



বর্ষীয়ান কবি অরু চট্টোপাধ্যায়। তিনি একজন স্বনামধন্য নাট্য ব্যক্তিত্বও। তাঁর সাহিত্য সমকালীন পাঠকদের আমোদিত করে। কবির সাম্প্রতিকতম কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে লিখলেন : সোমা বিশ্বাস
কবি অরু চট্টোপাধ্যায়-এর কাব্যগ্রন্থ ‘কবিতার বাঘ জঙ্গলে গর্জন করেনি’। গ্রন্থটির শুরুতেই বলা হয়েছে, “আশা -নিরাশা, সুখ -উল্লাস বিষাদ -প্রসন্নতা দুই বিপরীত মেরুর অন্তর্বর্তী অনুভূতির অনুভব স্পন্দিত এই কাব্যগ্রন্থের শরীর আর তার আত্মা জুড়ে শব্দের নিভৃত উচ্চারণের অমূল্য এক হাহাকার। “শুরুতে পড়তে পড়তেই হঠাৎ যেন খুঁজে পাচ্ছিলাম সেই চিরাচরিত শাশ্বত উচ্চারণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের, “প্রয়োজন নেই, কবিতার স্নিগ্ধতা/ কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি/ ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় / পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি” আজ কবি সাহিত্যিক ও নাট্যকার অরু চট্টোপাধ্যায়ের “কবিতার বাঘ জঙ্গলে গর্জন করেনি’ বইটি পড়তে পড়তে যেন কোথাও সুন্দর সুন্দর অক্ষর বিন্যাস শব্দ চয়ন আর টুকরো টুকরো অনুভব কবিতাকে যেন কখনও ছুটি দেবে না, কবিতার স্নিগ্ধতা যেন পরম্পরা ভাবে চলতেই থাকে চলতেই থাকে। “হাত দিয়ে স্পর্শ জীবন হাত দিয়ে অনুভব, ভালবাসার সব নদী জল” যেন অপূর্ব মূর্তির বিষয় কত জন্মান্তরের চুম্বন স্মৃতি কত বজ্রপাত প্রতিদিনের ঘটনা আমাদের মনকে যেমন স্তম্ভিত করে তেমনি শস্য কুড়ানোর মতো কেউ কেউ মুদ্রা কুড়ায় মুহূর্তে হারায় নানা রকমের গল্প নানা রকমের ইতিহাস পড়তে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লেখা হয়ে যায় সেই রকমই অন্য রকমের ‘হাত’ কবিতা টির মধ্যে বিশেষ ক’য়েকটি লাইন আরও মনকে মুগ্ধতা দেয়। হাত কবিতার আরও বিশেষ কয়েকটি লাইন, “এই হাত বলেছিল দিল্লি চলো! রক্ত দাও! স্বাধীনতা পাবে!/ এইসব প্রার্থনা আমাদের মেরুদণ্ড শক্ত করেছিল- অমৃত সঞ্চয় নিয়ে আমাদের সব বেঁচে থাকা… “। কী দারুন অনুভব ‘চোখ’ কবিতার মধ্যে পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে, “আমরা সাধারণ লোক দুটো মূর্তি গড়তে পারলে খুশি হই,/ আমি এই লোকের মধ্যে অতি সাধারণ,/ শব্দের গায়ে মাটির সহজ প্রলেপ মাখিয়ে প্রতিমা বানাই, /দুটো চোখ আঁকার আগেই রক্তে ভিজে যায়” এভাবেই এক সুন্দর কাব্য বা কাব্য নাট্যের মতো টুকরো অনুভব করে গড়ে ওঠে সুন্দর অক্ষরগুলো নিয়ে বা শব্দচয়ন দিয়ে এক একটি কবিতা যেমন- কণ্ঠ, ‘কবিতার বাঘ জঙ্গলে গর্জন করেনি, আমার চিৎকারগুলো, আগুনের স্পর্শ, গাছের সবুজ রক্ত, এ শহর অচেনা শহর ইত্যাদি কবিতাগুলোর মধ্যে কবি জীবনের সঙ্গে হয়ত বহু মানুষের জীবনের গল্প বা সময় উঠে এসেছে। হতাশা বেদনায় ভালবাসায় বা কখনো কখনো আশার আলো নিয়ে তাই জেগে উঠেছে কবিতার ভাষায় ‘হাতে পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি, কলার সামলে চলো কিম্বা ‘একবার হেরে গেছি বারবার ধ্বংস হবো না’ এই সকল কবিতাগুলি জীবনের অন্য রকমের গল্প বলে কিছু কবিতার যেন বহুমুখী রূপ ফুটে উঠেছে পড়তে গিয়ে একাধিকবার পড়তে হলো শুধুমাত্র বোঝার জন্য তাও পুরোটা বুঝতে পারলাম কিনা একটু সংশয় রয়ে গেছে কারণ তার গভীরতা অনেক। ‘বই এবং সংসার কবিতাটি খুব ব্যতিক্রমী একটা কবিতা কবির ব্যক্তি জীবনের কবিতা বা টুকরো অনুভব উঠে এসেছে এবং সেই সঙ্গে উঠে এসেছে বইয়ের প্রতি তীব্র ভালবাসা যে ভালবাসা মান অভিমান বা অনেক যন্ত্রণার মাঝেও অমলীন চির সবুজ। কিছু কবিতায় উঠে এলো স্মৃতিচারণা শঙ্খ ঘোষ, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, জয় গোস্বামী, বিনয় মজুমদার, তরুণ সান্যাল প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে টুকরো অনুভবের কথা সুন্দর অক্ষর মালা সাজিয়ে। এটি একটি অসাধারণ কাব্যগ্রন্থ (ঋক প্রকাশনী) যারা সত্যি করে কবিতা ভালবাসে কবিতার স্নিগ্ধতা ভালোবাসেন তারা এই বইটি পড়তে পারেন। আজ বিশ্ব কবিতা দিবস উপলক্ষে তাই কবি অরূপ চট্টোপাধ্যায়ের ভাষাতেই পরিশেষে বলব :
“যত একাকিত্ব, তত বেশি অক্ষরের সাথে,
ঘটনার স্মৃতি ছায়পথ থেকে ফিরে আসে
কোন কিছু হারিয়ে যায় না বলে,
শূন্য মুহুর্তে সব কণ্ঠস্বর কলরব করে”। কবি ও সাহিত্যিক, নাট্যকার অরু চট্টোপাধ্যায়কে আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও শুভকামনা।
🍁বই : কবিতার বাঘ জঙ্গলে গর্জন করেনি ★ লেখক : অরু চট্টোপাধ্যায় | ঋক প্রকাশনী
