Sasraya News

Friday, March 28, 2025

Nusrat Sultana : নুসরাত সুলতানা এর স্মৃতিগদ্য ‘স্মৃতিতে আরজ আলী মাতুব্বর’

Listen

নুসরাত সুলতানা, কবি, কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক। তাঁর লেখায় উঠে আসে বিগত অতীত ও বর্তমান। লেখার সহজ চলন ও মাধুর্য পাঠকদের আকৃষ্ট করে রাখে। লেখক নুসরাত সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের অধীনস্থ মিলিটারী ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে সিভিলিয়ান ষ্টাফ অফিসার হিসেবে কর্মরত। কর্মজীবনের পাশাপাশি সমানভাবে সংসার ও সাহিত্য-আবৃত জীবন লেখকের। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলি হল : ছায়া সহিস (২০১৯), গহিন গাঙের ঢেউ (২০২০) কবিতা গ্রন্থ। এছাড়াও পত্রকাব্য : পায়রার পায়ে আকাশের ঠিকানায় (২০২১)। গল্পগ্রন্থ : মৌতাত (২০২২)। কবিতাগ্রন্থ : মহাকালের রুদ্র ধ্বনি (২০২২), নাচের শহর রূপেশ্বরী – গল্প (২০২৩) চান্দ উটলে গাঙ পোয়াতি অয় প্রভৃতি। সাশ্রয় নিউজ-এর আজকের পাতায় নুসরাত সুলতানা -এর একটি স্মৃতিগদ্য।

 

 

 

 

স্মৃতিতে আরজ আলী মাতুব্বর 

নুসরাত সুলতানা

 

দ্বিতীয় শ্রেণীর অভীক্ষা পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে সবে তৃতীয় শ্রেণীতে উঠেছি। জানুয়ারি মাস। খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে দরগি মাছ দিয়ে আলু টমেটো রান্না আর ডিম ভাজি দিয়ে ভাত খেয়ে আব্বুর সঙ্গে রওয়ানা দিয়েছি। গন্তব্য পাশের গ্রাম-লামচরী।

যতদুর মনে পড়ে, কালো জুতা, নীল ফ্রকের ওপরে একটা গোলাপি কার্ডিগান পরেছিলাম। কীর্তনখোলার
পাড় ধরে হেঁটে যাচ্ছিলাম। দুই ধারে খেসারি ক্ষেতে ডালের ছড়ায় শিশির লেপ্টে আছে। সারি সারি তালগাছ। হালকা রোদ উঠতে শুরু করেছে তখন। শীতের প্রকৃতি হলেও আমার মনবাগানে একেবারে বিপুল বসন্ত। একে তো পরীক্ষায় প্রথম হয়েছি তারওপর আব্বুর সঙ্গে যাচ্ছি অত্র এলাকার একজন বিখ্যাত মানুষের বাড়ি। লামচরী আরও যাবে আমার দুই ভাই এবং এক চাচাতো ভাই। সবাই আমরা বৃত্তি আনতে যাব। হাঁটতে হাঁটতে বললাম, আব্বু, টাকাটা বড় কথা না। উনি যে আমাদের বৃত্তি দিচ্ছেন তাতে আমরা পড়াশোনায় উৎসাহ পাচ্ছি। এটাই বড় কথা। আব্বু বললেন, ঠিক কথা মা। এটা যে তুমি বুঝতে পারছ তাতে আমি খুব খুশি অইছি।

 

 

 

পৌঁছাতে পৌঁছাতে বেলা এগারোটা। তিন-চার স্কুলের দ্বিতীয় থেকে দশম শ্রেণি অব্দি শ্রেণী অভীক্ষা পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন বরিশাল জেলা প্রশাসক, বরিশাল বি এম কলেজের দর্শনের অধ্যাপক কাজী গোলাম মোস্তফা স্যার। শুরু হল নাশতা পর্ব। ভালো বেকারি বিস্কুট, কমলা, মিষ্টি, কেক ইত্যাদি দিয়ে নাশতার পরে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান। বৃত্তি দিচ্ছেন বরিশাল জেলা প্রশাসক। বৃত্তি পেলাম দশ টাকা। বক্তৃতা দিলেন অতিথিদের সঙ্গে আব্বুও।

 

 

আব্বু আমার কথা উদ্বৃতি দিলেন। আমার মেয়ে বলেছে, উৎসাহই আসল। ক্লাস থ্রি’তে পড়া এক শিশুকন্যা এই কথা বলে- তখন মাতবর সাহেবের (আরজ আলী মাতুব্বর) প্রচেষ্টা আরও বেশি সফল্য পায়।

ফেরার আগে দেখলাম তিনি নিজের কবর নিজে বাঁধাই করে ঢেকে রেখেছেন। কারণ তিনি মেডিকেল কলেজ মরোনোত্তর দেহ দান করেছেন। গড়ে তুলেছিলেন চমৎকার একটা গ্রন্থাগার। দেশ-বিদেশের অনেক বই গ্রন্থাগারে। খুব সুন্দর সুবিন্যস্ত করে রেখেছেন বইগুলো। চলে আসার আগে আব্বুকে বললাম, আব্বু যিনি বৃত্তি দিয়েছেন তিনি কই? আব্বু বল্লেন, এই যে আরজ আলী মাতুব্বর (Aroj Ali Matubbar)। মাতবর সাব আপনেরে আমার মেয়ে চেনে না। তিনি হাসলেন। বললেন, বেশি করে পড়াশোনা করবা, মা। ছোটো খাটো এই মানুষটি আব্বু’র বন্ধু ছিলেন। একদিন খুব সকালে আব্বু উঠান ঝাড়ু দিচ্ছিলেন। তিনি আব্বুর সঙ্গে দেখা করতে এলেন। আব্বু আম্মুকে বললেন- মাতবর সাইব আইছেন। নাশতা দেও। আম্মুর স্কুলের তাড়া। আম্মু ডিম পোজ, মুড়ি আর চা দিয়েছিলেন।

বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরির সকল বই আরজ আলী মাতুব্বর পড়েছেন। তাঁর বিখ্যাত উক্তি, “ডিগ্রির শেষ আছে। জ্ঞানার্জনের কোনো শেষ নাই।” আজ বিশ্বের বহু বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে আরজ আলী মাতুব্বরের বই পড়ানো হয়। অথচ তাঁকে নিজের এলাকায় অবিরাম যুদ্ধ-সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়েছে। আজ ভাবি, সেদিনের সেই তৃতীয় শ্রেণীর বালিকা কী জানত, কী অমূল্য স্বর্ণ-মোহর মহাকাল তার ঝুলিতে ভরে দিল! 🍁

ছবি : আন্তর্জালিক 

 

 

 

এক নজরে 👉 সাশ্রয় নিউজ-এ আপনিও পাঠাতে পারেন স্থানীয় সংবাদ। এছাড়াও রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল-এর জন্য উপন্যাস, কবিতা (একধিক কবিতা পাঠালে ভালো হয়। সঙ্গে একটি লেখক পরিচিতি। গল্প, প্রবন্ধ, গদ্য, পুস্তক আলোচনা (আলোচনার জন্য দুই কপি বই পাঠাতে হবে), ভ্রমণ কাহিনী। লেখার সঙ্গে সম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর থাকতে হবে। অবশ্যই কোনও প্রিন্ট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমনকী কোনও সোশ্যাল মিডিয়াতে বা পোর্টালে পূর্ব প্রকাশিত লেখা পাঠাবেন না। ই-মেল করে লেখা পাঠান। ই-মেল আই ডি : editor.sasrayanews@gmail.com

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment