



পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায় ★ ইংল্যান্ড : ভারতের জাতীয় দলের ভবিষ্যৎ মুখ হিসেবে বিবেচিত ‘এ’ দলের (India A) ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স ঘিরে উঠছে নানা প্রশ্ন। ইংল্যান্ড লায়ন্সের (England Lions) বিরুদ্ধে চলতি বেসরকারি টেস্ট সিরিজে কেএল রাহুল (KL Rahul) ও ধ্রুব জুরেল (Dhruv Jurel) ছাড়া আর কেউই প্রকৃত অর্থে নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। বিশেষ করে লোয়ার অর্ডারের দুর্বলতা ও অলরাউন্ডারদের নিষ্প্রভ পারফরম্যান্স এখন বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্বাচকদের কাছে।
প্রথম দিনের খেলায় দলকে ভরসা দেন রাহুল।আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলে তুলে নেন একটি সেঞ্চুরি। ভাল সঙ্গ দেন করুণ নায়ার (Karun Nair) ও ধ্রুব জুরেলও। কিন্তু এই তিনজন ছাড়া বাকি ব্যাটাররা যেন নামেই রিজার্ভ বেঞ্চের প্রতিনিধি। দ্বিতীয় দিনেই স্পষ্ট হয়ে যায় দলের লোয়ার অর্ডার কতটা অনভিজ্ঞ ও অপ্রস্তুত। আগের দিন ৩২৭ রানে ৭ উইকেট হারানো ভারত ‘এ’ (India A) দলের ইনিংস শেষ হয়ে যায় মাত্র ২১ রান যোগ করেই। শেষ তিন উইকেটের পতনে থেমে যায় ইনিংস, থেমে যায় ব্যাটারদের মনের জোরও।এই ব্যর্থতার বড় প্রতীক হয়ে উঠছেন দুই গুরুত্বপূর্ণ অলরাউন্ডার, নীতীশ কুমার রেড্ডি (Nitish Kumar Reddy) ও শার্দূল ঠাকুর (Shardul Thakur)। যাদের অন্তত একজনকে আসন্ন ইংল্যান্ড সফরের মূল দলে জায়গা পেতে হলে পারফরম্যান্সে ধার আনতেই হত। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, দু’জনেই ব্যাট হাতে ব্যর্থ। রেড্ডির ইনিংস থেমে যায় ৩৪ রানে, শার্দূল ফিরলেন মাত্র ১৯ রানে। এখানেই থেমে থাকেনি সমস্যা। বল হাতে তাদের ভূমিকাও ছিল নিষ্প্রভ। ম্যাচের দ্বিতীয় দিনে, ইংল্যান্ড লায়ন্স (England Lions) ৩ উইকেটে ১৯২ রান তুলে নেয়, জবাবে ভারতীয় বোলারদের হাত থেকে ফসকে যায় ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ। তিন পেসার অংসুল কম্বোজ (Anshul Kamboj), তনুষ কোটিয়ান (Tanush Kotian) ও তুষার দেশপাণ্ডে (Tushar Deshpande) তিনজন মিলে মাত্র একটি করে উইকেট নিতে সক্ষম হন। স্পষ্ট যে, প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের রুখে দেওয়ার মতো ধার বা পরিকল্পনা কোনওটাই সেভাবে কার্যকর হয়নি ভারতীয় বোলিং ইউনিটের।

যেখানে জাতীয় দলের লোয়ার অর্ডার আগেই আস্থার সংকটে ভুগছে, সেখানে এই ব্যাকআপ ইউনিট থেকেও ভরসার আলো দেখা যাচ্ছে না। বিশেষ করে, বিদেশের মাটিতে ভারতের ইতিহাস বলে দেয় ম্যাচ জেতাতে লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের পারফরম্যান্স কতটা গুরুত্বপূর্ণ। গত বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতেও দেখা গিয়েছে, এই বিভাগে ব্যর্থতাই ম্যাচ হাতছাড়া করেছে। অথচ, সেই শিক্ষা থেকেও যে রিজার্ভ বেঞ্চ কিছু শিখেনি, তা এই টেস্টে আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ভারতীয় দল যখন সাদা বল থেকে লাল বলের ক্রিকেটে নতুন করে ছন্দ খোঁজার চেষ্টা করছে, তখন এ ধরনের পারফরম্যান্স আগামী দিনের পরিকল্পনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। রাহুল ও জুরেলের ইনিংস যতই আশাব্যঞ্জক হোক না কেন, টিম ইন্ডিয়ার ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য কেবল একজন বা দু’জন নয়, প্রতিটি বিভাগে ধারাবাহিকতা ও গভীরতা প্রয়োজন। আর এই ম্যাচ সেই গভীরতার অভাবই যেন স্পষ্ট করে তুলল নির্বাচকদের সামনে এখন একটি কঠিন প্রশ্ন, এই রিজার্ভ বেঞ্চের ওপর ভরসা রেখে তারা কতটা এগোতে পারবেন? বিশেষ করে, যখন ইংল্যান্ডের মতো কন্ডিশনে খেলতে হবে, যেখানে কেবল প্রতিভা নয়, টেকনিক্যাল মজবুত ভিত্তি, ম্যাচ পরিস্থিতি অনুযায়ী মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা এবং মানসিক দৃঢ়তাই পার্থক্য গড়ে দেয়। বর্তমান ভারতীয় দলের স্কোয়াড তৈরি হচ্ছে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে, যেখানে রাহুল বা শার্দূলদের ভূমিকা হবে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এভাবে যদি নিজেদের জায়গা নিশ্চিত করার লড়াইয়েই ব্যর্থ হন তাঁরা। তবে প্রশ্ন উঠবেই যে, আসলে ভারতীয় রিজার্ভ বেঞ্চ কতটা প্রস্তুত বড় মঞ্চের জন্য?
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন : KL Rahul : রাহুলের শতরান: টেস্ট দলে ওপেনিংয়ের দাবিতে জোর ধাক্কা
