



ভারত ২০১৩ সালের পর আই সি সি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি (ICC Champions Trophy 2025) জিতল। ট্রফি খরার ১১ বছর পর গত বছরই জিতেছিল টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপ আর এ বছর আজকের দিনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। অনেক পসিটিভের মধ্যে যেসব জিনিস ভালো লাগছে। লিখেছেন : নির্মলেন্দু কুণ্ডু
রোহিরাট
মাঝখানে রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলিকে নিয়ে অনেক কথা উঠছিল।
দু’জনের ফ্যান যেন বাকযুদ্ধ থেকে হাতাহাতির পর্যায়ে চলে এসেছিলেন। বিরাটের ক্যাপ্টেন্সি কেড়ে নেওয়ার পর রোহিতের ক্যাপ্টেন্সিতে আসা, তারপর দলের ভারসাম্যটা অনেকটাই পাল্টালো।
রোহিত আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলা শুরু করলেন, নিজে হলেন সেই ব্র্যান্ডের পুরোধা। সবথেকে বড় কথা বাজে সময়ের মধ্যে দিয়ে চলা বিরাটের পাশে দাঁড়ালেন। বিরাট নিজেও সেটা স্বীকার করেছিলেন বছর ক’য়েক আগে। তারপর থেকে দু’জনের মধ্যে বন্ধুত্ব যেন আরও দৃঢ় হয়েছে। টি২০ বিশ্বকাপের লাস্ট ম্যাচে ওপেনিং-এ নামার সময় দু’জনের ছোট্ট হাগ-টা মনে পড়ে? যেন বলতে চাওয়া, চল ভাই, one last time… দু’জনেই এক সঙ্গে রিটায়ারমেন্ট নিলেন। এই টুর্নামেন্টেও দুজনের বোঝাপড়া ছিল চোখে পড়ার মতো।
ম্যাচ জিতে স্ট্যাম্প নিয়ে ডান্ডিয়া খেলাটা তো আরও একটা মোমেন্টের জন্ম দিল। আশা করব, এই বোঝাপড়া অটুট থাকবে, ভবিষ্যত জানি না, তবে লোভী মন ২০২৭ ওয়ার্ল্ড কাপ ও ২০২৭ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপেও দু’জনকে দেখতে চায়।
হার্দিকের পুনরুত্থান
গত IPL সিজনে হার্দিক পাণ্ড্য যেমন নিন্দিত হচ্ছিলেন, তা যে কাউকে দুমড়ে-মুচড়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। কিন্তু হার্দিক অন্য ধাতুতে গড়া। ওঁর কেয়ার ফ্রি মনোভাব, চাপ নিস না বস attitude ওঁর মধ্যে একটা হার না মানা মনোভাব নিয়ে এসেছে। সূর্য কুমার যাদবের ঐ অনবদ্য ক্যাচ সত্ত্বেও এটা সত্যি যে, ঐ ফাইনালটা বিরাটের ব্যাট, বুমরার বলের পাশাপাশি জিতিয়েছিল হার্দিকের হার না মানা মনোভাব।
ঐ ম্যাচটা জেতার পর হার্দিকের কান্না, সেই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামেই নন্দিত হওয়া— যেন একটা আস্ত সিনেমা। আর তারপর এই টুর্নামেন্ট। প্রেসার সিচুয়েশন এসেছে, হার্দিক হাত তুলেছেন, গত ম্যাচে অ্যাডাম জাম্পাকে মারা ৩টে ছয়, এই ম্যাচেও ব্যাট হাতে অবদান, রোহিতের সঙ্গে সম্ভাব্য মন কষাকষির অবসান (গত ওয়ার্ল্ড কাপে ইন্টারভিউরত হার্দিককে রোহিতের চুম্বন অন্যতম পোয়েটিক মোমেন্ট) — সব মিলিয়ে হার্দিকের পুনরুত্থান হল।
কে এল সত্যিই কামাল লাজবাব
এই টুর্নামেন্টের শুরুতেই অনেকে বলতে শুরু করেছিলেন কে এল কেন, পান্থ কেন নয়? কে এল রাহুলকে নিয়ে তো দ্রাবিড় জমানায় এটাও বলা হত, উনি কর্ণাটক লবির সুবিধা পাচ্ছেন!
ওঁর খেলার মধ্যে সেই ফ্ল্যাম্বয়েন্সি নেই। কিন্তু উনি সেই ২০০৩ ওয়ার্ল্ড কাপ দলের রাহুল দ্রাবিড়ের মতো। টিমের প্রয়োজনে উইকেট কিপারের ভূমিকা পালন করছেন, ওপেনার হয়েও খেলছেন ৬ নম্বরে। এই টুর্নামেন্টেও দলের প্রয়োজনে খেলে দিয়েছেন জরুরি কিছু নক। অবশ্য এটাও ঠিক, অকসার প্যাটেল ৫ নম্বরে বাঁহাতি ব্যাটারের অভাবটা দারুণ পূরণ করেছেন বলেই কে এল খোলা মনে খেলতে পেরেছেন।
দ্য রোহিত শর্মা
ভদ্রলোক সম্পর্কে কি বলি বলুন তো! উনি ভারতীয় ক্রিকেটকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসেন। জিততে চান প্রতি মুহূর্তে। ওঁর ফিটনেস নিয়ে কথা ওঠে। কিন্তু ওঁর একটা ফিটনেস লেভেলে অনেকেই ওঁর সাথে পাল্লা দিতে পারবেন না – ম্যান ম্যানেজমেন্ট ও ম্যাচ রিডিং এবিলিটি।
আজকের ম্যাচে ঐ ৭০টা রান এবং ঐ ইনটেন্ট রেখে ৭০টা রান যে কি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। কেন উনি শুরুতেই ঐ হাই রিস্ক ক্রিকেট খেলেন, তাও নিশ্চয় বুঝছেন। একটা মিম খুব ভাইরাল হয়েছে, যেখানে রোহিত বলছেন, “আমি বুঝতে পারিনা আমি আউট হওয়ার পরই ব্যাটিং পিচ কিভাবে বোলিং পিচ হয়ে যায়!” – আজ ঐ প্রথম ১০ ওভারের পর রোহিতও কিন্তু আটকে গেছিলেন। মেডেন ওভার হয়েছে। তারপরই ঐ প্রেসার রিলিজ শট খেলতে গিয়ে উনি আউট হলেন। কিন্তু তার বাইরে প্রত্যেক ম্যাচে বোলিং চেঞ্জ ঠিকঠাক করেছেন, দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন, দরকারে বকেছেন, আবার পাশেও থেকেছেন। ক্যাপ্টেন রোহিত শর্মা ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের পাতায় একটা স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন।
এবং গৌতম
আই পি এলের কোচ, ইগো নিয়ে চলে, ঝামেলা পাকায় ড্রেসিং রুমে, নিজের পছন্দের লোককে দলে রাখে— কত কিছুই তো বলা হয় ভদ্রলোককে নিয়ে। উনি জানেন, ভারতের ক্রিকেট ও তার আমার–আপনার মতো সমর্থকরা ফলাফল চায়। তাও উনি ওঁর instinct থেকে সরেননি। আজ যদি দলে ৫ স্পিনার নেওয়া বা ৪ জনকে খেলানোকে প্রশংসা করা হয়, তাহলে ওঁর অবদানকেও মনে রাখবেন। কারণ দল গঠনে বা মাঠে ১১ জন নামানোয় ওঁরও অবদান আছে।
দ্রাবিড়কে গোটা কোচিং কেরিয়ারে কত কি শুনতে হয়েছে, শেষে টি২০ কাপ জয় সেই দ্রাবিড়কেই উচ্চাসনে বসিয়েছিল। গম্ভীরকেও সময় দিন, টেস্টে আমাদের আরও ভালো করতে হবে নিঃসন্দেহে। ভদ্রলোক কিন্তু কোচিং শুরু করেই বছর খানেকের মধ্যে একটা আই সি সি ট্রফি বিজয়ী দলের কোচ হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন।
ছবি : সংগৃহীত
