



সম্পাদকীয় 🌱
সময় এসেছে। আত্মখনন করো। বেলা বয়ে গেলে কল্পনায় মরচে ধরবে। কলম যখন তুলেছ, তার মানেই জ্ঞানবোধ অর্থাৎ ঈশ্বর শক্তির মূল আধারে আবির্ভাব হয়ে নিজ-নিজ কায়া নামের রূপধারী পরমাত্মায় মিলিত যোগ। আত্মখনন করো। সাত রঙের সাতটি দরজায় টোকা মারতে মারতে বিলীন হও। হাসতে হাসতে আত্মতৃপ্তি কল্পনার জাদু শক্তিতে বিভোর হও। 🦋
কবিতা
অরুণাভ ভৌমিক
নদী ও তিতলির গল্প
ক্যানেল বাঁ দিকে ঘুরে নদীতে মিশল
রাতের প্রলয়ের কোন চিহ্ন নেই সেখানে
তিতলি কি প্রেমে পড়েছে
নদী বাঁক নিল…
ইপ্সিতা দেব
“তোমাতে মিশুক”
আমার ভাবনা রোজ তোমাতে মিশুক।
দ্বিধা নেই খুঁজুক না সে অন্তহীন পথ,
হয়তো মিলবে কোথাও মুক্ত আকাশ, অথবা সুবর্ণের সেই দক্ষিণের বারান্দা…
তবু আমার একরাশ ভালোবাসা আবারও সেই তোমাতেই মিশুক।
ঘটুক না ছন্দ পতন, ভাঙুক না পুরনো প্রেমের শ্যাওলাযুক্ত প্রাচীর…
তবু আমার খাপছাড়া আমি নির্দ্বিধায় তোমাকেই আবার খুঁজুক।
শতদল আচার্য
এভাবে তোমাকে
তুমি জেনেও না জানার মত
রয়েছো অনেককাল।
এজন্মে যা অতি গোপন বেঁধে রেখেছি তোমার কাছে
আমার যত কিছু দিয়েছি তোমাকে
কেবল এক এক করে কত ঘটনায়, শুধু
তোমাকে কাছে পাওয়ার লোভে।
বন্ধু আমার
এভাবে ভাবনার যাপনে বার বার সারাক্ষণ তোমাকেই।
তুমি ভালবাসায় না জড়ালেও
আমি তো বেসে যাবো
আমার মতো করে।
নিষ্কাম ভালবাসতে কজন পারে আর-
এ-ও যে শিখছি আমি
বার বার তোমাকে নিয়েই।
ভালবাসার ছবি নেই, আছে শুধু স্বপ্ন আমার।
মিতা নূর
অসম্ভব রকম ইচ্ছে ছিল
ডায়রির বুক থেকে একটা ছেঁড়া পাতায় গল্প লিখে রেখে যাই
খুব ইচ্ছে ছিল।
অসম্ভব রকম ইচ্ছে ছিল, হাতে লেখা ভুলভাল গল্পগুলো
শোনার মত,
পড়ার মত কেউ একজন জীবনে থাকুক’
খুব গভীর ভাবে বুঝুক হৃদয় গহিনের কথাগুলো!
দীর্ঘশ্বাসগুলো চোখের কোণে জমাট বাঁধে তীব্র কষ্ট হয়ে,
মনের ঘরে রক্তক্ষরণে ভেসে বেড়ায় শব্দেরা।
ইচ্ছে শুধু ইচ্ছে হয়েই রয়ে গেল খুব গোপনে,
নীরবে নিভৃতে যন্ত্রণা হয়ে।
আজ এই রুগ্নমন, অসুস্থতায় বিছানায় অবনত শরীর,
এক অসহ্য অস্থিরতা।
চোখের দৃষ্টিও ক্ষীণ হয়ে আসে, এমন সময় ভীষণ ইচ্ছে করে,
কেউ একজন যদি পাশে থাকতো’
ভালোবাসা আর আদরে খুব যত্নশীল কেউ একজন!
আমার নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হয়ে।
আমার নিঃসঙ্গতা টুকু ঘুচে যেতো হয়তো তার ছোঁয়ায়,
আমার লেখা কবিতা গুলোও জীবন পেতো।
তাকে বড্ড বেশি ভালোবাসার মায়ায় জড়িয়ে,
খুব যত্ন করে গুছিয়ে রাখতো মন’
আঁটকিয়ে রাখতো তাকে, হৃদয় দিয়ে হৃদয়ে।
এখনো প্রতিমুহূর্তে যুদ্ধ করি মৃত আবেগের সাথে’
টের পাই মন উঠোনে আজও,
সেই প্রথম দিনের তুই’টাকেই সাজিয়ে রাখি,
সহস্রবার কাটাকুটি করেও..!
সৈকত মজুমদার
বার্ধক্য
আমার মায়ের ঘুম হয়নি কাল রাতে!
রাতের ধোঁয়াশায়
প্রতিটা ভোর আমার দুঃশ্চিন্তার
প্রতিটা সকাল মন খারাপের!
দিন শেষে বার্ধক্য উঁকি মারে
সান্ধ্য-প্রস্তুতিতে তুলসীর ভাঁজে!
সুচিতা সরকার
ওরা সব তোর অপেক্ষায়
কিছু বৃষ্টি এখনও সযত্নে
বুকে ধরে রেখেছে মেঘ।
সব আলো এখনও মিশে যায়নি,
রাতের আকাশে।
জোনাকিরা কিছুটা তুলে রেখেছে সিন্দুকে।
নীল রংটা এখনও বিলিয়ে দেয়নি প্রজাপতি
ফুলেদের কাছে।
সবটাই লুকিয়ে রেখেছে ও,
জলপরীর ডানার নীচে।
ওরা সব তোর অপেক্ষায়!
একদিন দেখা হবে বলে,
অন্তহীন প্রহর গুনছে।
অপাংশু দেবনাথ
লিখে লিখে শুধু মুছি
মুছতে মুছতে হয়তো তোমাকে আঁকতেই ভুলে যাবো একদিন
তুলিতে রঙ শুকিয়ে গেলে শূন্য পড়ে থাকে হৃদয়ের ক্যানভাস।
এমন ক্যানভাসে কান পেতে শুনি মজে যাওয়া নদীকল্লোল।
রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ
রেখা
সমস্ত কৌশল মুছে গেলে
আগ্রহ জেগে উঠে
আগামীর মূর্ছা ধ্বনিতে…
লিখতে গিয়ে সান্ধ্য ঘুমে পুষছি
ধারাপাতের বিবর্তিত রেখা।
কুস্তিতে তখনো নতুন স্বপ্ন বুনে বুনে
ঘরকুনো তুমুল ছায়ার প্রজন্ম…
সোমা বিশ্বাস
শেষ চুম্বন…
( সম্প্রতি ইজরায়েল প্যালেস্টাইনের যুদ্ধের বর্বরতার পটভূমি নিয়ে)
“এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার! ”
…অঙ্গীকার আর কোথায়! শুধু নৃশংসতা ক্ষমতা দিয়ে মৃত্যুর স্তুপ গড়ি-
শত শত বাবা মায়ের বুকভরা কান্না দিয়ে মৃত শিশুদের শেষ চুম্বন করি!
চারিদিকে শুধু লোভ দম্ভ মিথ্যার ফুলঝুরি আর অস্ত্র বর্ষণ-
নরম মাটিতে যেভাবে যতটা আঁচড় কাটা ; সেভাবেই মেয়েদেরও ধর্ষণ।
‘শান্তির ললিত বাণী’ শুধুই কি হবে ব্যর্থ পরিহাস-
শুধু ধ্বংস রক্তপাত বর্বরতা দিয়েই কি শাসকশ্রেণী রচনা করবে আগামীর ইতিহাস??
দেবারতি দে
পোড়া মাটি
আগুনের পথ চেয়ে বসে থাকি
আর ধুলোর জলসায় আঙুল বুলিয়ে
নিজের অজান্তেই এঁকে ফেলি
পোড়া মাটির মানচিত্র।
বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
কুফল
কথাটা বলতে চাওয়া হচ্ছিলো এভাবে,
ইট-কাঠ-পাথরের কংক্রিট শহরে
গড়ে ওঠে সভ্যতার ইমারত
কিন্তু তা বলতে গিয়ে থেমে যেতে হলো।
ইট-কঠ-পাথরের মধ্যে এখন কোথায় কাঠ?
নির্বিচার গাছ কেটে এখন কাঠের আকাল;
কাঠের জায়গা নিয়েছে এখন
লোহা-অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি।
এখন কথাটা হয়তো এভাবে হতে-
পারে,ইট-লোহা-পাথরের…।
নির্বিচারে গাছ কেটে ধীরে ধীরে আমরা
সবুজ পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছি;
এর কুফল ভীষণভাবে ভুগবে
আমাদের অনাগত প্রজন্ম
তখন হয়তো আমরা থাকবো না।।
মমতা রায় চৌধুরী
তোমার কথা ভেবে ভেবে
তোমার কথা ভেবে ভেবে
দু-চোখে স্বপ্ন আঁকি
শাপলা দিঘির জলে ভাসা
তোমার মুখখানি।
আজও মন ছুঁয়ে
গোধূলির ধুলো ঝরানো
রাখাল ফেরে বাসার টানে
আমি তখন বসে থাকি
অপেক্ষার পাহাড় গুণে
উতলা প্রাণ মোমবাতি জ্বেলে।
তোমার কথা ভেবে ভেবে
রাত্রি গভীর হয়,
ভিড় জমানো ঘুমেরা কেমন
পাড়ি দেয় আকাশ পথে
শুকতারাটি তাল গাছেতে
ভোরের আলো উঠোন জুড়ে
তবুও আমি ভেবে ভেবে
স্বপ্ন আঁকি দু’চোখ জুড়ে।
ভুলেই তোমার অস্তিত্ব
তোমাকে বিশ্বাস করে
নিজেকে উজাড় করেছি।
তোমাকে বিশ্বাস করে
অস্তিত্ব ভুলতে বসেছি l
এগুলো সবই ভুল…
সব ভাল মুহূর্তগুলো
কখন কফিন হলো
বুঝতেই পারি নি।
তোমাকে ভালোবেসে
পৃথিবীর সব কিছুকে
দূরে সরিয়ে রেখেছি
সেগুলো সবই ভুল..
আজ বুঝি।
ভুল করতে করতেই
হয়তো নতুন পথের
সঠিক নিশানায় পৌঁছাব,
অতীতের স্মৃতি আঁকড়ে
বর্তমানে তোমার অস্তিত্ব।
দিপালী রানী সরকার
অ্যামাজন লিলি
এক বর্ষ আগে তোমায় ঘরে এনেছিলাম
খুব যত্ন করে।
মাটি, জল মায়া মমতায়
জড়িয়ে গেলে আমার জীবনের সাথে।
সূর্য দিল আলো তাপ
আকাশ দিল বৃষ্টি
বিধাতা দিল রুপ, রস গন্ধ
তুমি নিজেকে প্রস্ফুটিত করলে
মানুষের জন্য
নিজে চাইলে না কিছু!
বিনিময়ে দুহাতে আগলে নিলে
শুভ্রতার হাঁসি আর
রক্তে ভরা ক্রুশ বিদ্ধ উচ্চ শির।
বিজয় ঘোষ
মন কিংবা দূরত্ব
১•
ঘরের মধ্যে ঘর, আর মনের মধ্যে মন
যোজন ব্যাপী পর,
২•
“দুস্তর পারাবার”
শরীর এবং মন
৩•
ঈশ্বর কখনও ঘুমিয়ে থাকেন
কখনও থাকেন প্রেমে
৪•
অতলে তলিয়ে যায় দেহ
মন? ভাসে, ভাসতে থাকে
মন্দিরা লস্কর
খরগোশ ও কচ্ছপ
ক থেকে খ পড়া শেষ হতে না হতে
আমার হাতে কাগজ- কলম ধরিয়ে দিলে
আমি কবি হওয়ার ভান ধরি।
বেশ কিছু কায়দায় একটু একটু করে করতালির দিকে এগিয়ে যাই
খাদ বা খামতি কোনোটাই তখন দুর্বল নয়, হতে পারে নরম কিংবা নাজুক ভিন্ন ভাষায়
এইসব নিশ্চয়তা অর্জন করে খরগোশেরা ঘুমিয়ে পড়ে নিশ্চিন্তে
আর
ক চ্ছপেরা
খ রগোশ পেরিয়ে
গ ন্তব্যের দিকে যায়।
জ্যোতি পোদ্দার
জঙ্গলনামা
কী পাখি! কী পাখি!
বেশ তো
বেশ তো
রঙিন সুতার ডানা।
পাতার ভেতর থেকে চটকে আসা আলোয়
পাখির ঘাড়ে আঁকা নয়নতারা
আরো চকচকের ঠমকে আমাকে
দাঁড় করিয়ে দিলো জঙ্গলের ভেতর।
চোখ অপলক।
হাত নিশপিশ করছে।
নিশানা ঠিক।
কী পাখি! কী পাখি!
বাহারি রঙিন সুতায় কাটা পুচ্ছ
নাচছে নাচছে
আমি দেখছি
আমি দেখছি
পুচ্ছ নাচছে
রঙিন বাহারি সুতা নাচছে
আর আমার মুখভরা জলের নাচনে
ঠোঁট বেয়ে পড়ল কি একটু লোল?
রকিঙ চেয়ারে পায়ের উপর পা রেখে
পা দোলানোর মতো করে
আয়েশি ঢেকুর তুলবো আজ।
কয় গ্রাম আর মাংস হবে?
বাহারি রঙিনে মন ভরে
আর গল্পের পর গল্পও জমে।
খুঁটে খুঁটে তোলা ফড়িং পতঙ্গ
আর গেরস্ত বাড়ির উঠানের কালায়ে
ভর্তি খাদ্যনালি পুটলির মতো
ঝুলে আছে মা-পাখির
গলার কাছে।
আমার চক্ষু স্থির।
নিশানাও।
পা-পাখি ডালে ঠোঁট ঘষে ঘষে ধুয়ে
নিচ্ছে এঁটো ঠোঁট
আর দিনের ক্লান্তি
আর অনেক দূর থেকে ঘরে ফেরার স্বস্তি।
চোখ অপলক।
নিশানা ঠিক।
টিগারে বাঁকা আঙুল..
ঠোঁট বেয়ে পড়ল কি আরেকটু লোল?
শুভ্রা দেব
আঁচল
পড়ন্ত বিকেলে খোলা চুলে
সাংসারিক সংলাপ বিনিময়
আজ নিছকই গল্পকথা;
চাবির ভারে নুয়ে থাকা আঁচল…
দিদা ঠাকুমা গুটিয়ে নিয়েছে সেই কবে!
আবু আফজাল সালেহ
কালো রঙ
কালো রঙ সংজ্ঞায়িত করে
রহস্য, শক্তি, কমনীয়তা
তোমার সত্তার বীরত্ব এবং মহানতা।
তোমার স্বভাব তোমার ভদ্রতার পরিহাস
বন্যতার প্যারাডক্স
কালো আমার হৃদয়ের দাস।
হারাধন চৌধুরী
অভ্যাসের প্রার্থনা
নীরব প্রার্থনা করেছিলাম
তুমি এসেছিলে
সরব প্রার্থনা ছিল, তুমি যেও না
তুমি চলে গেলে
প্রার্থনার মূল্য তুমি জানো
আমি কখনও খরাক্লিষ্ট
বন্যাদুর্গত কখনও-বা
আমার অভ্যাসের প্রার্থনা চলছে
হারাধন বৈরাগী
রক্তজবা
রাতের নাভিচরে
চিৎ হয়ে শুয়েছিল
একটি প্রগাঢ়-শূন্যতা
চন্দ্রগ্রস্তপুরুষ-আজলাভরে
সারারাত ঢেলেদিল পূর্ণিমা
ভোরের আলোয়-ফুটে উঠল
একটি- টুকটুকে রক্তজবা।
🍁অলঙ্করণ : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক
🦋 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, ভ্রমণ কাহিনী… e-mail : sasrayanews@gmail.com
