



হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় : উৎসবই বটে অন্তত ইতিহাস তো তাই বলে। ১৮৮৬ সালের ১লা জানুয়ারি এই কল্পতরু দিবসের (Kalpataru ) সূচনা হয়েছিল। এই মূল উৎসবের প্রধান নায়ক হলেন পরমহংস দেব শ্রী রামকৃষ্ণ (শ্রী গদাধর চট্টোপাধ্যায়)।
১৮৮৬ সালে শ্রীরামকৃষ্ণ দেবের গলায় ক্যানসার ধরা পড়ে এবং তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। এসময় তাঁকে কাশীপুর উদ্যান বাটিতে আনার ব্যবস্থা করা হয়। ওই সালের ১লা জানুয়ারি রামকৃষ্ণ তাঁর গৃহী শিষ্যদের সঙ্গে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় বিশেষ নাট্যব্যক্তিত্ব গিরিশচন্দ্রের নিকট রামকৃষ্ণ প্রশ্ন রাখলেন। আচ্ছা গিরিশ, “আমাকে তোমার কী মনে হয়”? করজোড়ে ভক্ত গিরিশচন্দ্র উত্তর দিলেন, “আপনি হলেন মানুষরূপী স্বয়ং পরম ব্রহ্ম। আপনার এ জগতে অবতরণের কারণ জীবের মুক্তি।” একথা শোনা মাত্রই পরমহংস দেব ধ্যানস্থ হলেন। এক অপূর্ব জ্যোতি তাঁর সারা দেহে। উপস্থিত ৩০ জন গৃহী শিষ্যদের তিনি ওইদিন আশীর্বাদ করলেন এই বলে- “তোমাদের চৈতন্য হোক”। পরবর্তীতে উনি নিজেই এই দিনটিকে কল্পতরু নাম দিয়েছিলেন। সেদিন প্রধান শিষ্য রামচন্দ্র দত্ত এই কল্পতরুর কথা সকলকে বলেছিলেন, কারণ তাঁর সন্ন্যাসী শিষ্যরা সেদিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।
এবার বলি এই কল্পতরু আসলে কী?
হরিবংশ পুরাণের মতে, দেবতা এবং অসুরগণের সমুদ্র মন্থন কালে একে একে উঠে এসেছিল- অমৃত, লক্ষ্মী, ঐরাবত এবং এই কল্পতরু বৃক্ষ। এই কল্পতরু বিরাজ করত দেবরাজ ইন্দ্রের নন্দন কাননে। একদা শ্রীকৃষ্ণের স্ত্রী সত্যভামার আবদারে এই বৃক্ষ মর্তে আনা হয়েছিল। এই বৃক্ষের বিশেষত্ব এই যে, এখানে দাঁড়িয়ে যা প্রার্থনা করা হয় সবকিছু পূরণ হয়। শ্রীরামকৃষ্ণের মতে ঈশ্বরের কাছে চাওয়ার সময় খুব সতর্ক থাকতে হয় খারাপ কিছু চাইতে নেই। সে কারণেই এইদিনে যে গৃহী শিষ্যরা ছিলেন তাঁরা প্রত্যেকেই একটি আধ্যাত্মিক অনুভব উপলদ্ধি করেন এবং সেদিন পরমহংস দেব তাঁদের আশীর্বাদ করে চৈতন্য লাভ হোক অর্থাৎ সমাজের ভালো কাজে তোমরা সফল হও এই আশীর্বাদ করেন। তাঁর শিষ্যদের মতে, এইদিনে ঈশ্বরের কাছে যা চাওয়া যায় তাই লাভ করা যায় বলেই তাঁদের স্থির বিশ্বাস। এই দিনটি স্মরণে রেখে আজও কাশীপুর উদ্যান বাটিতে (বর্তমান রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের একটি শাখা কেন্দ্রে) মহাসমারোহে কল্পতরু উৎসব পালন হয়। এছাড়াও দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে এইদিন প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়। এখানে সেই উপলক্ষে সেদিন দাতব্য এবং কম্বল বিতরণ হয়। এত ভক্ত সমাগমের কারণে, ২০১০ সালে পূর্ব রেল এইদিনে দু’টি ট্রেন বেশি বরাদ্দ করলেন। এই হল কল্পতরু উৎসবের মূল কথা।
