Sasraya News

Wednesday, March 12, 2025

Old Kolkata : ইংরেজদের আগে কলকাতা | বৈদূর্য্য সরকার

Listen

জোব চার্ণক তৃতীয়বারের জন্য পাকাপাকি ভাবে নিমতলা ঘাটে তরী ভিড়িয়েছিল, সেটা হঠাৎ নয় বলেই ধারণা করা যায়। এখানে আগে থেকেই সুতানুটির হাট ছিল এবং আহিরিটোলা (Hayeritola) অঞ্চলে আর্মেনীয়দের বসবাসের প্রমাণ মেলে। আর্মেনিয়ানদের দেশের নাম তাদের ভাষায় হায়েরিস্তান, সেই সূত্রে হায়েরি থেকে আহিরীটোলা… পুরনো কলকাতার ইতিহাস সম্পর্কে লিখেছেন : বৈদূর্য্য সরকার

 

 

রতোয়া ও গঙ্গার মধ্যবর্তী রাজ্য ছিল পুণ্ড্র। প্রবল পরাক্রান্ত পৌণ্ড্রিক বাসুদেব শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হন। মহাভারতে পৌণ্ড্র রাজ্যকে ব্রাত্য ক্ষত্রিয় বলা হয়েছে। সম্ভবত পৌণ্ড্রদের অবৈদিক আচরণের কারণে তাদের আচারভ্রষ্ট ও শূদ্রত্ব প্রাপ্তি কথা বলা হয়েছিল। পরবর্তীতে পুণ্ড্রদেশের অন্তর্গত গৌড়ের উত্থান ঘটে। আর্যমঞ্জুশ্রীকল্প অনুযায়ী, বঙ্গ সমতট হরিকেল গৌড় ও পুণ্ড্রের লোকেরা ছিল অসুরভাষী। ঐতিহাসিক রমাপ্রসাদ চন্দের মতে, পূর্বভারতে আলপাইন আর্যভাষীদের বসবাস ছিল। এই অবৈদিক আর্যভাষীরা বাঙালির আদি। এরা প্রকৃতির উপাসক ছিলেন।

 

 

এলাহাবাদে গঙ্গা যমুনা সরস্বতীর মিলন ঘটেছে। গঙ্গা যুক্ত হয়ে প্রবাহিত হয়ে হুগলির ত্রিবেণীতে এসে আবার মুক্তবেণী হল। ত্রিবেণী থেকে যমুনার গতি পূর্বমুখে, সরস্বতী পশ্চিম মুখে আর গঙ্গা দক্ষিনে প্রবাহিত হতে হতে হুগলিকে পশ্চিমতীরে রেখে পূর্বদিকে ঈষৎ বাঁক নিয়ে কালীঘাট, বড়ীশা, বোড়াল, বারুইপুর, জয়নগর, মজিলপুর, হাতিয়াগড় হয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়েছে।
কলকাতার আদিগঙ্গার তীর বরাবর দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার বিভিন্ন স্থান থেকে গুপ্ত পাল ও মধ্যযুগের পুরাতাত্বিক বহু নিদর্শন মেলে। দঃ চব্বিশ পরগনার উত্তর জটায় রাজা জয়চন্দ্র কর্তৃক ৯৭৫ খ্রিঃ প্রতিষ্ঠিত সুউচ্চ দেউলটি এই অঞ্চলেই পাওয়া গেছে। সরস্বতী ভিন্নপথে তাম্রলিপ্ত হয়ে সংক্ষিপ্ত পথে সাগরে মিলেছিল। খাল কেটে দেওয়ার পর কাটিগঙ্গায় গঙ্গার জল প্রবলবেগে সরস্বতীতে পড়তে লাগল। তাই কাটিগঙ্গা বা হুগলি নদীকে প্রকৃত গঙ্গা মনে করছি আমরা। আদিগঙ্গা খিদিরপুর কালীঘাটের পাশ দিয়ে কোনওক্রমে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

 

সাবর্ণ বংশের ১২ তম পুরুষ শিশু গঙ্গোপাধ্যায়কে সেনবংশীয় রাজা ভাগীরথীর পূর্বতীরে অবস্থিত উত্তরে আর্যদ্বীপে (দক্ষিণেশ্বর) থেকে দক্ষিণা বহুলাপুরী (বেহালা ) পর্যন্ত কালীক্ষেত্র অঞ্চল দান করেন। এর মধ্যে এক ক্রোশ পরিমিত ত্রিকোণাকার ক্ষেত্রের মধ্যে কালিকাদেবী বিরাজমান। এই ত্রিকোণাকার ক্ষেত্রের এক কোণে ত্রিগুনাত্মক ব্রহ্মা, আর এক কোণে বিষ্ণু ও অন্যকোণে শিব অবস্থান করেন, মধ্যস্থলে মহাকালীর বেদী। কালীঘাটের মূর্তির শিল্পরীতি তাম্রাশ্মযুগের নিদর্শন বলা যায়। মুখমণ্ডলে বিরাট চোখ এবং হাত সামান্য প্রসারিত। একই ধরণের টেরাকোটার মূর্তির নিদর্শন মেলে পাণ্ডুরাজার ঢিবি থেকেও।
দ্বিতীয় শতকে টলেমি রচিত ভারতবর্ষের বর্ণনায় কালীঘাট অঞ্চলকে ‘কালীগ্রাম’ নামক জনপদ নামক জনপদ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আদি গঙ্গার তীরে ছিল তার অবস্থান।
শিখদের গুরু নানক কলকাতায় এসেছিলেন ১৫০৫ খ্রিঃ নাগাদ। ধর্মপ্রচারের জন্যে ঘুরেছিলেন, যাকে শিখরা বলে থাকে উদাসী। সম্ভবত বড়বাজার অঞ্চলে তিনি অবস্থান করতেন। সেই স্মৃতি ধরে রেখেছে এখানে গড়ে ওঠে একটি গুরুদ্বারা।
কালীক্ষেত্র আইন-ই-আকবরিতে কালীকোটা বলে উল্লিখিত (১৫৯০ খ্রিঃ)। সাতগাঁ পরগনার অন্যতম বলে। কোটা শব্দটি কোট বা দুর্গ থেকেও এসে থাকতে পারে। প্রতাপাদিত্যের দুর্গ ছিল বাগবাজার অঞ্চলে। গঙ্গার বাঁকের মুখে অবস্থিত এই দুর্গ থেকে সিরাজের আক্রমণের সময় ইংরেজরা যুদ্ধ করেছিল বলে মনে করা যেতে পারে। তার আগে প্রতাপের পরাজয়ের পর তার সাম্রাজ্য ভাগ হয়েছিল, তার একটি অংশ পেয়েছিল সাবর্ণদের কুলসূর্য লক্ষ্মীকান্ত। তার আগে সাবর্ণ বংশের ১৯তম পুরুষ পঞ্চানন গঙ্গোপাধ্যায় মুঘল সম্রাটকে শেরশাহের সঙ্গে যুদ্ধে সহায়তা করে ‘শক্তি খাঁ’ উপাধি ও মানপত্র লাভ করেন। পাঁচু শক্তি খাঁ মুঘল সম্রাট কর্তৃক ৪৫টি গ্রাম সহ হাভেলি পরগনা জায়গির পান। ইনি প্রথম ভাগীরথীর পূর্ব তীরে একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা করলেন। তখন ভাগীরথীর নদীবিধৌত প্লাবনভূমি পূর্বকুল উর্বর সমতটে পরিণত হয়েছে। সেকারণেই অঞ্চলটির প্রতি শক্তি খাঁর দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। ক্রমে অঞ্চলটি বাংলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ তালুক হয়ে ওঠে।

 

 

কালীঘাটের কালী হালিশহরের গঙ্গোপাধ্যায় বংশের কুলদেবতা হিসেবে পরিচিত ছিল। সেই সূত্রে ১৫৪৪-এ মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গলে কলিকাতার উল্লেখ আছে। কালীর সূত্রে কলিকাতা নাম এসে থাকতে পারে। সাবর্ণদের ২১তম পুরুষ জীয়া গঙ্গোপাধ্যায় কালীঘাটে সন্তান কামনায় বসবাস করেছিলেন। তখন কালিঘাটের প্রধান পুরোহিত ছিলেন আত্মারাম। তার কাছে শিষ্যত্ব নিয়ে জীয়া গঙ্গোপাধ্যায় কামনায় রত হন ও পরবর্তীতে কামদেব নাম নিয়ে কাশীধামে সন্ন্যাসজীবন কাটাতে থাকেন। ১৫৭০ খ্রিঃ আশ্বিন মাসে কোজাগরী পূর্ণিমায় তার পুত্রসন্তান লক্ষ্মীকান্তের জন্ম। যিনি পরবর্তীতে নিজ কৃতিত্বে প্রতাপাদিত্যের দেওয়ান হন কিন্তু হঠকারী ও অত্যাচারী প্রতাপের ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হয়ে সংস্পর্শ ত্যাগ করেন। প্রতাপাদিত্য সম্রাট আকবরের সেনাকে ক’য়েকবার পরাজিত করলেও শেষপর্যন্ত আকবর প্রতাপকে দমন করতে পাঠালেন মানসিংহকে। কামদেবের আশীর্বাদে জলাজমির উপযুক্ত ঔষধির সন্ধান মেলার ফলে মানসিংহ প্রতাপকে পরাস্ত করেন। ১৬০৮খ্রিঃ মানসিংহ গুরুদক্ষিণা হিসেবে কামদেবের পুত্র লক্ষ্মীকান্তকে বিশাল জঙ্গলমহলের নিষ্কর জায়গীরদারি দান করেন। মগুরা, খাসপুর, ডিহি কলকাতা, পাইকান, আনোয়ারপুর, আমিরাবাদ, হাতিয়াগড়, হাভেলিশহর— এই আটটি পরগনার জায়গীরদার হয়ে লক্ষ্মীকান্ত বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। যশোর খুলনা জেলায় চাষ হওয়া তুলো থেকে শান্তিপুরে সুতো কাটা ও কাপড় বোনা হতে থাকে। হালিশহরের কালিকাতলা থেকে যশোরের ভূষণা পর্যন্ত যে সড়ক ছিল— তার মাধ্যমে সুতো পৌঁছতে লাগল। সুতানুটিতে তুলোর হাট বসতে থাকে। সুতার নুটি থেকে ‘সুতানুটি’ নাম বলে অনেকের ধারণা। নটিদের রূপ ও নৃত্যের খ্যাতি থেকে ‘নটি’ কথাটা সুতানুটিতে এসেছে বলেও মনে হয়। কলকাতায় তখন নারকেল ছোবড়া থেকে কাতা দড়ি ও ঝিনুক পুড়িয়ে তৈরি কলির ব্যবসা। সেই থেকেই কলকাতা নাম। গোবিন্দপুরের নাম সাবর্ণদের পুজ্য শ্যামরায়ের নাম থেকে এসেছে, একইভাবে তার ভোগে ব্যবহৃত চাল গোবিন্দভোগ।
শ্রীপান্থের কলিকাতায় এর’ম পাচ্ছি, কালিকট বন্দরের মালের খ্যাতির কারণে কোনও চালু ব্যবসায়ীর কায়দায় ভেজাল মালের বস্তার গায়ে কালিকটের কাছাকাছি কলকাতা লেখা থেকেই নামটা চালু হয়েছে। এ যুক্তিটা ফেলনা নয় কারণ ইউরোপীয় বণিকদের আগমনের প্রধান আকর্ষন মুনাফা। আরব বণিকরা ভারতীয় মাল ইউরোপে বেঁচে বড়লোক হয়ে যাওয়াতে চোখ টাটিয়েছিল ইউরোপ বণিকদের। তাই একথা বললে অত্যুক্তি হয় না— তাদের সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া ও রাস্তা খুঁজে পাওয়া কোনও রোম্যান্টিক অ্যাডভেঞ্চার নয় নিছকই ব্যবসায়িক মুনাফার কারণে।
তুলনায় অন্য চুটকিটা নেহাতই শিশুসুলভ। কোনও এক বিদেশী এক ঘাস কাটা লোককে জিজ্ঞেস করেছিল- কোন জায়গা? লোকটা না বুঝে ভেবেছিল, ঘাস কবেকার কাটা… সে উত্তর দেয় কাল কাটা। সেই থেকে নাকি ক্যালকাটা।
প্রাচীন সরস্বতী নদীর তীরবর্তী হুগলির সপ্তগ্রাম বন্দরটি তখন শ্রেষ্ঠ বাণিজ্যবন্দর। আরব আর্মেনিয়ান পর্তুগিজ ডেনিসদের উল্লেখ মেলে। সরস্বতী নদীর নাব্যতা কমার কারণে সপ্তগ্রাম ছেড়ে শেঠ বসাকরা গোবিন্দপুরে এসেছিলেন ১৫৩৭ সালে। কলকাতার আদি বণিক সম্প্রদায় শেঠবসাকরা খৃস্টীয় ষোলো শতকের শেষ দিকে গোবিন্দপুরে বসতি স্থাপন করেন। পর্তুগিজদের গোবিন্দপুর হাটে ব্যবসা করার উল্লেখ মেলে। এই নিয়ে তর্কের অবকাশ নেই – ১৫১৭খ্রিঃ প্রথম পর্তুগিজরা বাংলায় আসে হুসেন শাহী রাজত্বে। হেরে গেলেও শেরশাহের হয়ে দিল্লীর বিরুদ্ধে পর্তুগিজদের লড়াইয়ের উল্লেখ মেলে। ১৫৩৫খ্রিঃথেকে সপ্তগ্রামে পর্তুগিজ ঘাঁটি গড়ে ওঠে। সেখান থেকে ১৫৬৭খ্রিঃ নাগাদ তারা চলে আসে হুগলিতে।
১৬৩২ খ্রিঃ গোবিন্দপুরে বস্ত্রশিল্পের কারখানার নিদর্শন মেলে (বর্তমান শহীদ মিনারের দক্ষিণের অংশে)। যেখানে আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করত। সেই তাঁতিদের টানেই হয়ত বিদেশি বণিকদের আনাগোনা শুরু হয় এখানে। ডেনিস ভ্যালান্টাইনের ১৬৭০ খ্রিঃ আঁকা মানচিত্রে সুতানুটি গ্রামের উল্লেখ আছে।
জোব চার্ণকের আগে আর্মেনীয়রা এখানে আসে। ১৬৩০এ রেজাবিবি নামে এক মহিলার কবর পাওয়া যাচ্ছে, যার বর সুকিয়াস – তার নাম থেকে সুকিয়া স্ট্রিট। জ্যাকিরিয়া স্ট্রিট, হুজুরিমল স্ট্রিট সবই আর্মেনিয়ানদের নাম থেকে। মুর্শিদাবাদের সৈদাবাদের আর্মেনিয়ানদের উপনিবেশ থেকেই এরা কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে এসেছিল, ভাবা যেতে পারে। ১৬৭৯খ্রিঃ ফ্যালকন জাহাজ গার্ডেনরিচে উপস্থিত হল। গন্তব্য বরানগর। কিন্তু দোভাষী আনতে ভুলে গেছে ক্যাপ্টেন। শেঠ বসাকরা রতন সরকারকে দোভাষী পাঠালেন। এর আসল নাম aratoon Shircore, বাঙালির জিভে হয়ে গেছিল রতন সরকার। কেননা— আহিরীটোলা সুতানুটির আর্মেনিয়ানদের তখন দোভাষী হিসেবে দেশজোড়া খ্যাতি।

 

 

১৬৯০খ্রিঃ জোব চার্ণক তৃতীয়বারের জন্য পাকাপাকি ভাবে নিমতলা ঘাটে তরী ভিড়িয়েছিল, সেটা হঠাৎ নয় বলেই ধারণা করা যায়। এখানে আগে থেকেই সুতানুটির হাট ছিল এবং আহিরিটোলা (Hayeritola) অঞ্চলে আর্মেনীয়দের বসবাসের প্রমাণ মেলে। আর্মেনিয়ানদের দেশের নাম তাদের ভাষায় হায়েরিস্তান, সেই সূত্রে হায়েরি থেকে আহিরীটোলা… এমনটাই জানা যাচ্ছে অসিত দাসের ‘নামধামের উৎসকথা’ বই থেকে। তারাপদ সাঁতরার মতে, হাওড়া থেকে আর্মেনীয়রা আহিরিটোলায় আসে।
আরেকটি তথ্য উল্লেখ না করলেই নয়, বসাক শেঠ বর্ধন সরকার প্রভৃতি পদবীগুলো অনেকাংশেই আর্মেনিয়ান পদবী থেকে এসেছে ধরা হয়। সুতরাং কলকাতার প্রাচীন অধিবাসীদের মধ্যেও নিশ্চিত মিশে আছে আর্মেনিয়ানরা।
১৬৯৩খ্রিঃ১০ জানুয়ারি জোব চার্ণক পারা রোগে কলকাতায় মৃত্যু ঘটার পর ১৬৯৬খ্রিঃ চার্ণকের জামাতা চার্লস আয়ার কলকাতার দায়িত্ব পান। তখন বাংলার শাসক ঔরঙ্গজেবের পৌত্র আজিম-উস-সান এবং হুগলির শাসন কর্তা জুতি খাঁ। বর্ধিষ্ণু কলকাতা—সুতানুটি— গোবিন্দপুরের প্রতি ইংরেজ কোম্পানি বহুদিন ধরে ব্যবসায়িক স্বার্থে আকৃষ্ট ছিল। জুতি খাঁর মাধ্যমে ষোলো হাজার টাকা উৎকোচ দিয়ে বাংলার শাসক শাহাজাদা আজিম-উস- সানের থেকে গ্রাম তিনটির প্রজাস্বত্বের অনুমতিপত্র আদায় করে। ওদিকে মোঘল দরবার থেকে বিদ্যাধর রায়চৌধুরির কাছে গোপন নির্দেশ মারফৎ গ্রাম তিনটি হস্তান্তর না করার পরামর্শ এসে পৌঁছোয়।

 

 

ফলে বিভ্রান্ত সাবর্ণ বংশের সদস্যরা পরামর্শ করে ১৬৯৬ খ্রিঃ ১০ নভেম্বর ডিহি কলকাতার প্রজাস্বত্ব (Right to rent) তেরশো টাকায় কোম্পানির হাতে তুলে দেয়। দলিলে সই করেছিল রাম রায় এবং গৌরী রায়ের পাঁচ নাবালক বংশধর। সে বাবদে কোম্পানি সাবর্ণদের ১২৮১ টাকা ১৪ আনা খাজনা দিয়েছে। ১৭৫৩খ্রিঃ অনাদায়ী খাজনার কারণে সাবর্ণরা হুগলি কোর্টে মামলা করে। ১৭৫৭ খ্রিঃ পলাশীর যুদ্ধের পর ক্ষমতাশালী কোম্পানি খাজনা দেওয়া বন্ধ করে দেয়। নবকৃষ্ণ দেব উমিচাঁদ জগৎ শেঠ রায়দুর্লভ মীরজাফরের নবাব সিরাজৌদোল্লার বিরুদ্ধে চক্রান্তে মিডলম্যান হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নেয় তিন আর্মেনীয়— জোসেফ এমিন, খোজা ওয়াজিদ, পিট্রাস আরাটুন। ১৭৮৮ খ্রিঃ কর্ণওয়ালিশের বন্দোবস্তে সাবর্ণ রায়চৌধুরিরা জমি ফিরে পেলেও সেই জমির খাজনা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন সদস্যরা। সাবর্ণরাও কালক্রমে দুর্বল হয়ে পড়ে।
বাঙালির ইতিহাস চর্চার প্রথম থেকেই ব্রিটিশ আনুগত্যের সুর। ইংরেজ আসার আগে বাঙালিদের ইতিহাস ছিল না। কর্দমাক্ত জলাজমিতে বাঘের আর ঝিঁঝিঁর ডাকের মধ্যে বীরদর্পে জব চার্ণক প্রায় মন্ত্রবলে কলকাতা শহরটি তৈরি করলেন এই ধারণা যে নিপাট মিথ্যে ও রটনা… সেকথা বোঝাবার জন্যই এ লেখার সূত্রপাত।🪔

ছবি : আন্তর্জালিক 

আরও পড়ুন : Sasraya News Sunday’s Literature Special | 23 February 2025 | Issue 53 || সাশ্রয় নিউজ রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | সংখ্যা ৫৩

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment