



🍁পুস্তক আলোচনা
গুরুপাদপদ্মে অঞ্জলিস্বরূপ ভক্তি ও এক শিষ্যের গুরুদক্ষিণা প্রদান
শুভজিৎ সিংহ : শমীক সেন-এর সাম্প্রতিকতম কাব্যগ্রন্থ “কৃপা” পড়ে শেষ করা গেল। যদিও ‘শেষ করা’ শব্দবন্ধটি নিতান্তই আক্ষরিক। এই কাব্যগ্রন্থের কোনও কবিতাই ঠিক শেষ হয়ে যাবে না। বরং এদের রেশ পাঠককে আবিষ্ট করে রাখবে। শীতের রাতের গরম চাদরের ওমের মত ঘিরে রাখবে। যেহেতু শ্রী সেনের আগের বেশ কিছু সাহিত্যকর্ম পড়ার আমার সৌভাগ্য হয়েছে, তাই ওঁর কলম ও কল্পনা উভয়েই আমার কাছে নতুন নয়। তবে এই কাব্যগ্রন্থের যে বিষয়বিন্যাস তা নিঃসন্দেহে শ্রী সেনের কাছ থেকে নতুন। ওঁর কবিতার একটি বড় বৈশিষ্ট্য হল ছন্দবদ্ধ চলন ও মাত্রার সুষম ব্যবহার। কবি মুক্তগদ্যে বা অমিত্রাক্ষর ছন্দে কবিতা লেখেন না। লিখলেও তা সংখ্যায় কম এবং আমি খুব একটা পড়িনি। এ বিষয়ে বিশিষ্ট কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যশৈলীর সঙ্গে শ্রী সেনের ছন্দপ্রিয়তার তুলনা করা যায়। তবে সুধীন্দ্রনাথ দত্তের কবিতার যে প্রগাঢ় নৈরাশ্যবাদ, তা ওঁর কবিতায় কখনও-ই থাকে না।
বর্তমান কাব্য সংকলনটি, “কৃপা” যার নাম, তা এক বিশেষ উদ্দেশ্যে লেখা। কবি তাঁর আধ্যাত্মিক গুরুদেবকে স্মরণ করেছেন এই কবিতাগুলির মধ্য দিয়ে। উৎসর্গপত্রে তার উল্লেখও আছে। এ কবিতাগুলি গুরুপাদপদ্মে অঞ্জলিস্বরূপ ভক্তি ও এক শিষ্যের গুরুদক্ষিণা প্রদান। শ্রীমতী পূর্বা মুখোপাধ্যায়, যিনি এই কাব্য সংকলনের ভূমিকা লিখেছেন, তিনিও এই তথ্য দিয়ে শুরু করেছেন। আমি তাই আমার আলোচনায় এই গুরুবন্দনা অংশটি স্বেচ্ছায় এড়িয়ে গেলাম। এই গ্রন্থের প্রতিটি কবিতা বৈষ্ণব যুগল প্রেমের নিরিখে রচিত। এবং প্রতিটি কবিতাই রূপকার্থক। কৃষ্ণপ্রেমে রাধা মাতোয়ারা, জীবন অপূর্ণ কৃষ্ণকে না পেলে। সেই ভগবৎসদৃশ প্রেমের অনেক স্তর বা রূপ যা বৈষ্ণব পদাবলীতে বা বৈষ্ণব সাহিত্যের একাধিক স্থানে বর্ণিত। সে প্রেম কখনও মিলনাত্মক, কখনও বিরহবিধুর, কখনও অপেক্ষারত, কখনও উপেক্ষার।
কিন্তু কৃষ্ণকে পেতে হলে রাধাকে প্রেমের সবকটি স্তর একে একে অতিক্রম করে যেতে হবে। সৎ গুরুই কৃষ্ণ। তিনিই আরাধ্য, তিনিই সর্বোত্তম। তাঁর প্রতি প্রেম ও শ্রী সেনকে বিবিধ মানবিক, আধ্যাত্মিক, ইহ ও পরজাগতিক আবেদন ও সংবেদনের মধ্য দিয়ে নিয়ে গিয়েছে। এই কাব্যগ্রন্থ টি সেই মহাযাত্রার পথনির্দেশ। পাঠক যদি ভক্ত নাও হন, ঈশ্বরে অবিশ্বাসী ও হন, তবুও তিনি এই গ্রন্থের কবিতাগুলিতে এক প্রেমিক হৃদয়ের প্রস্ফূটন দেখতে পাবেন। বুঝতে পারবেন হৃদয়ের গহীন ভিতরের কথা। যেমন এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে : “তুমি আর আমি একাকার হয়ে, মিশেছি আলোর বৃত্তে।” এখানেই “কৃপা’ কাব্যগ্রন্থটি স্বতন্ত্র।
🍁বই : কৃপা | লেখক : শমীক সেন ★ পেনপ্রিন্টস | কলকাতা
