



সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম কবি কবি লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল। কবিতায় নিবেদিত এই কবি কবিতাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে লেখেন। তাঁর লেখনরীতি বহমান সময়ের সঙ্গেই পরিবর্তনশীল। এতেই বোঝা যায়, কবি তাঁর কবিতার উত্তরণ বিষয়ে কতটা যত্নশীল। লেখেন এই সময়ের বহু পত্র-পত্রিকায়। তিনি বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থের প্রণেতা। সাশ্রয় নিউজ-এর আজকের পাতায় রইল কবির গুচ্ছ কবিতা।
লক্ষ্মীকান্ত মণ্ডল
নান্দীমুখ
একখণ্ড মেঘ নিয়ে সন্ধ্যা নামাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে প্রদীপ, শিলাখণ্ডের উপর বসে থাকেন একাদশীর কৃষ্ণপক্ষ, শামখোলের উড়ে যাওয়া নিয়ে বিজারিত যোজন আকাশে ডালপালাহীন অপেক্ষা – গায়ত্রীর পুকুরঘাটে ভাসছে বাদামি মায়া
কোন শব্দ নেই, তবু শ্বাস বাজে দূরে — যেন একা বাঁশি, মরে যাওয়া রাখালের কথা ভেবে, বেজে উঠে করুণ সুর – এরই মাঝে শুধু বাঁশঝাড়ে দৌড়ঝাঁপ করে শেয়াল
তুমিও তোমার মতো একটি কুসুম আঁকতে আঁকতে রিওয়াইণ্ড করো পথ হারানো কপালেশ্বরীর বিচুর্ণ রতিচোখ
বহুধা
শঙ্খ বাজার সাথে সাথে অন্ধকার পর্দাটা কেঁপে ওঠে কোমলতার ফ্রেমে – সঙ্গমরঙের রেখায় তিরতির বয়ে চলেছে নৈঃশব্দের পরমা গতি ; সেই ঋজু শরীরের রক্তচন্দন গাছটি আকুতির পোট্রের্ট আঁকে – সাথে লেজঝোলা পাখির কথনে জেগে উঠছে উঠোনের প্রশ্বাস– হলুদ ফুলের জলদাগ নিয়ে মাটির জঙ্ঘায় নামে শীতশীত দিগন্ত
কোনো ছায়া নেই প্রাহরিক সীমানায় – নদীর আকার বুঝতে না বুঝতেই বনবাদাড় বেরিয়ে আসে বহুধায় – আজন্ম রাতের শেষে আমিও অনন্তকাল– উচ্ছ্বাসে পল্লবিত গোত্রহীন আমাদের দারিদ্র্য অথবা অহংকার
বুকের ভেতর কাঁপতে থাকে সূর্যোদয়
এবার আহুতি
প্রত্যেক অধ্যায় শেষে ষড়রিপু দান করছি স্বাহার কাছে, তিনি কি পুড়িয়ে দিচ্ছেন আলুথালু আজন্ম –আগুন শিখা আকাশ ছুঁতে চায় – পুরোহিতরাও মন্ত্রোচ্চারণের সাথে সাথে দুহাত তুলে ধরেন আকাশের দিকে – ঘন্টাধ্বনিতে মুখরিত চাঁদপাড়া – কারো চোখে অশ্রু নেই, মুখমণ্ডলে ঘামের প্রলেপ নিয়ে তারা শুনতে পায় ওঁ হ্রিং
হারমোনিয়ামের রিডে বসে থাকা মাছিটি কাঁপতে থাকে –মেঘ নামবে আবার – ম্যাণ্ডিবলের কিনারা জুড়ে কালো ক্যানভাসে আগুনের বিভাজিত রেখা – ছাই উড়ে উত্তরীয় শীতলতায়
অগ্নি, তুমি পান করো ঘৃত দুগ্ধ মধু – ধীরাবালার অন্তে শান্ত হোক গনগনে চুল্লীর হাওয়া ; শুকিয়ে যাওয়া গাঁদাফুলের সমর্পণ নিয়ে ফিরে এসো এবার ধুপ পোড়ার শব্দ
তৃষ্ণার তৎসম
কৃষ্ণচূড়া ঝরলেই আমি পর্ণমোচী হয়ে যাই আর কতকগুলো দাঁড়কাক দুপুর পার করে দেয় সুর রিয়্যালিজমে, মাটির ফাটলে সেই সরস দাগের উপর একটি উলঙ্গ মানুষ শুয়ে থাকে – তার মাথা শূন্য, তার শরীর শূন্য – উত্তাল বাতাসে দাগহীন হয়ে যাওয়ার ভয়ে ডিভাইন করতে থাকে নীল রং
সে কোনো মৃত্যু নয়, বলি – এর পরও দেখা হবে, দু’টি পাখিতে হাসবে বটবৃক্ষ, পিঙ্গল প্রান্ত থেকে মুক্ত বর্ণমালা হাতে নিয়ে আসবে পৃথিবীর আকার
এরপর হন্যে হয়ে খুঁজে যাওয়া তৃষ্ণার তৎসম – দেয়াল বিহীন আর্তনাদ ডুবসাঁতার দিতে দিতে আনবিক হয়ে যায়
ঋতুর পীঠে ভগীরথ
এ যেন একাগ্র দৃষ্টিতে নিজের কপালের দিকে তাকিয়ে থাকা, কোনো আলো নেই শিরা-উপশিরায় – তবু কেউ কারও নাম দেয় উৎসর্গ, সাদা পৃষ্ঠায় ক’য়েকটি রঙিন বিন্দুর গ্লোবিউলস মিশে যায় দলমণ্ডলে
আয়নার ভিতর নেমে আসছে দূরের কার্নিশ – প্রবল ঋতুর পীঠে ভগীরথের ভারহীন জীবন নিয়ে উলম্ব রাতটি দুলছে তো দুলছেই– গঁদ পাতার মুকুট আর কুর্চি ফুলের পায়েল নিয়ে ঢুকে যাচ্ছে শেষ ফাল্গুনের পাঁজরে
তুমিই একমাত্র নাব্যতা, দাঁড়িয়ে থাকা আকাশ ও দিগন্তের নীলে ছড়িয়ে যেতে যেতে গা ছমছমে মিউজিয়াম – আস্ত জীবনের গঙ্গাজল মানতের পর কোথাও না কোথাও ফুটিয়ে তোলো রুদ্র পলাশ
স্বমেহনে বেদুইন বাজে
স্বীকার করছি গ্রীষ্মের ঝাঁঝালো গন্ধের সাথে কিছু ডালপালা ছেঁটে দেওয়ার জন্য দায়ী আমি , যদিও নিভৃত ছিলাম – ভুল বানানের দিকে যেতে যেতে নার্ভের ব্যথার উপর বিষ আঙুল চেপে তাকিয়ে ছিলাম রাধাচূড়ার দিকে , তবু প্রতিটি সন্ধিক্ষণে অস্থি আর লিগামেন্ট স্বমেহনে বেদুইন বাজে –
তুমি কী চেয়েছিলে – উঁকি দেওয়া দিবাকরের রং মিশে যাক অপেক্ষারত পাখিটির বুকে – অন্ধ করো নীহারের নিঃশব্দ পতন – ময়না তদন্ত নিয়ে অদূর অন্দরে শেয়াল ডাকে
অঙ্কন : প্রীতি দেব
🦋সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও স্বাগত। পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও গল্প, কবিতা, গদ্য, প্রবন্ধ, পুস্তক আলোচনা, উপন্যাস। আলোচনার জন্য পাঠাতে পারেন দুই কপি বই। সরাসরি লেখা পাঠান। ই-মেল আইডি : editor.sasrayanews@gmail.com
অথবা : sasrayanews@gmail.com
🌱
সাশ্রয় নিউজ 🫂 সবার জন্য সবসময়
