Sasraya News

Tuesday, February 11, 2025

Poet Soumit Basu : কবি সৌমিত বসু এর গুচ্ছ কবিতা

Listen

সৌমিত বসু -এর জন্ম ২৬ নভেম্বর ১৯৬৩ সালে,  ভারতের দক্ষিণ ২৪ পরগণার কাকদ্বীপে। পেশায় শিক্ষক সৌমিতের লেখায় হাতেখড়ি শৈশবে। পরবর্তীতে দেশ, আনন্দবাজার, সানন্দা, প্রতিক্ষণ, শতভিষা, কৃত্তিবাস, জিজ্ঞাসা, কবিপত্রসহ বাংলাভাষার প্রথম শ্রেণির প্রতিটি কাগজে লেখেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ২৪। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য : বিষণ্ণতর শব্দের দিনগুলি, বোধিবিন্দু, আরশিমাছের চোখ, নারীগাছ, শ্রাবণকথা, আমার সন্তান যেন থাকে রাইটার্সে, শৃঙ্গারের মায়াশব্দরূপ, ডানার আনন্দরঙ, কৃষ্ণকথা, আমার নিজস্ব কোনো ক্রোধ নেই, হুশ্ বললেই কি উড়ে যাওয়া যায়, ভাঙামন পথঘাট তুতানখামেন, মা, স্টিফেন হকিং ও ভাই ইত্যাদি। কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্যে তিনি ইতোমধ্যে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রদত্ত জেলা বইমেলা শ্রেষ্ঠ কবি সম্মাননা। এছাড়াও বাংলার মুখ পুরস্কার, কবিপত্র সম্মাননা, ম্যাবসাসে পুরস্কার, বনানী পুরস্কার, দীনেশ দাশ স্মৃতি পুরস্কার, সামসুল হক স্মৃতি পুরস্কার, সোহারাভ হোসেন স্মৃতি সম্মান এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ-এর টাঙ্গাইল সাধারণ গ্রন্থাগার থেকে অরণি পুরস্কারসহ অজস্র পুরস্কার। সম্পাদনা করেছেন : নষ্টচাঁদ, কবিপত্র, অন্যকবিতা এবং বারোমাস পত্রিকা। ইংরেজি, হিন্দি ও ওড়িয়া ভাষায় অনুদিত হয়েছে এই বিশিষ্ট কবির কবিতা। সাশ্রয় নিউজ-এর আজকের পাতায় রইল কবি সৌমিত বসু-এর গুচ্ছ কবিতা।

 

সৌমিত বসু 

জীবন এক আশ্চর্য দূরবীণ

১৭. 
গৃহ আছে, নিদ্রা আছে
এই অন্নে গাঁথি তোর দেহ
শরীর প্রগাঢ় হয়। যত অসমাপ্ত কথা উড়ে আসে
গেঁথে নিই চুলের ভেতর।
সমস্ত আঙ্গুল যেন গাছ হয়ে আছে, সমস্ত গাছ ঢেকে গেছে গভীর শেকড়ে, সমস্ত শেকড় জুড়ে আত্মহনন।
আমি পাখিটির মতো তাহার কোটরে ঢুকে থাকি।বক্সারের পতনের মতো বালি ঝরে সকাল বিকেল। ধর্ম মুড়ে রেখে যায় ব্রিজের ওপরে। আমি জল হয়ে কাঁধে বয়ে নিয়ে যাই আদিমানবীর বহন করা আলো। তুমি দেখেও দেখো না।

 

১৮.
অস্ত্র ভেবে আচম্বিতে কার কাছে যাবো?
যেটুকু ঐশ্বর্য্য নিয়ে দোল খাও ভোরের বাতাসে
সেটুকু কল্পনা করে আমি ঋণী থাকি।
এই সেই পাতা যার ওপর আঁকা আছে সিঁদুর প্রলাপ।
পুত্র নয় বংশের ঝাড় লণ্ঠন দু’হাতে দুলিয়ে আমি স্থির বসি, পাশে এসে বসে বাল্যকাল।
তেমন তেমন হলে কশেরুকা বরাবর এঁকে দেবো কঙ্কালের বাঁশি
তেমন তেমন হলে সকলের অগোচরে খুঁজে নেবে তোমার কর্নিকা।

 

১৯.
সত্যের পাশে যারা বসতে চেয়েছে
লিখি তাহাদেরও কথা।
প্রেমিক স্বভাব নিয়ে
যারা আজও স্বপ্ন থেকে খিদে পেড়ে খায়
তারাও কিভাবে আজ
উড়ে আসে কলমের নিবে।
আমি চতুর্ভূজ, সারাদিন ঘুরে ঘুরে কান্না শেখাই
হাত ধরে পার করি চাঁদের এপিঠে জ্বলা উঁচু নিচু আলো।
একা হতে গিয়ে
নিবে গেছে যেসব ধুনুচি
গুগগুল ছড়িয়ে তাকে
কি করে বাঁচিয়ে রাখি বলো?

 

২০.
অন্ধকারে থাকি
আলো এসে মুছে দেয় কর্পূরের ছবি।
আগুন লেগেছে বনে
আগুন লেগেছে মনে, লতা ও পাতায়
তুমি কি একবার দরজার ফাঁক দিয়ে চিনে নেবে আহত সঙ্গীকে?

 

২১.
তোমার কানের পাশে বয়ে আসা বাতাসের মতো আমি ঋণী থাকি
ভুলক্রমে সে কখনো কখনো
ছুঁয়ে যায় আমার বারান্দা।
সারাটাজীবন আমি যত অশ্রুজল দু’হাতে মেখেছি
সব যেন মিথ্যা মনে হয়। দূরে দূরে জেগে থাকা টিলা বাঘের গর্জন শুনে অমিত স্যারের মতো বেঁটে হয়ে আসে। একটা ঢেউয়ের ওপর আর একটা ঢেউ, একটা দেহের ওপর আর একটা দেহ, কান্নামাখা। অচেনা হয়ে যাওয়া পথঘাট রাত্রি হলে নেমে আসে আমার উঠোনে।জ্যোৎস্নায় উঠোন যেন হিন্ডালিয়ামের থালা তার চারপাশ ঘিরে উবু হয়ে বসে থাকা ভয় একমনে কথা শোনে। তোমার কানের পাশে গুটিশুটি যে বাতাস সেও কি তোমায় ঋণী রাখে?

 

২২.
প্রতিটি আঁকার পেছনে
কিছুটা রক্তক্ষরণ থাকে।
কলমের ডগায় তারা জমা হয়
তারপর নিব বেয়ে অনায়াসে নেমে আসে। ক্রমে
চোখের জলে ভিজে ওঠে খাতাটা পাতা।
তারপর পাতা বেয়ে সেই কান্না জড়ো হয় ড্রইং রুমের জানালার।
যার ভেতর দিয়ে আমরা শুনতে পাই
পড়শীর সংসার ভাঙার শব্দ,
নিজের সন্তানের খুব চুপ হয়ে যাবার আওয়াজ।
প্রতিটি আঁকার পেছনে ইরেজারের ভূমিকা থাকবে এমন কথা নয়। কথা হলো
সন্তান আমার বটগাছ হয়ে কবে ছায়া দেবে আমাদের।

 

২৩.
সমুদ্র দুয়ারে এসেছে
তুমি একবার উঠে এসে
ছুঁয়ে দেখো
ফেনার মাথায় আঁকা স্বজনের মুখ
তুমি একবার স্মৃতি দিয়ে সাজাও তাহারে।

 

২৪.
যদি জল হয়ে জন্মাতাম
তাহলে তোমার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ার চেয়ে
কি সুখ বা হতে পারতো বলো?
সেই জলের ওপর দিয়ে বইয়ে দিতাম আমার নৌকো
তা একদিন টাইগ্রিস ঘুরে, গাল বেয়ে হাজির হতো তোমার স্তনবৃন্তের ওপর
তখন মৃত্যু এসে চুপিসারে বসতো আমাদের চিলেকোঠায়
ভর সন্ধ্যাবেলা আমরা সমস্ত খুলে ঠিক নেমে পড়তাম তোমার চোখের ভেতরে।

একটা প্রজাপতি আমাদের লক্ষ্য রাখছে কয়েকটা দিন
কিছু শুষে নেবার জন্য প্রতিদিন প্ৰস্তুত হচ্ছে তার শুড়
তার দেয়াল ক্রমশ ভরে উঠছে রঙ্গিন খামে

ঈশ্বর যদি পরজন্ম দিতে চায়,
আমি তোমার চোখদুটো চেয়ে নেবো। দেখে নিও।

 

২৫.
কেউ তুলে না দিলে
কোনোদিন ঘুম থেকে উঠি না।
মুখের সামনে না ধরলে
মনে পড়ে না কোনোদিন ওষুধ খেয়েছি।
ভ্রমক্রমে ঠিকঠাক বাজার করেছি
আমার শত্রু কিংবা স্ত্রী
কখনোই পারবে না এই অপবাদ দিতে।
শুধু একটা জায়গায় ভয়ানক অপরাধী হয়ে থাকি
তুমি ভালো না বাসলেও
চুমু খাই। মৃত্যুকে বিছানায় ডেকে আনি।

 

🍁অলঙ্করণ : প্রীতি দেব 

 

🦋সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও স্বাগত। পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও গল্প, কবিতা, গদ্য, প্রবন্ধ, পুস্তক আলোচনা, উপন্যাস। আলোচনার জন্য পাঠাতে পারেন দুই কপি বই। সরাসরি লেখা পাঠান। ই-মেল আইডি : editor.sasrayanews@gmail.com

অথবা  sasrayanews@gmail.com -এ। 

 

সাশ্রয় নিউজ 🫂 সবার জন্য সবসময়

 

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment