



এক তিলোত্তমার মৃত্যু মানুষের মনে তিল তিল করে জ্বলে তিলোত্তমার আলো ছড়িয়েছে দল রং নির্বিশেষে। এই আলো কি নিভে যাবে? নিশ্চয়ই নয়। আসলে আলোর খবর বলুন বা ভালর খবর হোক তা আসে ধীরে ধীরে। দেরিতে। সেজন্যই তো সারা পৃথিবীব্যাপী এখনও ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের আলো সমস্ত কিছু জেগে থাকে অনেক খারাপের মধ্যে অনেক কিছু ভাল। দল যায় রঙ পাল্টায় কিন্তু মানুষের মানসিকতার বদল কিন্তু ঘটে কি? লিখেছেন : সোমা বিশ্বাস
নতুন বছরে মানুষের চিন্তাধারায় আলো ছড়িয়ে পড়ুক
এক একটা দিন কেটে যায় মাস কাটে তারপর বছর কেটে যায়। বছরের শেষে এসে মনে হয় অনেক কিছু চাওয়ার ছিল, অনেক কিছু পাওয়ার ছিল। তবুও যেন তার ছিটে ফোঁটা আবেশ নিয়ে আবার নতুন বছরের (New Year) প্রতীক্ষায় থাকতে হয়। সেই সঙ্গে অনেক আঁধারের মাঝে একটু আলোর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। বছরের শেষে এসে আমরা যতই বলি, মানুষের কর্মধারায় চিন্তা ধারায় জাগরণ ঘটক আসলে যেন সেই অন্ধকারই থেকে যায়! শুধু এটুকু মনে হয়, আমাদের অনেক কিছু সয়ে গিয়েছে বা সইব না বলে আমরা যে আগুন জ্বালব বা প্রতিবাদ করব ঠিক সেই রকমও নয়, এই হচ্ছে হবে এরকম একটা মনোভাব কাজ করে!
আমরা যতটা কাজ করার কথা ভাবি ততটা কি করি? অনেক ফাঁকিও তো থাকে তা-ই তো ভাবনাগুলি ফিকে হয়ে যায়, দোদুল্যমান থেকে যায়। সুবিধাভোগী স্বার্থপর লোভী এই শব্দগুলোর ভিড়ে দু’একটা সুন্দর মানুষও সুন্দর মানুষের মন যেন জেগে থাকে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ঘরে ঘরে যেমন শঙ্খধ্বনি বেজে ওঠে ঠিক তেমনি যেন আমরা আলোর খবরের জন্য প্রতীক্ষায় থাকি। চারিদিকে কত আন্দোলন শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকদের আন্দোলন স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ডাক্তারদের আন্দোলন আরও কত আন্দোলন। প্রভাবশালী দম্ভবাজ আর লোভী মানুষদের ভিড়ে এই আন্দোলনগুলো জোনাকির আলোর মতো জ্বলতে থাকে। চারিদিকে যেন দুর্বিষহ দুর্নীতি সমাজের পচন ধরা একটা ভাব। শিক্ষা সংস্কৃতিকে মাড়িয়ে কিছু লোক বা এখন অনেকেই চেষ্টা করে খুব কম সময়ে ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালী হতে। সেটিংস করে কি সবকিছু কুক্ষিগত করা যায়? সবকিছু ভুলিয়ে দেওয়া যায়? নাকি মানুষের বিবেকবোধকে একদম মাটির তলায় মিশিয়ে দেওয়া যায়? এই প্রশ্নগুলো তাদের জন্য তোলা থাক, যারা ক্ষমতায় থেকে অর্থ এবং প্রভাব দিয়ে নিজেদের বদ বুদ্ধি খাটাই শুভ বুদ্ধিকে জলাঞ্জলি দেয়। এক তিলোত্তমার মৃত্যু মানুষের মনে তিল তিল করে জ্বলে তিলোত্তমার আলো ছড়িয়েছে দল রং নির্বিশেষে। এই আলো কি নিভে যাবে? নিশ্চয়ই নয়। আসলে আলোর খবর বলুন বা ভালর খবর হোক তা আসে ধীরে ধীরে। দেরিতে। সেজন্যই তো সারা পৃথিবীব্যাপী এখনও ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের আলো সমস্ত কিছু জেগে থাকে অনেক খারাপের মধ্যে অনেক কিছু ভাল। দল যায় রঙ পাল্টায় কিন্তু মানুষের মানসিকতার বদল কিন্তু ঘটে কি? স্বর্গে যে যখন যায় সেই ধান ভাঙে কথাটা যেন চিরাচরিত। তবুও একজন করছে বলে আরও সবাইকে করতে হবে একজন বলছে বলে আরও সবাইকে বলতে হবে এমন নয়। আমাদের চোখ-কান-শিক্ষা-চিন্তাধারা সমস্ত কিছুতে আলোর খবর আসুক। আলো ছড়িয়ে পড়ুক; যাতে আমরা ভাল বলতে পারি, ভাল করতে পারি এবং ভাল ভাবতে পারি। ২০২৪ এর শেষে এসে মনে হচ্ছে আমরা অনেক সুন্দর মানুষকে হারিয়েছি বিভিন্ন জগতের বিশেষ করে শিল্প জগতের রতন টাটা, রাজনীতি জগতের বিশেষ দুই ব্যক্তিত্ব ডঃ মনমোহন সিং, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও সংস্কৃতিমনস্ক ব্যক্তিত্ব বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্ট তবলা বাদক ও সুরকার জাকির হোসেন এবং জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কবি অরুণ কুমার চক্রবর্তী মহাশয়কে। এছাড়াও আরও অনেক অনেক নাম। মানুষ যেন তাদের সব ভাল দিকগুলো নিতে পারেন। এই যে এঁদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষের এত প্রভাব এত বিশিষ্টজন হওয়া সত্বেও সকলের সঙ্গে মিশে থাকার ক্ষমতা বা মাটির সঙ্গে পা রেখে চলা বা অনাড়ম্বর জীবনযাপন সেটাও তো কম নয়। সেটা দেখেও মানুষের শেখা উচিত। একটু নামডাক হলেই গাড়ি বাড়ির স্ট্যাটাস নিয়ে যারা মেতে ওঠে তাদের কাছে অনুরোধ দয়া করে আমরা যেন আমাদের ব্যাকগ্রাউন্ড বা পরিধি বা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবটা হারিয়ে না ফেলি। দম্ভ ও স্বার্থপর এই বিশেষণগুলি অন্তত যেন সুন্দর ও প্রজ্জ্বল্যমান এই শব্দগুলো বেশি প্রাধান্য পায়। এবং অবশ্যই ব্যক্তিত্ব ও সাবলীলতা ও স্বতঃস্ফূর্ততা বজায় থাকে।
ভাল মানুষ বা বড় ব্যক্তি মানেই যে ধনী হতে হবে তার গাড়ি বাড়ি থাকতে হবে বা আমাকে ওইরকম জায়গায় পৌঁছতে হবে এবং তার জন্য আমি যা ইচ্ছে তাই করব ধরাকে সরা জ্ঞান করব বা অপব্যবহার করব ক্ষমতাকে বা নিজেকে সেটা যেন মানুষের মনে থাকে বা ভুলে না যায়। আমরা যেন মনে রাখি, আমাদের সাধ আর সাধ্য! ঘুটে পোড়ে গোবর হাসে এইরকম মনোবৃত্তি যেন কারোর না থাকে! সকলকে নতুন বছরের জন্য শুভকামনা রইল, শুভ বোধ জাগ্রত হোক, চিন্তা ধারায় কর্মধারায় পরিবর্তন আসুক । পরিশেষে বলি- ‘হৃদয়ের কথা কিছু হৃদয়ে থাক
চাপা থাকা ব্যথা কিছু আলো হয়ে যাক’। 🍁
ছবি : লেখক
