Sasraya News

Saturday, February 15, 2025

Sasraya News, Literature Special, June 9, Issue 20 || সাশ্রয় নিউজ, সাহিত্য স্পেশাল || ২০ জুন ২০২৪, সংখ্যা ২০

Listen

সম্পাদকীয়

 

প্রেম, ভালোবাসা দ্বারা সময়ের গুরুত্ব পূর্ণ হয়। এটাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও মহৎ ঔষধ। যে বা যারা বুঝতে পারবেন তার জীবন ধন্য হয়ে উঠবে। আর এই প্রেম ও ভালোবাসার মাঝে কোনও কিন্তুর সৃষ্টি হলে তা নষ্ট হয়। সত্যের পক্ষে আর বিপক্ষের লড়াইই ধর্ম গ্রন্থ। 

একটা কথা আমাদের সবার জানা থাকলেও ভুল হয়। এটা ঠিক যে প্রতিটি সময় আপনাকে সব কথা বলে দেবে। মানে সময় শিক্ষা দেয়। তার সঙ্গে সঙ্গে সময় চলে যেতে থাকে। সময় কারোর জন্যই দাঁড়িয়ে থাকে না। শিক্ষা দিতে দিতে এগিয়ে যায়। এবং সঙ্গে সঙ্গে সময় অতীত হয়ে উঠলে প্রতিদান দিয়ে থাকে। সময় সমস্ত কথার উত্তর দেয়। সে প্রেম হোক বা দুর্ঘটনা, খুশি হোক বা দুঃখ।

আপনার সঙ্গে কে, কী ভাবে, কখন, কোথায়, কেন, কিসের দ্বারা, কার দ্বারা, কিসের জন্য, তার ব্যবহার, সমস্তটাই তার উত্তর দেয় সময়ে সুখ ও বিপদ। 

কারোরই ভালো মন্দ ভাবা বা অহংকার করা উচিত নয়। সময় কখন কার কি করে কেউই জানতে পারেন না। কেউ নিমিষেই মন্ত্রী হন আবার নিমিষেই জেল-বন্দী। জীবনটা এমনই। মহাভারত তার সম্পূর্ণ উত্তর। কৌরব ও পাণ্ডব। 🌱

 

 

 

🌱কবিতা 

 

 

 

অরুণ কুমার চক্রবর্তী

অন্ধ-আগুন

 

এই দেশটায় অন্ধ-আগুন
হিস্ হিস্ উড়ে ঝলকায়
যারা আগুন নেভাতে আসবে
তারাও আগুনে চমকায়

পথে ঘরে ঘাটে আগুনের ফণা
গোপন -গোপন বাঁকা লেনাদেনা
কারা যে কখন টসকায়
কেউ তো জানে না , অথচ
সব ঠিক আছে বলে ধমকায়

খিস্তি-খেউড় কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি
মুখ পুড়ে যায় লজ্জায়, হাঃ মানুষ
আজ কোথায় দাঁড়াবে !!!
অন্ধ-আগুন হলকায়…

 

গীতা চক্রবর্তী 

ব্যথার মর্মরে

 

সেই উৎকন্ঠার ভোর হবার অপেক্ষা পাশে দাঁড়িয়ে থাকতো,
কোথায় যেন ভাগ হলো প্রথমে সব পেয়ে গেছি মনে করে রেডিও শোনা ছেড়ে ই দিলে।
আগের মতো করে ভাবছে কেন?
মাঝের যে দীর্ঘ সময় তুমি ভীষণই ব্যস্ত হয়ে ছিলে।
কত জল বয়ে গেছে অন্তঃসলিলা দিয়ে,
যুদ্ধের আঁচ এসে লেগেছে অপরাহ্নের আলোয় মাখা মেহগনির গায়ে।
বুঝে না বুঝে অনেক ব্যঙ্গের উপমায় খোদাই করে দিলে তার গায়ে।
কতটুকুই বোঝো জীবনের একপাশে থেকে অন্যদিক কি একসাথে দেখা যায় বলো,
পৃথিবী যে গোল।
তাকে ঘুরে দেখতে আমাদের আর থাকা হয় না।
তার আগেই জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে যাই,
মাঝখানে রেখে যাই শুনতে না চাওয়া বিষাদের গান, যেটা বারবার করে বাজিয়ে যাও।
বাকিটা তারামণ্ডল দেখার মতো মিথ্যার আকাশ।
তবুও আমরা সেসব পেরিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি ব্যথার মর্মরে।

 

 

 

তন্ময় কবিরাজ

অভিমান

 

তুমি কথা শুনলে না
অভিমান সেদিন শুধু বৃষ্টি চেয়েছিল

ঝড় এলো,
নতুন পাতায় জমলো আরোও ধুলো
আমি বসন্ত ভেবে
ঘেমে গেছি বৈশাখি রোদে
তবু তুমি কথা শোনোনি

এ মরসুম বোধহয় বৃষ্টিহীন
অপেক্ষা তাই আজও জেগে থাকে-

 

 

 

সুপ্রভাত মেট্যা

কবিতা এমন না-হয়

 

তোমার পংক্তি জানে
অগ্রন্থিত পাতায়, কতশত কাব্যশিরা আঁকা আছে গাছের।
ধুলোরোদে, হাওয়ায়, কথায় ভেসে বেড়ায় নাম।

হাইওয়ে পেরিয়ে সমতলে মিশে যাওয়া পথ
তার দুইদিকে বাংলার নাগরিক সবুজনন্দন পাতারা,
কচিমুখ, তাকিয়ে থাকে
চলে যাওয়া বাসের দিকে সহাস্য সুন্দর, কী আশ্চর্য স্থির!

নির্জন অরণ্যে রহস্যের গন্ধমাখা রাত্রিই শুধু
আমার কবিতা, তাতো নয়?

ভেজে খাওয়ার আনন্দে
যে অশ্রু লেখা থাকে মাছের, সেওতো কবিতার।
আমি তাকে বলি,
তুমি এমন না-হয় নিজেকে তেলে ছেঁকে ভেজে প্লেটের হয়েছো
আর তোমাকে খুলে খাচ্ছে সবাই?

 

 

 

 

শিশির আজম

ভ্যান গঘের কান

 

এভাবে নিজের কান কেটে
সযত্নে
বেশ্যার হাতে তুলে দিয়ে
তুমি ঠিক করোনি।

তোমার ঐ চাষাড়ে রঙের ছবি
আর তোমার ঐ বিশ্রী অস্বাভাবিক কানের
রক্ত-
দুটোই বেশ্যার কাছে সমান।

তাহলে তুমি কী করতে পারতে?
বলে দিচ্ছি-
একটা না
দু-দু’টো কানই তুমি কাটো
ফোঁটা ফোঁটা রক্ত
তোমার ক্যানভাসে গড়িয়ে পড়তে দাও
তৈরি হবে সূর্যমুখী ফুল
একটা দুটো
সূর্যমুখীর ক্ষেত
না এদের আগে কখনও তুমি
দেখনি।

 

 

 

 

🏔️ ধারাবাহিক উপন্যাস

 

অনেকটা গল্পের মতো

 

পারিবারিক অনুশাসন অনুযায়ী সে ঘরে প্রবেশের অধিকার একমাত্র তাঁদের বাবা ছাড়া আর কারুরই ছিল না। অনেক পর দরজা খুলেছিল। সেই ছোটোকাকা এবং ঠাকুমা কিছুটা ধাতস্থ হয়ে ডেকেছিলেন অনঙ্গকে। লিখেছেন : সুজিত চট্টোপাধ্যায়। আজ ধারাবাহিক উপন্যাস ‘অনেকটা গল্পের মতো’ -এর দ্বিতীয় পর্ব।

 

 

 

২.
অনঙ্গ সেন পৌরাণিক ঢঙে প্রথম লাইনটা লিখেই আবার কাটলেন। মনটা একটু খিঁচড়ে গেল। আবার লিখলেন… “শেষ ভালো যার, সব ভালো তার “। লিখেই ভাবলেন…উহু! এটা বড় জোলো হয়ে গেল। বড্ড আটপৌরে শাড়ির মতো, আড়েবহরে ছোট, কাঁচা রঙ। তাই আবার পুরনো লাইনেই ফিরে গেলেন। আর কিছু না থাক, একটা আভিজাত্যের গন্ধ পাওয়া যায় পৌরাণিক সাহিত্যে। মূল গল্পে আসতে হবে। শুরুটা কীভাবে করবেন একবার ছকে নিলেন অনঙ্গ।
দীর্ঘ সাতচল্লিশ বছর পর আবার অমৃত কুণ্ডু ফিরে এসেছেন তার পুরনো সংসারে। ইচ্ছে করেই ‘তাঁর’ শব্দে চন্দ্রবিন্দু দিলেন না অনঙ্গ। কেন দেবেন? যে মানুষটা যুবতী, আধাসুন্দরী বউ ফেলে, আড়াই বছরের ফুটফুটে বাচ্চা ফেলে চলে যেতে পারেন, তার জন্য চন্দ্রবিন্দুর ব্যবহার মানায় না। যদিও অমৃত কুণ্ডুর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য কিছু স্বপক্ষ যুক্তি ছিল। কিন্তু সেসব বিশেষ ধোপে টেকেনি। অনঙ্গ সেন তখন যে খুব ছোট। এমনটাও তো নয়। হায়ার সেকেন্ডারি দিয়েছেন, এমন সময়টায় কিছু বিচারবোধ ও বুদ্ধি তাকে সেই সময় থেকেই বিদ্বেষের চোখে দেখতে শিখিয়েছিল। অনঙ্গ সেনের বাড়ির পাশেই পোড়ো হয়ে পড়েছিল দু’কামরার একটা বিনা ছাদের আধা তৈরি বাড়ি। এ-পাড়ায় বাড়ি করে এসে ইস্তক এমনটাই দেখে এসেছেন। তার শৈশব কৈশোরের অনেক স্মৃতি, ঐ পোড়ো বাড়ি ঘিরে ছিল। প্রথমে জঙ্গলে ভরা ঐ বাড়িটাকে ভয়ের চোখেই দেখতেন। একটা রোমাঞ্চকর, ভৌতিক অনুভূতি তার মধ্যে কাজ করত। রাতে কখনও ঐ বাড়ির দিকে পারতপক্ষে তাকাতেন না। তারপর একটু একটু করে বড় হবার সঙ্গে সঙ্গে কখন ঐ বাড়িটাই খেলার এবং আরও অনেক নিষিদ্ধ দুষ্কর্মের সাথী হয়ে গিয়েছিল। শৈশবে শুনেছিলেন… এ বাড়ি যাঁদের তাঁরা অত্যন্ত ধনী, তাঁদের মায়ের আদেশ বা অনুরোধে এ বাড়ি তৈরি করা শুরু হয়েছিল। শেষ বয়সে গঙ্গা স্নান করা এবং আধ্যাত্মিক পটভূমির এমন জায়গায় মৃত্যু ও শ্মশান যাত্রার জন্য এমন ভাল জায়গা আর হয় না। তাঁদের মায়ের এমন চিন্তাভাবনায়। কিন্তু পরে কোনও কারণে সেই বাড়ি আর সম্পূর্ণ করা হয়নি। যদিও সেই প্রভাবতী দেবীকে দেবীর মতোই সম্মান শ্রদ্ধা করতেন তাঁর সন্তানেরা। তবুও বাড়িটি তখন অর্ধ সমাপ্ত হয়েই রয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে কালে ভদ্রে তাঁরা আসতেন। দেখে যেতেন তাঁদের সম্পত্তি কোনওভাবে বেহাত হয়ে গেছে কিনা! কিন্তু সেসময়ে অন্যের সম্পত্তি জবর দখলের মতো মানসিকতা বোধহয় মানুষের ছিল না। অথবা ধনী ও ক্ষমতাবান মানুষের সম্পত্তি বলেই হয়ত বেহাত বা জবর দখল করার কথা কেউ-ই ভাবেনি। তাঁরা যখনই আসতেন অনঙ্গদের বাড়িতে বসেই ক্ষণিকের আতিথেয়তা গ্রহণ করতেন। অনঙ্গ সেনের এখনও মনে পড়ে, হঠাৎ একদিন সেই বাড়ির ছোট ছেলে এবং প্রভাবতী দেবী আসলেন। অন্যদিনের মতো সেদিন মুখে উচ্ছ্বাসের লেশমাত্র ছিল না। দু’চারটে কুশল বিনিময়ের পরই অনঙ্গ সেনের মাকে দেখেছিলেন ঘরের দরজা বন্ধ করে দিতে এবং নির্দেশ এসেছিল, সেই ঘরে যেন ছোটরা কেউ-ই প্রবেশ না করে। অনঙ্গদের পারিবারিক অনুশাসন অনুযায়ী সে ঘরে প্রবেশের অধিকার একমাত্র তাঁদের বাবা ছাড়া আর কারুরই ছিল না। অনেক পর দরজা খুলেছিল। সেই ছোটোকাকা এবং ঠাকুমা কিছুটা ধাতস্থ হয়ে ডেকেছিলেন অনঙ্গকে। বলেছিলেন… “অনুবাবু (ঐ আদুরে নামেই ডাকতেন ছোটো কাকা)! বাড়িটায় ভাবছি হাত দেব। তুমি একটু আমাদের পাশে থাকবে তো?”
তার পরের অংশ ইতিহাস। (চলবে)

 

 

🪔কবিতা 

 

 

 

গোলাম রববানী

পাখির মতো উড়বে মানুষ

 

হাসবে খেলবে খুব ছুটোছুটি করবে মানুষ
দুঃখ সুখে আনন্দ উল্লাসে
পাখিদের মতো ঝাঁকবেঁধে উড়বে এক আকাশে

তাও ভাগাভাগি করছে পৈতৃক সম্পত্তি ভেবেই
শরিক ফাঁকি দেবার মতো বিক্রি করছে নয়া দালাল ধরে

পাখিরা তবুও উড়তে উড়তে ভাঙছে শক্তিভর দেয়া ডানা
মুক্ত পথ পথ খাচ্ছে পায়ের শক্ত মাটির ভূমি
সকালে সন্ধেয় দিনে দিনে পশুবৃত্তিই ফলবে এখানে

বাউন্ডারি বাউণ্ডুলে হলে সৎসংসার হয় দীর্ঘ পরিসর
পাতাল হয় মুক্ত আকাশ
সেখানে পাখির মতো উড়বে মানুষ বলাকা দলবেঁধে বেঁধে

তবু আশায় বাঁধি খেলাঘর
তাই বসে বসে মুক্তির গান গাই

 

 

হামিদুল ইসলাম

চোখ

 

মাথায় রেখেছি ঘর্মাক্ত সাগর
চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ছে ঘাম

ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সভ্যতা
আজও বুকের ভেতর হিরোসীমার দুরন্ত আস্ফালন

তবু তোমায় খুঁজি
জানি হিরোসীমা তোমাকে ছোঁয়নি
নাগাসাকি তোমাকে পোড়াতে পারেনি
আমাদের ভালোবাসা অক্ষত হাজার বিস্ফোরণের ভেতর

ভালোবাসা আগুনে পোড়ে না
আগুন পোড়াতে না তোমার প্ৰিয় মুখ

চোখের ভেতর চোখ
চোখের ভেতর প্রেয়সী বাংলা
বাংলার বুকে আমি আঁকি তোমারই প্ৰিয় চোখ

 

তোমাকে ছাড়া

 

কথানগরে ভাসে কথা
কথানগরে নিত্য ভালোবাসার আগুন
আগুনে হাত রাখি। দেখি মৃত্যু কতো কঠিন

মৃত্যু আসে মৃত্যু যায়
আমি বারবার ফিরে আসি তোমার মায়ায়
তোমাকে দেখি
বারবার দেখি
তোমাকে দেখে কেনো যে আজও মেটে না আশ

তোমার চুলে গুঁজে দিই রোদ
দুপুর পুড়তে পুড়তে ফিরে যায় অন্দরমহলে
আমি দাঁড়িয়ে থাকি তোমার ছায়ায়
স্বস্তির শ্বাস নিই বারবার

তুমি জীবন তুমি মরণ
তুমি সাথী। তোমাকে ছাড়া বৃথা এ জীবন

 

কষ্ট

 

কথা ছিলো আসবে
তোমার জন্যে সাজিয়ে রেখেছি রাত
তুলসীতলায় উস্কে দিয়েছি প্রদীপ
ফুলদানিতে তুলে রেখেছি এক আকাশ ভালোবাসা

অপেক্ষা। কেবল অপেক্ষা
অপেক্ষা দিনরাত। অপেক্ষা সারা জীবন

তুমি এলে না
উস্কানো প্রদীপ নিভে গেলো
রাত পেরিয়ে ফিরে এলো সকাল
ফুলদানিতে ভালোবাসা শুকিয়ে হলো কাঠ

আমি জানি ভালোবাসার নাম অপেক্ষা
ভালোবাসার নাম কষ্ট
যাকে ভালোবাসি সে বড়ো কষ্ট দেয়

তবু তোমাকে ভালোবাসি। তোমার কষ্টগুলো তুলে রাখি বুকের ভেতর

 

 

 

 

ফটিক চৌধুরী 

ঝড়

 

ঝড়ের পূর্বাভাস ধরা পড়ে রাডারে
মনের ঝড়?
চলে আসে অকস্মাৎ।

তুমি যখন ঝড় তুলে আসো
ধুলো নয়, লাবণ্য ফোটে আকাশে
গাছের পাতাগুলি দুলতে থাকে সানন্দে
ফুলেরা গন্ধ ছড়ায় চারদিক।

আমার মনেও তুলে দাও ঝড়।

 

 

 

 

কাসেম আলী রানা

নেকাব

নেকাব খুলো না মেয়ে, নেকাব খুলো না
তাহলে তোমার ঐ দু’চোখ সাধারণ হয়ে যাবে!

নেকাবের ভিড়ে তোমার মৌমাছি চোখ উড়ে উড়ে,
বুকের ভেতরে মধু চুষে নেয়ার জন্য নিষ্ঠুর ভাবে হানা দেয়। ঐ চোখ দু’টো লুটেরা হানাদার।
আহা, আমিই বুঝি তার শিকার।

তোমার চোখের মহাসমুদ্রে দেখেছি যে গভীরতা, তাতে আমি কেবলই ডুবে যায়,
ডুবে ডুবে মরে যায়।মরে মরে আবার বেঁচে যায়।ভাবি, ফেরৎ যাব। ফেরৎ কি আর যেতে পারি? তোমার নেকাবি সীমানার উপর পাহারারত সর্বগ্রাসী দু’টো চোখ আমাকে ক্ষত -বিক্ষত করে, বুকের ভেতরে সব গোপন কপাটের ছিটকিনি ভেঙ্গে ফেলে।

তোমার চোখের মুক্ত দরজায় আমি কেবল একটি ঘাসফড়িং। আমাকে একবার ধরো, আবার ছাড়ো, আকাশে- বাতাসের সাথে মিলেমিশে উল্লাস করো। আর আমি তোমার ডুমুর চোখে কেবলই লুণ্ঠিত হই।
ডাকাত মেয়ে, আজ এভাবেই নেকাবে ঢেকে রাখো মুখ, গুণ্ডামি করুক তোমার রাক্ষুসী চোখ।

আমি হিমালয় পর্বতমালা থেকে অন্ধ-বন্ধ চোখে, সাধু – সন্ন্যাসী বিন্যাসে, ভজনে- মজনে সিদ্ধ করে তোমার চোখের বরফ নদীতে ফসিল হয়ে আছি।
তুমি কেঁদো না চোখ, বুকের উত্তাপে জল ফেলো না, আমি ভেসে যাবো, টাইটানিকের মতো ভেঙ্গে যাবো, তোমার দাঁতের দাগ নিয়ে আমি অন্য কোনও সাগরে ডুবে যেতে চাই না। এমন স্বর্গবাস নষ্ট করো না।
শোনো দস্যি মেয়ে, আজ দস্যিপনার শিরিষতলায় দাঁড়িয়ে তোমার দুষ্ট চোখকে বলে দাও, ওদের নজরে নজরে আমমি আজ খণ্ডিত-মণ্ডিত-লুণ্ঠিত হয়ে গেছি। শূন্য থেকে বন্য হয়ে গেছি। আমি আর ওদের তাণ্ডব দাহন থেকে বেরিয়ে আসতে চাই না।

আমি ভেলুয়া সুন্দরীর দেশে, আমির সওদাগর বেশে, মলকার প্রেমময় চম্পক নগরের আদি উৎস থেকে এসেছি,ভালোবেসেছি কনর্ফুলী, সাগরের মোহনা, আর লুসাই গিরিকা ; তোমার চোখকে ফাঁকি দিয়ে-অথচ তোমার দুটি আগুনি চোখ আমার চোখকে পুড়ে ভস্ম করে দিয়েছে, চোখহীন আমি তোমার জমিদারী চোখের দাস হয়ে গেছি।

 

 

 

মিতা দাস

আমার সাম্পান যাত্রী

 

নজরুল তুমি বার-বার এসো এই মর্তে
তোমার সাম্পান ভাঙা কিন্তু
দুঃখটা যে আমার
আমি যাই কোথায় বল
একটি অভিশাপের মত জীবন
যদি পার করা হয়
তবে বাউলের মত হাতে একতারা নিয়ে গোটা পৃথিবী ঘুরতে হবে
সুন্দর, সবল সাম্পানের খোঁজে
বিরল এই খোঁজ
ঈশ্বর যদিও বা মেলে
সরল সাম্পানের কোনো
প্রতিশ্রুতি নেই এই মর্তে

নজরুল জীবনটা যেন অভিশাপ
গলায় বিঁধে,
রুদ্ধ হয়ে আসে স্বাস
বুকে অজস্র ব্যথা
মাথা নুইয়ে রয়েছে
গাধা-ঘোড়ার দল
যদি ভেড়া হত ওরা
আর তুমি মেষপালক
লাঠির জোরে নিয়ে যেতে পারত কি?…

আমার সাম্পান যাত্রী না লয়
ভাঙা আমার তরী…
গুনগুন করে যাও কই?…

 

 

 

 

অনিন্দ্য পাল

দুখু মিঞা

 

জল তরঙ্গের শুনেছি শব্দ
খেজুর পাতার নূপুর
নুরজাহান তুমি নজরুল
কবিতার দিন দুপুর।
‘বিদ্রোহী’তে ছড়িয়ে আগুন
অনন্য হলে কবি
‘মুক্তি’ তোমার প্রথম প্রকাশ
অগ্নিবীণার ছবি।
সজনীকান্ত মোহিতলাল
কষ্ট দিয়েছে দুঃখ
কলম তোমার দিয়েছে জবাব
ভেসে গেছে জমি রুক্ষ।
দুখু মিঞা ছিলে নজর আলি
সেলাম তোমাকে সেলাম
বিদ্রোহী তুমি প্রাণের কবি
তোমার বুলবুল হয়ে এলাম।
কুসুম দুটো একইবৃন্তে আছে
বদলেছে শুধু মাটি
সুরের ডালিতে ফুটে আছ তুমি
কবিতা শীতলপাটি।

 

 

 

সুফিয়া শিউলি 

নিদারুণ বাস্তবতা 

সে পাহাড়ে মাথা রাখে
সাগরের ঢেউয়ে দোল খায় দেহ…
ফুল-পাখি-লতা-পাতার-
স্বপ্নঘুমে বিভোর থাকে তার চিত্ত!
জেগে থাকে আগুনপোড়া ঘাস
জেগে থাকে ঘুণধরা গাছ
মড়াডালে ক্লান্ত পাখি
রোদপোড়া উড়ন্ত পতাকার লাঠি!
এক নাবিকের ঘুম ভাঙার অপেক্ষায় তারা
এক যোদ্ধার স্বপ্নবিলাস ছেড়ে
জেগে ওঠার অপেক্ষায় তারা…
নতুন করে গাঢ় সবুজে-
লাল সুর্য দেখার অপেক্ষায় তারা…।

 

 

স্পর্শের কাছাকাছি

তোমাকে বলা হয়নি,
গতকাল স্পর্শের কাছাকাছি আসার
একটি চাঁদের গল্প ছিল…
চাঁদ আর জোছনার সোহাগের রাত ছিল …
জোছনায় নিজের ছায়া হারিয়ে অনেক ছায়ার-
ভাবলেশহীন মুখ ছিল।
তোমাকে বলা হয়নি…
জোছনায় ঘরহারা অনেক চোখে
ঘৃণা আর হতাসার ছবি ছিল…
হিংস্র লোভাতুর চোখে ভুতের ভয় ছিল!
তোমাকে দেখানো হয়নি…
গতকাল চাঁদ আর জোছনার তীব্র আর্কষণে
কত শত মুখের আসল স্বরূপ
ড্যাপ ড্যাপ করে ফুটে বেড়িয়ে ছিল।
তোমার সব অজানাই থেকে গেল…
প্রকৃতি না চিনলে কি জীবন জানা যায়?

 

 

🌱গল্প

 

নূপুর

বিপ্লব ভট্টাচার্য

 

 

 

_____________________________________________
বরবেশী দাদা ছুটে গিয়ে তার ঘরের দরজা খুলতে বাধ্য করে। ঘর খুলেই মেয়েটি বরের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কাঁদতে থাকে। দাদা দাদা বলে চিৎকার করে ওঠে। সবাই হতভম্ব। এসব কী?
_____________________________________________

 

তিন ছেলের পরে ঘর আলো করে বাড়িতে কন্যাসন্তান এল। সাজ সাজ রব। দাদাদের আনন্দ আর খুশিতে ধরে না। একমাত্র মামা তড়িঘড়ি ভাগ্নীর জন্য পায়ের নূপুর গড়িয়ে ভাগ্নীর মুখ দেখতে এল। একমাথা চুল নূপুরের। সবার আদরে বড়ো হতে লাগল।

বয়স যখন দুই কী তার একটু বেশি বাবার মোবাইলে গান শুনে শুনে নকল করতে থাকে। “তা তা থৈ, তা তা থৈ”। দাদারা হেসে লুটোপুটি। সারা বাড়ি পায়ের নূপুর পরে পা তুলে নাচার ভঙ্গিমা।

দেখতে দেখতে নূপুর অনেক বড়ো হয়ে গেছে। এখন সে হাই ইস্কুলের ছাত্রী। অনেক নাচে সে পারদর্শী। ঘরের আলমারি ভর্তি মেমেন্টো মেডেল। জেলা থেকে রাজ্য, রাজ্য থেকে দেশের হয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া সেই নূপুরের ঘরটা আজ বন্ধ হয়ে পরে আছে। আর খোলা হয় না। মাঝে মাঝে গভীর রাতে মা বাবা দাদারা নূপুরের শব্দ শুনতে পায়। মা ঘুম থেকে উঠে মেয়ের ঘরের দরজার সামনে গিয়ে নূপুর নূপুর বলে চিৎকার করে ওঠে। আর ওমনি নূপুরের শব্দ আবার থেমে যায়। কেন কে জানে? গভীর রাতে এক ভয়াবহ নিঃস্তব্ধতা নেমে আসে উপর তলার ডান দিকের ঘরে। বাদুর চামচিকার আনাগোনাও বন্ধ হয়ে যায়। তাই আর খোলা হয়না উপরের ডানদিকের ঘরের দরজা।

শান্ত চলাফেরা নরম চাউনির মেয়ে নূপুর কেন বিক্ষিপ্ত আনমনা হয়ে উঠেছিল বাড়ির কেউ বুঝতে পারেনি। নাচের শিক্ষককে সে নিজেই ছাড়িয়ে দিয়েছিল। তার কারণও অনেকের অজানা। নূপুর যাবার পর বাড়ির কেউ জানতেও চায়নি। একমাত্র বোনকে হারিয়ে দাদারাও যে ভেঙে পড়েছিল। স্কুলের সহপাঠীরা বিশ্বাস করতে পারেনি নূপুর চলে যেতে পারে। নূপুর চলে যাবার পরেও তার ঘর থেকে নূপুরের শব্দ আসতে থাকে।

নাচের শিক্ষকের সাথে তার কোনওদিনই কোনও অন্তরঙ্গতা গড়ে উঠেনি। সে তাকে শিক্ষক হিসাবেই পুজো করে এসেছিল। কিন্তু সেই শিক্ষক? নূপুরের সরলতার সুযোগ নিয়ে ঘরের মধ্যেই….! তার সঙ্গে অশালীন ব্যবহার করে। মুখ ফুঠে নূপুর সে সব কথা কাউকেই বলতে পারেনি। তাই একটা চিঠিতে সমস্থ জবানি লিখে গভীর রাতে ঘর থেকে বেড়িয়ে যায় নূপুর। পাঁচ ছয় দিন পরেই দূরে রেললাইনের পাশে একটা মৃতদেহ পাওয়া যায়। সেটা অবিকল নূপুরের পোশাক পরা দেহ ছিল। কিন্তু দেহ শনাক্ত করার কোনও উপায় ছিল না। মা বাবা দাদারা সেটা বোনের দেহ মনে করে সৎকার করে। সব নিয়ম কানুন সেরে নূপুরকে ভোলার চেষ্টা করে তারা। ভুলেও যায়। মায়ের অবুঝ মন বার বার গভীর রাতে মেয়ের নূপুরের শব্দে ঘুম থেকে উঠে উপর তলার বারান্দায় যায়। সে কি শুধু নূপুরের শব্দ শুনে? না কি মেয়ের ডাকে মা উঠে যায়? কেউ জানে না।

দেখতে দেখতে বড়ো দাদার শুভ বিবাহের দিন চলে এল। দাদার বিয়ে হয় নূপুরের এক কলেজ বান্ধবীর সঙ্গে বিয়ের দিন কনের পাশে আর এক সুন্দরী মেয়ে বসে আছে। কাকে দেখছে দাদা? কে ও? দূরন্ত গতিতে মেয়েটি ঘরের মধ্যে ঢুকে যায়। কিন্তু কেন? সে যে ধরা পরে গেল। দাদা মেয়েটিকে চিনতে পেরে গেছে। চারিদিকে কলরব পরে গেল। বরবেশী দাদা ছুটে গিয়ে তার ঘরের দরজা খুলতে বাধ্য করে। ঘর খুলেই মেয়েটি বরের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কাঁদতে থাকে। দাদা দাদা বলে চিৎকার করে ওঠে। সবাই হতভম্ব। এসব কী? তিন বছর ধরে নূপুর ও তার বান্ধবী সবকিছু চেপে রেখেছিল। কারণ সেই অকৃতজ্ঞ শিক্ষক এখন জেলের ভাত খাচ্ছেন। নূপুর বাবা মায়ের কাছে ক্ষমা চায়। আমি মরতে পারিনি মা। মরে যাওয়া মানে তো হেরে যাওয়া। তাই আমি তোমাদের কাছ থেকে এত বছর ধরে দূরে থেকে নিজেও খুব কষ্ট পেয়েছি। তবু আমি আমার নাচ থামিয়ে রাখিনি। এদের বাড়ির সবাই আমাকে মা বাবার আদোর দিয়ে এতদিন আগলে রেখেছিল। আমি জিতে গেছি দাদা। আমি জিতে গেছি। আমি পেরেছি। আমি যে নারী। আমি সব পারি।

 

অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক 

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

 

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment