Sasraya News

Wednesday, March 12, 2025

Maha Kumbh | কুম্ভ : পাপ-পুণ্যের কনসেপ্ট | হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

Listen

জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে এই চারটি পাত্র চন্দ্র, সূর্য , বৃহস্পতি ও শনি। পুরাণ অনুযায়ী জয়ন্ত যখন অমৃত পাত্র নিয়ে ছুটছিলেন, তখন এই চারজন তাকে রক্ষা করেছিলেন। যখন এই চার গ্রহ- নক্ষত্র নির্দিষ্ট রাশিচক্রে মিলিত হয় তখনই হয় কুম্ভ। চারটি কুম্ভের প্রধান দু’টি কুম্ভ হরিদ্বার আর প্রয়াগে। লিখেছেন : হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় 

 

 

কুম্ভ স্নানের অভিজ্ঞতা আমার হয়নি কিন্তু একথা সত্য পুরাণের কিছু গল্প এ বিষয়ে জানা আছে। কিছুটা পুরাণ আর কিছুটা ইতিহাসের মিশেলে গড়ে উঠেছে এই মিথ। কতকটা এইরকম —
মহামুনি কাশ্যপ বৈদিক সংহিতা মতে তিনি হিরণ্যবর্ণ ব্রহ্মা থেকে জন্মলাভ করেন। আর দুই স্ত্রী, দিতি এবং অদিতি। অদিতির গর্ভ থেকে জন্ম নিল বিশ্বের সকল দেবতা আর ঋষি-মুনিরা। অর্থাৎ শুভ শক্তি। আর মাতা দিতির গর্ভ থেকে জন্ম হল দৈত্যকুলের সকল দানবদের। এক পিতার ঔরসে জন্ম হলেও দুই মায়ের সন্তানদের মধ্যে সামান্যতম সদ্ভাব ছিল না। প্রতিনিয়তই বিবাদ বিসংবাদ। ফলস্বরূপ রোগ-ব্যাধি, মহামারি, দুর্ভিক্ষ জরা নিত্যসঙ্গী। সকলেই মুক্তির পথ খুঁজছিলেন। এমন সময় ব্রহ্মা বললেন, একমাত্র অমৃতই পারে এসব কিছু থেকে মুক্তি দিতে। আসল কথা অমৃতের সন্ধান দিলেন। এখন প্রশ্ন উঠল, কোথায় পাওয়া যাবে সেই অমৃত? ব্রহ্মা বললেন, সেই অমৃত রয়েছে সমুদ্র গর্ভে। তাকে মন্থন করে তুলে আনতে হবে।

 

কুম্ভের সময়কাল নিয়ে রয়েছে এক বিচিত্র গাণিতিক ব্যাখ্যা। এখানে বৈজ্ঞানিক ভাবনার চেয়ে প্রাধান্য পেয়েছে জ্যোতিষ শাস্ত্রের ব্যাখ্যা। যখন বৃহস্পতি গ্রহ মহাকাশের দ্বিতীয় রাশি বৃষে প্রবেশ করে তখন মেলা হয় প্রয়াগে। বৃহস্পতির প্রতি রাশিতে থাকার সময় মোটামুটি এক বছর। সেই হিসেবে তিন বছর পর বৃহস্পতি থাকেন সিংহে। তখন হয় উজ্জয়নীতে কুম্ভ। এরপর যখন বৃহস্পতি অবস্থান করবেন বৃশ্চিকে, তখন কুম্ভ হয় নাসিকে। আর তিন বছর পর বৃহস্পতি যখন অবস্থান করেন কুম্ভরাশিতে, তখন মেলা হয় হরিদ্বারে।

 

দেব দানব সকলেই এগিয়ে এলেন। শুরু হল সমুদ্রমন্থন। একদিকে দেবতা, অপরদিকে দানব। এই মন্থনে অনেক বিষ উঠে এল। পাছে জগত সংসার ধ্বংস হয়ে যায় সেই কথা মাথায় রেখে এগিয়ে এলেন স্বয়ং মহাদেব। সমুদ্র থেকে উঠে আসা বিষ পান করে হলেন নীলকণ্ঠ। এরপর একে একে উঠিয়ে এল বিভিন্ন ধন-সম্পদ। অবশেষে পাওয়া গেল অমৃত। এরপর এই অমৃতের অধিকার নিয়ে শুরু হল লড়াই। শোনা যায়,  ১২ বছর ধরে এই যুদ্ধ চলেছিল। দু’পক্ষই অমরত্ব লাভের আশায় মরিয়া হয়ে উঠেছিল। সকলেই যখন যুদ্ধে ব্যস্ত এমন সময় দেবরাজ ইন্দ্রের পুত্র জয়ন্ত অমৃত পাত্র তুলে পালাতে আরম্ভ করলেন। দানবদের দৃষ্টি পড়ল তার দিকে কিছুতেই অমৃত চুরি হতে দেবে না। পিছু নিল ও দানবেরা। ছুটে চলল সকলে। পথে ক্লান্ত হয়ে জয়ন্ত চার জায়গায় বিশ্রাম নিলেন। এই চারক্ষেত্রেই অমৃত পাত্র মাটিতে নামিয়ে রাখার সময় এক ফোঁটা করে অমৃত গড়িয়ে পড়ল। সেই স্থানগুলি হল গোদাবরী তীরে নাসিক, শিপ্রা নদীর তীরে উজ্জয়িনী, গঙ্গার তীরে হরিদ্বার আর প্রয়াগ। অবশেষে এই চারক্ষেত্র হল মহাতীর্থ। কুম্ভযোগে স্নানে ফললাভের কথায় পুরাণ বলেছে— ‘কার্তিক মাসে সহস্র নবার, মাঘ মাসে শতবার এবং বৈশাখ মাসে কোটি নর্মদা স্নানে যে ফললাভ হয়, সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞে যে ফললাভ হয়, লক্ষবার পৃথিবীর প্রদক্ষিণ করলে যে ফললাভ হয়, একবার কুম্ভস্নানেই তা পাওয়া যায়। কুম্ভ অর্থাৎ পাত্র। যা ধারণ করে। এর প্রধান অর্থ—
১. যাকিছু অকল্যাণ দূর করে বিশ্বের মঙ্গল সাধন করে তাই কুম্ভ। ‌
২. কুম্ভ শুভবোধ জাগ্রত করে সকলের কল্যাণ করে।
ভারতবর্ষের সনাতন ধর্ম অনুযায়ী, ধর্মের মূল কথা হল ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ। এই চারের সম্মিলনে পুরুষার্থ অর্জন করা। আবার জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে এই চারটি পাত্র চন্দ্র, সূর্য , বৃহস্পতি ও শনি। পুরাণ অনুযায়ী জয়ন্ত যখন অমৃত পাত্র নিয়ে ছুটছিলেন, তখন এই চারজন তাকে রক্ষা করেছিলেন। যখন এই চার গ্রহ- নক্ষত্র নির্দিষ্ট রাশিচক্রে মিলিত হয় তখনই হয় কুম্ভ। চারটি কুম্ভের প্রধান দু’টি কুম্ভ হরিদ্বার আর প্রয়াগে।

 

 

বহু প্রাচীনকাল থেকেই এই দুই পুণ্যক্ষেত্রে কুম্ভমেলা হয়ে আসছে। রামায়ণ মহাভারত ছাড়াও ঐতিহাসিক হিউয়েন সাঙ -এর রচনায় এই মেলার বর্ণনা আছে। শোনা যায় এরও আগে গ্রীক পর্যটক মেগাস্থিনিসের রচনায় কুম্ভের উল্লেখ আছে। ৬৪৩ খ্রিষ্টাব্দে হিউয়েন সাঙ যখন কুম্ভ মেলায় আসেন সেই সময় হর্ষবর্ধন কুম্ভমেলায় অকাতরে দান করতেন। তখন কুম্ভ মূলত দান ক্ষেত্র ছিল। সেখানে হিন্দু, বৌদ্ধ উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই দান গ্রহণ করতেন। তবে হিন্দুরা দান গ্রহণের সঙ্গে পুণ্য সঞ্চয়ের জন্য গঙ্গায় স্নান করতেন। তাদের লক্ষ্য ছিল অর্থপ্রাপ্তির সঙ্গে ধর্ম ও মোক্ষ লাভ। এর প্রায় দুশো বছর পর আচার্য শংকর নবরূপে কুম্ভের সূচনা করেন। সেই সময় বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের প্রবল প্রথাপে হিন্দু ধর্ম বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। ভারতজুড়ে হিন্দু ধর্মের নবজাগরণের ঢেউ তুললেন শংকর। বেদান্তের নতুন ভাষ্য রচনা করলেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের সমস্ত সাধু সন্ন্যাসীকে একত্রিত করার জন্য প্রয়াগের সঙ্গমকেই মহা কুম্ভের আদর্শ স্থান হিসেবে বেছে নিলেন। আচার্য শংকর চেয়েছিলেন হিন্দু সম্প্রদায়ের সাধুরা এই কুম্ভে অংশগ্রহণ করুন। এই কুম্ভে হিন্দুদের সব সম্প্রদায়ের মিলন ঘটুক। সাধারণ মানুষজন সাধু মহাত্মাদের সঙ্গে মিলিত হন। লৌকিক অভিজ্ঞতা অতিক্রম করে সাধুরা যে জ্ঞান লাভ করেছেন, তা জনগণের মধ্যে প্রসারিত হোক। গঙ্গাস্নানে শুধু অশুভ কর্মের পাপ দূর হয় কিন্তু সাধুদের সান্নিধ্য তাদের উপদেশ, মানুষের মুক্তির পথকে উন্মুক্ত করে। বাস্তবিক পক্ষে সেই সময় থেকেই নদীতে স্নান, সাধুদের দর্শন, তাদের উপদেশ শোনা ছিল কুম্ভের মূল উদ্দেশ্য।

ইতিহাস বলে, মধ্যযুগে যখন মুসলিমদের দাপটে হিন্দু ধর্ম বিপন্ন তখন মন্দির ধর্মস্থান রক্ষার জন্য সাধুরা লড়াই করেছেন। ১৬৬৬ সালে হরিদ্বার, ১৭৪৫ সালে প্রয়াগ, ১৭৫৭ সালে মথুরায় বহু সন্ন্যাসী মুসলমানদের সঙ্গে লড়াই করে প্রাণ দিয়েছেন। কুম্ভের স্নান উপলক্ষ্যে বহুবার বহু মানুষ মারা গিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তথাপি কুম্ভের পুণ্য স্নানে কখনও ভাটা পড়েনি। গঙ্গায় প্রথম স্থান করেন নাগা সাধুরা। তাঁরা পৃথিবীর সমস্ত সুখ বর্জন করে শিব সাধনায় ডুবে থাকেন। একমাত্র কুম্ভ মেলায় তাঁরা আসেন। দল বেঁধে জলে নেমে স্নান করেন। অনেক লাঠি, তরবারি দিয়ে নিজেদের গায়ে অবিরাম আঘাত করেন। এ-ও তাঁদের এক ধরনের সাধনার অঙ্গ।

সময়কাল : কুম্ভের সময়কাল নিয়ে রয়েছে এক বিচিত্র গাণিতিক ব্যাখ্যা। এখানে বৈজ্ঞানিক ভাবনার চেয়ে প্রাধান্য পেয়েছে জ্যোতিষ শাস্ত্রের ব্যাখ্যা। যখন বৃহস্পতি গ্রহ মহাকাশের দ্বিতীয় রাশি বৃষে প্রবেশ করে তখন মেলা হয় প্রয়াগে। বৃহস্পতির প্রতি রাশিতে থাকার সময় মোটামুটি এক বছর। সেই হিসেবে তিন বছর পর বৃহস্পতি থাকেন সিংহে। তখন হয় উজ্জয়নীতে কুম্ভ। এরপর যখন বৃহস্পতি অবস্থান করবেন বৃশ্চিকে, তখন কুম্ভ হয় নাসিকে। আর তিন বছর পর বৃহস্পতি যখন অবস্থান করেন কুম্ভরাশিতে, তখন মেলা হয় হরিদ্বারে।

প্রয়াগের কুম্ভ কে বলা হয় পূর্ণকুম্ভ। বাকি তিনটি কুম্ভ মেলা প্রতি ছ’বছর অন্তর প্রয়াগে হয় একে বলে অর্ধকুম্ভ। মোট ১২ বার সৌর পরিক্রমা করার পর ১৪৪ বছর অন্তর হয় মহাকুম্ভ। এই বছরটি মহাকুম্ভের বছর ছিল।

কল্পবাসের ধারণা : প্রয়াগে গঙ্গার তীরে তাঁবু খাটিয়ে কিছু মানুষ মাসাধিক কালব্যাপী অবস্থান করেন। তারা প্রতিদিন গঙ্গাস্নান করেন। স্বল্প আহার করেন। শাস্ত্র গ্রন্থ পাঠ করেন। উত্তর ভারতের মানুষের কাছে এরা কল্পবাসী নামে পরিচিত এবং পরম শ্রদ্ধেয়। প্রধানত বয়স্ক দম্পতি সমস্ত সাংসারিক সুখ স্বাচ্ছন্দ ত্যাগ করে ঈশ্বরের সাধনায় ব্রতী হন। স্বপাক আহার এবং দু’বার স্নান। সূর্যোদয়ের আগে এবং পরে। যদি কোনও কারণে কল্পবার সম্পূর্ণ করবার আগে কারও মৃত্যু হয় তবে তা পূর্ণ করেন তাঁর পুত্র বা কন্যা। সাধারণত বিহার এবং উত্তর প্রদেশের মানুষেরা বেশি কল্পবাসী হন। আগেকার মত তাঁবুতে থাকেন না ঠিক বিভিন্ন আশ্রমে থাকেন। নিজেকে পরিশুদ্ধ করার যে ভাবনা, তাই প্রধান হয়ে ওঠে এই কল্প বাসে।

মহামানবের মিলনক্ষেত্র : কুম্ভ অর্থ সর্ব মানবের মহামিলন। বর্তমানে সারা বিশ্বের মানুষ এখানে এসে উপস্থিত হন। গঙ্গার স্রোতধারার মতো মানুষের স্রোত কল্পনাকে ছাড়িয়ে যায়। প্রবল শীতে খোলা আকাশের নিচে রাত্রিবাস। মাইলের পর মাইল পথ চলা। পদপিষ্ঠ হওয়ার আশঙ্কা। তবুও মানুষ আসে। জীবনের হাজারও পাপ, কলুষতা, যন্ত্রণার মাঝে এক বিন্দু অমৃতের সন্ধানে। আবার প্রশ্ন ওঠে! শুধুই কি কুসংস্কার? তবে লক্ষ-কোটি মানুষের এই উন্মাদনা কেন? তবে এ সবই রাজনীতির লীলাখেলা। বর্তমানে রাজনীতি আর ধর্ম — এ যেন টাকার এপিঠ আর ওপিঠ একসঙ্গে চলছে।

 

 

ধর্ম হচ্ছে যা ধারণ করে বা পুণ্যবোধ জাগ্রত করে। এক নিষ্কাম ভাবনা, হে আল্লাহ হোক কিংবা শিব হোক, যখন ফকির আলির নৌকায় চেপে নবদ্বীপের ব্রাহ্মণ পন্ডিত চলেছেন সঙ্গমে ডুব দিতে, মুছে যায় শাক্ত ,বৈষ্ণব, নাস্তিক, আস্তিক, হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান সব ধর্মের ভেদ। সকলে পায়ে পা মিলিয়ে চলছে একই তীর্থে। প্রকারান্তরে এ -ও এক সমুদ্র মন্থন। মানুষ জানে না প্রকৃত মুক্তির পথ ঠিক কী? উদ্ভ্রান্ত প্রশ্ন নিয়ে মানুষ ছুটে আসে কুম্ভে! কে কী পায়, কতটুকু পায়, কাকে পায়, কেউ জানে না। তবুও মানুষ আসে যদি জীবনে অমৃতস্পর্শ পাওয়া যায়। এ যেন এক অদৃশ্য শক্তির কাছে নতজানু হওয়া। কুম্ভের চিরন্তন জয়যাত্রা।

কুম্ভ দর্শন এবং অভিজ্ঞতা সঞ্চয় : মানুষের কেন এত কুম্ভে যাওয়ার ব্যাকুলতা? আদতে ভক্তি না অভিজ্ঞতা সঞ্চয়। অনেক চেনা পরিচিত মানুষ কুম্ভে গেলেন, তাঁদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা শুনলাম। কত বিচিত্র সাধুর কথা শুনলাম। সত্যি কথা বলতে কি মুঠোফোনের দৌলতে, অন্তর্জালের মায়ায় ঘরে বসেই জানা গেল অনেক কিছু। বিভিন্ন সাধুদের দর্শন‌, তাঁদের কীর্তিকলাপ সবকিছু দেখা গেল। এবছর আই আইটি (IIT Baba) বাবা সোরগোল ফেলে দিয়েছিলেন। মেলাতে রুদ্রাক্ষের মালা বিক্রি করতে আসা বানজারা মোনালিসা (Monalisha) নামক মেয়েটি চোখে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ার। এরপর তার ভাগ্য খুলে যায়। সাধুদের স্নানে যাওয়ার দৃশ্য অতি মনোরম। সেজেগুজে বিভিন্ন কায়দায় বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। এছাড়াও সাধুর বেশ ধরে বহু ভণ্ড সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। রাজনীতি থেকে শুরু করে বিনোদন জগতের সমস্ত খ্যাতিসম্পন্ন মানুষেরা জড়ো হয়েছেন এই মেলায়। আজ তার শেষ দিন। মহা শিবরাত্রির সঙ্গে সঙ্গেই শেষ হয়ে যাবে কুম্ভ স্নানের মহাযোগ।

চেনা পরিচিত বহু মানুষ এ বছর কুম্ভ মেলায় গিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে কতটা পুণ্য সঞ্চয় করেছেন সেকথা বলতে পারি না! তবে যেভাবে গঙ্গার জল দূষিত হচ্ছে, মানুষ না বুঝে এক আবেগে ঝাঁপ দিচ্ছেন সেটা খুব যে যুক্তিপূর্ণ এমনটা বলতে পারিনে। আমার কাছে কুম্ভমেলা মানে আরও একটি অমৃত কুম্ভের সন্ধানে পাওয়া। অভিজ্ঞতার ফসল যদি পাঠকের হৃদয় জয় করে নিতে পারে, তাহলে এর চেয়ে সুখের আর কিছু হয় না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কুম্ভমেলা যাওয়াটাও একটা সামাজিক আভিজাত্যের বহিঃপ্রকাশ বলেই মনে হয়েছে। যেসব ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে মানুষ পুণ্য সঞ্চয় করতে যাচ্ছেন আদতে কতটা ফলপ্রসূ বলতে পারিনে। ব্যক্তিগতভাবে পাপ-পুণ্যের মাপকাঠি ঠিক কী? এ প্রশ্ন আমার মনেও। বৃদ্ধ মাতাকে ঘরে বন্দী করে পুত্র এবং পুত্র বধূর কোনও কোনও পুণ্য সঞ্চয় হবে বলতে পারিনে। অথবা যে বৃদ্ধা মা পুণ্য সঞ্চয় এর আশায় পরিবারের সকলের সঙ্গে এসেছিলেন তিনি আজ একা। মহা কুম্ভে এসে ছেলেরা ফেলে রেখে চলে গেছে! এ কোন সভ্যতা? কোন চর্চা? কোন ধর্ম? এর উত্তর অজানা।

 

 

আজ মহাশিবরাত্রি একটু পরেই চতুর্থ প্রহরের ঘন্টা বাজবে। সঙ্গে সঙ্গে শেষ হবে এবারের পূর্ণ কুম্ভের মেলা। পুণ্য স্থানের শেষ তিথি আজ। পুণ্য সঞ্চয় কিনা জানা নেই তথাপি আজ গঙ্গাস্থানে গিয়ে মানুষের যে উন্মাদনা দেখলাম, তাতে মনে হল ধর্মই একমাত্র হাতিয়ার। রাজনীতির চাকা তখনই ঘোরা সম্ভব যখন মানুষ ধর্মের কুসংস্কারে বেড়াজালে আচ্ছন্ন হয়ে থাকবে। সমস্ত ধর্মের ক্ষেত্রেই একথা সমানভাবে প্রযোজ্য। মানুষের চৈতন্য হোক একথা রামকৃষ্ণ বলে গিয়েছিলেন। কারণ, চেতনা ছাড়া এই অন্ধ বিশ্বাসকে টলানো‌ সম্ভবপর নয়। ধর্ম অর্থাৎ যা ধারণ করে থাকে। কিন্তু বর্তমানে আমরা ধর্মকে বহন করে চলেছি। এই বহন করা বন্ধ হওয়ার আশু প্রয়োজন। শেষ পর্যন্ত ঘট কথার গোদা বাংলা অর্থ হল, কুম্ভ। এই ঘট নির্মাণ করেন কুম্ভকার , ঘটে কিছু রাখার জন্য। তবে নাম যাইহোক, কুম্ভ শুধু এক মেলাই নয় এ যেন সুপ্রাচীন এক চলমান সভ্যতার ঘ্রাণ। কুম্ভ বা কলস নিয়ে পুরাণ -সাহিত্য তার কাহিনীদের যেভাবেই বিবৃত করুক, এ যে মানব সভ্যতার অন্যতম আদি প্রতীকযানগুলির মধ্যে একটি সন্দেহ নেই। এই গর্ভের সিম্বলিজম্, মাতৃ-জঠরের তাই প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে যে সেটি উর্বরতা কাল্টের সঙ্গে যুক্ত, মনে করেন অনেকেই। আধার না আধেও কোনটি বড়? শ্রেষ্ঠতর এই নিয়ে পুরনো বিবাদ, তর্ক, দড়ি টানাটানি আজ থাক। তার পূর্ণতা পাক মানুষের মননে।

ছবি : সংগৃহীত 

 

 

আরও পড়ুন : Sasraya News Sunday’s Literature Special | 23 February 2025 | Issue 53 || সাশ্রয় নিউজ রবিবারের সাহিত্য স্পেশাল | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | সংখ্যা ৫৩

Sasraya News
Author: Sasraya News

Leave a Comment