Sasraya News

Thursday, February 13, 2025

Sasraya News Literature Special, June 2, 2024 || Issue 19 || সাশ্রয় নিউজ সাহিত্য স্পেশাল || ২ জুন ২০২৪, সংখ্যা ১৯

Listen

সম্পাদকীয়… 

 

ছম ছম করে ওঠে চারপাশ 

অনেকেই ভেবে উঠবে এ কোন নক্ষত্র? 

আবিষ্কারের শব্দ ভেঙ্গে 

আবার নতুন জন্মের সূর্যোদয়। 🌱

 

 

🪔কবিতা 

 

 

 

রেহানা বীথি

মধ্যাহ্ন অতঃপর

 

কথা ছিল
মধ্যাহ্নের ঠিক পরপরই বৃষ্টি নামবে
আর ঠিক মধ্যাহ্ন থেকেই আমরা
সাজিয়ে নিচ্ছিলাম নিজেদের

বেরোবো
বৃষ্টির জন্যে অপেক্ষা না করেই
পাহাড়ের পথ ধরবো সদলবলে

বেরোলাম
কিছু গন্ধ পেছনে ফেলে এগোতেই
ঝড়ের একটি ঝাপটা
ঝাপটা থেমে যেতেই
ঝুরঝুর বৃষ্টি

তখন আর আমাদের দাঁড়াবার সময় নেই
সময় নেই অপেক্ষাদের প্রতীক্ষায় ভিজবার

অপেক্ষা একটি দীর্ঘ শব্দ
প্রতীক্ষা আরও বেশি ভয়াবহ…

 

 

তাপস ওঝা

আবার গাছের কথা

 

 

নির্মীয়মান যন্ত্রণাটিকে ভেবেছি মধ্যরাতে
যন্ত্রণার আবছা একটা চেহারা
দেখতেও পেয়েছি,

হতে পারে সে যন্ত্রণা মোটেই আমার নয়।
এত দীর্ঘ আর জটিল যন্ত্রণা
আমার হবেই বা কেন?

এখনও গাছের কথা ভাবছি তাহলে?
সুনিশ্চিত স্থান পাওয়া সেই গাছটিকে
কেন যে ছেড়ে ছেড়ে থাকি!

 

 

 

 

ভোলা দেবনাথ

বিকেলের ল্যাম্পপোস্ট

 

অ্যাকোরিয়াম আমার এক ভুবন
ফোঁটায় ফোঁটায় অশ্রুতে
পরিপূর্ণ জীবন
চিরায়িত এক গোধূলি লগ্নে
দাঁড়িয়ে অবলোকন করি
জলাময়…

ভাঙতেই হয় যদি
দাও আবদ্ধ অশ্রুকণায়
নির্মিত ভালোবাসা
দেখতে দেখতে কাঁদবে পৃথিবী
আমি হবো পৃথিবীর
জলাশয়।

 

 

 

 

বর্ণশ্রী বকসী

বিবর্তন

 

সব মীমাংসা শেষ হলে পৌর্ণমাসী রাত থাকে নিষ্কলঙ্ক
ব্যথার ক্ষতমুখে দগদগে রক্তের দাগ দৃঢ় হলে
ধীরে ধীরে নেমে আসে আদুরে স্পর্শের অনুভূতি
বোঝা ও না বোঝার মাঝে পড়ে থাকে মান অভিমান!

তুমি যখন বলেছিলে মানুষের কথা বলো কিংবা
এঁকে যাও প্রিয়মুখ নান্দনিক সৌন্দর্যের প্রেক্ষিতে
তখন আমি ভেবেছি দুরাচারী রাতের মাদকতায়
শব্দের কিংখাব রচিত হবে অনন্ত আকাশে-

বিবর্তন তত্ত্বের আকারে জীবনের চরম বাস্তব
বিন্যস্ত আয়ুরেখা জুড়ে ছড়িয়ে যায় অক্ষয় বোধ,
বেলাভূমি ছুঁয়ে হেঁটে যাওয়া সূর্যের তেজ ক্ষীণ হয়
নিদারুণ ছবির কোলাজে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি
আকর্ষণ করে বিশ্বের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি তাই টিকে থাকা…

 

 

 

🪔ধারাবাহিক উপন্যাস 

 

মাঠে সেচ দিতে গেলে যেমন আলের মুখটা কেটে দিতে হয়, উৎসমুখটা খুলে দিলেই ঠিক সারা মাঠ জুড়ে মাটি জল পায়, তেমন করেই লেখা শুরু করতে হবে। নিয়ম করে লেখার টেবিলে কাগজ কলম খুলে বসতে হবে, তবেই লেখা গতি পাবে”। আরও একটা কথাও বলেছিলেন…”নিজের লেখায় সন্তুষ্টি যেন না আসে…”। ধারাবাহিক উপন্যাসের প্রথম পর্ব। লিখলেন : সুজিত চট্টোপাধ্যায়

 

 

অনেকটা গল্পের মতো

 

 

১.
নেকদিন প্রায় কিছুই লেখেননি অনঙ্গ সেন। ঠিক লেখেননি বললে বোধহয় সত্যের অপলাপ করা হয়ে যায়, লিখতে পারেননি। লেখালেখির জগতে তাঁর যে খুব স্বচ্ছন্দ পদচারণা এমনটাও তো নয়। নিজেকে লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা দেবার জন্য কোনওদিনই লেখেননি। বাংলা ভাষাটাকে অত্যন্ত ভালোবাসেন, তাই লেখেন। কখনও গল্প, কখনো কবিতা, রম্যরচনা যা পারেন তাই লেখেন, তবে তার মধ্যে তাঁরই চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাকে তাঁর ইজেলে তুলে নিয়ে ক্যানভাসে রূপ দেন। সেসবের পাঠকও যে প্রচুর সংখ্যক এমনটাও নয়। তবুও… মানুষের তো কতকিছুই নেশা থাকে… সিনেমা নাটক দেখা, গান শোনা।, গল্পের বই পড়া (যদিও এখন খুব কম মানুষই বই পড়েন বা পড়ার সুযোগ করে উঠতে পারেন), খারাপের দিকটা ধরলে মদ্যপান, জুয়া, লটারীর টিকিট কাটা, নিদানে দেশবিদেশের বিভিন্ন সমকালীন ঘটনা নিয়ে চায়ের দোকান গরম করে তোলা… সেসব কিছুই অনঙ্গ সেনের নেই। শুধু একটু সময় পেলেই এবং লেখার মতো বিষয় পেলে তবেই না লেখালেখি! শুধু কল্পনায় ভর করে লেখার ক্ষমতা বা ইচ্ছে কোনোটাই তাঁর নেই। আজ কদিন হোলো একটা বিষয় তাঁর মাথার মধ্যে ঘুরছে কিন্তু সেটাকে বেশ জম্পেশ করে পেশ করার ব্যাপারটা ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারছেন না। আর তাতেই তাঁর মনের মধ্যে একটা টানাপোড়েন চলছে। আজ ভাবছেন কিছু লিখবেন। নাহয় খারাপই হবে, লেখাটা ঠিক দানা বাঁধবে না। তাতে কি? উনি তো আর কোনও পত্রপত্রিকায় লেখাটা দিচ্ছেন না। তাহলে আর আপত্তি কোথায়? এই ভেবেই লিখতে বসলেন অনঙ্গ সেন। কোথায় যেন অনেককাল আগে কোনো সাহিত্য সভায় কোনো লব্ধপ্রতিষ্ঠ লেখককে বলতে শুনেছিলেন…” লিখতে হবে, লেখার চেষ্টা করতে হবে। মাঠে সেচ দিতে গেলে যেমন আলের মুখটা কেটে দিতে হয়, উৎসমুখটা খুলে দিলেই ঠিক সারা মাঠ জুড়ে মাটি জল পায়, তেমন করেই লেখা শুরু করতে হবে। নিয়ম করে লেখার টেবিলে কাগজ কলম খুলে বসতে হবে, তবেই লেখা গতি পাবে”। আরও একটা কথাও বলেছিলেন…”নিজের লেখায় সন্তুষ্টি যেন না আসে, নিজের লেখাকে যতো বেশি কাটাছেঁড়া করতে পারেন যে লেখক, তাঁর লেখা একদিন সাহিত্যের দরবারে ঠিক জায়গা করে নেবে, কারুকে জায়গা করে দিতে হবে না “। এসবই সেই ” Once upon a time “এর কথা। তখন অনঙ্গ সেন কলেজ পড়ুয়া, আর পাঁচটা বাঙালী যুবকের মতোই চোখে কবি সাহিত্যিক হবার স্বপ্ন। সেসব অনেক আগেই সংসারের মিক্সিতে পড়ে ঘেঁটে ‘ঘ’। তখন দু চারটে লিটল ম্যাগ, পাড়ার পুজোর স্যুভেনির, এরই মধ্যে সীমাবদ্ধ। নিজের লেখা পয়সা খরচ করে ছাপানোর চিন্তা দুর দিয়ে যেতো। তারপর এই এতকাল পর সোশ্যাল মিডিয়া আসায় আবার যেন ফাগুন চৈত্রের পাতা ঝরা গাছে নতুন পাতার সঞ্চার। মন্দ লাগে না অনঙ্গ সেনের। দুধের স্বাদ কিছুটা হলেও ঘোলে মেটে।
অনঙ্গ সেন প্রথম লাইনটা লিখলেন একেবারে পৌরাণিক উপাখ্যানের উপসংহারের আদলে…
“অবশেষে উহারা সুখে ও শান্তিতে ঘরসংসার করিতে লাগিলো”। 🌱 (চলবে)

 

 

 

🪔কবিতা 

 

 

 

 

রোকসানা রহমান

আবিরের উষ্ণতা

 

 

এই পৃথিবীর তমসা ঘন রাত – ঐ -দিকে চেয়ে
দেখো ধূসর পাহাড়
সেই শিখরে রাত্রিচোরা অগ্নিময় হাত।
এযেন ঝলসে,ওঠা এক প্রেতের রাজ্য।
ঐদিকে বিশাল রাত্রিবক্ষে ভালোবাসার বসন্তের কন্ঠে দামাল বাতাসের গান।
সেই ছায়া -ছায়া -আবছায়া-বাতাসে দুলছে
রাবণের ছায়া।
ওখানে স্বপ্ন নেই, চারিদিকে চেয়ে দেখো এরা বিভ্রম
কুটিলতার আধুনিক যুগের ভাড়।

এসো স্বাগত জানাাই বসন্তকে, শিউলির ঘ্রাণ নাও, স্পর্শ করো কৃষ্ণচূড়ার লাল আবিরের উষ্ণতা।
সেখানে পাখিরা গান গাইছে, নদী বয়ে যায়
আপন খেয়ালে, হরিণীরা মাতোয়ারা।
কি বিচিত্র এই রুপ কি বিশাল সূর্যের মহান আলো
কখনোবা গ্রিস্মের আকাশে নক্ষত্রের আলোক স্তম্ভ।
সেখানে আছেন মহান সত্তার অবারিত হৃদয়
বিচ্ছুরিত দ্যুত,স্বার্থহীন সমাজ।

 

 

একের ভিতরে দুই নতুন

 

আমি হাঁটছি, একা ভীষণ একা
হঠাৎ অনুভব করি,আমার ভিতরে
আর একজন হাঁটছে…!
আমার, ভিতরে, কি অন্য আমি
চারিদিকে প্রকৃতির সৌন্দর্যে
যখন মুগ্ধ নয়ন মেলে দেখি
সেও দেখে, হাসে,
আমার ভিতরে আনন্দে ডানা ঝাপটায়।
আমি তাকে ডাকি, তখন নড়েচড়ে
জানায় সে আছে, কিন্ত নির্বাক।
তবু সে হাঁটে, কবিতার পঙতিগুলো
সুপ্ত বাসনায় আমার ওষ্ঠেই পাঠ করে
নদী,গাছ পাতাদের সংগীতে।
ঘাসের উপর মৃদু পায়ে হাঁটে
ঘাসেরা যেন তার পায়ের ভারে
কষ্ট না পায়।
আমি ডাকি, একের ভিতরে দুই
এই তুমিটা কি একই আমি…!
তখনই আত্মায় শিহরণ জাগলো
আমার ভিতরে এক তারুণ্যের পঙতিমালা
তখন আবার আমি তাকে নিয়েই
হাঁটতে থাকি, আর প্রশ্ন করি- ইউনিভার্স তোমাকে ?
পৃথিবীতে এই প্রথম নিদিষ্ট সময়ে আবার
আমাকে আমার কাছেই ফিরিয়ে দিলে
অপার আলোর সন্ধানে।

 

 

 

 

বিশ্বজিৎ মণ্ডল

অশুভ মোমবাতি

 

 

অনির্বাণ নয়, তবুও উদাসীন জ্বলছে মোমবাতিটা

আরো কিছুক্ষণ নাকি এভাবেই জ্বলবে
কিছু আগুন খেকো পতঙ্গ উড়ছে,চারপাশ…
কিছু অর্জিত লম্ফনে এঁকে ফেলবে-
প্রসন্ন কঙ্কাল

আমি তো পরগাছা, শমীবৃক্ষের ছায়া মাপতে মাপতে
ভুলে যাচ্ছি- আমার সমীচিন চৌহদ্দি

হাতে তুলে নিই- খ্যাতনামা মোমবাতিটা
এইবার শুরু হবে, গলনপর্ব…
অনিন্দ্য ভৌত পরিবর্তনের হা হু ইতিহাস

 

 

অধ্যয়ন

 

 

কৃত্তিবাসি রামায়ণ পড়িনি কখনও…

পড়িনি, দুর্মুখ রাবণের অলীক চাতুরির ছল
চোদ্দ বছরের অন্ধকারের জ্বলে ওঠা অসংযত আগুনে
মেপেছি, আমার অস্থির দিনকাল

মেঘ মল্লার ভেঙে প্রতিদিন মাথার ওপর ঝরে পড়ে
অশুচি ফুল
আর আমি স্যাটানিক ভার্সেসের অপ্রসন্ন উক্তি এঁকে
মেনেছি- অভাবের প্রাচীন পাঠ…

 

 

 

 

দেবীপ্রসাদ বটব্যাল

আমি কিন্তু হীরের গোলাম

 

 

শালবনের কোনো আধারকার্ড নেই
শরীর’ফাটা আঠায় গৃহস্থের পেঁচামুখী সুখ
জুলজুল চোখের আঠায় চিটচিটে ক্যাকোফনি।
অদূরেই জীবনের ইতিহাসে জলচর…
হয়তো কখনো ভেসেছিল আকাশযান।
উড়ে গেছে, কেঁদপাতা সরণী জুড়ে
বছর শেষে মুরগির ছাল ছাড়িয়ে
ঝরা পাতায় শোক নেমে আসে উদ্দাম
‘বিট্টুওয়া কে পাপা শুনো- ঢপ্ ঢপ্ ঢপ্’
সাথে দেদার ফুর্তির উদোম ঢেকুরে আমোদ
চুম-আবদ্ধ যুবক যুবতী দুটি ভ্রমের অভ্রান্ত থাবায়
ষোলো সংখ্যার প্রামাণ্য তুরুপ হয়
‘পেয়ার’ ভেঙে এ গেম জিততেই হবে
মনে আছে তো কালো’পান বিবি?
আমি কিন্তু হীরের গোলাম।

 

 

 

 

মমতা রায় চৌধুরী

সেইসব অনুভূতি

 

 

স্মৃতি সরণী বেয়ে মন পানসি পাড়ি দেয়
লোডশেডিং এ বসে মা ঠাকুমার কাছে
একটু গড়িয়ে নেওয়া খাট থেকে মেঝেতে মাদুরে
,কখনো বা উঠোনের শীতল পাটিতে ফাঁকিবাজি পড়াশোনা আকাশের অগুনতি তারা গুনতে।
মন ধেয়ে চলে গরমের ছুটিতে মামার বাড়িতে
আচারের ব্য়ামে চুরির গন্ধে বুকের ধূপপোকানি গোয়েন্দা মায়ের অনুশাসন আজও মন কাড়ে ।

গরমের বিকেলে দুধ বরফে তৃপ্তি এক বুক হিমালয় আনন্দ।
কখনো মামাবাড়ির ছাদ যেন তেপান্তরে পাড়ি দেওয়া, ডুব সাঁতারে হাঁসেদের সাথে পুকুর সাঁতরে এপার ওপার হওয়া।
আম কুড়ানো বিকেলের উষসী দিনগুলি আজ ধূসর কল্পনায় শুধু ছবি আঁকা নির্বিকারে ছুটে বেড়ানো এর ওর হাত ধরে।
আজ আর নেই সেই দিনগুলি, আছে শুধু-
সেই বিকেল, আছে গরমের ছুটি, আছে সেই
ছাদ।
শুধু নেই সেই সব দিনের যাপিত ভালবাসা।
হাজার চেষ্টায় পারি না ফিরতে সেই দুপুরের গোপন রাজ্যে বা বিকেলের ফেলে আসা স্বর্ণালী অনুভূতির স্বাদে।

 

 

 

 

অসীম দাস

পৃথিবীর প্রসন্ন প্রশ্রয়ে

 

 

ফুটে ফুটে ফুটে অভিজ্ঞ ফল হয়ে গেছি।
আবারও কি ফিরে ফিরে
ফুটিফুটি ফুল হতে পারি?
কে পোড়াবে প্রিয় প্রিয় সংগ্রামী স্মৃতির প্রচ্ছদ?
আমারই শ্বাসের রসে চনমনে
জাতকের মর্হাঘ্য মাটি।

পৃথিবীর প্রসন্ন প্রশ্রয়ে
পেয়েছি চাটাই- পাতা পাঠশালা জুড়ে জুড়ে
কবিতার বর্ণবেগে শংসার মঞ্চে উড়ান।
এতো এতো শ্রমিক রাত্রির ঘুম
ধিকিধিকি পান করে করে
বিষন্ন হয়েছে দিন কাঁচা কাঁচা ফসলের জ্বরে।

তবুও তো অধমর্ণ ঋণ জমা রয়েছে শেকড়ে।

অরণি আটকে আছি নক্ষত্রমণ্ডলে।

বলো কবি, এতোটা দূরত্ব কেটে
কিভাবে ফোটাবো চোখে ফুটিফুটি ফোটার সম্মতি!

 

 

 

 

রুমানা আকতার

ফিরতি পথ

 

তুমি আমি
আমাদের স্বপ্নরা
হেঁটে গেল দূর বহুদূর…

তারপর…!
তারপর, ফিরতি পথে
তুমি পথ ভুলে হাঁটতে
আর-
আমি এক আকাশ শূন্যতা নিয়ে,
ফিরে এলাম।
আর তুমি মিশে গেলে নিয়ণ আলোর,
রেখার ওপারে…
যেখানে শুধুই অন্ধকার।

 

 

 

 

গোলাম কবির

টুকরো টুকরো ব্যথার ঝাঁপি

 

 

১.
আজকাল প্রায়ই আয়না
দেখতে গিয়ে ভেঙে ফেলি!
নিজের ওপরই খুব ঘৃণা হয়,
এই তাহলে সেই আমি!

 

২.

মানুষ কেমন তা দেখার জন্য কতো

ভাবেই না আগ্রহভরে দেখতে চাইলাম, দেখলাম কতো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে!
নিজেকে কী কখনো দেখতে পারলাম?

 

৩.

কখনো নিজের ভিতরেই
ঘটে যায় মহাপ্রলয়,
তীব্র প্রলয় শেষে দেখি
আমিও প্রকৃত মানুষ নয়!

 

৪.

কথা তো কতোই বলে যাই সারাদিন
ভেবেছি কী কয়টা কথা, কথা হয়?
অথচ নীরব থেকেও
হাজারো মূল্যবান কথা বলা যায়!

 

৫.

শূন্য হাতে এসেছিলাম সবাই
আবার চলেও যাবো শূন্য হাতেই!
তবে মিছেমিছি এই মুসাফিরের জীবন
সাজাতে কিসের এতো আয়োজন,
কেনো এতো উৎসবে মেতে থাকা!

 

 

 

 

আকলিমা আঁখি

ঝিলাম নদীর স্রোত

 

 

দিন আর রাতের কাজে পার্থক্য থাকলে
তাতে আমার কি আসে যায়!
আমি তো একটি কাজই করি-
তাঁকে খোঁজা।
তেতে থাকা হৃদয় বাগে লাল গোলাপ ফুটাই
তাঁর সুবাসে মজে থাকা আমার রাত -দিন একাকার।

সে যেন দিনের মরীচিকা;
কামনার রক্তে রাঙা মরুতৃষ্ণা।
সে যেন রাতের আলেয়া;

বাসনার বিষে জর্জরিত নীল মায়া।

সে যাই হোক,আমার চন্দ্র-সূর্য আজ তোলপাড়।
তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে, ভালোবাসতে বাসতে
আমার মরা নদীতে বান ডাকে তুলে বেদনার সুর।

আজও যে সুরে হাব্বা খাতুন
ঝিলাম নদীর স্রোতে ব্যথাতুর ছন্দে
জিকির করেন ইউসুফ, ইউসুফ।

 

 

 

 

উত্তম চৌধুরী

চোখের বিস্তার

 

এক আগুনের হাত ধরে শহরে নেমেছি-
যে আমাকে জলে জলে হাঁটিয়ে নিয়ে
বাঁধভাঙা নদীর মুখে দাঁড়িয়ে রাখল।

এক উড়ন্ত সময় ধরে ঘর ছেড়ে বাইরে এসেছি—
যে আমাকে বাতাসে উড়িয়ে ঘুরিয়ে
টিলাগাছের মগডালে ঝুলিয়ে রাখল।

ক্রমশ দৃশ্যমান সবদিক-
মন ও মনন থেকে উঠে আসছে বোধভাষ্য।
প্রকাশ্য দিনের কাছে
খোলা আকাশের মতো চোখ ও চোখের পরিধি।

 

 

যতন কুমার দেবনাথ

বনমালী বাবু

 

মানুষের মন মান্ধাতা আমল
বিতর্ক নয়
আপোষের ঘানিতে মাথা পিষে বুদ্ধি বাড়াও

বাইক চালিয়ে বাতাস ধরা?
শক্ত করো হাত

হাইবারনেশন ভেঙে উঠে এসো
সময়ের আয়নায় নিজেকে মেলাও
মালীই আজ বনমালী বাবু।

 

 

 

 

শর্মিষ্ঠা ঘোষ

আকাশ

 

 

সামিয়ানা পেরলেই আকাশ দেখা যাবে
দিদিভাই কবেই শিখিয়ে দিয়েছিল বিপ্রতীপ
আমাদের নিজস্ব গাছপালা
উঠোনের বারোমেসে ফুল
গোড়ায় নিরানি দিতে দিতে মাথাই তুলি না
কেউ কেউ দরাজ দিওয়ানা
কোন এক মাহেন্দ্রক্ষণে সে যেন আবির্ভাব
তালমিলে নিবেদনে সেইসব কুড়োনো বকুল
দেবতা রুষ্ঠ হলে বুঝি সে আমার নয়
আমাদের সামিয়ানা আমাদের আমাদেরই বটে
গন্ধ লেগে আছে লৌকিক স্হির বিশ্বাস
আর কোন পরাভূত পুতুলও জোটেনা
সুতরাং আকাশও দেখিনি
দিদিভাই বলে যাবে, আমি কি বুঝেছি?
কতটুকু ঠিক?
ভীড়ভাড়ে ডিঙি মেরে নিজেকে খুঁজিনা
সেই থেকে কোনদিন
মাঝে মাঝে মনে হয় অর্ধেক শুনেছি আমি
জন্মের আগে বাকিটা হারায় বলে
অভিমন্যু সিনড্রোমে আকাশ দেখি না

 

 

 

 

 

🪔গল্প 

 

 

এ জগত প্রকৃতির নয়! না হলে মেয়ে ছেলের পছন্দে বিয়ে হয় না! পছন্দ করেই তো কত্তো পশু…! অক থু! পশুদের সঙ্গে মানুষের তুলনা! কেন তুলনা নয় শুনি! ট্রামে বাসে ট্রেনে রাস্তা-ঘাটে সব জায়গায় পশুরা তো আর রড কারবার করে না! মানুষে করে! তাই পশু প্রকৃতির দান! তাহলে মানুষ নামক জন্তুটি কিসের দান!

লিখেছেন : দেবব্রত সরকার

 

 

বিজ্ঞাপন

 

 

মার বিয়ের জন্য মা একটা ভালো মেয়ের সমন্ধ খুঁজছেন! সে ঘরোয়া হবে আত্মীয় পরিজনের মাঝে নক্ষত্র হবে, জলের মধ্যে মাছ হবে, ডাঙায় মানুষ হবে
আর রূপের কাছে আস্ত এক মানবিক! খুঁজতে খুঁজতে মা এখন ক্লান্ত! যেখানেই যায় ডাঙায় মানুষ পায় কিন্তু তার রাইফেলধারী আছে!
জলে মাছ হতে পারে কিন্তু সমস্ত জলই খেয়ে নেয়! রূপ আছে তাও সোস্যাল মিডিয়ায় বিক্রি করে! এ সমস্ত দেখতে দেখতে মা আমার ক্লান্ত! মেয়ের পরিবার চান সরকারি অফিসার, নয় তো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কিংবা প্রফেসর আরও অনেক কিছু! কিন্তু এগুলির একটিও নয়! কবিতা গল্প উপন্যাস লিখতে গিয়ে কাঁটার খোঁচা খেতে খেতে এখন কোণঠাসা! মেয়ের বাবা শুনলেই বলে আস্ত পাগলের সাথে বিয়ে দেব না! জেনে শুনে বিষ পান কেই বা করবেন বলুনতো? তাই আর সমন্দ টমন্দ এখন বলহরি হরি বল্! মা-বাবা অসুস্থ, আর আমিও বেকার, হ্যাঁ ঠেলে গুজে এমএ পড়া! বেসরকারী ভালো মাইনের চাকর ছিলুম বটে কিন্তু মালিক পক্ষকে মেনে নিতে পারিনি! ছেড়ে ছুঁড়ে ওই কবিতা গল্প উপন্যাস! তাঁতীর তাঁত বোনার মতই আর কি! শিল্পী বটে দাম নেই ! মহাজন কিনে নিয়ে গিয়ে চড়া দামে শোরুম করে বিক্রি করেন! বেশ মজাও হয়! তাঁতির আত্মীয় পরিজন কিনে এনে পড়েন! তাঁতির ভালই লাগে! লাভ সে না হলো তো আর কি! নিজেরই তো লোক পড়ছে! লেখা গুলিও তাঁতির পর্যায়!
তাহলে কোন মানুষ এই ভুল কাজ করবে বলুন তো! বেকার ছেলেকে সকার করতে কোনদিন শোনা গেছে যে মেয়ের বাবা ব্যবসা কিংবা ড্যাশ ড্যাশ করে দিয়েছেন! কিন্তু সে চাকুরীজীবী হলেই মুখে বলতেই হয় না! কোথা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা দিয়ে মেয়ে বিদায় হয়! মেয়েরও গর্ব হয়! কথায় আছে জলেই জল দাঁড়ায়! কিন্তু ছয়-মাস, দুঃ বছর যেতে না যেতেই তার মধ্যেই মেয়ে আবার বাপের ঘরে! এ দৃশ্য ভালো লাগে না! কিন্তু সকলের কাছে ভারি মজার!
এ জগত প্রকৃতির নয়! না হলে মেয়ে ছেলের পছন্দে বিয়ে হয় না! পছন্দ করেই তো কত্তো পশু…! অক থু! পশুদের সঙ্গে মানুষের তুলনা! কেন তুলনা নয় শুনি! ট্রামে বাসে ট্রেনে রাস্তা-ঘাটে সব জায়গায় পশুরা তো আর রড কারবার করে না! মানুষে করে! তাই পশু প্রকৃতির দান! তাহলে মানুষ নামক জন্তুটি কিসের দান! এ বড়ই বিস্ময়! যত ঘাঁটব তত্ ঘাঁটবে! যত বলবো তত্ শুনবে! যতো লিখবো তত্ পড়বে! এদের নিয়েও ভারি বিপদ! আর পদে পদে বিপদ তৈরি করতেও ছাড়বে না! যাইহোক যা নিয়ে ছিলাম তা হলো আমার বিয়ে! আমার আত্মীয় পরিজন পিছু হটেছে! মা এবং বাবা ক্লান্ত! বাপের একটিই ছেলে একটু আধটু জমি ফমি আছে আর কি! মেয়ে অন্ন পাবে গলা পর্যন্ত! বস্ত্র পাবে নখ পর্যন্ত! গহনাও পাবে গা ভর্তি! তবে অভাবটা কি? ওই যে ছেলে লেখে টেকে আর কি! বড্ডো বাজে কাজ মেয়ের বাবা বড়াই করে বলতে পারবেন না আমার জামায় ডাক্তার / ইঞ্জিনিয়ার / সরকারি চাকুরীজীবী ড্যাশ ড্যাশ ড্যাশ! তাই আমার কিচ্ছুই নেই আছে পেন আর সাদা কাগজ! মেয়ে ভরসা করে আসতে পারলে আসবে নইলে আসবেন না!
তাই আমিও একটি ভালো মেয়ের সন্ধান করছিলাম! দাবিহীন মেয়ে! সে আমাকে কিচ্ছুই চাইবে না- সিঁদুর, পোশাক-আশাক, কাঁথা, খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা, এমন কি সিকিউরিটি!
শুধু চাইবে একটুকরো মানুষ! 🌱

 

 

 

অলঙ্করণ : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

 

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment