



পিনাকী চৌধুরী :: শনিবার, ১২ অক্টোবর প্রাত ৫.৪৪ মিনিট গতে দশমী বিহিত পুজো শুরু হল (Bijaya Dashami)। আর তখনই যেন চারিদিকে বিষাদের সুর! কিন্তু সেই বিষাদের মাঝেও দেবী দুর্গার অপর এক রূপ দেবী অপরাজিতার বোধন হল।

সাধারণত সাদা অপরাজিতা গাছকে দেবী রূপে কল্পনা করে অত্যন্ত নিয়মনিষ্ঠা সহকারে পুজো করা হয় এবং সাদা বা নীল রঙের অপরাজিতার লতা ভক্তরা তাঁদের ডান হাতে ধারণ করেন। এতে যেমন শত্রু নাশ হয় , ঠিক তেমনই ভক্তদের মঙ্গল হয়। কথিত আছে যে, শ্রীরামচন্দ্র রাবণ বধের জন্য এই অপরাজিতার পুজোর প্রচলন করেছিলেন।

কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র অনুযায়ী আগেকার দিনে রাজারা নবরাত্রির পর দশমী তিথিতেই যুদ্ধে অগ্রসর হতেন এবং তাঁদের যুদ্ধে জয়লাভ নিশ্চিত করতেন। এতো গেল ধর্মীয় উৎসবের কথা। কিন্তু আমরা যদি টাইম মেশিনে চড়ে গত শতাব্দীর আটের দশকে পৌঁছে যাই, তাহলে কী দেখব? তখন বিজয়ার শুভেচ্ছা জানিয়ে লাল কালিতে সুন্দর হাতের লেখায় সমৃদ্ধ এবং ভাষার লালিত্যে উজ্জ্বল শুভেচ্ছা বার্তা পোষ্ট কার্ড বা ইনল্যান্ড লেটারের মাধ্যমে ঘরে ঘরে আসত। অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্যরা রীতিমতো আগ্রহভরে অপেক্ষা করে থাকতেন সেইসব চিঠির জন্য! সেসব এখন সোনালী অতীত! এখনও বিজয়ার শুভেচ্ছা আসে, তবে সেটা নিতান্তই দায়সারা গোছের হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে! এছাড়াও আন্তরিকতার অভাব আমাদের খাদ্যভাসেও! অতীতের সেইসব দিনে বিজয়া দশমী উপলক্ষে ঘরে ঘরে নাড়কেল নাড়ু, মিহিদানা, ঘুগনি, নিমকি তৈরি করতেন বাড়ির মা কাকীমারা। ঘরে তৈরি সেইসব উপাদেয় খাবার ছিল অতীব সুস্বাদু। আর এই একবিংশ শতাব্দীর চরম ব্যস্ততার যুগে? বড়জোর এক প্যাকেট দামি মিষ্টি, ব্যাস, এই পর্যন্তই! শিষ্টাচার, আবেগ, নীতি নৈতিকতা, শ্রদ্ধা নিবেদন, এসব এখন অভিধানেই সীমাবদ্ধ। অতীতের একসময় বিজয়া দশমী উপলক্ষ্যে ছোটরা বড়দের পা’য়ে হাত দিয়ে প্রণাম করত। আর সমবয়সীরা কোলাকুলি এবং করজোড়ে নমস্কার জানিয়ে বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন।সেসব দিন আজ আর কোথায়!
আরও পড়ুন : Durga Puja at Ramakrishna Mission Delhi: A Festivity of Devotion, Tradition, and Power (Sakti)
