



🍂গদ্য
যেদিন তোমাকে বুকের ঘা দেখাতে গেসলুম সেদিন কই তোমার চোখ তো নয়ন হয়ে উঠল না। মাংস পেরতে তুমি শেখনি। হায় রে পুরুষ। রূপের মায়ায় অরূপ খোয়ায়। মনের তুমি হলে কী আর মাংসগন্ধ লাগত তোমার? লিখেছেন : কুন্তল দাশগুপ্ত
মন… মন… তোমার শরীর নাই শশীবাবু? শরীর তো এক শিল্প গো আর তুমি তো শরীর শিল্পী। নও? তুমি যে শরীরের খুঁত ফেরাও শরীরে শরীরে। ফেরাও না? টোল পড়া খুঁতো নষ্টপ্রায় শরীরে শরীরে তুমিই তো জীবন-রং ধরাও গো। তবে মন খোঁজো কেন এত? পাতা শরীর মেলা পাও ব’লে শর অরুচি শরীরে!
মনের কারবার শরীরের দাম নেই— মানো তুমি, আমি না। শরীর খেলায় মন লাগে না। লাগলে, বেবুশ্যেরা সব গেরস্থ বউ হত, তা মানি। কিন্তু মন দিয়ে যে শরীর খেলতে হয় তা জান শশীবাবু? জান না। জানলে শরীর-সিঁড়ি বেয়ে মনঘরে উম পেতে বসতে নিয্যস। গঞ্জনা দিতে না। আমার শুকনো জমিনে বুনে দিতে আগামী। এত ক’রে মন খোঁজ অথচ মনের ঠিকানা জান না। যতই দেখাও তুমি মনের রীত বোঝ না।
শশীবাবু… শশীবাবু বল দেখি— তোমার মন নাকি মনের তুমি? কী বললে, মনের তুমি! আচ্ছা বেশ। তাই-ই সই। যেদিন তোমাকে বুকের ঘা দেখাতে গেসলুম সেদিন কই তোমার চোখ তো নয়ন হয়ে উঠল না। মাংস পেরতে তুমি শেখনি। হায় রে পুরুষ। রূপের মায়ায় অরূপ খোয়ায়। মনের তুমি হলে কী আর মাংসগন্ধ লাগত তোমার?
মন এক অরূপ-রতন। রূপশালী এ ধরায় রূপে ডুব না দিলে অরূপ-রতন মন পাবে না, পাবে না কোনমতে। শরীর নিরাময়ে তোমার মন তাই শরীর এগিয়ে ভাবতে পারলে না। তোমার কাছে কেবল শরীর হয়ে গেলুম! শরীরের যে মনোবাস গো। আমায় ঠেলে দিলে বলেই তোমায় ঠেলতে পারি না। দূর করলেই বুঝি দূরে রাখা যায়? ফিরে দেখ দেখি। দেখলে, আমার মনোবাস? ঐ মন নামে বনে কবে থেকে ব’সে আছি একলা হয়ে সে তোমার মনে নেই। মনে মন মিলে গেলে শরীর ঘুচে যায়। আমি যে শরীর ঢেকে মন বিছিয়ে রেখেছি তা তোমার মনে ছায়া ছড়াল না! তোমার মন নাই শশীবাবু কেবল শরীর শরীর। শরীর বাজাতে বাজাতে শারীরিক হয়ে গেছ তাই বুঝি মন খুঁজে ফের? মনবাড়ির চাবি কাঠি তুমি হারিয়ে এসেছ খসে পড়া ডানার শহরে। এখন তোমার শামুক-ঘরে বাস। ডানাদার যাপনের ভালো-বাসা থেকে দূরে আরো দূরে তোমার নিত্য বর্তমান মনকেমনের ধুলো মাখে। আমায় নইলে তোমার মনোবাস মিছে হয়। আমার মনোবাস তোমার আমৃত্যু। আমায় ঘেন্না দিলে। আমি নির্মন ধরে গুটিয়ে রয়েছে। নিষ্কাম! আমাকে ঘেন্না করো। করবে আজীবন। তাই না? ভেবে দেখ, তোমার মনোবনে আমার মনোবাস আমৃত্যু তোমার। হায় শশীবাবু আমাকে ফিরিয়ে নিজেকে ফেরাতে পারলে কই! আমার মনে তুমি নিত্য বর্তমান। আর তোমার মনও কি আমাকে বইছে না ঘেন্নায় ঘেন্নায়? মনের রীত-কানুন এমনই। মুখ আর মন এক নয় শশীবাবু এক নয়।
আরও পড়ুন : A Dance of Devotion: Finding Strength in Spiritual Artistry
মন নামে বন ভারি গহন। মনের মানুষ থাকে সেইখানে আর থাকে মনের আমিটা। হরবখৎ মনে মনে কথামালা গাঁথি আর ছিঁড়ে ফেলি। মনের মানুষ টের পাবে আমার শব্দহীন কথাবাস। আশায় আশায় থাকি। চাই মনোবনে ফাগুন। পড়ে থেকে, পড়ে থেকে কথাফুল ফুলকি হলে ফাগুন আগুন হয়। পুড়তে থাকে মন। পুড়ে পুড়ে হয়ে ওঠে লাল, যেন ভোরের সূর্য। মনোবনের গহন ফেড়ে মনের মানুষের পায়ে রাখি রক্ত পারা মন। মনে মনে অ-বাক আর্তনাদে আছাড়ি পিছারি বলি— নাও নাও নাও… কোনো নাও আসে না তো বুকে তুলে নিতে! মন মরে। মরা মন ডানা পায়। উড়ে যায় শূন্যে… শূন্যে…
শূন্যের মাঝে এত ঢেউ ওঠে! তুমি জান? এই ফেলনা আমিটা জেনে গেছে আজ শূন্যতার আদল কী বিভীষণ। মনে বুঝি। শরীরে বুঝি না তো। তাহলে? আমিও তো মনেরই। এই মনোবাস কী দারুণ বাস্তব। শশীবাবু মন খুঁজলে পেতে গো। আমার একলা মনোবাস চন্দন বাসে ভরে যেত। হল না। একলাই পোহাচ্ছি এই মনোবাস। ভালো থেকো শশীবাবু।
ইতি
কুসুম।
ছবি : প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত।
