Sasraya News

Saturday, February 8, 2025

Mahakavi Kalidas : মহাকবি কালিদাস

Listen

গদ্য 🦋
মিঠুন চক্রবর্তী -এর জন্ম বাঁকুড়া জেলার ছাগুলিয়া নামের ছোটো একটি গ্রামে। এবং সেখানেই ছেলেবেলা থেকে সাহিত্যচর্চা। বর্তমানে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা প্রকাশিত হয়। এখনও পর্যন্ত যাপন কোলাজ, হাত রেখেছি চাঁদের গায়ে,সম্পর্কগাছ প্রভৃতি ৬ টি একক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কবি পেশায় স্কুল শিক্ষক। কবিতার পাশাপাশি ছোটগল্প ও নানান স্বাদের গদ্য লিখে থাকেন। তেমনি একটি গদ্য সাশ্রয় নিউজ -এর পাতায়। আজকে মিঠুন চক্রবর্তী-এর লেখা মহাকবি কালিদাস বিষয়ক গদ্যের শেষাংশ পাঠকদের জন্য। 

 

 

 

মহাকবি কালিদাসের আবির্ভাবকাল

 

প্রাচ্য-পাশ্চাত্য পণ্ডিতেরা মহাকবি কালিদাসের আবির্ভাব কাল এবং আবির্ভাস্থান নিয়ে বহু আলোচনা করলেও কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি। তাই রবীন্দ্রনাথ আক্ষেপ করে বলেছেন :

“হায়রে কবে কেটে গেছে কালিদাসের কাল
পণ্ডিতেরা বিবাদ করে লয়ে তারিখ সাল।।”

কালিদাসের আবির্ভাব কাল নিয়ে দু’টি মত প্রচলিত।
১. মহাকবি কালিদাস খ্রীস্টপূর্ব প্রথম শতকে জন্মগ্রহণ করেন। (কালিদাস রচিত মালবিকাগ্নিমিত্রম্ নাটকে শুঙ্গবংশীয় রাজা নায়ক অগ্নিমিত্র (খ্রীস্টপূর্ব ১৮৫-৪৮ অব্দ)।

২. মহাকবি কালিদাস খ্রীস্টীয় চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ শতকের মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন। গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের (রাজত্বকাল: ৩৭৫ খ্রিষ্টাব্দ-৪১৫ খ্রিষ্টাব্দ) সভাকবি ছিলেন।

 

 

 

 

কালিদাসের আবির্ভাব কাল সম্পর্কে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে

 

I) কালিদাসের রচনা রূপে প্রচলিত ‘জ্যোতির্বিদাভরণ’ নামক গ্রন্থ একটি শ্লোকে (২ শ্লোক) কালিদাসকে বিক্রমাদিত্যের সভার নবরত্নের অন্যতম রত্ন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এক সম্প্রদায়ের মতে, কালিদাসের আবির্ভাবকাল ৫৭ খ্রীঃ। তাঁদের মত অনুসারে, কালিদাস খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে উজ্জয়িনী রাজা শকারি বিক্রমাদিত্যের রাজত্বকালেই কালিদাসের আবির্ভাব কাল। কিন্তু নবরত্নের বরাহমিহির ষষ্ঠ শতকের লোক। অমরসিংহও পরবর্তীকালের। অতএব ‘জ্যোতির্বিদ্যাভরণ’ আদৌ কালিদাসের রচনা নয়।
Ii) কিথ্ মনে করেন বিক্রমাদিত্য হলেন সমুদ্রগুপ্তের পুত্র দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের ছেলে কুমার গুপ্তকে নিয়েই মনে হয় কালিদাসের ‘কুমারসম্ভবম্’ মহাকাব্যের রচনা। সমুদ্রগুপ্তের রাজত্বকাল খ্রীস্টীয়  চতুর্থ শতকের শেষভাগ থেকে পঞ্চম শতকের প্রথম ভাগ পর্যন্ত। অতএব, কালিদাস এই সময়ের কবি। কালিদাস অশ্বঘোষ এর পূর্ববর্তী কবি। অশ্বঘোষ কণিষ্কের সভাকবি ছিলেন। খ্রীস্টীয় প্রথম শতাব্দী কনিষ্কের রাজত্বকাল। অতএব, কালিদাস তার পরবর্তী যুগের কবি।

Iii) কালিদাস তাঁর ‘মালবিকাগ্নিমিত্রম্’ নাটকে ভাসের নাম উল্লেখ করেছেন। ভাসের আবির্ভাবকাল যদি খ্রীষ্টীয় তৃতীয় শতক ধরা হয় তাহলে কালিদাসের আবির্ভাব কাল পরবর্তী খ্রিস্টীয় চতুর্থ অথবা পঞ্চম শতক। অতএব ভাসের পরবর্তীকালে কালিদাসের আবির্ভাব। আবার সপ্তম শতাব্দীর গদ্য প্রণেতা বানভট্ট কালিদাসের উল্লেখ করেছেন। অতএব তিনি বানভট্টের পূর্ববর্তী কবি।
Iv) দ্বিতীয় পুলকেশীর আইহোল শিলালিপিতে কালিদাসের নাম উল্লেখ আছে। লিপিটি ৬৩৪ খ্রীস্টাব্দের জৈন কীর্তির রচনা। এই শিলালেখে ভারবির কথা আছে। “স বিজয়তাং রবিকীর্তিঃ কবিতাশ্রিত কালিদাস ভারবিকীর্তিঃ”। ভারবি কালিদাসের পরবর্তী কবি এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। ভারবি ষষ্ঠ শতকের কবি। সুতরাং, কালিদাসের আবির্ভাব কাল তার পূর্বে।
V) কার্ণ ও ভান্ডারকর নবরত্ন মতবাদ গ্রহণ করে বলেছেন, বরাহমিহির ও কালিদাস সমসাময়িক ছিলেন। বরাহমিহিরের সময় ৫৮৭ খ্রীস্টাব্দ। সুতরাং, তাঁর বন্ধু কালিদাস খ্রীষ্টীয় ষষ্ঠ শতকে বর্তমান ছিলেন।কালিদাসের আবির্ভাব কাল সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ থাকলেও গুপ্তযুগেই ভারতীয় সংস্কৃতির গৌরবময় পুনরুদ্ধার ঘটে। কালিদাস তাঁর কাব্য মধ্যে যে সকল গুপ্ত রাজাদের নাম আকারে-ইঙ্গিতে উল্লেখ করেছেন, তা থেকে বোঝা যায় গুপ্তযুগেই তাঁর আবির্ভাব কাল।

সংস্কৃত সাহিত্যের ইতিহাসে মহাকবি কালিদাসের রচনা
মহাকবি কালিদাসের নামে প্রচলিত কাব্য গ্রন্থের সংখ্যা ত্রিশের অধিক হলেও মহাকবির কবিমানসিকতার গৌরবোজ্জ্বল পরিচয় নিহিত আছে তাঁর ৭টি কবিকৃতির মধ্যে। এই সাতটি রচনাই কালিদাসের লেখনীপ্রসূত বলে পণ্ডিতের সিদ্ধান্ত।

এই কবিকৃতি হল : ঋতুসংহারম্ ও মেঘদূতম্ -এই দু’টি হল খন্ডকাব্য বা গীতিকাব্য, কুমারসম্ভবম্ ও রঘুবংশম্ – নামক দুটি মহাকাব্য এবং তিনটি দৃশ্যকাব্য- মালবিকাগ্নিমিত্রম্, বিক্রমোর্বশীয়ম্ এবং অভিজ্ঞানশকুন্তলম্। এছাড়া শৃঙ্গাররসাষ্টক, শৃঙ্গারতিলক, পুষ্পবাণবিলাস নামক কাব্য, নলোদয় ও দ্বাদশ-পুত্তলিকা নামে দুটি আখ্যানকাব্য মহাকবি কালিদাসের কাব্য বলে অনেকে মনে করেন ।

 

 

 

 

কালিদাসের রচনা শ্রেণী

মালবিকাগ্নিমিত্রম্  (নাটক)
অভিজ্ঞানমশকুন্তলম্  (নাটক)
বিক্রমোর্বশীয়ম্ (নাটক)
মেঘদূতম্ (খন্ডকাব্য বা গীতিকাব্য)
কুমারসম্ভবম্ (মহাকাব্য)
রঘুবংশম্ (মহাকাব্য)
ঋতুসংহার (খন্ডকাব্য বা গীতিকাব্য)

মহাকবি কালিদাসের কাব্য
মহাকবি কালিদাসের রচনাশৈলী

 

কালিদাসের রচনার মধ্যে যেসব বৈশিষ্ট্য লক্ষ্যণীয় 

I) কালিদাসের কাব্যের প্রধান গৌরব ব্যঞ্জনা। বাহুল্য প্রবেশ না করে দু-একটি কথায় ধ্বনির মাধ্যমে তা ব্যক্ত করেছেন। বাংলা সাহিত্যে যেমন রবীন্দ্রনাথ, সংস্কৃত সাহিত্যে তেমনি কালিদাস।
Ii) ভারতীয় পণ্ডিতরা কালিদাসকে উপমার কবি বলে থাকেন-“উপমা কালিদাসস্য”। উপমা রচনায় তিনি সিদ্ধহস্ত। প্রতিটি উপমা সাবলীল, কষ্টকল্পনার স্থান তাতে নেই।
Iii) মহাকবি কালিদাসের রচনাশৈলী আরেকটি গুন হল এর অপূর্ব শব্দবিন্যাস।
Iv) কালিদাসের বর্ণনা শক্তি ও অতুলনীয়।
V) কালিদাস চরিত্র সৃষ্টিও অনুপম। সর্বতন্ত্র-স্বতন্ত্র কালিদাস প্রয়োজনে বিষয়বস্তু উৎস থেকে সরে আসতে দ্বিধা করেননি। ফলে প্রতিটি চরিত্রেই এসেছে অভিনবত্ব, সংযোজিত হয়েছে বিশেষ মাত্রা।
কালিদাসের কবি প্রতিভা
কালিদাস মুখ্যতঃ কবি। কালিদাসের কবি প্রতিভা সম্বন্ধে মধুসূদন বলেছেন-

“কবিতা নিকুঞ্জে তুমি পিককুলপতি।
কার গো না মজে মনঃ ও মধুর সূর।।”

শ্রুতি, স্মৃতি,পুরাণ,দর্শন, কামশাস্ত্র, অর্থশাস্ত্র, সঙ্গীত, কলা, চিত্রবিদ্যা, ছন্দঃ,ব্যাকরণ, জ্যোতিষ প্রভৃতি শাস্ত্রে কবির স্বচ্ছন্দ বিচরণশীলতা পতিত হয়। তাঁর রচনা থেকে বৈদর্ভী রীতির কবি কালিদাসের উপমা অলংকারের প্রতি আকর্ষণ অধিক ছিল। তাই এই প্রবাদ প্রচলিত আছে-” উপমা কালিদাসস্য”। তাঁর প্রতিটি রচনায় প্রতিফলিত হয়েছে কল্যাণ ধর্ম ও ত্যাগের মাধুর্য, সত্য-শিব ও সুন্দরের আদর্শ,ভারতীয় সভ্যতার আত্মিকরূপ। তাঁর কাব্য সমূহ কেবলমাত্র সমকালই নয়, চিরকালই কবি সাহিত্যিক ও পাঠকদের কাছে অনুপ্রেরণার বস্তুঃ।

রবীন্দ্রনাথকে তাই অনুসরণ করে বলি –“রহিলে মানসলোকে তুমি চিরকবি।”

ছবি : আন্তর্জালিক

আরও পড়ুন : Mahakavi Kalidas : মহাকবি কালিদাস, সংস্কৃত সাহত্যের রাজাধিরাজ

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment