



২০১৯ এর ওই চিত্র হয়ত কেউ ভুলতে পারবেন না। মঞ্চে সভা চলছে। বুদ্ধবাবুর সাদা অ্যাম্বাসাডর দাঁড়িয়ে আছে সভা স্থল থেকে অদূরে! কতটা পার্টি অন্তপ্রাণ হলে এমনটি হতে পারে! আর কোনও দিন ব্রিগেডে দেখা যাবে না ওঁর সাদা অ্যাম্বাসাডর। লিখেছেন : সানি সরকার
রাজ্যে বাম-আমলের শেষ মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য (Buddhadeb Bhattacharjee)। দীর্ঘ রোগভোগের পরে বৃহস্পতিবার সকলবেলা ৮:২০ মিনিটে প্রয়াত হন। বয়সকাল ৮০-তে থেমে গেল একটি লড়াকু নেতার লড়াই। একনিষ্ঠ এই কমিউনিস্ট নেতা প্রথম জীবনে স্কুল শিক্ষকতা করেছেন। ছিলেন প্রাজ্ঞ সাহিত্যিক। সক্রিয় রাজনীতির ময়দানে দলীয় কর্মীদের মনবল ছিলেন বুদ্ধবাবু।

সিপিআই (এম)-এর যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই -এর রাজ্য সভাপতি মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বুদ্ধ বাবুর শেষবার্তা পড়ে শোনান, ব্রিগেড সমাবেশে। যুবদের ওই সমাবেশের জন্য পাম অ্যাভেনিউয়ের বাড়ি থেকে অসুস্থ বুদ্ধবাবুর বার্তা নিয়ে এসেছিলেন মীনাক্ষীরা। ওটাই-ই ছিল বর্ষীয়ান সিপিআই(এম) নেতা তথা রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকারের শেষ মুখ্যমন্ত্রীর শেষ বার্তা। ওই বার্তায় বুদ্ধবাবু বলেছিলেন, ‘যেখানে ডাক পড়ে, জীবন মরণ ঝড়ে, আমরা প্রস্তুত। এটিই ডিওয়াইএফআই, ব্রিগেড সমাবেশ সাফল্যমণ্ডিত হবেই।’
তার আগে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের আগেও শারিরীকভাবে আশক্ত বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ব্রিগেড সমাবেশে যেতে পেরেছিলেন না। আসলে দলীয় কর্মসূচি ছিল বুদ্ধ বাবুর প্রাণ। এমন প্রমাণও মিলেছিল অতীতে। ২০১৯ এর ওই চিত্র হয়ত কেউ ভুলতে পারবেন না। মঞ্চে সভা চলছে। বুদ্ধবাবুর সাদা অ্যাম্বাসাডর দাঁড়িয়ে আছে সভা স্থল থেকে অদূরে! কতটা পার্টি অন্তপ্রাণ হলে এমনটি হতে পারে? আর কোনও দিন ব্রিগেডে দেখা যাবে না ওঁর সাদা অ্যাম্বাসাডর। ভাবা যায়!
যাইহোক, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে বামেদের ব্রিগেডে যেতে পারেননি বুদ্ধ বাবু। সেবারও বাধ সেঁধেছিল শরীর। কিন্তু ওই সমাবেশের উদ্দেশ্যে একটি বার্তায় না যেতে পারার আক্ষেপ আর দলের প্রতি মমত্ব দেখেছিল বঙ্গবাসী। বুদ্ধবাবুর ওই বার্তায় উল্লেখ ছিল, ‘এরকম একটা বৃহৎ সমাবেশে যেতে না পারার মানসিক যন্ত্রণা বোঝানো যাবে না। মাঠে ময়দানে কমরেডরা লড়াই করছেন আর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে গৃহবন্দী। ময়দানে মিটিং চলছে আর আমি গৃহবন্দী যা কোনও দিন কল্পনা করতে পারিনি।’ উল্লেখ্য যে, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর প্রয়াণ বামেদের মনবলে আঘাত বৈকী! অসুস্থ ছিলেন, তবু তো ছিলেন…! কিন্তু আজ? ওঁর মহাপ্রয়াণের সঙ্গে সঙ্গেই থেমে গেল বুদ্ধযুগ। এবার থেকে ২৩ শ্রাবণ বাঙালীর মননে শোকের দিন হয়ে ফিরে আসবে বারবার!
-ফাইল চিত্র
