Sasraya News

Friday, March 28, 2025

Parliamentary Democracy : মানবতার খোঁজে পাঁচজন বিদ্যোৎসাহী

Listen

আদিম সভ্যতায় গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজে একটাই মূল্য ছিল ব্যবহারিক মূল্য এবং বিনিময় প্রথা। কিন্তু বর্তমান বাজারে ‘পণ্য ভক্তি’-এর আলাদা মাত্রা যুক্ত হয়েছে। বেসরকারি পুঁজির গভীর গবেষণায়। পণ্যের বৈচিত্র, বিভিন্নতা দাবি করছে পণ্যের ব্যবহারিক মূল্য আর বিচার্য বিষয় নয়। বিষয়টি জটিল না করে পরিষ্কার করে বললে বলতে হয়, চিন্তা করে একজন কারিগর পণ্য তৈরি করার ক্ষেত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর নিজেকে আর দক্ষ কারিগর বলে দাবি করতে পারে না। লিখেছেন : দীপেন্দু চৌধুরী

 

ছবি : প্রতীকী

 

ন্নয়নশীল বর্তমান ভারতে গণতন্ত্রের পরিসর খুঁজছেন তাঁরা। বাকস্বাধীনতা, লেখার স্বাধীনতা, শিক্ষার অধিকার, তথ্য জানার অধিকার, খাদ্যের, সুস্বাস্থ্যের অধিকার, স্বচ্ছ ভারতের অধিকার, পরিবেশ ভারসাম্যের অধিকার, প্রতিবাদের পরিসর, রাষ্ট্র তথা শাসকগোষ্ঠীর ভুলত্রুটির গঠন মূলক আলোচনার পরিসর খুঁজছেন তাঁরা। যদিও বেসরকারি পুঁজির নিয়ন্ত্রকগোষ্ঠী এবং বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি উন্নয়নশীল ভারতে উন্নয়ন এবং বিকাশের ধারা অব্যাহত আছে। এবং ভারতের সব স্তরের মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করছে।

 

নকশাল বাড়ি আন্দোলনেও সোভিয়েত রাশিয়ার বিপ্লবের প্রভাবকে আমরা অস্বীকার করতে পারিনা। চিন বিপ্লবের প্রভাবও এক্ষেত্রে হয়ত ছিল। আমরা অঞ্চলের দ্বারা প্রভাবিত হই। রেভোলিউশন বিকাম এ ইভেন্ট। বিপ্লবের পরে পার্টি নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত আর্মির নেতৃত্বে চলে আসে। যেটা রাশিয়া এবং চিনে দেখা গেছে।

 

আমাদের দেশে প্রত্যেকটি নাগরিকের সমান সাংবিধানিক অধিকার স্বীকৃত। ১৯৪৬ সালের ৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছিল ভারতের সংবিধান রচনা। ৩০৮ জন সদস্যের গণপরিষদ প্রায় তিন বছর সময় নিয়ে ভারতের সংবিধান রচনা করেন। এটাই ছিল সে সময়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম লিখিত সংবিধান। ভারতে সম্পত্তির মালিকানা অর্জনে যেমন কোনও নিষেধাঞ্জা নেই। মালিকানা দখল করার কৌশল যাই হোক, একবার সম্পত্তির মালিকানা দখল হয়ে গেলে তা হস্তান্তর করার ক্ষেত্রেও কোনও সমস্যা হয় না। বর্তমান উদার অর্থনীতি তথা বাজার অর্থনীতিতে সরকারের আইন আরও সহজ হয়েছে। লাইসেন্সপ্রথার অবসান হয়েছে।

 

ছবি : প্রতীকী

 

এমনটা দাবি করে থাকেন ভারতের রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতৃত্ব। আদিম সমাজ ব্যবস্থার সময় থেকে উত্তর সত্য (পোস্ট ট্রুথ) সময়কাল পর্যন্ত উৎপাদন ব্যবস্থার এক যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটে গেছে। কেন্দ্রীয় পুঁজির ক্রমাগত ঘনীভূত হওয়ার কারণে কারিগর বাধ্য হয়ে তাঁর নিজের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেয়। দারিদ্রই এর প্রধান কারণ। কারিগর একমাত্র নিজের শ্রমশক্তিকেই পুঁজি করে নিজেকে টিকিয়ে রাখে। সে মজুরির বিনিময়ে শ্রম বিক্রি করে শ্রমিক হিসেবে অর্থ রোজগার করে। এক সময়ের সৃষ্টিশীল কারিগর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পরিণত হয় মজুরি-শ্রমিকে। মালিকের নিয়ন্ত্রণে তাঁকে ১০-১২ ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য হতে হয়। অসংগঠিত শিল্পে। সংগঠিত শিল্পে ৮-১০ ঘণ্টা মজুরি-শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হয়। পুঁজির দাপটে সে নিজে ক্ষুদ্র অতি ক্ষুদ্র শিল্প থেকে সরে এসে মজুরি-শ্রমিকের কাজ করে।

 

ছবি : প্রতীকী

 

আদিম সভ্যতায় গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজে একটাই মূল্য ছিল ব্যবহারিক মূল্য এবং বিনিময় প্রথা। কিন্তু বর্তমান বাজারে ‘পণ্য ভক্তি’-এর আলাদা মাত্রা যুক্ত হয়েছে। বেসরকারি পুঁজির গভীর গবেষণায়। পণ্যের বৈচিত্র, বিভিন্নতা দাবি করছে পণ্যের ব্যবহারিক মূল্য আর বিচার্য বিষয় নয়। বিষয়টি জটিল না করে পরিষ্কার করে বললে বলতে হয়, চিন্তা করে একজন কারিগর পণ্য তৈরি করার ক্ষেত্র থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর নিজেকে আর দক্ষ কারিগর বলে দাবি করতে পারে না। বিগত শতাব্দীর ৭০-৮০-র দশক থেকেই ভারতে এই পরিবর্তন আস্তে শুরু করে। এক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তনের কথা সমাজ বিঞ্জানীরা বলছেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথম থেকেই একচেটিয়া পুঁজির দাপট বেড়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প এসে মজুরি-শ্রমিকের কাজও কমিয়ে দিয়েছে। বাজারে যতটা বিনিয়োগ হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন পড়ছে উচ্চ বেতনভোগী পেশাদারদের। যারা মূলত নকশা এবং বিপণনের সঙ্গে যুক্ত। এবং পরিষেবা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত।
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উপযোগী শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ থাকার কারণে চাকরি পেতে এঁদের অসুবিধাও হচ্ছে না। ভারতে নতুন বিনিয়োগ নিয়ে যে বিতর্কই থাক তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের মন্দা কতটা আছে সে নিয়ে খুব কিছু আলোচনা শোনা যায় না। একুশ শতাব্দীর ভারতে উদার অর্থনীতি এবং বিশ্বায়নের প্রভাবে সমাজতান্ত্রিক শিবির কিছুটা হলেও কোণঠাসা। সাম্প্রতিক সময়কালে এই বিষয়কে মাথায় রেখে কলকাতায় একটি সেমিনার হয়। ২০১৯ সালে সমাজ বিঞ্জানী অঞ্জন ঘোষের স্মৃতিতে নবম সভা ছিল। ওই বছরে নবম আলোচনার শিরোনাম ছিল, ‘আফটার দ্য রেভোলিউশনঃ এসেস ইন মেমোরি অব অঞ্জন ঘোষ’। বক্তারা ছিলেন, যথাক্রমে আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পার্থ চ্যাটার্জী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিঞ্জানের অধ্যাপক সঞ্জীব মুখার্জী, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যলয়ের ফিল্ম স্টাডিজের অধ্যাপক মৈনাক বিশ্বাস, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক প্রণবকান্তি বসু এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজত্বের অধ্যাপক বিভাস বাগচী।
আলোচনায় মূলত বেছে নেওয়া হয়, ভারতের প্রাক ঔপনিবেশিক যুগ, উত্তর ঔপনিবেশিক সময়কাল, সমসাময়িক তথা উত্তর ভারতের সমাজ বিন্যাস। এবং ভারতে রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রভাব। এদিনের আলোচনায় শোনা গেল সেই কথা, ‘অঞ্জন গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন সামাজিক আন্দোলনে এবং সিনেমা শিল্পে, অঞ্জন এক্সিপেরিমেন্টাল কাজ করতে ভালবাসত। সাইকো অ্যানালাইসিস। সোশ্যাল ডিভিশন অব লেবার ছিল ওর বিষয়।’ পার্থ চট্টোপাধ্যয় শুরুতেই বললেন। ‘এই আন্দোলনে আমাদের অর্থনৈতিক লাভের বিষয় থাকে না।’ বক্তাদের বক্তব্য থেকে খুব পরিষ্কারভাবে যে বিষয়গুলি উঠে এসেছে তার মধ্যে অন্যতম সোভিয়েত রাশিয়ার পতন হয়েছে এটা যেমন বাস্তব, আবার এটাও অস্বীকার করা যাবে না যে, রাশিয়ার বিপ্লবের ব্যপক প্রভাব ভারতে তথা আমাদের এই বাংলায় পড়েছিল। সোভিয়েত রাশিয়ায় বিপ্লবের প্রভাব ইকবাল, কাজী নজরুল ইসলামকে প্রভাবিত করেছিল, আমরা রানার পেয়েছি, পাল্কির গান পেয়েছি এবং একলা চলোর মতো গান পেয়েছি। নভেম্বর বিপ্লবের পরে কবি ইকবাল তাঁর ‘লেনিন’ শীর্ষক কবিতার একটি স্তবকে লিখেছিলেন, ‘’জ্বলন্ত আশায় ভরা/মৃত্যুহীন বিশ্বাসের বাণী,/ উদ্ধত শাসকগোষ্ঠী লীন হবে-/ভবিষ্য করে কানাকানি……।‘’ উল্লেখিত সময়কালটা ছিল ভারতের অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বের হাতে। তাই সংস্কৃতি এবং সৃষ্টির ঘরানায় কোনও ভেদাভেদ ছিল না।
সিনে ক্লাব অব ক্যালকাটা আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা ছিল। সেই সময়ের লিটল ম্যগাজিন নকশাল বাড়ির প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেনি। উল্লেখ করা যায়, চিত্রভাষ, চিত্রকল্প প্রভৃতি। ১৯৭৩ সালে সত্যজিৎ করেন অশনি সংকেত, মৃণাল সেন করেন পদাতিক। কালের পদধ্বনিকে অস্বীকার করতে পারেননি তাঁরা। অশোক রুদ্রের মতো ব্যক্তিত্ব সেই সময়ের সিনেমা নিয়ে লিখেছেন। আলোচকরা আরও দাবি করছেন, বর্তমান সময়ে সব থেকে বেশি আলোচ্য বাংলা উপন্যাস ‘খোয়াব নামা’-এর লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস-এর ওপর রুশ বিপ্লবের ব্যপক প্রভাব পড়েছে। এবং এছাড়া হিউম্যন ক্যাপিটাল, কাস্ট সিস্টেম, সোশ্যাল সিস্টেম প্রভৃতি ক্ষেত্রে রুশ বিপ্লবের প্রভাব ব্যপকভাবে লক্ষ করা যায়। ‘অকুপাই ওয়াল স্ট্রীট’ আন্দোলনেও রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রভাব লক্ষ করা গেছে। তারও আগে ১৯৭০ সালের নকশাল বাড়ি আন্দোলন আমাদের ব্যপকভাবে নাড়া দিতে পেরেছিল। নকশাল বাড়ি আন্দোলনেও সোভিয়েত রাশিয়ার বিপ্লবের প্রভাবকে আমরা অস্বীকার করতে পারিনা। চিন বিপ্লবের প্রভাবও এক্ষেত্রে হয়ত ছিল। আমরা অঞ্চলের দ্বারা প্রভাবিত হই। রেভোলিউশন বিকাম এ ইভেন্ট। বিপ্লবের পরে পার্টি নেতৃত্ব শেষ পর্যন্ত আর্মির নেতৃত্বে চলে আসে। যেটা রাশিয়া এবং চিনে দেখা গেছে। ইতিহাসবিদ পার্থবাবু দাবি করেন, রাশিয়া বিপ্লবে একটা আদর্শ ছিল। ফ্রান্স এবং আমেরিকান বিপ্লবে পুঁজিবাদের ফ্লেভার ছিল। পাঁচজন লেখক পৃথক পৃথকভাবে বললেও পার্থবাবু সামগ্রিক বিষয়ে আলোকপাত করেন। নিজের বিষয় হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ভারতে বামপন্থীদের দলগত অবস্থান।

 

ছবি : প্রতীকী

 

তাঁর বক্তব্য ছিল, সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে ভারতে সংসদীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী বামপন্থীরা দু’একটা অঞ্চলে থেকে গেলেও তাঁদের ওপর খুব একটা ভরসা করা যাচ্ছে না। তাই নাগরিক সমাজ বা সিভিল সোসাইটির বাইরে পরে থাকা বিরাট এক জনসমাজ তৈরি হয়েছে ভারতে। জরুরী অবস্থার পরে গণতন্ত্রীকরণের দিক থেকে ভারতের রাজনীতি গভীরতা পেয়েছে। বর্তমানে গণতন্ত্র প্রশাসনিকতার সঙ্গে ওতপ্রোত হয়ে গিয়েছে। এমনকি মাওবাদীরাও তাদের জনগোষ্ঠীর হয়ে সরকারি সুবিধা আদায় করে দেওয়ার জন্যে মধ্যস্থতা করে থাকে। দাবি করেন আলোচকরা। মাওবাদীদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ বাদ দিলেও শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা আছে। ৪০% মহিলা ক্যাডার মাওবাদী দলে। এঁদের কেন্দুপাতা সংগ্রহ করে সংসার চলে। এটাকে জনতার অর্থনীতি বলা যায়। জল জঙ্গলের দাবি তাঁরা পুনরায় তুলছে। ভারত রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গেরিলা কায়দায় এরা নিজেদের এলাকায় সশস্ত্র লড়াই করছে। এই দলে ক্যাডার নিয়োগ করা হয় মধ্যবিত্তদের নেতৃত্বে। আমাদের বইয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করতে চেষ্টা করব। ২০১৯ সালে ‘আফটার দ্য রেভোলিউশনঃ এসেস ইন মেমোরি অব অঞ্জন ঘোষ’ আলোচনা সভায় ওইদিন বলেন অধ্যাপক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ওই একইদিনে জানা গিয়েছিল, এই সেমিনারে পাঁচজন গবেষক যে বক্তব্য রাখলেন, সেই বক্তব্য এবং এই বিষয়ে আরও বিস্তারিতভাবে লেখা একটি বই প্রকাশিত হবে। ২০২০ সালে যে বই জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে বইমেলায় প্রকাশ হওয়ার কথা ছিল। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ঘোষণা করেছে, চলতি বছরের মার্চ মাসের মধ্যে মাওবাদী আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। আমরা এই বিতর্কে যাচ্ছি না। আমাদের আলোচনার বিষয় ছিল ভারতীয় গণতন্ত্রে বামপন্থীদের অবস্থান। এবং সংসদীয় গণতন্ত্রে প্রগতি সংস্কৃতির প্রভাব ভারতে কতটা, আমরা সেই আলোচনা করলাম।

ছবি : সংগৃহীত 

আরও পড়ুন : Sasraya News, Sunday’s Literature Special 55| Issue 55| 9 March 2025 | সাশ্রয় নিউজ রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | বসন্ত সংখ্যা, ৯ মার্চ ২০২৫ | সংখ্যা ৫৫

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment