



কবি কুন্তল দাশগুপ্ত কবিতার পাশাপাশি লেখেন প্রবন্ধ, গল্প। বেশ কিছু গদ্যের প্রণেতা। কবি নিজের সম্পর্কে বলেন, ‘১৯৬৬ সালে বোধজন্ম হয়নি। যখন হল, কুন্তল শব্দটি যে তাকে উদ্দেশ্য ক’রে উচ্চারণ করে পরিজন তা বুঝে নিল টলমলেবেলা। খড়িবেলা থেকে কলমকাণ্ডের চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত কুন্তল শব্দটি মগজের ঘুঁজিঘরে আত্মপরিচয়ের। হঠাৎ অন্নদাতার কলমের এক খোঁচায় কুন্তল কেটে অমিতাভ। অন্নদাসের মনকে কবে আর পড়তে চেয়েছে? কলমকাণ্ডের এই শেষ পর্বে সরকারি খাতা থেকে কাটা যাওয়া নামটাকে ঐ কলমের ভরসাতে ফেরাতে চায় সরকারি অমিতাভ, কবি কুন্তল হয়ে।’ সাশ্রয় নিউজ-এর আজকের পাতায় রইল কবির একগুচ্ছ কবিতা।
কুন্তল দাশগুপ্ত-এর কবিতাগুচ্ছ
যাওয়া তো নয় যাওয়া
যেতে হয়।
কারো কারো তাড়া থাকে,
ঊর্ধ্বশ্বাসে চলে যায়।
কারো যাওয়া— স্বস্তির শ্বাস।
অনেকেই নিয়ে যায় রঙের বাক্স
ফেলে ধুপ-ছাই রং।
কারো কারো যাওয়া আর হয়েই ওঠে না।
তুমি কি পারলে চলে যেতে?
তোমাকে কুড়িয়ে নিয়ে শূন্য কেমন আমাকে আপন করে শূন্য করেছে।
বসবাস
তোমার নীরবতার বুকে মুখ রাখি। কাঁদি…
হৃদয়ে কাঙ্খার গন্ধ লেগে আছে তোমার বনগন্ধী উপত্যকার…
তোমার জায়গিরদারী কী যত্নে সাজিয়েছে অনুস্বরদ্বীপ!
বিলোবার জন্যে এই এত আয়োজন!
অনন্ত নোনাজল পার হয়ে এসে নিঃস্ব বসত তুমি ঘনালে এখানে মদালসা।
ফেরার পথ…
পাড়াগাঁ-র গা থেকে
খসে গেছে পুরোনো পিরান।
ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে চলা মফস্বলের
তেষ্টা মেটায় আজ বোতলের জল।
কোথাও নিলাম হবে নদী-চর জেনে, মফস্বলের লোভ হয়,
অভিমানে নদী আত্মঘাতী হলে
শুধু স্মৃতিটুকু লেগে থাকে তোমার আঙুলে।
ছেঁড়াখোঁড়া বাংলার অকরুণ ডাঙা
মজে যাওয়া নদীদের তীরে
বহুতল গল্পে ঝিলমিল করে।
অনুস্বরদ্বীপ থেকে তোমার ফেরার পথ ক্রমশ হারায় চন্দ্রবিন্দুদ্বীপে…
বিশ্বাস
পুকুরের বুক থেকে চুরি গেছে হাঁসের সাঁতার।
পুকুর চুরি তো আজ হামেশাই হয়।
যে ক’খানা এখনও রয়েছে
তাদের গন্ধ থেকে কলমি উধাও।
পোড়া মবিলের মত জলে
মশাদের ভারি বাড়াবাড়ি।
চাঁদা আর সরপুঁটিদের গুগল আর্কাইভে তের কোটি ভিউয়ার পেয়ে লেজ মোটা হল।
আবহমানের ভাঙা-ঘাট,
কেউ আর সরে না এখন।
অন্ধকার জ্বলে ওঠে পরিত্যক্ত ঘাটের পৈঠায়।
পাড়াগাঁ-র মাটি ভেদ ক’রে
জল তোলে সাবমার্সিবল।
তোলা জলে গা ধুয়ে
প্রসাধন সেরে নেয় নয়া বহুতল।
ছড়িয়ে বাঁচার দিন জমা ক’রে হরফের হাতে
হিসেবি স্কোয়ার ফুটে বাংলা-সবুজ দুমড়ে মুড়ে বনসাই
তবে— এখনও নয়াচাঁদ রাতে পুকুর-বৃদ্ধ জল জোয়ার সাজায়…
ফেলে আসা গেঁয়ো সুর
ঢুকে পড়ে মগজ ঘুঁজিতে
বিশ্বাস জাগে,
নয়াচাঁদ হেঁটে হেঁটে দখল করবে পুরোচাঁদ।
ভারি আদিম কাহিনি
নদীরাই বেঁধে দেয় ঘর।
পৃথিবীর আদিম কাহিনি, আজও…
মানুষের ঘর-বাড়ি, তবে নদী নিয়ে নেয় অনেক সময়।
কেন?
ওদেরও তো ঘর আছে,
ওরাও তো ফিরে আসে ঘরে।
ওদের ফেরার গান আর স্বরলিপি
লিখে চলে সূর্যের সোনার লেখনী মেঘ-পাতা বুকে।
বাড়িওলা বেঘর অভাগা, বৃষ্টি লুকিয়ে ফেরে, চারপাশে উঠে আসে— থোপা থোপা অন্ধকার।
মুখোমুখি বসবার কেউ না থাকায়
গল্পের টানে তার কলম, কেমন লেখনী হয়ে যায়…
ফিলামেন্ট
জানলার চোখে নেই অগাধ আকাশ,
শুধু শূন্যতা লেখা আছে তারায় তারায়…
জানলায় উঁকি মারা আকাশের ফালি কোনও প্রথম সন্ধ্যায়— আলো চায়?
জীবনের কালো ঘেঁটে কেটে গেছে কাল-দুইহাত।
আঁধার বেসাতি ক’রে বেঁচে বর্তে আছি পরজীবী।
তোমার মেধার থেকে রস শুষে শুষে মাতোয়ারা এই যে জীবন—
তাকে তুমি আদৌ জাননি বলে আকাশের ফালি জুড়ে এমন দাঁড়ালে নিঃঝুম।
আলো চাও?
আমার আলো তো নেই, শুধু তাপ পড়ে আছে।
অন্ধকার থেকে আরও অন্ধকারে যাই, এক ফুঁয়ে ঘন ঘোর আঁধার জ্বালাই…
তাপ পেতে পেতে একদিন এ হৃদয় ফিলামেন্ট হবে। ততদিন, অন্ধ করে রেখো যত্নিকা।
ছোঁয়া
পুরাতন বাড়ি ঘরে জমে থাকে গল্পের ফোঁটা…
নোনা ধরা দেয়াল ঝুরো নক্সী কথায়
অহেতুক অভিমানী ফাটল কালোর চৌচিরে কুয়োতলা…
খিড়কি-পুকুরের বুকে বাজে রমণ-গোপন দায়।
ভাঙা পাঁচিল নির্দায় ঘাড়
মুখ গুঁজে পড়া আহত জটায়ু…
নিলামের দিন অপেক্ষায়…
আমার বিস্রস্ত দিন
এইসব গল্পের হাত ধরে বাঁচে…
গন্ধটুকু উবে যাবে আগামীর গন্ধমাদনে?
বলো দেখি
তুমিও কি ভিরে যাবে ভিড়ে?
মাঠে মারা যাবে!
শূন্য— ছুঁয়ে থেক অলীক আঙুলে,
যেমন পুরনো বাড়ি ছুঁয়ে থাকে আমৃত্যু স্বপ্নের ভিতর।
কবুলিয়ৎ
চন্দন মাখা যত স্বপ্নের হাতে
বাঁধা আছে সময়ের থুত্থুরে ঘড়ি।
খুনখুনে ঘড়ি-ডাকে
অগরু গন্ধ পাই স্বেদ- চন্দনে…
চারটি বাহক কোথা থেকে চলে আসে, হাঁটে আগে-পরে।
আমার সর্বনাশ নিয়ে গান বাঁধে খোল-করতালে…
সময়-তলানিটুকু ফেলে,
সাধ হয় মেখে নিতে আগুনের ফোঁটা।
প্রিয় শব্দের কাছে বিদায় নেবার কালে তোমাকেই মনে পড়ে।
ভেজা বাতাসের এক স্নিগ্ধ ঝলক বিদগ্ধ সময়ের আমাকে জড়ায়…
আগুনের ডাক শুনি রোজ নির্ভুল, তবুও সে মেহগনি দুঃখের থেকে ফিরতে পারি না। একডুব নোনাজল পার হয়ে হয়ে
আমার সকল গান তোমাকেই খোঁজে…
ছবি : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক
এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com
বি: দ্র: সমস্ত লেখা লেখকের নিজস্ব। দায় লেখকের নিজস্ব। কোনও বিতর্কিত বিষয় হলে সংবাদ সংস্থা কোনওভাবেই দায়ী থাকবে না এবং সমর্থন করে না। কোনও আইনি জটিলতায় সাশ্রয় নিউজ চ্যানেল থাকে না। লেখক লেখিকা প্রত্যেকেই লেখার প্রতি দ্বায়িত্ববান হয়ে উঠুন। লেখা নির্বাচনে (মনোনয়ন ও অমনোনয়ন) সম্পাদকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
