে শরীরের ভাঁজে
প্রজাপতিগুলোকে নিয়ে আমি
খোলা আকাশে আহ্লাদী- হাত তুলতেই দেখি…

“কি অদ্ভুত বৃষ্টি-জলের রোশনাই…
হঠাৎ..হঠাৎ…
আমার চিবুক বেঁকে নেমে আসে রঙ-মহলের স্রোত…

হতবাক নিজের বুকের গায়ে চোখ পড়তেই দেখি…
দেখি…বসন্ত-সময়ের প্রজাপতি সব
একেকটি সাদা-কালো মথের মতন বে-রঙ ফিরিঙ্গী…;

‘বৃষ্টি’ আমায় রুপ চেনায়..রঙ চেনায়..বে-রঙ চেনায়…;

একছুটে আবার আমি আমার সেই
চেনা দেয়াল-ঘরের খাঁচায় লুকিয়ে পড়ি…
নিজেকে জোর করে ঘুমপাড়ানি মন্ত্র শোনাই…
বুকে পাঁ গুঁজে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে যাই…!

আবার কোনও এক অন্য বসন্তে…
রাত প্রহরের ভয় কাটিয়ে ভোরের ঘুমে
ফের আমি ছটফটে কিশোরের মতন
সব ভুলে, আমার মন-জানালার ‘সাধ’ জাগাই…!

 

 

অনিন্দ্য পাল 

হা তাপ হা উষ্ণতা

 

আলোর রং হলুদ হতে হতে আমার চোখে
নিশ্বাস ধূসর হয়ে যায়
ধোঁয়ার কালো ফিতে বানায় অন্য শহীদমিনার
পায়ের গোছে ভূমিষ্ঠ হয় ধাতব ফোস্কা,

হা তাপ হা উষ্ণতা
রতিমগ্ন বাতাসপুরুষ
নগ্নিকা আগুন উপচারে সাজায় যৌবন
লাঙলের ফলায় ঘন হয় নিভৃত প্রাণ…

ময়দানবের আলো ছড়িয়ে যায় গর্ভদ্বীপে
জতুগৃহে এখন খুশির বন্যা
নাইনেভ শুয়ে আছে কফিনঘরের গুমোট
মধ্যরাতে কুয়াশার মত নামে এখনও
পম্পেইয়ের কান্না…

আগুন আগুন সরোবর
ডুবতে থাকে সুন্দরী শাপলা আর একাদশীর আকাশ
উজাড় বাসর শেষে পরস্পর একা হয়
জীবনখোলস আর ভস্মের কোজাগর।

 

 

বিপ্লব ভট্টাচার্য্য  

শেষ প্রশ্ন

সূর্যস্নাত ভোরের আলোয় তুমি ফুল তুলেছিলে,
আলতো হাওয়ায় উড়ছিল হালকা রেশমি চুল।
তোমার করপুট ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিল
গোলাপি পাপড়িগুলো।
সেইসাথে আমার ঊষ্ণ নিঃশ্বাস তোমাকে পাবে বলে
বাড়িয়ে ছিল হাত।

কেন ফুল ছুড়ে মারলে অনাঘ্রাত কিশোরের বুকে?
কেন তীক্ষ্ণ চোখে চোখ রাখলে, অবুঝ কিশোরের দিকে?
শুধুই নিছক তামাসার জন্য?

ভোরের সোনালী আলোয় ফুল তুলেছিল, কার জন্য?

আজ রক্তে ভেসে গেল কিশোরের হিমশীতল লাশ-
ভালোবাসা বুকে চেপে,
আজও সে কেঁদে কেঁদে ফেরে পৃথিবীর আর এক কক্ষপথ ধরে।

বুঝলে না কিশোর কেন চেয়েছিল একমুঠো ফুল…

 

 

 

সোমা বিশ্বাস 

বসন্ত প্রেম আজও কি আছে?

 

সেদিন এক বৃষ্টি ভেজা বিকেলের বসন্ত
মেঘের মাঝে হালকা আলোয় ঢেউ খেলেছে
সোনালী রোদ্দুর। মন ঘন দুধচায়ের ভারেতে চুমুক- ছেলেটির চোখের দৃষ্টিতে হঠাৎ ছন্দপতন;
টেবিলের সামনে বসা মেয়েটির ভিজে চুল এলোমেলো
গল্পটা কেমন শীতল বৃষ্টি ধারার মতো।
ব্যাগের মধ্যে রাখা একগুচ্ছ পলাশ
তখনও পানসে হয়ে আসেনি-
মেয়েটি অনেকক্ষণ চুপ না বলা কথায়…
কথা না থাক : মনের ভাষাও মাঝে মাঝে
পড়া হয়ে যায় বেশ। কৃষ্ণচূড়া যেন একা দাঁড়িয়ে- আনমনা ছেলেটির মন পরম ভালোবাসায় গেয়ে ওঠে
“কিছু পলাশের নেশা কিছু বা চঁআপায় মেশা
তাই দিয়ে সুরে সুরে রঙে রসে জাল বুনি ..”
বেশ কিছু বসন্ত পেরিয়ে ;
মেয়েটি আজও ছেলেটির অপেক্ষায়… আর ছেলেটি?

 

 

 

রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ 

বসন্ত

 

বাতাসের তীব্র দেওয়ালে
আছড়ে পড়ছে স্বপ্ন

বিবর্তন শেষে বসন্তদিনের
পাতায় পাতায় লালিত হচ্ছে
রঙের স্বাধীনতা

 

 

 

 

মিতা নূর 

শুধু একবার চল যাই, বসন্তের উৎসবে মাতি

তোর শহরে বুঝি আজ খুব বসন্ত উৎসব সাজ?
জানিস!
আমার শহরে, শুকনো পাতার মর্মর শব্দ শোনা যায়
বসন্তের উৎসবে পায়ে ডলা মৃত ঘাসফুলের মিছিলে।
পাঁজরের খামখেয়ালি প্রকোষ্ঠে আজ কঠিন মহামারীর দখল,
বিষাক্ত জীবন আজ!
অক্সিজেনের শূন্যতায় ভুগছে বেহিসেবী সময়।
তবু সবকিছু ডিঙিয়ে চল…
কিছু সময় আমরা বসন্তের উৎসবে মাতি!

আকাশ ছোঁয়া মেঘের পাহাড় ভেঙে ছুঁয়েছি তোর হাত,
হয়তো বসন্ত খুবই অভিমানীনি,
তবুও সে আগামীর টুকরো ছবি বুকের মাঝে আঁকে।
বসন্তের কি দোষ বল তো!
সে-তো শহরের ছেঁড়াফাটা শাড়ীর আঁচলে, সযত্নে রিপু করে ভালোবাসার নকশি।
এখনো কৃষ্ণচূড়া সাক্ষী থাকে সেই থমকে যাওয়া সময়ের!
যখন প্রেমিকার ছলছলে চোখ বর্ষার বৃষ্টি হয়ে ছুঁয়ে যায়
প্রেমিকের বুক।
যাবি তুই!
শুধু একবার চল যাই, বসন্তের উৎসবে মাতি!!

 

 

 

 

বিপুল চন্দ্র পাল 

পরিবর্তন

 

হাওয়ায় ভাসছি আমরা
উত্তর পশ্চিমে ঘন কালো মেঘ
নদীতে জোয়ার এসেছে
নৌকা ভাসাও
চালাও পরিবর্তনের স্রোতে।

খোকা কাঁদছে রাতে
ঘুম ভেঙে গেছে
মায়ের বুক শুকনো
নাভি মিশেছে মেরুদণ্ডে
পরিবর্তন বুঝে নাও ।

ল্যাম্পপোস্টে রক্ত
তুচ্ছ ঘটনা
নন ইস্যু হয়ে যায় ইস্যু
হাহাকার বুকে বলি
পরিবর্তনের মানে বোঝাও।

 

 

সুফিয়া শিউলি 

মা কী হারায় কারো

 

মা কী হারায় কারো? কেন যে হারায়!
কেন যে হারিয়ে ফের দু’হাত বাড়ায়?
মা এক স্নিগ্ধ অপার স্নেহের নিঝর
হারায়, হারিয়ে তবু করে না সে পর!

থাকে মা হৃদয়জুড়ে সকাল-দুপুর
ছড়ায় সুখের ধারা টাপুর টুপুর
থাকে সে পরানমেখে প্রাণের ভেতর
হারায়, হারিয়ে তবু করে না সে পর!

মা এক মায়ার পাখি, মায়ায় ভরা
মা ঠিক মমতামাখা বসুন্ধরা
মায়ের সমান কেউ হয় কী ধরায়
মায়ের মধুর হাসি হৃদয় ভরায়।

মা কী হারায় কারো? কেন সে হারায়
হারিয়ে কেন যে ফের ডাকে ইশারায়
স্মৃতির মাঝেও মা চির-অমলিন
থাকে মা ছায়ার মতো পাশে নিশিদিন।

মা তুমি সত্যি নেই, সত্যি কী নেই
কে বলে নেই মা তুমি? আছো তো কাছেই
ছড়িয়ে রয়েছো তুমি স্নেহের ছায়া
তুমি যে মমতাময়ী নিবিড় মায়া।

 

 

 

ওয়াহিদা খাতুন

দোল এসেছে দোল
 

দোল এসেছে দোল,
বাজবে খুশির ঢোল,
সাজবে সবাই সঙ,
মাখবে গায়ে রঙ,
উঠবে ডুলির বোল;
দোল এসেছে দোল।।

রঙের খেলায় হেলেদুলে,
নাচবে সবাই তালেতালে,
কৃষ্ণচূড়া,পলাশবনে-
কোকিল মাতে বনেবনে—
রঙের ডালা তোল;
দোল এসেছে দোল।।

রব উঠেছে হোলি হোলি,
রঙ ছুটেছে অলিগলি,
পূর্ণিমাতে চাঁদের কোলে,
শিমূল ফুলে ফাগুন দোলে,
ঘুমটা টেনে খোল;
দোল এসেছে দোল।।

 

 

সূর্য বিশ্বাস 

খোঁজ

 

আগুন নেব না

ফুল নেব না

 

পথের ভেতর সবাই দেখুক

পথ খুঁজছে একটি ফুল

আগুন খুঁজছে একটি ফুল

এখন শহর জুড়ে কার্ফু…

 

বিবাগী বাতাস দেখুক সব

কীভাবে রামধনু ওঠে

কীভাবে সবাই মাতোয়ারা হয়…

কীভাবে সব শবের ভিতর মিশে যায়!

 

নার্গিস পারভিন

এই বসন্তে 

 

এল ই ডি আলোর এই রাত জাগা শহর
বাতাসে নাগরিক বসন্ত।

যুগলের দুরন্ত বাইক, হাইওয়ে কিংবা সী-লিংক সঙ্গীত ছোটে তীব্র আলো সব
সারিসারি মৌন লাইট পোস্ট
মাথায় নিয়েছে পাখা মেলা রঙিন প্রজাপতি
যেন মরিবার তরে পতঙ্গের পাখা

শহর তার নিজের গান গেয়ে যায়
ঘুমহীন এই শহরে দিন রাত এক হয়ে যায়
সাগরের ঢেউ রোজ ঠেলে আনে নোনা ফেনা, ঘুমন্ত ঝিনুকের দেহ
ভোরের না ফোটা আলোয় আমাদের প্রিয় শাহরুখ
খালি পায়ে হাঁটে বালি তটে
বসন্তে, পূর্ব দিগন্তে সূর্য ওঠে।।

 

 

 

কাকলি দাস ঘোষ 

এ বসন্তে

 

নতুন কোনও আলো চাই

এ বসন্তে…

ফুলের মত হাসতে চাই

এ বসন্তে…

তোমায় ভালবাসতে চাই

এ বসন্তে।

যদি উন্মাদ মন পাখী হতে চায়…

আকাশ তুমি আমার হবেই

এ বসন্তে।

যদি দু’ই হাত জুড়ে আবির ছড়াই…

বাতাস তুমি আমার হবেই

এ বসন্তে।

এত চাই চাই…

তার কতটুকু পাই…

তবুও তো আশা বাঁচাই…

তবুওতো  স্বপ্ন ফেরি করি…

এ বসন্তে।

 

 

 

 

অভিজিৎ দত্ত 

দোল উৎসব

ভক্ত, ভগবানের মিলনে
দোল উৎসব শুরু হল বৃন্দাবনে
ফাল্গুন মাসে দোল পূর্ণিমার দিনে
মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেবের আর্বিভাব
ঘটলো নবদ্বীপধামে।
তবে হোলির সূচনা হয় সত্য যুগে
হোলিকা নামি অসুরের
বিনাশের সাথে।
আধুনিক যুগে দোল উৎসব
রবীন্দ্রনাথ এর নেতৃত্বে
অন্য মাত্রা পেল শান্তিনিকেতনে।
প্রকৃতি,মানুষ এক হয়ে গেল
রঙের এই উৎসবে।
বিভেদ, শত্রুতা ভুলে
মানুষ এক হয়
দোলের দিনে।
সত্যিকারের রঙ লাগুক
মানুষের মনে
তবেই সার্থক হবে
দোল উদযাপনে।
সত্যিকারের প্রেম জাগুক
মানুষের মনে,দোল উদযাপন
সার্থক হোক এই ভুবনে।

 

 

ডালিয়া মুখার্জী

রঙিন ভালোবাসা 

 

রঙের ছোঁয়ায় রঙিন হয়ে উঠেছে আকাশ বাতাশ
কই আমার মনে রঙ ধরেনা কেন,
উদাসী মন বারবার স্মৃতির
মনিকোঠায় উঁকি মেরে যায়,
আমার প্রথম বসন্ত তোমার সাথেই শুরু হয়েছিলো,
দুরত্ব ছিলো বহু যোজন, কিন্তু মন ছিলো এক,
এক বসন্তে সেই সোনাঝুড়ির মাঠে মাদলের তালে খুব রঙীন হয়েছিলাম একসাথে,
খোয়াই এর ধারে সেই যে সেই বাউলের আঁখড়ায় তুমি সুর ধরে একতারা বাজিয়েছিলে,
সব রঙিন হয়ে উঠেছিল,
খোয়াই এর জল চকচক করে উঠেছিলো আনন্দে,

জীবন আনন্দ মেতে ছিলাম আমরা।

আজও আমি এক মুঠো রঙ তুলে রাখি তোমার জন্য,
যদি আবার দেখা হয় কোন এক বসন্তের রাঙা বেলায়, সমস্ত রং উরিয়ে দেবো আকাশে, হয়তো কিছু রঙ তোমার শরীরকে স্পর্শ করবে,
আমার তাতেই আনন্দ।

 

 

 

 

 

সুচিতা সরকার 

আমি রঙ চিনি না 

 

পলাশ!
শুনেছি তোর রঙে না কি ফাগুন রাঙে!
একটিবার আমাকেও রাঙাবি
তোর রঙে?

লাল, নীল, হলুদ, গোলাপি, সবজে,
কোনটা বেশি গাঢ় হয়
একটু আমায় দিবি বলে?
আমি ঠিক, রঙ চিনতে পারি না রে।

কোনও রঙই যেন, ধরে না এই হাতে।
বসন্তগুলি তাই ফিকেই থাকে,
কোকিলের ডাকের ফাঁকে।

পলাশ ! তোর রঙে,
আমাকেও একটিবার রাঙাবি রে?
আমিও খোয়াই পেরোতে চাই,
একটা রঙীন বসন্তের হাত ধরে ।

 

 

শংকর হালদার শৈলবালা 

পাপের প্রায়শ্চিত্ত 

 

সোনালী সূর্যের ছায়া ভালোই লাগে কিন্তু,
মেঘের ছায়া সরে গেলে রোদে পোড়া।
প্রতি বছর অনেক ফল পাওয়া যায়,
ফল ঝরে গেলে গাছগুলোকে মূল্যহীন।

প্রকৃত ভালোবাসায় পাপের কারণ থাকে না।
প্রকৃতির নিয়ম লঙ্ঘন করে বিশ্বাস হারিয়ে
কবরের মুখ খোলার আগে মাটিতে লুটিয়ে পড়া
প্রকৃতির নিয়মে পাপ কাজের প্রায়শ্চিত্ত।

 

শারমিন

শারমিন সুলতানা 

স্মৃতির পাতা

বসন্তের প্রথম দিনের মৃদু হাওয়ায়
প্রিয় মানুষটির তরে,
তারই হাত ধরে হেঁটে যেতে চাই
যেন দূর বহুদূরে।
ঋতুরাজ বসন্তকে নিয়ে গড়েছি কতো
আমারই সাতকাহন,
পুষ্পমঞ্জুরিতে নিভিয়ে দিয়ে যায়
হৃদয়ের সকল দহন।
বাসন্তী বিলাসী হয়ে রচি যে কতো
মিষ্টি প্রেমের কবিতা,
বসন্তের বর্ণিল রূপ ধারায়
দূর করে সব রূঢ়তা।
থোকায় থোকায় ফুটে থাকে যেন
বাসন্তী সাজে মাধবীলতা,
অপূর্ব আবরণে ভরে উঠে তাই
রঙিন রঙিন স্মৃতির পাতা।

 

 

 

🍁গদ্য 

 

রঙের উৎসব বসন্ত ও হোলি 

মমতা রায় চৌধুরী

 

শীতের রুক্ষ ও জীর্ণতা কাটিয়ে প্রকৃতি পাতা ঝরার মধ্যে দিয়ে বার্তা দেয় এই ঋতুরাজ বসন্তের। নবকিশলয়গুলি দোলা দেয় ডালে ডালে, শিমুল,  পলাশ, লাল ফিতে বেঁধে যেন উৎসব আনন্দে মেতে ওঠে। কৃষ্ণচূড়ার আগুনে রাঙা লাল হাতছানি দেয়।
যেন বলতে চায়, কবির ভাষাতে, “রাঙিয়ে দিয়ে যাও,  যাও গো এবার যাবার বেলায়…
রং যেন মন মর্মে লাগে আমার সকল কর্মে লাগে’’

 

______________________________________________

হোলিকা ছিলেন হিরণ্যকশিপুরের বোন। কাশ্যপ এবং দিতির মেয়ে। হিরণ্য কশিপুরের ছেলে ছিল প্রহ্লাদ যিনি বিষ্ণু ভক্ত ছিলেন কিন্তু হিরণ্য কশিপুরের ছেলের এই বিষ্ণু ভক্তিকে মেনে নিতে পারেননি। তাই তাকে যে কোনওভাবেই হোক হত্যা করার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। আর হোলিকা বরপ্রাপ্ত হয়েছিলেন যে তাকে কোনওভাবেই পুড়িয়ে মারা যাবে না।

______________________________________________

এই বার্তা যেন মানুষকে সব দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা ভুলিয়ে সব ভেদাভেদ ভুলে রংয়ের উৎসবে মেতে উঠতে বলে।
হোলি বা দোল এই দু’টির অর্থ আলাদা হলেও প্রায় একই উৎসবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ফাল্গুন মাসের দোল পূর্ণিমা তিথিতে বা ফাল্গুনী পূর্ণিমাতে এই উৎসব হয়। যে’টি দোল উৎসব বা ফাল্গুনী পূর্ণিমা নামে পরিচিত। এর পৌরাণিক ব্যাখ্যা রয়েছে। বৃন্দাবনে কৃষ্ণ আবির রঙে শ্রীরাধা আর গোপিনীদের সঙ্গে রঙের খেলায় মেতে উঠেছিলেন তার থেকে এই দোল উৎসব নামে পরিচিত। আবার এই জন্যই এ-দিনটাতে রাধা-কৃষ্ণের বিগ্রহে আবির দিয়ে স্নান করানো হয়। তারপর কীর্তন সহযোগে শোভা যাত্রা হয়। আবার অন্যদিকে মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যের জন্ম এই দোল পূর্ণিমাতে তাকে ঘিরেও যে আবির রঙের উৎসব হয় সেটাও দোল উৎসব নামে পরিচিত। এছাড়াও আরেকটা পৌরাণিক ব্যাখ্যা রয়েছে শিব পার্বতীও হোলি খেলেছিলেন। এছাড়া আরও একটি পৌরাণিক ব্যাখ্যা রয়েছে, হোলিকা দহন। হোলিকা ছিলেন হিরণ্যকশিপুরের বোন। কাশ্যপ এবং দিতির মেয়ে। হিরণ্য কশিপুরের ছেলে ছিল প্রহ্লাদ যিনি বিষ্ণু ভক্ত ছিলেন কিন্তু হিরণ্য কশিপুরের ছেলের এই বিষ্ণু ভক্তিকে মেনে নিতে পারেননি। তাই তাকে যে কোনওভাবেই হোক হত্যা করার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। আর হোলিকা বরপ্রাপ্ত হয়েছিলেন যে তাকে কোনওভাবেই পুড়িয়ে মারা যাবে না। তাই হোলিকাকেই এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন তাই হোলিকা প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। কিন্তু হোলিকা আগুনে ভস্মীভূত হয়। তার বরকে অপব্যবহার করেছিলেন সেই থেকে হোলিকা দহন যা হোলির আগের দিন ন্যাড়াপোড়ান নামে খ্যাত।
পৌরাণিক ব্যাখ্যার সঙ্গে সঙ্গে এর ঐতিহাসিক সত্যতাও রয়েছে রাজা হর্ষবর্ধনা হোলি উৎসব পালন করতেন সে প্রমাণও ইতিহাসে আছে।

 

 

পৌরাণিক ব্যাখ্যা থেকে সরে এসে আমরা দেখি, এই দোল সর্বজনীন। যা বসন্তের আহ্বান জানায়। শীত বিদায়ের ঘন্টা বাজায়। প্রকৃতি মনমোহিনী রূপে সেজে ওঠে। তাই প্রকৃতির কোলে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দোল উৎসব ও বসন্ত উৎসব শুরু করেছিলেন। এই বসন্ত উৎসব বিশেষ নৃত্যগীতির মধ্যে দিয়েই আয়োজন করা হয় রবীন্দ্রনাথের সময় থেকে।  শান্তিনিকেতনে। শান্তিনিকেতনের ছাত্র ছাত্রীরা বসন্তের আগমন উপলক্ষ্যে একটা ঘরোয়া অনুষ্ঠান আগে করত। কিন্তু পরবর্তীতে সে’টি ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে। প্রথমে প্রভাত ফেরির মধ্যে দিয়ে এই অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তারপর আবির দিয়ে আকাশ রাঙিয়ে দেওয়া। সন্ধ্যাবেলায় রবি ঠাকুরের নাটকের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে হোলি উৎসব পালিত হয়। ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে সকলে এই উৎসবে শামিল হন। রং খেলার শেষে বৃষ্টিমুখ করে এই অনুষ্ঠান শেষ হয়। 

 

 

এখন পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়ার অপরূপ রূপে প্রকৃতি যখন সেজে ওঠে, ঋতুরাজ বসন্ত যখন সকলকে রাঙিয়ে তোলার জন্য আহ্বান জানায়, তখন প্রকৃতিকেও স্বাগত জানার জন্য বিভিন্নভাবে এই বসন্ত উৎসব উদযাপিত হয়। বসন্ত আসলে মনে দোলা দেওয়া ঋতু। মুঠো মুঠো রং যেন হৃদয় বিছানাতে ছড়িয়ে দেয়। সেই রঙে রঙিন হয়ে আগামী দিনগুলোতে আমরা পথ চলতে পারি। মনের ভেতরে থাকে এক অনের বর্জনীয় অনুভূতি। পলাশ শিমুল: “ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে… “

মন উথাল পাথাল হয় বসন্তের প্রেমে। আর মনের দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা ভুলে গিয়ে এই উৎসবকে সম্প্রীতির বন্ধনে যেন গড়ে তুলি। আজ এই সম্প্রীতির রক্ষা বড় জরুরী তাই বসন্তকে অভিবাদন জানিয়ে আমরা প্রত্যেকে মনের দীনতা ক্ষুদ্রতাকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে বসন্তের ঝরে যাওয়া পাতাগুলির মধ্যে যখন দেখা দেয় ডালে ডালে নব কিশলায় সেই অঙ্কুরিত কিশলয়গুলি আগামী দিনের শুভ বার্তা নিয়ে সকলের মনে বিরাজ করুক। আমরা জড়তা, দীনতা, ক্ষুদ্রতা ভুলে গিয়ে এক বৃহত্তর মানব যজ্ঞে নিজেদের নিবেদিত করতে পারি বসন্ত উৎসব হোক সেই সোপান যাত্রা। আর বলতে পারি, “ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল স্থলে- জলে , বনতলে লাগলো যে দোল…।” 🦋

 

 

 

 

 

🍁অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক 

👉স্বীকারোক্তি : আজকের ‘ফিরে পড়া’ লেখাগুলি  সংকলিত। ঋণ : আন্তর্জালিক।

 

 

🦋সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও স্বাগত। পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও গল্প, কবিতা, গদ্য, প্রবন্ধ, পুস্তক আলোচনা, উপন্যাস। আলোচনার জন্য পাঠাতে পারেন দুই কপি বই। সরাসরি লেখা পাঠান। ই-মেল আইডি : editor.sasrayanews@gmail.com 

সাশ্রয় নিউজ 🫂 সবার জন্য সবসময় 

 

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment