



সম্পাদকীয় এর বদলে…
দেবব্রত সরকার
রক্তে ভেজা বাংলাভাষা
যাঁরা নিজেদের আহুতি দিয়ে ভাষাকে করেছে জয়
তাঁরা আমাদের বুকের ছন্দে রচিত ২১ এর নির্ভয়
এই পৃথিবীর ভাষায় শ্রুতি মধুর সম্পর্কে টান
আজো কেঁদে চলে জখম মাটি বাংলা ভাষার গান
রক্ত দুর্ভোগের শিকার হয়ে একুশের ফেব্রুয়ারি
এত বলিদান ভাষার জন্য মানুষের তরবারি
এটা স্বাভাবিক চোখের অশ্রু বাংলা ভাষার দাবি
কেন অধিকার আদায়ে রক্ত বলতে পেরেছ পাপী
যাঁরা নিজেদের আহুতি দিয়ে ভাষাকে করেছে জয়
তাঁরা আমাদের বুকের ছন্দে রচিত ২১ এর নির্ভয়
ওই শফিউর রফিক রক্তে ভিজেছে গুলির দ্বন্ধে
ভাষা মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে হারিয়ে দিয়েছে ছন্দে
ভাবো বরকত আব্দুস অহী সালাম হয়নি পণ্য
তাঁরা বলিদান হয়েও প্রেম ঢেলেছে ভাষার জন্য
দেখ শব্দগুলো দাঁড়িয়ে আছে তাঁদের বুকের রক্ত
নেচে অক্ষরেরা মারছে উঁকি হাসছে ভাষার ভক্ত
যাঁরা নিজেদের আহুতি দিয়ে ভাষাকে করেছে জয়
তাঁরা আমাদের বুকের ছন্দে রচিত ২১ এর নির্ভয়
🪔 ভাষা দিবস এর কবিতা
রোকসানা রহমান
একুশ এলে মনে পড়ে যায়
আজ একুশে ফেব্রুয়ারি আবার এসেছে ফিরে লক্ষ জনতা শহীদ মিনারে ফুলে ফুলে স্যালুট জানাতে।
মনে পড়ে বাহান্নোয় একদিন জেগেছিলো গোলামী থেকে মুক্তির শ্লোগানে।
আজও দেখি পবিত্র বেদীতে দাঁড়িয়ে আমার ভাইয়ের রক্ত রাঙানো শার্ট সূর্যাস্তের আকাশে কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে হাওয়ায় উড়ছে আমাদের প্রতিধ্বনীময়
রক্তাক্ত বাংলার শস্য শ্যামল মাঠ-ঘাট
পদ্মা, যমুনার তরঙ্গে উল্লাসে।
মনে পড়ে সেই একাত্তরে কি ভয়ানক তান্ডব উল্লাসে নগ্নপ্রেতের উল্লাসে জায়া জননী থেকে বোনের সম্ভ্রম কেড়ে ছিলো রক্তাক্ত হয়েছিলো তরুণ, আবাল বৃদ্ধা বণিতার রক্তাক্ত লাশের উপর তান্ডব পৈশাচিক নৃত্যের হত্যার উন্মাদনার নিষ্ঠুরতা।
তারপর কি পেরেছিলো কেড়ে নিতে আমার মায়ের বর্ণমালা।
শুধু একটি শ্লোগান, জাগো মানুষ, জাগো শ্রমিক, তাতার কুমার।
জাগো মাতা জাগো তরুণী অস্ত্র তুলে নাও আবার জেগে ছিলো মানুষ আর রক্তভূমিতে পড়বেনা কোন বিবস্ত্র বোনের
লাশ, মাথার সিঁথির মুছে দিতে দিবোনা আর
কোন কৃষ্ণকলির সিঁদুর।
জাগো জাগো বাঙালী বাহান্নোয় একদিন
জেগেছিলো আসাদ, জব্বার স্বাধিনতা
পাবার জন্য।
ভেঙে দাও ওদের রিকয়েললেস রাইফেল
মেশিনগান দোত্যদানবের তেড়ে আসা
জলপাই রঙের ট্যাঙ্ক।
ঐ দেখো সন্তান হারানো স্বজন হারানো
মায়ের অশ্রু, এ অশ্রু আমারই পিতামাতা ভাই কন্যার লাশের আর্তনাদ।
আবার ফিরিয়ে এনেছিলো বীর বাঙালীরা স্বাধিনতা, আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হয়েছিলো
রক্তাক্ত মায়ের শ্যামল শেভিত
শ্লোগান- মুখর পতাকা।
তাইতো আজও বিনম্র শ্রদ্ধা স্যালুট
জানাতে এসেছে লক্ষ বাঙালী।
তোমাদের বেদীতে এসে অশ্রু ঝরায় বয়সের
ভারে জননী। তবুও তার চোখে
জ্বলজ্বল করছে সন্তান ত্যাগের এক
ঐশ্বরিক মহিমা, গর্বিত সেই জননীরা
ফিরিয়ে এনেছিলো ত্যাগের মহিমায় মুক্ত
করেছিলো
মায়ের ভাষা শহীদদের আত্য আত্ম-ত্যাগের
বিনিময়ে স্বাধীনতা।
তাই আজও একুশে এলে লক্ষ শহীদদের প্রতি
শ্রদ্ধায় ফুটে লাল রক্ত লাল ফুলে ঢেকে যায়
বাংলার মাঠ-ঘাট-প্রান্তর জুড়ে কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে রক্ত রঞ্জীত ফুল।
হে একুশ তুমি বাঙালীর অবিনাশী বেদনার
আনন্দ- অশ্রুর বেদনা, আর উল্লাসের
অমর একুশের গর্বিত রবীঠাকুরের গান।
একুশ তুমি বিদ্রোহ কবি কাজী নজরুলের লৌহকপাটের পরাধীনতার শিকল ভাঙার।
গান।
একুশে ফেব্রুয়ারী বাঙালীর রক্তিম অহংকার।
মমতা রায় চৌধুরী
অমর একুশে
২১ মানে রক্ত ঝরা দুখিনী বর্ণমালা
২১ মানে রক্তাক্ত পদ দলিত মাতৃভাষা
২১ মানে দগদগে ঘা মায়ের দিনলিপি
২১ মানে প্রতিরোধ প্রতিবাদে গর্জে উঠি
২১ মানে সালাম রফিক বরকতের রক্তঝরা
২১ মানে সন্তান হারা মায়েরে স্মরণ করা
২১ মানে গভীর ক্ষতেও এক চিলতে আশা
২১মানে বুকের মাঝে লালিত ভালোবাসা
২১ মানে বাংলার ধানসিঁড়ি বাংলার শঙ্খচিল
২১ মানে রবি হেম নবীন মাইকেল কবি
২১ মানে জারি, সারি ,বাউল ,ভাটিয়ালি
২১মানে রক্তমাখা প্রত্যয়ী দৃঢ় হাতছানি
২১ মানে ৭১র মুক্তিপথ আলোক সন্ধানী ।
২১ মানে শতকোটি বার বাংলায় জেগে ওঠা
২১ মানে নির্ভীক কণ্ঠে বারবার স্মরণ করা ।
রাজেশ চন্দ্র দেবনাথ
ভাষা
আমৃত্যু জন্মের কথামালায়
ভাষায় পরজন্মের অনুবাদ শেষে
সবকিছুই শূন্য…
আকাশের চৌরাস্তায় সেই ধবধবে
বর্ণমালার সাংকেতিক জয়ধ্বনি
শুনতে থাকি মিষ্টিমুখ পাখির
ভাষার কলতান
ভোরের তীব্র হাওয়ায়
ভেসে আসে সুরের কল্পনায়
বৃষ্টি ভেজা গল্প
সৃষ্টির ছায়ায় তাকিয়ে পুরো শহর
ব্যাখ্যা নিয়ে মুক্তি
রাতের জ্যোৎস্নায়
অ আ ই ঈ ঊ
স্বর থেকে শুরু হামাগুড়ি
তীব্রতর ভাষার আলোর
স্নেহের প্রতিশব্দ
ছন্দের প্রতিটি কোনায়
অলৌকিক কৌশল
ভাষার বনে
লুকিয়ে আছে শিশির বিন্দু
আর
প্রজন্মের আলোড়ন…
পরাণ মাঝি
হৃদয় সঙ্গম
ঝোলা ব্যাগে ভরা খসড়াগুলো মন চেপে ধরে। গড়িয়ে পড়ে ২১ ফেব্রুয়ারীর দিকে। ছুটে যায় – অমৃত ভাষা বাংলা। অজানতে শহীদের চিবুকে চুম্বন আঁকে। ভেতরপুর থেকে বেরিয়ে আসে আড়াল করা বিদ্রোহের আর্তনাদ। অমর তারা। বেঁচে আছে, থাকবেও মনে। চিরদিন। চিরকাল….
শূণ্যঘর। বিস্বাদ জীবন। তবু হৃদয় ভ’রে থাকে বাংলা ভাষায় লেখা ও বলার সুখ। স্বর ও লিপির অলৌকিক আলো। কালো মুছে নতুন নতুন ডাইমেনশনে ডাকে। আমরা সেরে উঠি। বাকিটা তো কহতব্য নয় বন্ধু! কেবলমাত্র হৃদয় সঙ্গম…
সুচিতা সরকার
আরেকটা একুশে চাই
ভুলে গেছি। সব ভুলে গেছি।
মনে করার জন্য শুধু মাত্র একটা দিন।
গান, কবিতা, গল্প, লেখা,
হই হই করে শুভেচ্ছা বার্তার ঝড়।
মাত্র একটা দিন।
মায়ের দেওয়া শব্দগুলোকে
বিকৃত করা অবশ্য, এই দিন নিষিদ্ধ।
দিনটা ভুলে যাওয়া এইদিন পাপ।
ব্যস্ একটা দিন?
নাহ ! মানতে পারছি না।
একটা নয়, তিনশো পয়ষট্টি দিন চাই।
জিহ্বার পরিশুদ্ধি প্রতিটা দিন চাই।
শরীরে বইতে থাকা জলগুলো রক্ত হওয়া চাই।
হ্যাঁ! আরেকটা একুশে চাই।
ডালিয়া মুখার্জী
একুশ আমার
একুশ মানে শহিদ দিবস
একুশ মানে ভাষা
একুশ মানে ভায়ের রক্তে
রঙিন দিবানিশা
একুশ আমার, রক্তে রাঙা
নতুন ভোরের দিন,
রাজপথ আজ আগুন রঙে
হয়েছে কেমন রঙিন।
বাঙালির বুকে একুশ নিয়ে
মন খারাপ ছড়িয়ে পড়ে
মাতৃভাষার বাঁচানোর জন্য
রব উঠে ঘরে ঘরে।
বিপ্লব ভট্টাচার্য্য
হ্যাংলা আমি
আমি বাংলা মায়ের হ্যাংলা ছেলে
মায়ের কোলেই কেটে গেল
পঁয়তাল্লিশটা মাতৃভাষা দিবস—
জন্মনাড়ীর বাঁধন ছিঁড়েও
জন্মদাত্রীর মুখের ভাষা
আমার জিভে তুলে নিলাম।
মায়ের ভাষায় কথা বলে
সুখ দুঃখ ভালোবাসা
নকশি কাঁথার বুননে পেলাম।
মাগো-
আজও আমি সেই হ্যাংলা ছেলে,
মাতৃস্তনে মাতৃভাষায়—
বাংলার জন্য হ্যাংলা রয়েই গেলাম…
অশোক কুমার দাস
স্মরণীয় একুশে
স্তব্ধ আকাশ নীরব বাতাস-
অসহায় বসুন্ধরার বুক
ভূমিকম্পের মতো
থর-থরিয়ে কেঁপে উঠেছিল,
তিমিরাচ্ছন্ন বিভীষিকায় ভরা
তুমি সেই বীর শহীদদের
রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী!
বিশ্ব আজও ভুলিতে নারি
একুশে ফেব্রুয়ারী।
প্রতিবাদ করে বিদ্রোহের
কামনার আগুন জেলে সম্মুখে-
স্বৈরাচারীদের গুলি বন্দুকের মুখে
অগণিত প্রাণ
দিকে দিকে তুলেছিল
প্রবল তুফান,
উঠেছিল মাতৃভাষা
আদায়ের জয় গান
রক্তে সেদিন ভরেছিল রাজপথ
জেগেছিল বঙ্গমায়ের
বীর সন্তান।
জননীর বুক ভরেছিল
বিষন্ন ব্যথার জ্বালায়,
হারিয়েছিল জননী
তাদের স্নেহের সন্তান!
যখুনি মনে পড়ে
অভিশপ্ত সেই দিনের কথা,
বুক বেদনায় ভরে যায়
প্রকাশ করিতে পারিনে ভাষায়
বেদনাহত হৃদয়ে
নীরব অশ্রু ঝরিয়ে-
একাগ্র চিত্তে
ভাষা আন্দোলনের
অমর শহীদদের জানাই
আমার একটি সেলাম।।
সানি সরকার
একটি ভাষার টানে
এখান থেকেই যেতে হবে
শব্দ যে-দিকে যাচ্ছে
ধ্বনি যে-দিকে টানছে
এখানেই নড়ছে পাতা
এখানেই ডাকছে পাখি
সূর্যালোকের ভেতর
খুব আস্তে
গাছের শিকড় থেকে
পাতা থেকে জেগে উঠেই
ঝলমল করে উঠল নূতন বর্ণ
এখান থেকেই তর্জনী নির্দেশ-
দ্যাখো,
গাছ, পাতা, পাখি, রোদ্দুর…
যে-যার নিজের ভাষায় কথা বলছে
আর
পরম ব্রহ্মাণ্ড শব্দ করছেন ও শুনছেন
একটি ভাষাতেই
🦋 অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক
🌻সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী… ই-মেল : Sasrayanews@gmail.com
