Sasraya News

Saturday, February 15, 2025

Sasraya News, Literature Special, Issue 17, May 19, 2024 ★ সাশ্রয় নিউজ, সাহিত্য স্পেশাল। সংখ্যা ১৭। মে ১৯, ২০২৪

Listen

সম্পাদকীয়ের পরিবর্তে 

১৯ মে, বরাকের ভাষা শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা…

 

 

 

 

🍁কবিতা 

 

 

 

 

অরুনাভ ভৌমিক 

১৯ শে  মে

 

 

১.

রাতের আকাশে ঘুসঘুসে জ্বর

মাটীতে ফলেছে ভাষা

শুশ্রুষা সবুজ, কবিতা সামান্য তস্কর

জলজ কলঙ্ক ফসল

একটা পা খুঁজে বেড়াচ্ছে বৃষ্টি

স্তম্ভিত নিঃস্ব ভ্রান্তি

ভৃঙ্গারে ঢাকা কৃষ্টি!

২.

ফুলে ঢেকেছে আজ গাছ। আমাদের শহরে

ফুলে ঢেকেছে আজ গাছ। আমাদের শহরে

আমি দেখি। আমি দেখি। দেখতে দেখতে

বেশ কেমন কেটে যায় বেলা

আমাদের ভাষার শহরে…!

 

 

 

দেবলীনা সেনগুপ্ত 

উনিশ

 

কেমন ছিল সেই দিন!
বাতাসে কোন আশ্চর্য গন্ধ
আকাশে রহস্যলিপি
অথবা নিতান্তই সাধারণ, ঘটনাবিহীন।
সহজিয়া গেরস্থের নুন-ভাত জীবন
একবগ্গা ঘুরে চলেছিল সময়ের চাকায়
হঠাৎ চঞ্চল কোন মূক প্রাণ,
নিয়মভাঙার অধিকারে
বলেছিল কথা,গেয়ে উঠেছিল গান
আগুনের ফুলকি ফোটে বুকে
মুখে তবু প্রত্যয়ী স্বর
সেই ক্ষণ থেকে উনিশ অবিনশ্বর।

 

 

 

🍁গল্প 

 

 

মমতা রায় চৌধুরী

এক মেঘলা বিকেলের গল্প 

 

পূর্ব নাগরিক সভ্যতার ছ’তলা অফিসের এসি রুমে বসে কাজ করছিল। আর হিমশীতল ঠাণ্ডা ঘরে সারা দিনের উত্তপ্ত ঝাঁঝালো রোদের তেজ কেমন হচ্ছে মনে মনে কল্পনা করে নিচ্ছিল। যতক্ষণ অফিসে থাকে ততক্ষণ অপূর্বর ভালই লাগে। শুধু গরমের জন্যই যে তার অফিসে থাকতে ভাল লাগে এসি রুমে তা নয় আসলে বাড়ির প্রতিও একটা আলাদা টান সে কত আগেই চলে গেছে। তবুও মেয়েটার জন্য তিরতির করে বয়ে যায় একটা মেঘলা আকাশে হঠাৎ করে রোদের ছটা। কিংবা মরা গাঙে বর্ষার ঢেউ। অফিস থেকে বেরিয়ে আবার সেই প্যাচপ্যাচে ঘাম আর প্রাণ ওষ্ঠাগত গরম ভাবতেই এক বুক কষ্টগুলো দলা পাকিয়ে ঊঠতে লাগল। তবুও তাকে বেরতেই হবে কিন্তু অফিস থেকে বেরতেই দেখল আকাশটা, ঘণ মেঘ ছড়িয়ে আছে। সে ভাবল, আজকে কিছুটা এই শহরের বুকে হেঁটে হেঁটে আজকে মেঘলা আকাশের ঘ্রাণ নিজের স্নায়ুতে ভরে নেবে। তারপর সত্যি সত্যিই সে যখন লিফট থেকে নেমে গাড়ি না ধরে হাঁটা পথ ধরল তখন অনেকেই অবাক হল। অপূর্ব নিজে একটু ভেবে নিল, বাকি দের মুখগুলো সকলেই যে অপূর্বর দিকেই চেয়ে আছে, সেটা তার বুঝতে অসুবিধা হল না। কিন্তু অপূর্ব কোনও কিছুকে তোয়াক্কা না করেই আজকে এই মেঘলা বিকেলের স্বাদটা নিতে চাইল।

 

 

_____________________________________________

অফিস থেকে বেরিয়ে হন হন করে হাঁটতে থাকে যেন আজকে নেশায় পেয়েছে গায়ে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যেন আরও তাকে পাগল করে তুলেছে। রক্তের ভেতরে গিয়ে ঝড় তুলেছে। তাকে আজ তাড়াতাড়ি পৌঁছাতেই হবে।

_____________________________________________

 

 

হাঁটতে হাঁটতে তার মন চলে গেল সেদিনের যাপিত দিনে। হঠাৎ করেই তার মনে নাড়া দিল, আরতির কথা। সে ভাবল, বাড়িতে গিয়ে আরতির রোজকারের
অসুস্থতা আজকাল কেমন যেন অসহ্য লাগে। বাড়িতে গিয়ে একটু মানসিক শান্তি পাবে সে উপায় নেই। মেয়েটাও তেমন হয়েছে মায়ের মত। আরতি কী কোনওদিনই আর সুস্থ হবে না? এত ডাক্তার দেখানো হল, তারপরেও ওর ভেতরের অসুখটা আর দূর করা গেল না। বেশ তো দিব্যি সংসার করছিল হঠাৎ এরকম কেন হল সেদিনও ছিল এক মেঘলা বিকেল অপূর্ব নিজের ড্রয়িং রুমে বসে মন্দিরার চিঠিগুলো নাড়াচাড়া করছিল হাতে সিগারেট, ধোঁয়ার পর ধোঁয়া ছাড়ছিল। একটা মধুর সুখ যাপন করছিল মনে মনে। কখন যে আরতি রুমে ঢুকেছে অপূর্ব খেয়াল করতে পারে নি। চিঠিগুলো টেবিলের ওপর রাখা ছিল জানলার ধারে দাঁড়িয়ে অপূর্ব মন্দিরার ধ্যান করছিল। আজও মনে পড়ে এ রকমই এক মিষ্টি মেঘলা বিকেলে অপূর্ব মন্দিরা এক হয়েছিল সেদিনও ছিল সরস্বতী পূজার দিন দেখা হয়েছিল ওদের একটা বন্ধুদের বাড়িতে সকলে মিলে সেদিন মিট করেছিল।  আর অপূর্ব মন্দিরার ব্যাপারটা অনেকেই জানত। তাই নিশা সেদিন একটু আলাদা স্পেস দিয়েছিল ওদের জন্য। এই আলাদা আধঘন্টার স্পেসটুকুই সারাটা জীবন অপূর্বর মনে দাগ কেটে রইল। কেন মন্দিরাকে অপূর্ব পেলো না আজও ভেবে পায় না। ও তো ভাল  চাকরি করছে। তাহলে কেন মন্দিরা অপূর্বর সঙ্গে ঘর করল না? কি দোষ ছিল অপূর্ব? অথচ মন্দিরা কি করে পারল! তাদের সেই নিবিড় একাত্মতা আজও মনে করলে যেন এই পঞ্চাশ বছরের জীবনে সেই যৌবন ফিরে আসে বারবার। বৃষ্টি ভেজা সেই সন্ধ্যার আলাদা একটা সোঁদামাটির গন্ধের সঙ্গে মন্দিরার সেই চুলের গন্ধ তার বুকের কাছে একান্তে আসা উত্তপ্ত নিশ্বাসগুলো তাকে যেন আরও বেশি পাগল করে দিয়েছিল। আজও আজও পাগল করে অপূর্বকে তাই হয়তো আরতিকে তার জীবনের পুরোটা দিতে পারে নি। সবই হয়েছে, তাদের সন্তান হয়েছে কিন্তু তারপরেও কোথায় যেন একটা ফাঁক রয়ে গেছে। কোথায় যেন একটা খামতি অনুভব করে। তাহলে কি মন্দিরার ও এরকম হয়? এসব ভাবতে ভাবতেই কখন যে আরতি মন্দিরার চিঠিগুলো নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে গেছে বুঝতেই পারেনি। যখন মেঘলা বিকেলে সরিয়ে সন্ধ্যা নামল, বৃষ্টি আসলো ঝাঁপিয়ে, জানলার কপাটগুলো দরাম ধরাম আওয়াজ করে এক ঝটকায় বৃষ্টির ছাট কিছুটা চোখে মুখে এসে লাগল। অপূর্বর তখন ধ্যান ভাঙে। টেবিলের কাছে আসতেই দেখে চিঠিপত্রগুলো উধাও। এই বৃষ্টির ছাট চোখে মুখে লেগে একটা যে সতেজ ভাব এসেছিল সেটা কেটে গিয়ে নিমেষের মধ্যেই কেমন অপূর্ব যেন ঘামতে শুরু করে দিল। তাহলে তার চিঠিগুলো কোথায় গেল? তবে কি আরতি তার রুমে ঢুকে ছিল। ওই চিঠিগুলো তার জীবনের সেরা মূল্যবান জিনিসগুলো আজ আরতির কাছে ভাবতে ভাবতেই সে চলে যায় আরতির কাছে, সেখানে গিয়ে দেখতে পায় মনের ভেতরে যে সন্দেহের দিকটা দানা বেঁধেছিল সেটাই সত্যি। অপূর্ব ঘরে ঢুকে আরতির মুখের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল যা সর্বনাশ সবার হয়ে গেছে। তাদের দাম্পত্য জীবনের এই এক নতুন ঝড় আসতে চলেছে। সেই ঝড় অপূর্বকে ভেঙে খান খান করে দেবে নাকি! অপূর্ব অনেক করে বোঝানোর চেষ্টা করল। শুধু আরতী বলল, “বিশ্বাসঘাতক তোমার মনের মানুষ রয়েছে মনের ভেতরে আর আমাকে তাই তুমি কখনও তোমার যোগ্য মনে করনি।”
“বিশ্বাস করো সেরকম কিছু নয় হ্যাঁ, মন্দিরার সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সেটা তো অতীত। আজ তুমি বর্তমান।”
“আর এই জন্যই বুঝি আজ এই বৃষ্টির দিনে তার কথা বেশি করে তোমার মনে পড়ছে।
তাই তুমি নিভৃতে একান্তে যাপন করছিলে…? আজ আমি অসুস্থ তুমি আমার কাছে একটুও সময় কাটাতে পার না।”
“না, না,না আরতি তুমি ভুল বুঝ না আমায়।”
অপূর্ব আরতির কাছে যেতে আরতির হাতের কাছে ছিল চায়ের কাপ ছুঁড়ে মারল। অপূর্বর কপাল ফেটে রক্ত পরতে লাগল।”
আরতি উল্লাসে হাসতে শুরু করল। আর হাততালি দিয়ে বলতে লাগল, “বেশ হয়েছে। বেশ হয়েছে।”
অপূর্ব আরতির এই কথা চালাচালি কানে পৌঁছাল মিঠুদির। মিঠুদি দৌড়ে এসে বলল, “কী হয়েছে? দাদা বৌদি তোমরা এত চেঁচাচ্ছ কেন? কি সর্বনাশ দাদার কপাল ফেটে যে রক্ত পড়ছে।” আরতির মুখের দিকে তাকিয়ে বলল “বৌদি, তোমার মাথাটা কী একদমই গেছে!”
মিঠুদি তাড়াতাড়ি ঘরে গিয়ে তুলো এনে রক্তটা পরিষ্কার করে অপূর্বর হাতটা ধরে নিয়ে গিয়ে বসাল। তারপর একটা ব্যান্ড এইড লাগিয়ে দিল।
“ভাগ্যিস চোখে লাগেনি। দাদা আমাদের ফ্যামিলি ডাক্তার কে খবর দেব?”
“না না মিঠু দি, ওসবের কোনও দরকার নেই।”
অপূর্ব দেখল, তাঁদের এই মিষ্টি সম্পর্কটা নিয়ে আরও দশ জনের ঘাটাঘাটি করুক এটা সে চায় না।
“ঠিক আছে তুমি তোমার কাজ করো গে।”
মিঠুদি আজ ১০ বছর কাজ করছে তাই এ বাড়ির সব কিছুই নখদর্পণে। অপূর্ব শুধু বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগল, এত সুন্দর একটা স্মৃতি এভাবে আজও রক্তাক্ত হতে হয় বেদনায় আঘাতে আঘাতে। যেন আরও বেশি আপন হতে চায়। অফিস থেকে বেরিয়ে হন হন করে হাঁটতে থাকে যেন আজকে নেশায় পেয়েছে গায়ে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো যেন আরও তাকে পাগল করে তুলেছে। রক্তের ভেতরে গিয়ে ঝড় তুলেছে। তাকে আজ তাড়াতাড়ি পৌঁছাতেই হবে। হ্যাঁ, হ্যাঁ, হ্যাঁ, যে করেই হোক ওই তো ওই তো মন্দিরা হাসছে, ওই তো আরতি হাতছানি দিয়ে ডাকছে, কার ইশারায় সে ছুটে চলেছে অজানা পথের দিকে। এক সময় মুষলধারে বৃষ্টি নামল জামাকাপড় ভিজে একসা হল। হুঁশ নেই ।অপূর্বর ট্রাম লাইনটা পেরিয়ে যখন মেডিকেল কলেজের দিকে এগোচ্ছে তখন এক ট্যাক্সি ড্রাইভার হর্ণ দিচ্ছে বারবার তারপর শেষ পর্যন্ত কাছে এসে বলল, “আপনার কি বাঁচার ইচ্ছে নেই।”
এতক্ষণে অপূর্বর হুশ হল, সে কোথায় যাচ্ছে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে আরতি তো সেই রাতেই তাকে ছেড়ে চিরতরে চলে গেছে। থাকার মধ্যে আছে মেয়েটি সেও তো মিঠুদি আগলায়। তারপর চেয়ে দেখল সত্যিই অনেকগুলো গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়েছে সবাই ভাবল, লোকটি বোধহয় পাগল। শুধু মনের মধ্যে গুনগুনাতে লাগল, ”বড়ো বেদনার মত বেজেছো তুমি হে আমার প্রাণে/মন যে কেমন করে মনে মনে তাহা মনই জানে।।
তোমার হৃদয়ে ক’রে আছি নিশিদিন ধ’রে/
চেয়ে থাকি আঁখি ভ’রে মুখের পানে।।
বড়ো আশা , বড়ো তৃষা ,বড় আকিঞ্চন তোমারি লাগি/
বড়ো সুখে ,বড় দুখে ,বড় অনুরাগে রয়েছি জাগি।…ভেসে গেছে মন প্রাণ মরণ টানে।” 🪔

 

 

🍁কবিতা
 

 

 

কুন্তল দাশগুপ্ত

ওল্ড-হোম

 

 

আশ্বিনের আকাশ-
তবু, মেঘেরা ছাড়া পায়নি।
ছাতার দোকানে ভির নেই
বর্ষাতি বিকোচ্ছে খুব।
মানুষের একলা থাকার ভাণ
এই পুরাতন গ্রহে
নতুন অন্ধকার জ্বেলেছে।

বেড-সাইড টেবিলে-
অনিবার্য অ্যান্টিবায়োটিক্স
এগিয়ে দেবার কেনা হাতে…

বিদ্যুৎ বিভ্রাট নেই
তবু, অনুজ্বল গুমোট ঘরে
আরশোলার উৎসব।

প্রাত্যহিকতা থেকে
কারখানার উচ্চকিত শব্দ ওঠে।
বর্তমান পিছলে পড়ে
অতীতের শানে-
ভাঙনের শব্দ ওঠে খুব।

ঘরের মধ্যে চলছে আশ্বিনের ঝড়
আসবাবপত্র যথাযথ
শুধু, ভেঙে পড়ছে মন।

 

 

 

 

বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়

কুয়াশার দিনগুলি

 

কুয়াশার দিনগুলি দ্রুত শেষ হয়ে গেল
বসন্ত এসেছে সবে দরজায় পালক ছড়িয়ে
কোকিলেরা দ্রুত সেরে ফেলতে চাইছে ওদের বিশিষ্ট কাজ
কাকের বাসায় ডিম পড়া আরম্ভ হয়ে গেছে আগেই
জানালায় জানালায় চৈত্রের শুষ্ক বাতাস উছলে পড়ছে জানালায় জানালায় তবু তোমার প্রসারিত স্বচ্ছন্দ হাত
এখন শুধু বৃষ্টির প্রত্যাশায়-

কুয়াশার দিনগুলি বড় দ্রুত শেষ হয়ে এল
তোমার সুপ্রসারিত হাতে উঠে এল বসন্তের ফুল
টাটকা, সুগন্ধময়, কোকিলও কুহুঁ-কুহুঁ ডাকে
সম্মোহিত করল নিজের চারপাশ আর
প্রকৃতিও নতুন অতিথি দেখে ভুলে গেল সব, অভিমান!

 

 

 

তাপস চক্রবর্তী 

শরীর

 

রুপোলি জলের ছাপ দেখি— মাটির শরীরে।
অথচ শরীর বুঝে শুধু রাত জাগা পাখি।
জানি শরীর ছুঁয়ে যায় অতসী ফুলের সুঘ্রাণে
তবু শরীর লেপ্টে থাকে আঁধারের গন্ধে।

রক্তপ গোলাপ জলে— কারও ভাসে শরীর…
কেউ কেউ জাগে নিদ্রাহীন কামে—
রুপোলি জলের ছাপ দেখি— ঝাড়বাতি জৌলুষে
বেনারসি শাড়ি ভেসে যায় জলে
জানি জল হেসে ওঠে সোনার নাকছবিতে।

আহ জল— জলধি জলেশ্বর তোমারি করপুটে
আরও একবার চাই বিনীত সমুদ্রমন্থন।

 

 

 

 

অর্পিতা আচার্য 

ফিরিয়ে নিয়েছি চোখ 

 

 

যে ডাকে ডাকুক, মৌন জমি নিঃশ্বাস ফেলুক উষ্ণ

এই যে পথের কোণে কালীমন্দির, এই যে

দেবীর মূর্তি, সংবেদী মাঠ, পোড়া পোড়া দেহ

ধু ধু রোদে জ্বলে। এই যে প্রনামী বাক্স

পড়ে থাকে নম্র নত ধীর। উড়ে আসা শালিক পাখিটি

তারও পরে আমাদের সংলাপের স্মৃতি

বাতাসে তোমার প্রত্যাখ্যান, প্রতারণা?

কে কাকে ফেরায় বলো! কার চোখে লেগে থাকে

কাহার কজ্জ্বল? অনন্য, জেনো সব  ভেসে যায়

জলের মতন। স্রোতস্বিনী মরে যায়। ভাঙা মালসা

মিশে যায় মাটির শরীরে । বাতাসে পতপত ওড়ে

লাল সালু। জ্যৈষ্ঠের দুপুরে, কার সে সংকেত স্পষ্ট?

ও অনন্য, এ জীবন বয়ে যায় বড় উদাসীন…

দেবীর দুঃখের মতো, দেবীর সুখের মতো

 

 

 

 

তুয়া নূর 

দাগ

 

 

চোখের নীরব বয়ে যাওয়া জল মুছে দিতে গিয়ে
কাছে টেনে এনে হাত বাড়ায়ে
কষ্ট মোছার বদলে
দিয়েছি কেটে কুটে আরো
সহস্র কষ্টের দাগ।

 

 

 

গোলাম কবির

ক্লোরোফিল

 

 

প্রতিদিনই আমি ধ্বংসের
কাছাকাছি চলে আসি, তুমিহীন!

আবারও একটু একটু করে
নড়েচড়ে উঠি ধ্বংসস্তুপের
মধ্য হতে শুধুমাত্র তোমার
একটা কথা শুনে, “ভালোবাসি”!

শুধুমাত্র তোমাকে ভালোবেসেই
পাথরের ফাঁক গলিয়ে যেমন
করে সবুজ পাতা মেলে দিয়ে
সগৌরবে নতুন চারা গজিয়ে ওঠে
তেমনি করে আমিও আবার
শ্বাস নিই প্রাণ ভরে,
বেঁচে উঠি নতুন করে!

এভাবেই একদিন বুঝলাম অবশেষে-
“কেবলমাত্র ভালোবাসাই মানুষের
জীবনে বেঁচে থাকার জন্য ক্লোরোফিল “!

 

 

 

 

গীতা চক্রবর্তী 

কাক আর কোকিল

 

 

বিবেক যেন শিখন্ডী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে
মাঝ বরাবর
কিভাবে নতুন করে মনকে কাঠগোড়ায় তুলি,
হালকা আছি উড়ছি ও তাড়াতাড়ি
যেদিন কাক আর কোকিল চিনেছি,
কাককে রেখেছি বুঝে প্রকৃতির সংসারে।
কোকিলের কুহুতান মন ভোলাক সর্বজনের।
আকুল বিকুল পৃথিবীর যত অশনি ধীরে ধীরে নিভেছে।
শান্তিবলয় জুড়ে থাকি প্রকৃতির কোলে।
নীরব দহন শেষে মিশে যাব চিরতরে।

 

 

 

 

রোকসানা রহমান 

আমাকে একটু সময় দাও

 

সময় আমাকে এক বছর ঋতু দাও ঠিক তেমন
যেমন কত নামে ডাকতো আমায় ক্যানভাসে
ছবি এঁকে।
ভেনাস আর আফ্রিদিতির ফুলের মতন
লিলিথ ছিলো শয়তানের রানী ফ্রিসিয়ারের
প্রতি, আবেগপূর্ণ সৌন্দর্য।
আমাকে একটু সময় দাও, না হয় কম সময় দাও বা একটি মুহূর্ত পুতুল খেলার জন্য
আমার সেই শিশুবেলা যেখানে আমি
একাকী মনের আনন্দে খেলতে-খেলতে
ঘুমিয়ে পড়তাম।
মা স্বর্গ থেকে এসে আমাকে বুকে জড়িয়ে
নিয়ে যাবে। যেমনটি ছোট বেলায় চোখের
আড়াল হলে মা অস্হির হয়ে উঠতেন।
এখানে নিরাপত্তা নেই, আমার কবিতাগুলো
বাতাসে ওড়ে ভয়ে, স্বপ্ন স্পর্শময় জীবন সমস্যায়
আমার কবিতা কান্নার কথা বলে।
একটু না হয় মুহূর্তের কিছু সময় এবং ঋতু দাও কবিতারা আজ ভঙুর কানের মতন
আমাকে যে পাগলের মতন মুগ্ধ করে আগুনে
ছুঁড়ে ফেলেছিলো
আমার ভালোবাসার নিলয় আজও আমার
আত্মাকে আলৌকিক স্পর্শ করে, তবু আর
ফিরে যাওয়া যায়না, আমার নাম পুড়িয়েছে।
কবিতাই আজ আমার ভালোবাসার সঙ্গী।
আমাকে, আর একটি,ঋতু দাও মুহূর্তের
আমার কবিতা এখনও কান্না আর দীর্ঘ শ্বাস
বিক্রি করেনি।
আমি ফিরে,যেতে চাই শিশু বেলায়, মা এসে
বুকে জড়িয়ে নিয়ে যাবে।
আমি আবার আসবো ফিরে এই মৃত্তিকায় ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে, আমার কবিতা মৃত্য থেকে ফের জেগে
উঠবে সাহসী শক্তিশালী হয়ে উঠবে
ভেনাস ও আফ্রিদিতির ফুলের মতন।

 

 

 

 

বিশ্বজিৎ মণ্ডল 

একটি প্রেমের কবিতা

 

একত্রিশ বছর আগে কলেজ ক্যাম্পাসের
পশ্চিমা অলিন্দের পাশে
যাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলাম ব্যর্থ অঙ্গীকারে
আজও সে স্মৃতির জ্বরে হু হু কাঁপছে-
আকাশবাণীর মেঘলা সুরের মত

ততদিনে অশিক্ষিত নোঙর ভেঙে গড়িয়ে গেছে
পূণ্য জাহ্নবীর জল…
হাত থেকে খসে পড়েছে,প্রিয়তুতো কুর্চি ফুল

অথচ আমি কেমন প্রাক্তনী দেখো-
আজ কলেজ ঘাটে দাঁড়াতেই,
কাগজের নৌকা সাজিয়ে ভাসিয়ে দিই
তোমার প্রথম প্রেম…

 

 

 

 

স্বপন পাল 

ভারশূন্য আমি 

 

নির্ভার কাউকে এ পৃথিবী ডাকে না,
ভারহীন হলে, যাও উড়ে যাও।
পৃথিবী ওজন চেনে, বুকে টানে রাত্রিদিন।
এই তত্ত্ব জেনে থেকে দ্বিধায় রয়েছি বড়,
মনে হয় পৃথিবীর নই আমি,
যাই, তবে আমি যাই উড়ে,
কাপাসের সূক্ষ্ম তন্তু ছিঁড়ে।
এমন জীবন নিয়ে বৃষ্টিকে যতো ভয়,
বিদ্যুৎ ঝলক থেকে মেঘের গর্জন
কিছুতেই ভয়ের কারণ কিছু নেই,
একবিন্দু জল গায়ে মেখে
আছড়ে পড়তে হবে ওই পৃথিবীর বুকে,
পুনর্জন্মহীন, মৃত্যু এসে বলবে, শুয়েছো?

 

 

 

 

হীরক বন্দ্যোপাধ্যায় 

লাল নীল ফানুস

 

 

এত বড়ো পৃথিবীতে ছোট  ছোট ঘটনাগুলোয়  আমাকে চঞ্চল করে তোলে ব্যথা দেয়
গ্রীষ্মের দামালপনা উপেক্ষা করে আমি যেতে চাই
শীতের করাল গ্রাস আমাকে ভয়াবহতার উৎস দেখাতে পারে না,বর্ষার মুহূর্মূহু বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে লাল নীল ফানুস উড়িয়ে দিয়ে চলে যায়…
বন্ধুরা ইয়ার্কি করে বলে ,ব্যর্থ মানুষ, একলা ঘরের কোণে থাকে।
উৎসবের শব্দ আমার কানে আসে না, হৈ হুল্লোড়ের
ব্যান্ডপার্টি বিয়েবাড়ির সানাই  আর গুলির শব্দ শুনতে পেলে দ্রুত নিঃশ্বাস ফেলি
দেওয়ালে ঘড়ির কাঁটায় টিকটিক সহ্য হয় না আমার।

এখন আমি ঠিক  মানুষের মতো না
ভাবতেই শিউরে উঠি, মনে হয় চারিদিকে অন্ধকার
কোথাও কোনও আলো নেই
কোথাও কোনও সুশৃংখল ইশারা নেই
সব আসলে সভ্যতার  মারীচ সংবাদ…

মানুষের পায়ের শব্দ শুনলে মনে হয় হায়নার হাততালি, রাস্তায় ঘাটে ইস্কুল বাজারে
নারী ও শিশুদের সঙ্গে যদি দেখা হয়ে যায় সটান মাথা নিচু করে ক্ষমা চাই ,যেদিকে গন্তব্যস্হল তার পিছন দিক দিয়ে দৌড় দি।

এভাবে কি মানুষ বাঁচে, অশ্রুনিনাদে
মাথা নিচু করে বসে মৃত্যুর অপেক্ষায়
কোথায় গেল তোমার শোষণমুক্ত সমাজ
কোথায় গেল তোমার ভালবাসার পৃথিবী
কোথায় মুখ লুকালো সৃষ্টিশীল মানবতা
তুমি কি তাহলে শুধুই কথার কথা, ক্ষমার অযোগ্য?
বন্ধুরা ইয়ার্কি করে বলে ব্যর্থ মানুষ, একলা ঘরের কোণে থাকে…

 

 

অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক 

 

 

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ইমেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

 

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment