



বীরুর গল্প হয়ত অনেকেই জানেন না। বাঙালি পার্টনার শিপ ৩৫ বছর। যেখানে স্বামী, স্ত্রীর বন্ধন অটুট থাকে না, ভাই , বোনেদের মধ্যে পারিবারিক ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে এই দুটি অসম বয়সের প্রেমের জুড়ি মেলা ভার। চলতে থাকুক এই বন্ধুত্ব। ভালোবাসার এই পবিত্র দিনে আরও সুদৃঢ় হোক বন্ধন। লিখেছেন : হৈমন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

‘এ দোস্তি হাম নেহি ছোরেঙ্গে’…
ভালোবাসার দিনে ভালোবাসার মানুষের গল্প শুনতে বেশ লাগে। আসুন আজ ভ্যালেন্টাইন ডে- তে এমন এক ভালোবাসার গল্প হোক। যারা মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুরে শহরে থাকে। একজন সুদূর আসাম থেকে বহরমপুরে আসেন মায়ের হাত ধরে অপরজন বীরভূম জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসে বহরমপুর শহরে পিতার চাকরিসূত্রে। দুজনের বয়সের পার্থক্য আছে। দুই বেকার যুবক চাকরির সন্ধানে তখন। কিন্তু একজনের হওয়া চাকরি হল না। বর্তমানে যেভাবে পেছনের দরজা দিয়ে ভাগ্য খোলে সে চাবি ছিল না ছেলেটির কাছে। অপরজন অনেক আদরে বেড়ে উঠেছিল কিন্তু বিধি বাম হঠাৎ করেই মাথার উপর ছাদটা চলে গেল। বিধবা মা সেই শিশুপুত্রকে নিয়ে নিজের জায়গায় ফিরে আসেন। একদিন হঠাৎ করেই বিধাতা মিলিয়ে দিলেন এই দুই অসমবয়সী ছেলে দুটোকে। দুজনের মধ্যে কোনো বোঝাপড়া ছিল না। নিজেদের মধ্যে ঠিক হয় ব্যবসায় নামবে। এরপর দুই বাড়ির অভিভাবকদের সম্মতিতে ব্যবসা শুরু হয়। এরপর কিছু বছরের ব্যবধানে বহরমপুর শহরে B.B.Enterprise একটা প্রতিষ্ঠান হয়ে ওঠে। শুরুর দিন থেকেই মানুষ বলেছিল বাঙালি পার্টনার শিপ দুদিনেই ভেঙে যাবে । লড়াইটা শুরু হয়েছিল ৯১ সাল থেকে এরপর সমস্ত ওঠা- পড়ার গৌরব নিজেরাই ভাগ করে নিয়েছে। এরপর ওদের সংসার জীবন শুরু হয় তখন মানুষ আশা করেছিল এইবার বুঝি গেল এই বন্ধুত্ব। সকলের আশায় জল ঢেলে দিয়ে তুড়ি করে পার করেদিল চৌত্রিশ বছর। ওদের বন্ধুত্বের ভালোবাসার বন্ধন অটুট তো আছেই বরং আর দৃঢ় হয়েছে। এমন একটা ভালোবাসার দিনে এই গল্পটা বড় ঠিকঠাক মনে হল।

এই ব্যবসায় ভাঙন ধরতে দেয়নি কখনও, বুক দিয়ে আগলে রেখেছে। আগামী প্রজন্মের কেউ ব্যবসায় আসবে না এইভেবে আস্তে আস্তে নিজেদের মত করে ব্যবসা বেছে নিয়েছে। বর্তমানে পুরোদমে ইন্টিরিয়র – এর কাজ করে চলেছে। আবার একটা নতুন প্রতিষ্ঠান এই বয়সে নতুন করে গড়ে তোলার লড়াইটা পরস্পর নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে। ঠিক যেন ষোলে সিনেমার দৃশ্য, “চল বীরু ফির একবার”!

আপাতত অনেক কাজ ইতিমধ্যে করে ফেলেছে। তখন দোকানের চাপে সময় দেওয়া সম্ভব হয়নি কিন্তু এখন ফুল ফেজে কাজ চলছে। বহরমপুর শহরে এই জয় ,বীরুর গল্প হয়ত অনেকেই জানেন না। বাঙালি পার্টনার শিপ ৩৫ বছর। যেখানে স্বামী, স্ত্রীর বন্ধন অটুট থাকে না, ভাই , বোনেদের মধ্যে পারিবারিক ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে মুখ দেখাদেখি বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে এই দুটি অসম বয়সের প্রেমের জুড়ি মেলা ভার। চলতে থাকুক এই বন্ধুত্ব। ভালোবাসার এই পবিত্র দিনে আরও সুদৃঢ় হোক বন্ধন।

ইন্টিরিয়রের কাজ আজকাল প্রায় অনেক মানুষ করছেন একথা ঠিক। কিন্তু যে দুটি মানুষ শুধুমাত্র ভালোবাসার টানে এক হয়ে থাকেন তাদের সততার উপর চোখ বন্ধ করে ভরসা করা যায়। ভালোবাসা অক্ষুন্ন হোক। এই লোকচক্ষুর অন্তরালে দুটি মানুষের বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসার গল্পের লোভ সামলাতে পারলাম না। আসুন সকলে প্রেমে বাঁচি। কে বলছে ভালোবাসা সংক্রামক নয়। এই দৃষ্টান্ত ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র। ভালোবাসা ভাইরাল হোক।
