



‘পশ্চিমবঙ্গের ভোট রাজনীতির কড়চা’ -এর নবম পর্ব। কলম ধরলেন বাংলার রাজ্য রাজনীতি নিয়ে সাশ্রয় নিউজ এর পক্ষে প্রতিবেদক অগ্নি প্রতাপ
বনগাঁ অনেক পূর্বে বনগ্রাম নামে পরিচিত ছিল। ১৮৬৩ সালে বনগাঁ মহাকুমা হিসেবে গড়ে ওঠে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বহু মানুষ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পেট্রাপোল হচ্ছে এখানকার সবথেকে বড় স্থল বন্দর। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অন্তর্গত এই বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র।
বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্র ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।
বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি প্রায় ২৭ শতাংশ এবং মুসলিম সংখ্যালঘু ২৬.৯ শতাংশ। এই কেন্দ্রটিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রচুর মানুষের বসবাস।
২০১৯ সালে বনগাঁ লোকসভা নির্বাচনে প্রাক্তন মন্ত্রী মঞ্জুল কৃষ্ণ ঠাকুরের পুত্র ও বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর ৪৮.৮৫ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিমন্ত্রী হন। তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী মমতা বালা ঠাকুর ৪০.৯২ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।
২০২৪ সালে বনগাঁ লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর এবং তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০১৯ সালে বিশ্বজিৎ দাস বিজেপিতে যোগদান করার আগে ২০১১ ও ২০১৬ সালে বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে বনগাঁ উত্তর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন।
২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী হয়ে বাগদা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন এবং ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে তিনি আবার তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে যান।
সিএএ (CAA) লাগু হবার ফলে বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে প্রতিটা জনসভাতে একে অপরের বিরুদ্ধে তোপ ডাকতে থাকতে থাকে। তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মাননীয়া মমতা ব্যানার্জি বারবার মতুয়া সম্প্রদায় ও শরণার্থীদের নাগরিকত্ব নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্তের বিরোধিতা ও সিএএ চালু না করার হুঁশিয়ারি নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি উড়িয়ে দিয়ে সিএএ নাগরিকত্ব দেওয়া এটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন বলে মন্তব্য করেন।
পঞ্চম দফা ভোটের আগে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী একটি জনসভা থেকে মুর্শিদাবাদের ভারত সেবাশ্রম সংঘ, আসানসোলের রামকৃষ্ণ মিশন ও ইসকনের বিরুদ্ধে বিরোধী রাজনীতির যোগ প্রসঙ্গে আক্রমণ করতে থাকেন।
এই ইস্যুতে সমস্ত সাধু সমাজ কলকাতার রাজপথে খালি পায়ে হেঁটে প্রতিবাদ জানান এবং পশ্চিমবঙ্গ তথা সারা ভারতবর্ষে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মন্তব্যে, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়েন।
গত ২০শে মে ২০২৪ পঞ্চম দফা লোকসভা নির্বাচনে বনগাঁ কেন্দ্র থেকে মতুয়া সম্প্রদায় ভুক্ত বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর তাঁর নিকটবর্তী প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্র
১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের জন্য এই ব্যারাকপুর শহরটি বিখ্যাত। গঙ্গার তীরবর্তী এই প্রাচীন শহরটি। ব্যারাকপুর থেকে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিপ্লবী মঙ্গল পাণ্ডে প্রথম প্রতিবাদ শুরু করেছিলেন।
আরও পড়ুন : Loksabha Election 2024 : পশ্চিমবঙ্গের ভোট রাজনীতির কড়চা-২
ব্যারাকপুর লোকসভা আসনটি একসময় বামফ্রন্টের শক্ত গড় ছিল। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার অন্তর্গত ব্যারাকপুর লোকসভা। ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী এই আসন থেকে জয়লাভ করেন।
এই কেন্দ্রে তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি ২৪ শতাংশ এবং মুসলিম সংখ্যালঘু ২৫.৮৩ শতাংশ। এই নির্বাচন কেন্দ্রে অবাঙালি ভোট ভীষণ নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করে।
১৯৯৫ সালে অর্জুন সিং প্রথম জাতীয় কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ভাটপাড়া পৌরসভার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। তৃণমূল কংগ্রেসের শুরুর দিকে ২০০১ থেকে ২০১৯ সাল লোকসভা নির্বাচনের আগে পর্যন্ত ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে অর্জুন সিং জয়লাভ করেন এবং ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন।
২০১৯ সালে বিজেপি প্রার্থী হয়ে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন। তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদী ৪১.৪৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন।
ব্যারাকপুর লোকসভায় তার (অর্জুন সিং) যথেষ্টই সুনাম আছে কাছের এবং কাজের মানুষ হিসেবে। ২০২২ সালে তিনি বিজেপি ত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন এবং এই লোকসভা ভোটের সময় তিনি আবার ফিরে আসেন বিজেপিতে।
এই ব্যারাকপুর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক। নৈহাটি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনি তিনবারের বিধায়ক।
বর্তমানে শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোট লুট, কাট মানি, আর্থিক ও নিয়োগ দুর্নীতি, কয়লা, গরু পাচার, রেশন দুর্নীতি, সন্ত্রাস, সন্দেশখালি প্রসঙ্গে বিরোধীরা কোনও অবস্থাতেই আক্রমণ করতে ভুলছেন না।
শুরু হয়েছে মহাভারতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণর আশীর্বাদ নিয়ে চর্চা। কোন নাম অর্জুন না পার্থ বেশি উল্লেখ করেছেন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সেই উদাহরণ টেনে নিয়ে আসেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী। ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে দিনে দিনে শক্তি ক্ষয় সঙ্গে দলীয় কোন্দল শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
গত ২০ শে মে ২০২৪ পঞ্চম দফা নির্বাচনে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হবার সম্ভাবনা প্রবল।
ছবি : আন্তর্জালিক
আরও পড়ুন : Loksabha Election 2024 : পশ্চিমবঙ্গের ভোট রাজনীতির কড়চা ৮
