Sasraya News

Thursday, March 13, 2025

Poet Banibrata : কবি বাণীব্রত এর কবিতাগুচ্ছ

Listen

৯৭৪ সালের এক বৈশাখী দিনে কবি বাণীব্রত-এর জন্ম। স্নাতক করে কর্মজীবন শুরু। ছোট থেকে লেখার সঙ্গে থাকলেও ২০১৭ সালের জুন মাসে ছদ্মনামে সাহিত্যের আঙিনায় আত্মপ্রকাশ। তারপর ২০১৭ থেকে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে পরিচিতি লাভ। বর্তমানে চাকরির ছেড়ে প্রকাশক হিসেবে কর্মজীবন পরিবর্তন। সেইসঙ্গে ২০২২ সালের মে মাস থেকে নিজের প্রতিষ্ঠিত “শব্দবাণী সাহিত্য পত্রিকার” সম্পাদনা করা। ২০২১ সালের অক্টোবর প্রথম একক কাব্যগ্রন্থ “সেঁজুতি”-এর আত্মপ্রকাশ। দ্বিতীয় বই অনুকবিতার সংকলন “ছন্দেঅনু” প্রকাশ পায় ২০২২ সালে মার্চ মাসে বালি বইমেলায়। ২০২৩ সালে একক গল্পের বই “নিজের জন্য বাঁচা” মে মাসে প্রকাশিত হয়। ২০২৩ এর বইমেলায় একক কবিতার বই “রংমাটির দেওয়াল” প্রকাশ পায়। তাঁর নেশায় গল্প কবিতার সঙ্গে উঠে এসেছে নাটক ভ্রমণ এবং প্রবন্ধ। ২০২৪ এর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বইমেলা শব্দবানী সাহিত্য পত্রিকা, লেখকের সম্পাদনাতেই শব্দবানী আন্তর্জাতিক সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে ১ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ঢাকাতে। সাশ্রয় নিউজ -এর আজকের পাতায় থাকল কবি বাণীব্রত -এর কবিতাগুচ্ছ।  

 

 

বাণীব্রত

কবিতা নষ্ট মেয়ে

 

 

এই মেয়ে তুই নাকি নষ্ট হলি
বাবার পছন্দে বিয়ে করলি,
বর যখন বিক্রি করল জানলিনা সেকথা।
জানলো না কেউ তোর মনের ব্যাথা।

এই মেয়ে তুই নাকি নষ্ট হলি
বাবুদের মন জোগালি,
বিনিময়ে পয়সা পেলি।
নিজের জন্য কি করলি?

মাকে হারানোয় বাপ দেখতো
সেই তোকে প্রথম ভোগ করল,
সেই থেকে তুই নষ্ট হলি
সে কথা কি লোকে জানলো?

বাপের যখন টাকার দরকার
তখন তোকে বিক্রি করল,
বিয়ের নামে প্রহসন হলো,
তোর বিয়ে লোকে দেখলো।

জানলো না কেউ আসল কথা
সবাই ভাবল ইচ্ছে করে নিয়েছিস এই রাস্তা,
পুরুষ গুলো পয়সা দিয়ে শরীর নেয়
তারাই সমাজে গিয়ে, তোকে বদনামও দেয়।

তুই যখন পোয়াতি হোলি
তখনও তুই পুরুষের মন জোগালি,
নানা ভাবে পিষ্ট হলি
অবশেষে সন্তান বিয়লি।

একদিন তোর বাপ এলো
তোকে দেখে অবাক হলো,
জিজ্ঞেস করল তুই এখানে?
ফিরে যাচ্ছিল তোকে দেখে
অবশেষে পিছু ডাকলি
তার থেকেও পয়সা নিলি
বললি বাপ হয়ে আমাকে
এখানে ঠেলে দিলি?

 

 

 

নিরালায় জলছবি

 

সঙ্গী হোক গহীন পথের ভালোবাসা,
খুশির গাঁঙে জোয়ার লাগুক
গোধূলির রাঙানো সাঁঝ, আঁকুক জয়টীকা।

কুয়াশার মায়াবী ললাটে শীতের চুম্বন
কবরীতে জংলী ফুলের মালা
চোখে চোখ রেখে হাসির খেলাঘর।

ভালোবাসা যেন এক পাড় ভাঙা নদী
কচুরিপানার মতো ভেসে যাওয়ার ক্ষণে
নিরালায় আঁকে জলছবি ।

কবুতরের ডানায় শান্তির আহ্বান
ভাঙা একতারাও বাউলের সুর তোলে
কোন এক খেই হারানো সকাল-বিকেল-সাঁঝে।।

 

 

 

ভালোবাসার জলছবি

 

 

অমানিশা মুখ লুকায় কোনো এক সন্ধিক্ষণে
পলাশ রাঙা ভোর আঁকে ঘুঘুর ঠোঁট
কাজল কালো খোঁপায়
অবকাশের পেখম মেলা,
মিষ্টি সুখের ছবি আঁকে শত গোলাপের কাঁটা
গোলাপ পাপড়িতে আদর মাখুক প্রেমের ওম
আলিঙ্গনে আবদ্ধ নিস্পাপ দুটি মন
দুই শালিখের ঠোঁটে সোহাগ বাঁচে
শীতের আবেশ থাকে
আড়মোড়া ভাঙা সময়ে
কিছু অপেক্ষায় কিছু বা…
আশা নিরাশায়
হয়তো রাখবে হাত
কোন এক পাটভাঙা গোধুলীতে
লাবন্য মাখুক কোন সোনালীক্ষণ
আশায় বা নিরাশায়।।

 

 

অধরা

 

 

গ্রহণের আধখানা চাঁদের বুকে
মুখ লুকায় সন্ধ্যা তারা
নিবিড় আলিঙ্গনে আবদ্ধ জোচ্ছনা
আকাশের রোমান্টিকতাকে খোঁজে,
আকাশ চায় বেহিসাবি জীবনের স্বাদ।
সিঁদুর রাঙা ভোর অপেক্ষায় থাকে
পাট ভাঙা আবেগ আর ভালোবাসার।।
না বলা কথারা খোঁজে সময়
অপলক দৃষ্টি শব্দের,
হয়তো ভাঙ্গবে ধৈর্যের বাঁধ…

 

 

বহ্নিশিখা

 

 

বারুদের স্তুপে বহ্নিশিখা হও
দাবানল ছড়িয়ে দাও দিকেদিকে
পুড়িয়ে দাও মিথ্যের মুখোশ…

জ্বলে উঠুক সত্যের বাতি
কালের অন্ধকার সরিয়ে

মুখ ঢাকুক লজ্জারা
পোরা বারুদের ছাইয়ে
ধর্ষিত হোক অহঙ্কার

তবুও যদি সত্য ও শান্তি ফেরে
লেলিহান শিখার হাত ধরে

 

 

কবিতা ওদের পুজো

 

 

শিশির ভেজা ঈগলের ডানায়
শরতের গন্ধ লাগে
শিউলি গন্ধ ছড়ানো আঙ্গিনায় মেশে
একমুঠো ভাতের গন্ধ।

কোটি টাকার আয়োজন চারদিকে
মা আসছে, মা থাকবে পাঁচদিন,

গৌরি, রুমি,অসীম কানাইরা ছুটে বেড়ায়
এ প্যান্ডেল থেকে ও প্যাণ্ডেলে।
একটা নতুন জামা বা কাপড় যদি পায়
যদি পায় একমুঠো ভাত।
পাশ থেকে ছুটে যায় ওদেরই বয়সী শিবু, রেশ্মিরা
ডুকরে কাঁদে গৌরীদের মন
না পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায়
তবে কেন এতো আয়োজন? কেন এতো আড়ম্বর?

যদি সন্তানদের এক মুঠো ভাত বা কাপড় না মেলে
তবে কিসের জন্য আসা তোর… এক বছর পর।।

 

ছাদ

 

 

এই শহরে এমন একটা ছাদ চাই
থাকবে স্বাধীন বাঁচার রসদ
থাকবে না ভেদাভেদ
দমিয়ে রাখার হিসেব-নিকাশ
শান্তি জাগবে পূবালী আলোর রেখায়
রাতের তারারা ঘুমিয়ে পড়বে অসময়ে
থাকবে না বেঁচে থাকার লড়াই
প্রয়োজন আপন হয়ে মিশবে প্রিয়জনে
যেখানে শ্বাস নেব প্রাণ ভরে
হিংসা পুরে যাক শ্মশানের পোড়াকাঠে
কবরের বুক ঢাকুক রেশমি চাদরে
সেই রকম একটা ছাদ দাও
ঘুমিয়ে থাকা ইচ্ছেরা জেগে উঠুক
হৈমন্তিক দুপুরে পোড়া ভাতের গন্ধ কে ঢেকে
চারিদিকে ছড়িয়ে যাক বাসমতীর সুবাস
লাঞ্চনা গঞ্জনার শিকার বেশ্যারা পাক স্বাধীন প্রাণ।
দাও! আমাকে সেই ছাদটাই দাও।

 

 

 

কবিতা প্রহর গোনা কালবৈশাখী

 

হৃদয়ের ফুলদালিতে রাখা
কাঁটা ছাড়া রক্তিম গোলাপ
সুখের গন্ধ ছড়িয়ে যাক
হৃদয় কুঠুরির দেয়ালে,
স্মৃতির পাতায় রাখা ছেঁড়া সময়
অনন্ত সুখের বাসনায়
উষ্ণতা ছোঁয় ঠোঁট
পাগলপারা মনে
ধুকপুকানির খেলা ঘর
বাইরের সর্বনাশা গরমের মতো
পুড়ে যায় সমস্ত শরীর
প্রহর গোনে কালবৈশাখী।।

 

 

শ্রাবণ ধারা অশ্রু ধারা

 

 

আজও সেই যে শ্রাবন ধারায় ভেজার ইচ্ছে জাগে
ফেলে আসা স্মৃতিগুলো মনের ঘরে নাচে,
হাতের উপর নেই যে হাত,নেই কদমের গন্ধ
মনে পড়ে অনেক কথাই, হিসেব করা বন্ধ।

শ্রাবন দিনে শ্রাবণ ধারায় ভিজবে মাটি
আঘাত ভুলে মন যে হবে আগুন পোড়া খাঁটি
ব্যাথা বেদনা সব থাকবে চেপে বুকের মাঝে
অব্যক্ত কথা গুলো পড়ে থাকে লাজে।।

ভিজবে আঁচল ভিজবে মন সেই শ্রাবণেতে
মনের খবর কে বা রাখে,কার এসে যায় তাতে,
মনের মাঝে কষ্ট গুলো শুধুই দলা বাঁধে
চোখের কোণে জল যে শুকায়, ডুকরে শুধু কাঁদে।

 

🌱অলঙ্করণ : প্রীতি দেব ও আন্তর্জালিক 

আরও পড়ুন : Sasraya News Literature Special, June 2, 2024 || Issue 19 || সাশ্রয় নিউজ সাহিত্য স্পেশাল || ২ জুন ২০২৪, সংখ্যা ১৯

 

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment