



কবি তাহমিনা শিল্পী-এর জন্ম: ২ নভেম্বর, বাংলাদেশের রাজৈর, মাদারীপুর। শিল্পী কর্মজীবনে একজন গণমাধ্যমকর্মী। পাশাপাশি লেখক ও সুগৃহিণী। ওঁর বেশ কিছু গ্রন্থ প্রকাশিত প্রকাশিত হয়েছে। যেমন সমাদৃত গ্রন্থগুলি—গল্পগ্রন্থ: হৃদয়পুরের চুপকথা, আলতাদিঘির লালটিপ, আধ পাগলা জাকির হোসেন, লাল লিপস্টিক, শালিক পাখির অভিমান। কাব্যগ্রন্থ: কুসুম বউয়ের নাকের নোলক হারিয়েছে গহীন গাঙের জলে, প্রণয়ের জলবাড়ি, টেরাকোটায় আঁকা পৌরাণিক প্রেম, ওত পেতে আছে মাতাল জোছনা। শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ: তমালের সুন্দরী হাঁস, পুষ্পিতা ও নীল প্রজাপতি, খরগোশ ছানা ও বুদ্ধিমান টুনটুনি, অর্পণ ও কাঠবিড়ালি। সম্পাদিত গল্পগ্রন্থ: বুনো বাতাসের গন্ধ। এছাড়াও এই সময়ের বহু পত্র-পত্রিকায় কবি তাহমিনা শিল্পী নিয়মিত লেখেন। সাশ্রয় নিউজ-এর আজকের পাতায় রইল কবির একগুচ্ছ কবিতা।
তাহমিনা শিল্পী-এর কবিতাগুচ্ছ
জীবনের দু’পিঠ
এপিঠ-ওপিঠ ভিন্ন ছবি,
কয়েন কিন্তু একটাই।
দু’চোখে দুই রঙের আলো,
অবিচল এক স্বপ্ন সাজাই।
দিনের আলো, রাতের আঁধার,
পথের ধুলো, ক্লান্তি-ভার।
কখনও রঙিন, কখনও ধূসর,
জীবন তবু বহমান।
ছায়া-রোদ্দুর মিলেই গড়ে,
জীবনের অমোঘ গান।
হার-জিতের খেলায় তবু,
স্বপ্ন থাকে অবিরাম।
সাগরজলে দোলে নৌকা,
ঢেউ আসে, ঢেউ যায়।
বাঁধন কাটে, পথ হারায়,
তবু ঘাটের টান রয়।
শিয়াল ও কাক
শিয়াল গোত্রের রাজ্যে
প্রতিদিন নতুন নতুন আইন,
তাদের জন্য লাল গালিচা,
তাদের জন্য স্বর্ণের ভায়া।
তারা হেসে খেলে চলে,
রোদে ছায়ায় সুখের দোলায়,
তাদের মুখে মধুর কথা,
পিঠের নিচে ছুরি রয়ে যায়।
আর কাকেরা?
তারা প্রতিদিন দল বেঁধে
আকাশে উড়তে চায়,
তাদের ডানা পোড়া রোদে,
তাদের স্বপ্ন ছেঁড়া যায়।
কাকেরা জোট বাঁধে তবু,
আলোড়ন তোলে বাতাসে,
তারা জানে—
শিয়ালের মুখোশের নিচে
কেবল ধূর্ততার পাশা রয়ে যায়।
আজীবন পদপ্রাপ্ত যারা,
তারা লোভের লোভী সিংহাসনে,
আর কাকেরা দাঁড়িয়ে থাকে
বঞ্চনার উঁচু মাচানে।
আমি কাকদেরই সমর্থক,
যারা খুঁটে খুঁটে সত্য খোঁজে,
যারা প্রতীক্ষায় থাকে,
একদিন নীল আকাশে
তাদেরই জয়গান বাজবে রোজে!
বেপরোয়া রোদ্দুর
গ্রীবায় চুমু খায়
বেপরোয়া রোদ্দুর,
ভীষণ তোলপাড়
বুকেতে ভাঙচুর।
ছায়ারা উধাও
গলিতে গলিতে,
আলোয় জ্বলে উঠে
স্বপ্নের ভিটে।
তপ্ত দুপুরের
আলসেমি ভেঙে,
পুড়ছে মন
অপেক্ষার রঙ্গে।
শুধু এক ফোঁটা
শীতল বাতাস,
তুই যদি আসিস
বিরহের পাশে।
আলোর বিপ্রতীপ কোণ
ছায়া-ছায়া খেলাঘর
জীবনের চতুষ্কোণ
সমান্তরাল তুমি-আমি
ভালোবাসা, অবহেলা।
আলোর বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে,
উপলব্ধি করি, আঁধারের গভীরতা
যেন আলোরই এক গল্পগাঁথা!
মনের বদলে মন
তোমার মনের গভীরতার রং নীল, আমার সবুজ
তবুও কোথাও যেন এক অদৃশ্য সেতু,
মনের বদলে মন দেয়া-নেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে
তোমার দৃষ্টির ভাঁজে লুকিয়ে রেখেছি স্বপ্ন।
মন বোঝা কি এত সহজ?
আমি হাসতাম, কারণ বোঝা তো নয়, অনুভব।
তোমার না বলা কথাগুলো আমার ভেতর ছাপ ফেলে যেত।
তোমার আকাশে মেঘ জমলে, আমার হৃদয়ে ঝড় উঠত।
আমাদের মনগুলো যেন ভিন্ন দিগন্তের দুটি পাখি,
তবু এক ছায়া, এক বাতাসে বাঁধা।
তুমি চেয়েছিলে মুক্তি, আমি চেয়েছিলাম বেঁধে রাখতে।
তোমার চলার পথে ফুল বিছাতে গিয়েও,
আমার মনটা রক্তাক্ত হয়েছিল।
তবুও শেষমেশ আমি শিখেছি,
মনের বদলে মন দেওয়া মানে—ছাড়ার মধ্যেই পাওয়া।
প্রীতি ছাড়া নীতি
নীতি যখন রাজপথে নেমে আসে,
প্রীতি তখন পায়ের নিচে চাপা পড়ে।
স্লোগানের শব্দে ডুবে যায় ভ্রাতৃত্ব,
অভিনয়ের হাসিতে লুকিয়ে থাকে ষড়যন্ত্র।
নেতার আসনে বসে থাকা মুখোশেরা
বিবেককে নিলামে তোলে প্রতিদিন।
সত্য হারিয়ে যায় সুবিধার আঁধারে,
গণতন্ত্রের নামে চলে ক্ষমতার খেলা।
প্রীতি ছাড়া নীতি কেবল শূন্য শব্দ,
মানুষের জন্য নয়, মঞ্চের জন্য।
কথা দাও সাথী হবে
কথা দাও, সাথী হবে
ঝড়ের দিনে ছায়া হবে,
তপ্ত দুপুরে শীতল বাতাস,
আঁধার রাতের আলো হবে।
কথা দাও, পথের ধূলি
পায়ে বিছিয়ে তুমি দিবে,
অন্ধকারে পথ হারালে
দিগন্তের দিশা হবে।
তোমার হাত ছুঁয়ে যদি
ভাসতে চাই নীল নদীতে,
তুমি কি দেবে সেই আশ্বাস
ডুবে গেলে তুলবে আমায়?
ভালোবাসা কেবল কথা নয়,
তাকে বাঁধতে হয় শপথে,
তাই আজ শুধু জানতে চাই
কথা দাও, সাথী হবে?
প্ল্যাটফর্মে বিরহানল
এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম,
সকাল এগারটা
ওয়েটিং বেঞ্চিতে পাশাপাশি,
টুকিটাকি কথোপকথন।
ট্রেন এলেই আমাদের আলাদা আলাদা কমপার্টমেন্ট।
আমি গন্তব্যে পৌঁছালেও,
বাকি থেকে যায় তোমার পথ
হেঁটে যেতে যেতে চাতকি দৃষ্টি মেলে দিই
জানালায় মুখ বাড়িয়ে, হাত নেড়ে বলো :
আগামীকাল আবার এসো,
ভোরের প্রথম সূর্যটা তুলে এনে
তোমার কপালে টিপ পরাবো।
তারপর থেকেই আমি শূন্য কপালে অপেক্ষায় থাকি…
দশ মিনিট বাদে বাদে ট্রেন আসে,
শুধু তুমি আর আসো না।
অঙ্কন : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক
এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com
বি: দ্র: সমস্ত লেখা লেখকের নিজস্ব। দায় লেখকের নিজস্ব। কোনও বিতর্কিত বিষয় হলে সংবাদ সংস্থা কোনওভাবেই দায়ী থাকবে না এবং সমর্থন করে না। কোনও আইনি জটিলতায় সাশ্রয় নিউজ চ্যানেল থাকে না। লেখক লেখিকা প্রত্যেকেই লেখার প্রতি দ্বায়িত্ববান হয়ে উঠুন। লেখা নির্বাচনে (মনোনয়ন ও অমনোনয়ন) সম্পাদকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
