



পার্বতী কাশ্যপ ★সাশ্রয় নিউজ : ডায়ানা (Diana Penty) ও হর্ষ সাগরের (Harsh Sagar) গল্প যেন নিখুঁত এক প্রতিচ্ছবি। সময়ের সঙ্গে পালটে যাওয়া সম্পর্কের সংজ্ঞার। বলিউড অভিনেত্রী ডায়ানা ও হিরে ব্যবসায়ী হর্ষ একে অপরের জীবনে আছেন প্রায় ২২ বছর ধরে, একসঙ্গে (Live in Vs Mareiage) থাকছেন ১২ বছর। কিন্তু আজও তাঁদের সম্পর্কের গায়ে নেই ‘বিয়ে’ নামের সামাজিক সিলমোহর। তবু তাঁরা সুখী। সুখী তাঁদের পরিবারও। প্রশ্নটা তাই থেকেই যায়। আজকের দিনে কি বিয়ে সত্যিই প্রয়োজন?
‘‘আইনি নথিতে হয়ত স্বামী-স্ত্রী নই আমরা, কিন্তু মন থেকে পুরোপুরি বিবাহিত,’’ জানাচ্ছেন ডায়ানা। তাঁর মতে, সম্পর্কের সত্যতা নির্ভর করে ভালবাসা, সম্মান আর একে অপরের প্রতি দায়বদ্ধতার উপর, শুধু সাতপাকে বাঁধা নয়। তিনি আরও বলছেন, ‘‘আমাদের পরিবার জানে আমরা একসঙ্গে থাকি। কেউ আমাদের চাপ দেয় না বিয়ের জন্য। বরং আমাদের ভালো থাকাই ওঁদের কাছে মুখ্য।’’
এই স্বচ্ছতা এবং আত্মবিশ্বাস থেকেই হয়ত ডায়ানার সিদ্ধান্ত, বিয়ে নয়, একত্রবাসই যথেষ্ট। একসঙ্গে বাড়ি, পোষ্য, দিনযাপন, সবই রয়েছে, শুধু বিবাহের সামাজিক স্ট্যাম্প ছাড়া। বহু যুগ ধরে সমাজ যা ‘দাম্পত্য’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে, সেটাই কি এখন আর অপরিহার্য নয়?এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হলে তাকাতে হয় সমাজ ও মনস্তত্ত্বের দিকে।মনোবিদ আত্রেয়ী ভট্টাচার্য (Atreyee Bhattacharya) জানাচ্ছেন, ‘‘বিয়ে হল এক ধরনের সামাজিক বন্দোবস্ত। শরীরী ঘনিষ্ঠতা, সন্তানের জন্ম, আর্থিক ও আইনি সুবিধা এই সব কিছুর জন্যেই বিয়ের প্রয়োজন। সমাজ এই ব্যবস্থাকেই সম্মত সম্পর্কের মর্যাদা দেয়।’’ তাঁর মতে, আমাদের দেশের যে সামাজিক মানদণ্ড, তাতে এখনো একত্রবাস পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেনি। ‘‘মানুষের রুচি বদলালেও সমাজের অনুমোদন এখনও বিয়েতেই বেশি,’’ বলেন তিনি।
কিন্তু অন্য দিকে, এক দীর্ঘ সময় ধরে একসঙ্গে থাকা বহু যুগল মনে করেন, সম্পর্ক মানেই আত্মিক বন্ধন। বিয়ের ঝক্কি, খরচ এবং পরে আইনি জটিলতা তাঁদের কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। একত্রবাসেই তাঁরা খুঁজে পান সেই ঘরোয়া নিরাপত্তা, পারস্পরিক আস্থা ও ভালোবাসা যা সাধারণত বিবাহিত দম্পতির জীবনে প্রত্যাশিত। আত্রেয়ীর অভিজ্ঞতায় দেখা যাচ্ছে, এই দৃষ্টিভঙ্গি বিশেষ করে জেনারেশন জ়েড বা নবীন প্রজন্মের মধ্যে অনেক বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ‘‘এই প্রজন্ম মনে করে, আইনি স্বীকৃতি বা সামাজিক শংসাপত্রের প্রয়োজন নেই। বরং যদি সম্পর্ক শেষ হয়, তাহলে ‘ব্রেকআপ’ অনেক সহজ, মানসিক চাপও তুলনামূলকভাবে কম,’’ জানাচ্ছেন তিনি। এই ধরণের সম্পর্ক ‘ব্যবহারবান্ধব’ (user-friendly) এমনই এক সাহসী ভাষা ব্যবহার করে বলেন আত্রেয়ী। তাঁর মতে, ‘‘বিয়ে মানেই অনেক সময়েই এক ধরনের ভার। রোগীদের সঙ্গে কথা বলে আমরা দেখেছি, অনেকেই এখন একে দায় মনে করছেন। তাই সহবাসে থাকা সম্পর্কের ধরন অনেকের কাছে সহজপাচ্য।’’
যদিও এই পথ সকলের জন্য নয়। সমাজ এখনও দ্বিধায়। শহরাঞ্চলে কিছুটা উদারতা এলেও, গ্রামীণ বা রক্ষণশীল পরিসরে এখনও সহবাস মানেই সন্দেহ, নিন্দা, কখনও বা আইনি সমস্যাও। পারিবারিক সম্মান, ধর্মীয় অনুশাসন, পিতৃতান্ত্রিক মূল্যবোধ অনেক ক্ষেত্রেই বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
ডায়ানার মতো মানুষদের উপস্থিতি এই দৃষ্টিভঙ্গিকে বদলাতে সাহায্য করছে। এক দশক আগে যেটা শুধুই বিদ্রোহের গল্প ছিল, এখন সেটা হয়ে উঠছে আত্মবিশ্বাসের, নির্ভার সহবাসের, এবং একান্ত সিদ্ধান্তের প্রতিচ্ছবি। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়, এই ‘স্বাধীনতা’ কি সত্যিই সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য? একজন সেলিব্রিটির পাশে দাঁড়িয়ে হয়তো সমাজ নীরব, কিন্তু কোনও অচেনা শহরে কোনও মধ্যবিত্ত তরুণী যদি একই পথ বেছে নেয়, তখন সমাজ কতটা উদার থাকে?একত্রবাস বনাম বিবাহ। এই বিতর্ক নতুন নয়। কিন্তু নতুন হল সমাজের প্রতিক্রিয়ার ধরণ। ধীরে হলেও প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি বিয়ে ছাড়া সম্পর্ক অসম্পূর্ণ? নাকি সময় এসেছে সেই ‘সিলমোহর’-এর মানে নতুন করে ভাবার? ডায়ানা আর হর্ষের জীবন সেই প্রশ্নটাকেই তুলে ধরছে আরও স্পষ্ট ভাবে। প্রেম, সহবাস আর দাম্পত্য এই ত্রিভুজে দাঁড়িয়ে সমাজ, সম্পর্ক আর স্বাধীনতা তিনটাকেই নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার সময় কি তবে এসে গিয়েছে।
ছবি : প্রতীকী
আরও পড়ুন : Relationships : শুধু ভালবাসা নয়, বাঁচাতে হবে সম্পর্কও, সঙ্গীকে আজই বলুন এই ৫টি কথা
